হাসিতে মুক্তা ঝরলে কেমন লাগে জানি না তবে আমাদের পচাত্তর পেরনো আম্মার হাসিতে এখনো প্রাণ সঞ্চারিত হয়।
মা দূর্গার দশ হাত। আমাদের আম্মাকে আল্লাহ কয়হাত দিয়েছেন বলতে পারছিনা।
পচাত্তর বছর ধরে আম্মা পরিবার,স্বজন, আত্বীয়, বন্ধু, শুভাকাংখী সকলের জন্য অনেক করেছেন। সেই সাথে পেশাগত জীবন, খেলাধূলা, নিজের ভালোলাগাও যতটুকু পেরেছেন মেটানোর চেষ্টা করেছেন।
বর্তমানে রক্ত চলাচল কমে যাওয়ায় আম্মার ম¯িতষ্কের অনেক জায়গাই মরে গেছে। অনেক কিছুই আর পারেন না আগের মত। রক্তের শর্করা, ব্লাড প্রেসার দুটোই বেড়ে গেছে। মেরুদন্ডের একটা জোড়া নড়ে গেছে। বাথরুমে পড়ে গিয়ে এক হাতের বাহুর হাড় আর মেরুদন্ডের এক হাড় ভেং্গে গেছে। তারপরও তার সাথীদের তুলনায় অনেক সচল, সক্রিয়।
আমরাও চাই আমাদের আম্মা যেন আরো অনেকদিন আল্লাহর এই পৃথিবীর আনন্দ সচল থেকে উপভোগ করতে পারেন।
আর তাই এবার জন্মদিনে আমরা চার সšতান আম্মাকে ইন্টারনেট সিমসহ একটা স্মার্ট ফোন উপহার দিয়েছি। সেইসাথে করা হয়েছে আম্মার ফেসবুক একাউন্ট।
এই পচাত্তর বছর ধরে আম্মার জীবনে যত মানুষ এসেছেন তাদের মধ্যে অনেকে চলে গেছেন পরকালে। যারা জীবিত আছেন, সারা বিশ্বে তারা ছড়িয়ে আছেন।
আম্মা যেন ফেসবুক নামক এই সামাযিক যোগাযোগ মাধ্যম দিয়ে সকলের সাথে যুক্ত হতে পারেন সেই চেষ্টাই তার সšতান আর নাতি-নাতনিরা করছি।
আমাদের আব্বার বয়স ৮৪ বছর। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা, ভাই-বোনদের এগিয়ে নেওয়া আর সšতানদের ম্গংল- এসব কিছুর জন্য আব্বা শৈশব, কৈশর, যৌবন, মধ্যবয়স পর্যšত অনেক কষ্ট করেছেন। উচ্চ শিক্ষার্থে আমেরিকাতে গিয়েছেন, অর্থ উপার্জনে লিবিয়াতে থেকেছেন। ভ্রমণপিপাসু আব্বার খুব ইচ্ছা করতো বইয়ে পড়া জায়গাগুলো ঘুরে দেখতে কিন্তু অর্থের কথা ভেবে আমাদের ধর্মভীরু আব্বা শুধু হজ্ব করে এসেছেন।
আমরা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর আব্বার ইচ্ছাপূরণে এগিয়ে এসেছি। মধ্যবয়স পার করে আব্বার ইচ্ছা প্রতিবছর ওমরাহ করতে যাওয়া। আমরা বয়স আর স্বা¯েহ্যর ঝুকির দুশ্চিšতা প্রকাশ করতেই আব্বা জানালেন কাবার দেশে মারা গেলে দুঃখ থাকবে না। আমরা তাই সাহায্য করেছি, আব্বা তিনবার ওমরাহ করেছেন।
সৌদি সরকার করোণা ভাইরাসের সংক্রমণের জন্য বয়স্কদের ওমরাহ গমণে বাধা দেওয়ায় আব্বা আর যেতে পারছেন না। আব্বার তাই মন খারাপ, যদিও কাছে রাখতে পেরে আমরা আনন্দিত।
আব্বা এখন দেশের মধ্যে বেড়াতে যাওয়ার ¯হান আর সংগী নিজেই ঠিক করেন। আমরা শুধু সংগীর ফোন নম্বর রেখে দেই যোগাযোগের জন্য। আর আব্বাকে জিজ্ঞেস করি ¯হান এবং যাতায়াত ব্যব¯হা স্বা¯েহ্যর জন্য আরামদায়ক কিনা। ব্যব¯হা যাই হোক আব্বা গভীর আবেগে জানাবেন -খুব ভালো।
গত কয়েকবছর ধরে আব্বা নিয়মিত স্বা¯হ্য চেক আপ করাচ্ছেন না। শারীরিক কোন সমস্যা হলে পাড়ার ডাক্তার দেখাচ্ছেন, কোন বিষেশজ্ঞের কাছে যান না।
পাছে মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে যেতে না পারেন।
আব্বা সবসময় বলেন আল্লাহ যখন যেভাবে রেখেছেন তার জন্য শুকরিয়া।
আমরাও আল্লাহকে শুকরিয়া জানাই এখনো আমাদের মাঝে আব্বা-আম্মাকে সচলভাবে রাখার জন্য।
প্রবীণ নবিনকে হাত ধরে সামনের দিকে এগিয়ে দাও
নবিন প্রবীণের হাত ধরে সুন্দরের মাঝে চলে যাও