somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গরু রচনা

০৩ রা জুলাই, ২০০৬ সকাল ৯:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



গরু রচনা
সৈকত বন্দোপাধ্যায়


গরু দুই প্রকার। যে সকল গরুরা গোয়ালে থাকে তাদের গৃহপালিত গরু বলে। আর যারা বনে থাকে তাদের বলে বন্য গরু। যথা বুনো মোষ। বুনো গরুরা খুবই অসভ্য। অন্যদিকে গৃহপালিত গরুরা খুব শান্ত প্রকৃতির। তারা সাতে পাঁচে থাকেনা। তারা খায় দায় জাবর কাটে আর দুধ দেয়। গৃহপালিত গরুরা সমাজবদ্ধ জীব, গৃহপালিত গোরুর পালকে গোপাল বলা হয়। প্রতিটি গোপালেরই একজন করে রাখাল থাকে। তারা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত হয়। কোনো কোনো গোয়ালে অবশ্য দুষ্ট রাখালও দেখা যায়। দুষ্ট রাখালদের নিয়ে অনেক বই লেখা হয়েছে। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয় এ বিষয়ে পথীকৃত। দুষ্ট রাখাল ও শিষ্ট গোপালের দ্বান্দ্বিক সম্পর্কের সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে অধ্যাপক শিবাজী বন্দোপাধ্যায়ের "গোপাল রাখাল দ্বন্দ্বসমাস' বইটিও উল্লেখযোগ্য।

গরুরা শান্তিপ্রিয় হলেও তাদের মধ্যে লিঙ্গবৈষম্য বিরাজমান। বৌ পোড়ানো গরুদের সমাজে অপ্রচলিত নয়। "ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলেই ডরায়' এই প্রবাদের আসল অর্থ হল, কপালে সিঁদুর দিলেই ঘরে পুড়তে হতে পারে। তবে এসব শুধু পিছিয়ে পড়া গরুদের মধ্যেই দেখা যায়। উন্নত প্রগতিশীল গরুদের মধ্যে কোনো বৈষম্য নেই। তারা উন্নত ও রুচিশীল,সঙ্গীত ও শিল্পপ্রেমিক। তবে দু:খের কথা এই, যে প্রাগৈতিহাসিক গরুর সংখ্যাও এ পৃথিবীতে কিছু কম নয়। এমনকি কিছু কিছু গরুর নাকি গোমাংসেও অরুচি নেই। এদেরকে ম্যাড কাউ বলা হয়।

অসভ্য বর্বর ম্যাড কাউদের পাশাপাশি নব্য প্রজন্মের টিন এজ গরুরাও গোসমাজের শান্ত জলায় আরেকটি উপদ্রব বিশেষ। এই নব্য গরুদের বলা হয় গরুর পোলা বা কাউ বয়। এরা হিপিসুলভ "হ্যাপি গো লাইক' জীবন যাপন করে। এরা চোঙা প্যান্ট পরে, শিঙের উপর টুপি চড়ায়, সভ্যতা ভদ্রতা সৌজন্য কমনীয়তার ধার ধারেনা। এরা যাকে তাকে ল্যাজের ঝাপটা দেয়, সুন্দরী গাইদের দেখলে সৌজন্যমূলক গম্ভীর হাম্বার পরিবর্তে পুইইইই করে আনন্দে সিটি দেয়, যাকে সিটি অফ জয় বলা হয়। সিটি অফ জয় নিয়ে গোষ্পদে অনেক আন?দোলন,লেখালিখি হয়েছে। অনেকে বলে থাকেন গোসমাজের অন্তর্নিহিত গোড়ামিই কাউ-বয়দের উত্থানের অন্যতম কারণ। স্বয়ং বিশ্বকবি একটি বইয়ে এই বিষয়ে অনেক ভালোভালো কথা বলিয়াছেন, বইটির নাম গো-রা।

