somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মহান ভাষা আন্দোলনের অন্যতম শহীদ আবদুস সালামের ৬২তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

০৭ ই এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১০:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মহান ভাষা আন্দোলনের অন্যতম শহীদ আবদুস সালাম। ১৯৫২ সালে মাতৃ ভাষা রক্ষায় তাঁর অসামান্য ভূমিকা ও আত্মাহুতির কারণেই পরবর্তীকালে বাঙালি জাতিকে জাতীয় চেতনায় উজ্জ্বীবিত ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে। বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে বায়ান্নোর ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজের সম্মুখের রাস্তায় ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে বিক্ষোভে অংশ নেন আবদুস সালাম। পরে ছাত্র-জনতার উপর পুলিশ এলোপাথাড়িভাবে গুলি চালালে আবদুস সালাম গুলিবিদ্ধ হন। আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হয়। দেড় মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর ১৯৫২ সালের আজকের দিনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। আজ এই মহান ভাষা শহীদের ৬২তম মৃত্যুৃবার্ষিকী। ভাষা সৈনিক শহীদ আবদুস সালামের মৃত্যুৃবার্ষিকীতে আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।


আবদুস সালাম ১৯২৫ সালের ২৫ নভেম্বর ফেনীর দাগনভূঁইয়া উপজেলার লক্ষণপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মোহাম্মদ ফাজিল মিয়া এবং মাতার নাম দৌলতের নেছা। ৪ ভাই ও ৩ বোনের মধ্যে আবদুস সালাম ছিলেন সবার বড়। আবদুস সালাম স্থানীয় মাতুভূঁইঞা করিমুল্লা জুনিয়র হাই স্কুলে নবম শ্রেণী পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। অতঃপর চাকরির সন্ধানে ঢাকায় আসেন। কর্ম জীবনে আবদুস সালাম তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের ডিরেক্টরেট অব ইন্ডাস্ট্রিজ বিভাগের 'পিয়ন' হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ঢাকার নীলক্ষেত ব্যারাকের ৩৬বি নং কোয়ার্টারে বাস করতেন।


১৯৪৮ সালের ২১শে মার্চ ঢাকার রেস র্কোস ময়দানে তৎকালিন গভর্ণর জেনারেল মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ দৃঢ় ভাষায় ঘোষনা করেন "উর্দূ, এবং উর্দূই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা"। এর প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে উঠে বাঙ্গালী, এমন সিদ্ধান্ত কখনো মানবো না এই দাবী উঠে সারা বাংলায়। এভাবে আরো ৪ বৎসর অতিবাহিত হয় তারপরও পশ্চিম পাকিস্তানীদের ষড়যন্ত্র থামেনা। ১৯৫২ সালের ২৭শে জানুয়ারী পাকিস্তানের নব নিযুক্ত গর্ভণর জেনারেল খাজা নাজিম উদ্দিন ঢাকায় এসে পুনরায় ঘোষনা দেন "উর্দূই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা"। এই ঘোষনা শুনার পর পুনরায় গর্জে উঠে বাঙ্গালী জাতি, প্রতিবাদে জ্বলে উঠে সারা বাংলা। ২১শে ফেব্রুয়ারী সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ র্কতৃক বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবীতে হরতালের ডাক দেওয়া হয়।


১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারী, ৮ই ফাল্গুন ১৩৫৯ বঙ্গাব্দ সকাল ৯টা হতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জড়ো হতে লাগলো ছাত্র জনতা। পাকিস্তান সরকার ঐ দিন ঢাকায় ১৪৪ ধারা ঘোষনা করেন। একসময় সমবেত ছাত্র জনতা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন এবং গাজীউল হকের নেতৃত্বে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে সবাই মিছিল নিয়ে ঢাকা মেডিকেলের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। মিছিল যখন ঢাকা মেডিক্যালের কাছাকাছি আসে তখন ঢাকা জেলা প্রশাসক কোরাইশীর নির্দেশে শুরু হয় পুলিশের এলোপাতাড়ি গুলোগুলি। গুলিতে সাথে সাথে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন রফিক, জব্বার, সালাম ও বরকত। প্রথম শহীদ হল রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এম এ ক্লাশের ছাত্র আবুল বরকত। এরপর মারা যায়, জব্বার, শফিউর রহমান, রফিক আরো কয়েক জন নাম না জানা ছাত্র। ২১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় টেলিগ্রামে সালামের গুলিবিদ্ধ হওয়ার কথা শুনেন তার বাবা।


