কলেজে উঠার পর থেকেই কথার খুব শখ খুব ভালো কয়জন বন্ধু-বান্ধব নিয়ে অনেক আড্ডাবাজী, ঘোরাঘুরি আর দুষ্টুমি নিয়ে দারুন মজার একটা ছাত্র জীবন হবে। কিন্তু এইচ এস সি, অনার্স কিংবা মাস্টার্স কোন পর্যায়েই কথার মনের মত ছাত্র জীবন হয়ে উঠেনি। এ নিয়ে কথার মনে খুব আফসোস ও ছিল
মাস্টার্স শেষ হয়েছে প্রায় এক বছর। একটা ছেলের সাথে সম্পর্ক আছে। তাই এখন বিয়ে শাদী করে ঘর বাধার ইচ্ছে। কিন্তু কোন কারনে সেই সম্পর্ক টা টিকলো না। এদিকে বাসা থেকেও বিয়ের জন্য প্রেশার। কিন্তু কথা এই মুহূর্তে বিয়ের জন্য নিজেকে প্রস্তুত ভাবছেনা। তাই ভাবল এম বি এ তে ভর্তি হয়ে যাক। একদিকে এম বি এ করার শখ টা ও পূরণ হবে আর এই উসিলায় যদি বিয়ে টা কে ও আপাতত আটকানো যায়।
এম বি এ এর প্রথম ক্লাস আজ। অনেকটা এক্সাই্টমেন্ট কিছুটা নার্ভাস নেস নিয়ে কথা ক্লাস শুরু করে। ক্লাসের প্রথম যে মেয়েটি কথার সাথে কথা বলার জন্য এগিয়ে আসে তার নাম তুশিনা। কথা কে দেখে তুশিনার প্রথম মন্তব্য “তোমাকে দেখলেই মনে হয় তুমি এখনই বুঝি কাউকে ধমক দিবে” কথা মুচকি হাসে
*উল্লেখ্য তুশিনার কিছুটা মানসিক সমস্যা আছে। সে যা নয় এমন উদ্ভট যত সব কথা তার বন্ধু বান্ধবি দের কে নিয়ে বানায় এবং তা প্রচার করে নির্দ্বিধায়। প্রায় ই হসপিটালে থাকতে হয় দুই তিন দিন করে। তবে বন্ধু হিসেবে খুব ভালো এবং পড়াশোনায় মনোযোগী। ওর বন্ধুরা ও ওর অসুস্থতার জন্য ওর ছেলেমানুষি গুলোকে ভালোভাবে দুষ্টুমির ছলে মেনে নেয়।
এরপর একে একে আসে তন্ময়, তানজিমা, মিতু ও নাজনিন
*তন্ময় ভালো ছেলে। একটু মুরুব্বী ভাব তার মধ্যে বিদ্যমান। তবে বন্ধু হিসেবে খারাপ না
* মিতু সুন্দরী। ছাত্রী ভালো। ক্লাস মনিটর সে। একটু পড়লেই তার অনেক ভালো পড়া মুখস্ত হয়।
* তানজিমা অনেক প্রেক্টিকাল মেয়ে। জীবনের যে কোন সমস্যা সে খুব সহজে প্রেক্টিকাল ভাবে সমাধান করতে পারে। কখনো হাইপার হয়না সে।
* নাজনিন বিবাহিত। একটি মেয়ে আছে। সবসময় সুযোগ পেলেই শাশুড়ির বদনাম। তবে ছাত্রী ব্রিলিয়ান্ট।
এক সেমিস্টার আগে ভর্তি হওয়াতে ওরা সবাই ইতোমধ্যে বন্ধু। এদের মধ্যে মিতু আর তানজিমা এক অপরের সাথে বেশী ঘনিস্ট। আরও একজন আছে ওদের দলে, যার নাম রেজা। প্রথম কয়েকদিন সে ক্লাসে অনুপস্থিত।
* রেজা ছোট খাটো নাটক করে। ছাত্র তেমন ভালো না। তার আবার সরকারী চাকরীর খুব শখ।