গো সভ্যতা সুপ্রাচীন এব ংপৃথিবীব্যাপ্ত, যে কারণে গো শব্দের অন্য অর্থ পৃথিবী। সুদীর্ঘ বিশ্ব ইতিহাসে গরুরা বেশ কয়েকবার ভ্রাতৃঘাতী রক্তক্ষয়ী বিশ্বব্যাপী যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে। সকল প্রখ্যাত গোবিশেষজ্ঞই জানিয়েছেন যে সাধারণ গরুরা যুদ্ধ চায় না। তারা শুধু নির্বিবাদে ঘাস-জাবনা চিবোতে ভালোবাসে। আর রাখালের অঙ্গুলীনির্দেশে দলে দলে এগিয়ে চলে। গরুদের এই শৃঙ্খলাপরায়ণতাই "রেডি স্টেডি গো' নামক বাক্যবন্ধের জন্ম দিয়েছে। সৎ রাখালরা গরুদের সুস্থপথে চালনা করে, দুষ্ট রাখালরা নিজ স্বার্থসিদ্ধির জন্য যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়। গরুজগতে এই জাতীয় বেশ কিছু স্বেচ্ছাচারী কুখ্যাত একনায়ক রাখাল জন্মেছে, তারাই এইসব যুদ্ধের জন্য দায়ী। এইরকম একজন কুখ্যাত রাখালের নাম গো-য়েরি ং। অন্য আরেকজন দুষ্ট রাখালের নাম গো-য়েবলস, যিনি "বলদের গোবধেই আনন্দ ' নামক কুখ্যাত প্রবাদটির জনক। তবে সুখের কথা এই, যে গরুরা এইসব যুদ্ধবিগ্রহ থেকে শিক্ষালাভ করেছে। ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধের বিরুদ্ধে অনেক লেখালিখি, শিল্পকর্ম ইত্যাদি হয়েছে, পিকাসোর গো-য়ের্নিকা তাদের মধ্যে অন্যতম।

স্থান ও কালভেদে গরুরা বিভিন্ন বর্ণের হয় অভিজাত গরুদের নীল গাই বলা হয় এব ংতাদের গায়ের রঙ নীল। ষাঁড়েরা সাধারণত কালো কিন্তু লাল পতাকা দেখলে তেড়ে আসে বলে উহাদের শ্রেণীশত্রু বলা হয়। ঐ কারণেই অ্যাম্ফিথিয়েটারে পাগলা ষাঁড়কে খতম করা হয়। কালো গরুদের শ্যামলী এবং সাদাদের ধবলী বলা হয়। এছাড়াও আরো বিভিন্ন শেডের গরু দেখা যায়, যথা হাল্কা নীল গরুরা ইন্ডি-গো এবং হাল্কা লাল গরুরা গো-লাপি নামে পরিচিত। কিন্তু মহাকবি শেক্ষপিয়র বলেছেন গরুকে যে নামেই ডাকো, সে দুধই দেয়। বিলেতের ধবলীরা ফাঁকা মাঠে হাওয়া খায়, সঙ্গীতসুধা শ্রবণ করে, স্বাস্থ্যকর দূষণহীন ঘাসপাতা খায় এবং অরগ্যানিক দুধ দেয়। আর তৃতীয় বিশ্বের গরুরা গোয়ালে থাকে, ইঞ্জেকশন নেয়, খড় খায় এবং তাদের দুধে জল মেশানো হয়। এসব পার্থক্য সত্তেও সকল গরুরই রক্তের রঙ লাল। সকল গরুরই চারটি করে পা, একটি করে লেজ ও দুটি শিং। সকল গরুই ঘাস ভালোবাসে, সুখে দু:খে আনন্দে বেদনায় হাম্বা বলে ডাকে। সকল বৃদ্ধ গরুই জাবর কাটে, যাকে (স্মৃতি) রোমন্থন বলে। সকল বলশালী বলদই সমান বুদ্ধিমান, তারা সাধারণত শান্তিরক্ষীবাহিনীতে কাজ করে। সকল প্রকার তরুণ গরুই প্রেমে পড়ে, স্ত্রী গরুরা জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে পু ংগরুদের কি-গো হ্যা-ঁগো বলে কথা বলে।

এইভাবে সমস্ত বিভেদ-বিসংবাদ সত্তেও পৃথিবীব্যাপী গো-জাতির মধ্যে নিহিত আছে এক ঐক্যের বীজ, যাকে বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য বলা হয়। এই ঐক্যের ফলেই যুগযুগান্ত ধরে গো-জাতি পৃথিবীর বুকে টিকে আছে ও থাকবে। সকল বিভেদকামী চক্রান্তকে ছিন্ন করে তাদের প্রগতির রথ এগিয়ে চলছে ও চলবে। সবাই মিলে, তাই, আজকের তেরই আগস্টের এই পুণ্যপ্রভাতে অ-গো-ণিত জনতার সঙ্গে সমস্বরে বলে উঠুন গো-অ্যাহেড।

---------------

লোকে সুকুমার রায়ের কবিতা তুলে দেয়। আমি তুলে দিলাম সৈকত বন্দোপাধ্যায়ের লেখা গরু রচনা।
নিজে পড়ে আনন্দ পেয়েছি। ব্লগের সবাইকে সেই আনন্দের ভাগ দিতে ইচ্ছে হলো।
মূল লেখা পাওয়া যাবে এই ঠিকানায়:
http://www.guruchandali.com এ।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
১৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×