বাবাকে কতটা ভালবাসি ?
বাবা দিবস আসলেই আমরা বাবাকে ভালবাসার কথা আলোচনা করি আসলে কাউকে ভালবাসতে দিবস লাগে না। মানুষ যে কাউকে ভালবেসে পাগল হতে পারে, তা আগে লোকেমুখে শুনেছিলাম , দেখার সৌভাগ্য হল এবার। আমি আমাদের প্রতিষ্ঠান Uni Vision এর প্রচারে ডুমুরিয়া মহিলা কলেজে গিয়েছিলম ২০১৫ সালে ,সেখান থেকে ডুমুরিয়া কলেজে যাব এক ভ্যানচালক চাচার ভ্যানে উঠলাম ,নামার সময় চাচা বলল বাবা আপনার কাছে এগুলো কি ? আমি বললাম এগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রোসপেকটাস, সে আমার কাছে একটি প্রোসপেকটাস চাইল, আমি বললাম আপনি এটা কি করবেন ? সে বলল আমার ছেলে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে, শ্রদ্ধায় আমার মাথা নত হয়ে গেল ,তাকে আমার ভিজিটিং কার্ড দিলাম আর দেখা করতে বললাম, কিছুদিন পর চাচা মোবাইল করল, আমি বললাম খুনলায় আসেন, খুলনাতে আসলো ছেলেকে নিয়ে, ছেলের নাম হুমায়ন, খুব ভদ্র ছেলে। সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি শুরু করল, কিছু দিন পর ভর্তির জন্য হুমায়ন কিছু টাকা দিয়ে বলল আব্বা এই টাকা পাঠিয়েছে, টাকাটা ছিল চাহিদার তুলনায় অতি সামান্য , ফিরোজ ভাই বললেন টাকা নেওয়ার দরকার নেই। আমি ফিরোজ ভাইকে বললাম, যা দিছে তাই থাক, এই টাকা ফিরিয়ে দিলে লোকটা কষ্ট পাবে। পড়াশুনা চলছে ভালমতো , এইচএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট দিলো হুমায়ন মন্দের ভাল হয়ে পাশ করেছে আর ইংরেজিতে সি গ্রেড পেয়েছে এই গ্রেডে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা ছাড়া কোন ইউনিটে পরীক্ষা দেওয়া যায় না ,তাকে সেই ব্যবস্থা করে দিলাম, কপাল খারাপ সে ভর্তি পরীক্ষায় রোল লিখতে ভুল করল ,চান্স হল না, মাঝে মাঝে চাচা আমাকে মোবাইল করে ,সে বলে বাবা আমার বাড়ি একদিন না আসলে হবে না তোমার চাচী তোমাদের দেখতে চেয়েছে। এমনিতে চাচার অভাবের সংসার তার বাড়িতে গিয়ে তাকে কষ্ট দেওয়া আমার পছন্দ না, নানা অঝুহাত দেখায় আমি। বাড়িতে যাওয়ার সময় ভয়ে থাকি ডুমুরিয়াতে গাড়ি অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে দেখা গেল চাচা এসে আমার হাত ধরে বলল বাবা আজ ছাড়ব না , আমার বাড়ি যেতেই হবে, কিন্তু তেমন কিছু ঘটল না। কিছুদিন পর চাচা একদিন আমাদের অফিসে আসল বাবা কবে যাবা বল আমি কবে মরে যায় ঠিক নেই আমার বাড়ি তোমদের যেতেই হবে। কথা দিলাম সময় বের করে যাব এখন সময় নাই ,সে বলে শুক্রবার চল ,আমি বললাম শুক্র-শনিবার আমার ভার্সিটিতে ক্লাস থাকে। তিনি হতাশ হলেন, এর কিছুদিন পর ফিরোজ ভাই বলল ভাই খবর জানেন ? হুমায়নের বাবা মারা গেছে আমি অবাক হলাম না কারণ বাবা মারা যাওয়ার অভিজ্ঞতা আমার আছে। ভাবলাম হুমায়নকে মোবাইল করি ,তা পারলাম না কাউকে, স্বান্তনা দেওয়া সহজ কাজ নয়। কিছুদিন পর