ওদের গ্রুপ টা ক্লাসের শেষে চা এর দোকানে আড্ডা দেয়। কথার ও খুব মন চায় ওদের সাথে আড্ডা দিতে কিন্তু সে কিছুটা অস্বস্তি বোধ করে ওদের সাথে মিশতে পারেনা। এদিকে সম্প্রতি ব্রেক আপ হওয়াতে মন ও খারাপ থাকে তাই ক্লাস শেষে চুপচাপ বাসায় চলে যায়। এভাবেই চলে যায় ১০-১৫ দিন। এর মধ্যে সেই নাটক করা ছেলে রেজা আসে। একদিন ছুটির পড়ে ক্লাস থেকে বের হওয়ার সময় রেজা কথা কে বলে “চল চা খাই” কথা ও কি মনে করে রাজি হয় আজ। সেই প্রথম ওদের সাথে চা এর দোকানে আড্ডা এবং একে অপরকে জানাশোনা।
এদিকে মিতুর নতুন নতুন প্রেম হয়েছে। হায়রে পাগল সে তার প্রেমিকের জন্য। সারাক্ষণ পাখি পাখি করতে করতে অস্থির। অনেক বেশী কেয়ারিং এবং আবেগি ভালোবাসা। মিতুর মাঝে কথা তার নিজেকে দেখতে পায়। মাঝে মাঝে শুধু দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওদের দুইজন কে দেখে। কথা ঠিক এমন করেই পাগলের মত ভালোবাসে তার প্রেমিক কে
মিতু এখন ক্লাসে অনিয়মিত। এই ফাকে তানজিমার সাথে বন্ধুত্ব গাড় হয় কথার। একদিন তানজিমা অনুপস্থিত থাকায় তন্ময়, তুশিনা আর নাজনিন এর সাথে বসে কথা। ওইদিন ওদের সাথেও অনেক কথা হয় ও আড্ডা। কথায় কথায় তন্ময় কথা কে বোন বানায় কারন তন্ময় এর কোন বোন নেই আর কথার ও কোন ভাই নেই। কথা তন্ময় কে দাদা ডাকতে শুরু করে। ধীরে ধীরে গ্রুপ এর সবার সাথে কথার বন্ধুত্ব গাড় হয়। আর কথা সবার সাথেই খুব ভালো সম্পর্ক রাখে সবসময় তাই কথা কেও সবাই অনেক পছন্দ করে। ক্লাসে নিয়মিত ও পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়াতে কথা হয়ে উঠে অঘোষিত ক্লাস মনিটর ও সবার মধ্য মনি। যে কোন সমস্যা, ক্লাসে পড়া নেওয়া, সবকিছুতে কথা কে ফোন। কোন গেট টুগেদার হলে কথাকেই সবাইকে একত্রিত করতে হয়। কথা ছাড়া এখন আর চলেনা
কথার ও এখন এর ক্লাস ও বন্ধুরাই সব। বাসায় থাকলে একাকী প্রেমিকের জন্য মন খারাপ লাগে কথার। তাই কথা ও অস্থির থাকে কখন ক্লাসে যাবে। একদিন ক্লাস না হলে মন খারাপ হয় ভালো লাগেনা একদম বাসায়।
এভাবেই চলে দিনগুলো। ক্লাস শেষে চা এর দোকানে আড্ডা আর মাঝে মাঝে তানজিমার সাথে কলেজের পাশে শপিং মল এর সিঁড়িতে বসে সুখ দুঃখের আলাপ তারপর বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত হেটে হেটে তানজিমা কে এগিয়ে দিয়ে বাসায় ফেরা।
একদিন কথা সবাইকে ওর বাসায় নিয়ে যায়। কথার মা অনেক সুন্দর করে সবাইকে আদর আপ্যায়ন করে। বন্ধুরা এবং কথার মা সবাই খুশী। মিতু ও তার প্রেমিক ও যায় ওদের বাসায়। কথার মা বাবা দেখতে খুব ইয়াং বলে মিতু আর তার প্রেমিক দুষ্টুমি করে কথার বাবা মা কে ভাই ভাবী বলে