আবদুস সালামসহ ১৭ জন ছাত্রকে মূমূর্ষভাবে অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হয়। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও সালামের গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাশে থাকা সালামের ভাতিজা মকবুল আহম্মদ ধনা মিয়া ও সালামের জেঠাতো ভাই হাবিব উল্যাহ। সালামের ম্যাচের কাজের বুয়া তাদের চিনত। ঘটনার দিন ২১ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টার দিকে সেই কাজের বুয়ার ছেলে মকবুলের কর্মস্থলে গিয়ে জানায় তার চাচা সালামের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা। মকবুল ছুটে যান হাবিব উল্যাহর কাছে। তারা দু’জনে মিলে দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসে দেখেন, পেটে গুলিবিদ্ধ সালাম সংজ্ঞাহীন অবস্থায় বারান্দায় পড়ে আছেন। পর দিন সকাল ৯টার দিকে বেশ কিছু ছাত্র সালামের চিকিৎসা না করার অভিযোগে বেশ হট্টগোল করে। মকবুল ও হাবিব উল্যাহ হাসপাতালে যাতায়াতে থাকলেও ফাজিল মিয়া সংজ্ঞাহীন সালামের বিছানার পাশ থেকে নড়েননি। ২৫ ফেব্রুয়ারি মৃত্যু হয় আব্দুস সালামের। ২৬ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৪টার দিকে সালামের লাশ ঢাকাস্থ আজিমপুর গোরস্থানে নেওয়া হয়। সেখানে সালামের বাবা ফাজিল মিয়া, ভাতিজা মকবুল, জেঠাতো ভাই হাবিব উল্লাহসহ শত শত ছাত্র-জনতার উপস্থিতিতে সালামের জানাজা শেষে দাফন করা হয়।


২০০০ সালে তৎকালীন সরকার ভাষা শহীদ আবদুস সালামকে মরণোত্তর একুশে পদক প্রদানকালে গেজেটে তার মৃত্যুর তারিখ ২৫ ফেব্রুয়ারির স্থলে ৭ এপ্রিল উল্লেখ করা হয়। গেজেটে বলা হয় ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজের সম্মুখের রাস্তায় ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতার উপর পুলিশ এলোপাথাড়িভাবে গুলি চালালে অন্যান্যদের সাথে আবদুস সালাম গুলিবিদ্ধ হন। আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হয়। সেখানে দেড় মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর ১৯৫২ সালের ৭ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন আবদুস সালাম। সেই থেকে সালামের মৃত্যুর তারিখ নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হলেও রাষ্টীয়ভাবে ৭ এপ্রিল তার মৃত্যুৃদিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। শহীদ সালামের জীবিত একমাত্র ছোটভাই আবদুল করিমও ২৫ ফেব্রুয়ারি সালামের মৃত্যুর তারিখ স্বীকার করলেও সরকারি গেজেটের বিভ্রান্তিকর তারিখ নিয়ে কিছু বলতে নারাজ।


মহান ভাষা আন্দোলনে অনবদ্য ভূমিকা রাখায় বাংলাদেশ সরকার আবদুস সালাম কে ২০০০ সালে একুশে পদক (মরণোত্তর) প্রদান করেন। ফেনী স্টেডিয়ামের নাম পরিবর্তন করে ২০০০ সালে 'ভাষা শহীদ সালাম স্টেডিয়ামে' রূপান্তর করা হয়। ২০০৭ সালে দাগনভুঞা উপজেলা মিলনায়তনকে 'ভাষা শহীদ সালাম মিলনায়তন' করা হয় এবং তাঁর নিজ গ্রাম লক্ষ্মণপুরের নাম পরিবর্তন করে তার নামানুসারে 'সালাম নগর' রাখা হয়। আজ এই মহান ভাষা শহীদের ৬২তম মৃত্যুৃবার্ষিকী। ভাষা সৈনিক শহীদ আবদুস সালামের মৃত্যুৃবার্ষিকীতে আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন-হাদিস অনুযায়ী তারা পাকিস্তান এবং অন্যরা অন্যদেশ

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২১



সূরাঃ ৮ আনফাল, ৬০ নং আয়াতের অনুবাদ-
৬০। তোমরা তাদের মোকাবেলার জন্য যথাসাধ্য শক্তি ও অশ্ব-বাহিনী প্রস্তত রাখবে। এর দ্বারা তোমরা সন্ত্রস্ত রাখবে আল্লাহর শত্রুকে, তোমাদের শত্রুকে, এছাড়া অন্যদেরকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×