অনেকেই বলেন সামুর পুরনো ব্লগাররা হারিয়ে গেছে। তারা ব্লগে এখন আর আসেন না। আমি মনে করি এই কথাটা ঠিক না । কথাটা হবে সামুর পুরনো ব্লগাররা অদৃশ্য হয়েছেন কিন্তু হারিয়ে যাননি। তারা আছেন। রীতিমত আপনার পোস্ট , নির্বাচিত পোস্ট পড়ছেন । সাম্প্রতিক মন্তব্যে নিয়মিত চোখ রাখছেন। সামুর ব্লগাররা সামু থেকে অদৃশ্য কিন্তু ফেসবুকে সারাক্ষণ অনলাইনে দেখবেন। সামুর ব্লগাররা অনলাইনে থাকবেন কিন্তু ব্লগে আসবেননা তা অসম্ভব।
ব্লগ জিনিসটাই এমন । কিছুদিন ব্লগিং করার পর ব্লগাররা ব্লগের সাথে এত মায়ায় জড়িয়ে যায় যে ব্লগ ছেড়ে চলে যাওয়া সম্ভবপর হ্যে ওঠেনা। তবে ব্লগের চেয়ে ফেসবুক বেশি জনপ্রিয় তা সত্য। ২০০৯-২০১০ সালেও তো ফেসবুক ছিলো। তখন কি ব্লগাররা ব্লগ ছেড়ে দিয়েছেন? ২০১৩ সালের শেষের দিকে এসে কি এমন হলো ব্লগাররা ব্লগ ছেড়ে দিবেন?
ব্লগাররা ব্লগ ছাড়েনা , ইচ্ছা করলেও ছাড়তে পারেনা। ব্লগে অনলাইনে না থাকলেও অফলাইনে থাকেন। ব্লগাররা অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার কারণ ভিন্ন। আমার মনে হয় এর জন্য ফেসবুককে দায়ী করা ঠিক হবেনা।
যে কারণে বলছি ব্লগাররা ব্লগ ছাড়েন নি অদৃশ্য হয়েছেন তার স্বপক্ষে একজন পুরনো ও সিনিয়র ব্লগারের কয়েকটি যুক্তিঃ
আমাদেরই ইউনিভার্সিটির এক সিনিয়র ভাই এর মাধ্যমে সামুর সাথে পরিচয়। তিনি পুরনো ব্লগার। কিছুদিন আগে তার সাথে আমার দেখা হয় উত্তরায় । ছোট ভাই হিসেবে আমাকে খুব স্নেহ করতেন আমিও সম্মান করতাম কিন্তু সম্পর্কটা ছিলো একেবারে বন্ধু সুলভ। অনেক দিন পর দেখা হওয়ার পর অনেক কথার মাঝে একবার সামুর কথাও আসলো।
আমি বললাম ভাইয়া ব্লগে দেখা যায়না কেন ? মিস করি আপনার পোস্ট। কত মজা করতাম একসময়। সারারাত ব্লগে কাটাতাম সকালে উঠে ক্লাসে যেতে পারতাম না সময়মত।
ভাইয়া বললেন ( যদিও তিনি আমার সহ ব্লগার) কেন আমি আছি তো অফলাইনে থাকি।
আমিঃ সামুর সেই ব্লগার গুলো কোথায় যে হারিয়ে গেছে কে জানে?