এর মধ্যে গ্রুপ এ আরও যোগ হয় মিতন, শাহজালাল নামের আরও দুটি ছেলে। সবার মধ্যে তানজিমা, তন্ময়, মিতু আর রেজার সাথে কথার ঘনিস্টতা বেশী হয়। ওরা মাঝে মাঝেই কথার বাসায় আসে, কখনো গ্রুপ স্টাডি কখনো আড্ডা
দেখতে দেখতে কেটে যায় দুটি বছর। এই দুই বছরে একসাথে সিনেমা দেখতে যাওয়া হয়েছে, টি এস সি তে আড্ডা, তানজিমা ও তুশিনার জন্মদিন পালন, ধানমন্ডি আট নং এর কাবাব আর লুচি খাওয়া, ইফতার পার্টি, সব মিলিয়ে একদম কথার মনের মত বন্ধু মহল ও ছাত্র জীবন
এম বি এ যখন শেষ হয় তখন দুইটা পার্টি হয়। একটা ওই সেমিস্টারের সবাইকে নিয়ে কলেজে আয়োজন, খাওয়া দাওয়া ও নাচা নাচি আরেকটা শুধু কথার বন্ধুদের ওই গ্রুপ কে নিয়ে বাইরে ডিনার। আর কনভোকেশন সেটা ও অনেক স্মরণীয়।
এখন আর সেই ক্লাস নেই। বন্ধুমহলের আড্ডা নেই
*তানজিমার বিয়ে হয়েছে। সে শ্বশুরবাড়ি। সংসার নিয়ে স্বামী নিয়ে ব্যস্ত।
* তন্ময় একটা সফটওয়্যার কোম্পানি তে চাকরী করে। সে ও বিয়ে করেছে। তার বাবা হওয়ার খবর টা ফেসবুক পোস্ট এর মাধ্যমে জানতে পারে কথা।
* রেজা ও একটা প্রাইভেট কোম্পানি তে চাকরী করে। তার বিয়ে ও বাবা হওয়ার খবর সব জানা যায় ফেসবুক পোস্ট এর মাধ্যমে।
* মিতুর বিয়ে হয়েছে তার প্রেমিকের সাথে। সে স্বামী সংসার নিয়ে মহা খুশী।
* মিতন গাজীপুর একটা ব্যাংক এ চাকরী করে।
* শাহজালাল ও ঢাকার বাইরে চাকরী করে।
* নাজনিন ও স্কুল এ চাকরী, সংসার ও মেয়ে নিয়ে ব্যস্ত।
* তুশিনার বিয়ে হয়নি চাকরী ও করেনা। বড়োলোক বাবার মেয়ে একটার পর একটা কোর্স করে যাচ্ছে সে।
কারও সাথেই তেমন কথা হয়না। না ফোন না ফেসবুক চ্যাট। দেখা ও না । শুধু তানজিমার সাথে কথা হয় আর বাকি সবার খবর শুধু ফেসবুক পোস্ট এর মাধ্যমে জানা যায়। ভাগ্যিস ফেসবুক ছিল তা না হলে সেই রঙিন দিনগুলোর মত বন্ধু গুলো ও হারিয়ে যেত সময় ও ব্যস্ততার স্রোতে । সবাই যার যার জীবন নিয়ে ব্যস্ত।
সবাই আছে, আছে বন্ধুত্ব ও, শুধু নেই সেই চা এর দোকানে আড্ডা
আর কথা? কথার কি হল? ?
তার কি বিয়ে হয়েছে? কিংবা নতুন কোন সম্পর্ক ? কিংবা সেই পুরনো সম্পর্কের নতুন শুরু? আচ্ছা, কথা কি চাকরী করে? কথার বর্তমান অবস্থা কি?
থাক, কথার কথা না হয় অজানাই রইল
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:১০