হুমায়ন মোবাইল করল , আসছালামুঅলাইকুম ভাইজান আমার আব্বা মারা গেছে আপনি জানেন ? আমার কলিজা খান খান হয়ে গেল কি বলবো ছেলেটাকে। বললাম একদিন দেখা করো। মাঝে মাঝে সে মোবাইল করে আমার অসহ্য লাগে , ওর কথা ভাবতেও আমার কষ্ট হয় ,বাবা হারানো যে কত কষ্টের তা আমার জানা। সে বলে একটি চাকুরি দরকার আমি দেখা করতে বলি। কিছু দিন কোন খোঁজ খবর নাই । একদিন হুমায়ন আমাদের অফিসে সাথে দুটি লোক, হুমায়নের দিকে আমি তাকাতে পারছি না , তার গলায় অনেক তাবিজ ,শরীর শুকিয়ে গেছে , সে পরিচয় করিয়ে দিল এ আমার চাচাতো ও মামাতো ভাই , তার ভাইদের বলার আগেই আমি জেনে গেছি হুমায়ন অসুস্থা ,ভয়ানক মানসিক অসুস্থ, সে বাবার মৃত্যু মানতে পারেনি । কিছুদিন পর আবার মোবাইল ভাইজান আমি আবার পরীক্ষা দিব পড়তে চাই আমি বলি তুমি সুস্ত হও এর পর এসো , সেদিন আমার অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় প্রফেসর ড. শাহনেওয়াজ নাজিমউদ্দিন স্যারের Ethics in development ক্লাস করছি এমন সময় বারবার হুমায়ন মোবাইল করছে, আমি ধরছি না এরপর ক্লাসের বাইরে্ এসে ধরলাম সে বলে ভাইজান আমি কবে আসবো ? আমি বললাম আমি ব্যস্ত সে বলে ও পরে কল দিব কিছুক্ষণ পর আবার কল দিতে শুরু করল আমি ধরি না , মাঝরাতে আবার কল করে আমি ধরি না, সকাল বেলা হুমায়নের মা ফোন করল বাবা হুমায়ন খুব বিরক্ত করছে সে তোমার কাছে যাবে , আমি বলি না ওকে বাড়ি থেকে বের হতে দিবেন না চোখেচোখে রাখবেন আমি মোবাইলে ওকে বুঝিয়ে বলবো, মাগরিবের নামাজের পরে দেখি হুমায়ন অফিসে হাজির, ওর সাথে কেউ নেই । আমি বললাম তুমি আসলে কেন ? সে কথা বলে না , তাকে বুঝিয়ে বাড়ি পাঠালাম সে টাকা নিবে না জোর করে বাড়ি যাওয়ার ভাড়া দিলাম। ফিরোজ ভাই বলছে ছেলেটা পাগল হল কেন বুঝলাম না। আমি তাকে বললাম মানুষ যখন তার সমস্ত ভালবাসা শুধু একজনকে বাসে তখন এমন হয় ,তাই ভাল বাসা ছড়িয়ে দিতে হয় অনেকের মাঝে, আমার তালা সরকারি কলেজের ইতিহাসের শিক্সক মোহাম্মদউল্লাহ স্যারের কথা মনে পড়ে গেল , তিনি একটি গল্প বলেছিলেন তার এক বড় ভাই একটি মেয়েকে ভালবেসে পাগল হয়ে গিয়েছিল, স্যার সেই ভাইকে প্রশ্ন করেছিল আপনি ঐ মেয়েকে কতটা ভালবাসেন, ভাই বলেছিল আমি ওর উপর হেলে আছি ও সরে গেলে আমি পড়ে যাব। আসলে হুমায়ন তার বাবার প্রতি হেলে ছিল তাই পড়ে গেছে। মানুষকে মক্ত হতে হবে জীবন কারো একার না এক জীবনের সাথে অনেকগুলো জীবন জড়িয়ে থাকে মানুষকে দায়িত্ব নিতে হয়, না হলে মানব সভ্যতা টিকে থাকে না । আজ আমাদের পূর্ব পুরুষরা যদি স্বার্থপর হত তাহলে আমরা আজ এত সুবিধা ভোগ করতে পারতাম না । তাই মানুষকে ভালবাসতে হবে ঠিকই তাই বলে হেলে পড়লে চলবে না।
মো: হেলাল হোসেন
শিক্ষার্থী
Master of Development Policy and Studies
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৪:০১