ভাইয়াঃ বলিস কি? কেউ ব্লগ ছাড়েনি । সবাই আছে কিন্তু অফলাইনে। ব্লগ ছাড়া যায়না। ব্লগে পোস্ট না দেওয়া ও মন্তব্য না করা মানে ব্লগ ছেড়ে দেওয়া না।
আমিঃ আগে ভিজিটর লিস্টে ভালো ব্লগারদের দেখলে ভালো লাগতো । এখনতো পোস্ট দেওয়ার পর ওরকম কোন ব্লগারকে চোখে পড়েনা।
ভাইয়াঃ এখন যারা পুরনো আগে তারা নতুন ছিলো। এখন যারা নতুন তারা কিছুদিন পর পুরনো হবে। এটাই নিয়ম। এখন যারা ব্লগে নিয়মিত কিছুদিন পরে দেখবি তারা অদৃশ্য হয়ে যাবে । আবার কিছু নতুন আসবে। তারপর তারাও অদৃশ্য আবার নতুন কিছু আসবে। এটাই নিয়ম। ভিজিটর লিস্টে দেখা না গেলেও কোয়ালিটি পোস্ট তারা অফলাইনে পড়বেন।
আমিঃ কিন্তু ভাইয়া আগে তো পোস্ট গুলো অনেকবার পঠিত হত। পোস্টে অনেক অনেক হিট ছিলো । মন্তব্য ছিলো। পোস্ট গুলো প্রথম পাতাতে থাকতেই ২০০ বারের মতো পঠিত হয়ে যেত। এবং সে অনুযায়ী মন্তব্যও আসতো।
ভাইয়াঃ দেখ তখনের ব্লগারদের লেখা গুলো ছিলো মানসম্পন্ন। লেখার মান খুব ভালো ছিলো। এখন দুই একজন বাদে অন্যদের পোস্ট গুলো কোন পোস্টের পর্যায়ে পড়েনা। একটা পোস্টে শত শত বানান ভুল , কপি পেস্ট , উইকি থেকে সংগ্রহ করা পোস্ট।
একটু থেমে আবার বললেন , এখন যারা ব্লগিং করছে ওরকম কিছু ব্লগারের পোস্ট দেখবি প্রথম পাতাতে থাকতেই ২০০ থেকে ২৫০ বার পঠিত হয়ে যাচ্ছে ২০ থে ৩০ টা মন্তব্য পেয়ে যাচ্ছে। সামুতে একজন ব্লগার আছে যার কোন ব্লগিং ইন্টারেকশন নেই এবং এখনো ব্লগিং করেন মাঝে মাঝে । হঠাৎ করে কোন পোস্ট দিলেও ১৩০০ থেকে ১৪০০ হিট হয়ে যায়। এখন ১৪০০ হিট তখনের ৪০০০ হিটের সমান। ব্লগার রামনের পোস্ট গুলো দেখ। প্রচুর হিট এক একটা পোস্ট। ব্লগার রেজওয়ানা যদি এখন কোন পোস্ট দেন দেখবি প্রথম পাতায় থাকতেই ৪০০ থেকে ৫০০ বার পঠিত হয়ে যাচ্ছে। হাসান মাহবুব এখন পর্যন্ত ব্লগে নিয়মিত । তার গল্প গুলো দেখ সবাই পড়ছে। সামুতে এখন ১০০ এর মত ব্লগার অনলাইনে থাকে কিন্তু তার পোস্ট দেখবি ৫০০ থেকে ৬০০ হিট পাচ্ছে। বাকি হিট গুলো কিন্তু পুরনো ব্লগারদের যারা ব্লগে অদৃশ্য হয়ে থাকেন।
আমিঃ আপনি কি করে নিশ্চিত হলেন সামুর ব্লগাররা ব্লগ ছেড়ে যান নি অদৃশ্য হয়েছেন মাত্র।
ভাইয়াঃ সামুর অনলাইনে থাকা ব্লগার এর সংখ্যা ১০০ হলেও ভিজিটর দেখবি ৭০০ এর মত । এই ভিজিটর গুলোর ৫০ % ব্লগাররাই। অমি পিয়াল , আসিফ মহিউদ্দীন , রেজওয়ানা উনারা নিয়মিত ব্লগ ভিজিট করেন এবং ব্লগে কি হচ্ছে দেখেন। পুরনো ব্লগাররা দিনে একবারের জন্য হলেও ব্লগে আসেন এবং সব পোস্ট না হলেও নির্বাচিত পোস্ট গুলো পড়েন। পোস্ট নির্বাচিত হওয়ার পর দেখবি কোয়ালিটি পোস্ট গুলো হিট হচ্ছে। এই হিট গুলো অদৃশ্য থাকা ব্লগারদের । কারণ যারা ভিজিটর তারা নির্বাচিত বিভাগ আসলে কি সেটাও জানেনা । তারা নির্বাচিত বিভাগ খুঁজে বের করে পোস্ট পড়তে যাবে কোন দুঃখে।
আমিঃ ভাইয়া স্টিকি পোস্টের অবস্থা তো গত এক বছরে তেমন ভালো না। এটা কেন হচ্ছে।
ভাইয়াঃ লেখার মাণ ও বিষয়বস্তুর কারণে। সামুকে খেয়াল রাখতে হবে কাদের পোস্ট বেশি হিট হচ্ছে। কাদের পোস্ট সবাই পড়ছে। কাদের পোস্ট অন্যরা এড়িয়ে যাচ্ছে।
একটু থেমে আবার , ব্লগার শায়মার পোস্ট স্টিকি করা যেতে পারে। কারণ আমি বিগত ৫ বছরে দেখে আসছি তার পোস্ট গুলো খুব হিট হয়। এক্সট্রা টেরিস্ট্রেরিয়ল স্বর্ণার পোস্ট ও স্টিকি করা যেতে পারে। কারণ তিনি এমন একজন ব্লগার যার পোস্ট সবাই পড়বে। হাসান মাহবুব এর মতন কোয়ালিটি ব্লগার যেখানে আছে সেখানে স্টিকি পোস্ট অন্যরা কেন লিখে বুঝতে পারছিনা। সামুর সুঞ্চালক দের মধ্যে একজন শুধু আছে যার ব্লগ অভিজ্ঞতা ৬ বছরের মতো। অন্যরা ধরতে গেলে নতুন। অভিজ্ঞদের সঞ্চালক বানানো উচিৎ
আমিঃ এখন যারা ব্লগে নিয়মিত তাদের মধ্য থেকে কার লেখা আপনার ভালো লাগে?
ভাইয়াঃ কান্ডারি অর্থব ও আরো কয়েকজন আছে। কয়েকজন নতুন ব্লগারের লেখাও খুব ভালো লাগছে।
প্রিয় ব্লগার এতক্ষণ পড়ছিলেন একজন জনপ্রিয় পুরনো ব্লগার এর সামু সম্পর্কে অভিমত। তিনি বলছেন সামুর ব্লগাররা হারিয়ে যাননি বা ব্লগ ছেড়ে দেননি । তারা অদৃশ্য হয়ে আপনার পোস্ট পড়ছেন । সেদিন দেখলাম ব্লগার দূর্যোধন এই পোস্টে মন্তব্য করেছেন " দূর্যোধন বলেছেন: ভুল বললেন । কেউই ব্লগ ছাড়ে না । সাময়িকভাবে অদৃশ্য থাকে । কিন্তু ব্লগে সবাইই থাকে । ব্লগ জিনিসটাই এমন আকর্ষণের "
তাই লিখুন। কোয়ালিটি ব্লগারদের পোস্ট গুলো পড়ুন। ব্লগার জুলভার্ন , ফিউশন উনারা একসময় নতুন ছিলেন । এখন যারা নতুন তারা একসময় পুরনো হবে। এখনের নতুন ব্লগারদের কাছে হাসান মাহবুব , জুলভার্ন , দাসত্ব , পারভেজ আলম , ফিফা , দূর্যোধন উনারা সেলিব্রেটি । পরবর্তীতে যারা ব্লগে আসবেন তাদের কাছে শুধু মাত্র দায়িত্বশীল ব্লগিং ও কোয়ালিটি লেখার মাধ্যমে আপনিও হতে পারেন আদর্শ।
সুধু লিখলে হবেনা , অন্যের পোস্টে কোয়ালিটি মন্তব্য করতে হবে। গালি এবং ট্যাগ এর মতো নোংরা চর্চা ও ব্যক্তি আক্রমণ থেকে নিজেকে বাঁচাতে হবে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হতে হবে। সিন্ডিকেট করার মানসিকতা থাকলে সেখান থেকে বের হয়ে আসতে হবে। কারণ সিন্ডিকেট ব্লগাররা হিট পেলেও সম্মান পাননা। আদর্শ হওয়ার কথা বাদ দিলাম। অন্যের পেছনে লেগে থাকার মত নোংরা চর্চা বাদ দিতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১২:২৮