somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রিয় অপ্রিয় "কেকা ফেরদৌসী"

০৭ ই জুন, ২০১৮ সকাল ১১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




“কেকা ফেরদৌসী” বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট রন্ধন শিল্পী। তবে কেকা ফেরদৌসী কে আমরা অনেকে রন্ধন শিল্পী হিসেবে যতটা না চিনি তার চেয়ে বেশী চিনি তাঁকে নিয়ে করা ফেসবুক ও ইউটিউব ট্রল এর মাধ্যমে। বিশেষ করে রমজান মাস আসলে তো ফেসবুকে তাঁকে নিয়ে করা ট্রল এর ছোটখাটো বন্যা বয়ে যায়।

তাঁকে নিয়ে ট্রলের শুরুটা খুব বেশী দিন আগের ও না। এইতো যখন থেকে তিনি ডেকো নুডুলস নিয়ে রান্নার অনুষ্ঠান শুরু করলেন তখন থেকে যেন বিষয়টা নিয়ে আরও বেশী নাচানাচি শুরু হল।

এটা সত্যি তিনি নুডুলস নিয়ে এমন কিছু অদ্ভুত ও উদ্ভট রেসিপি বানিয়েছেন যেগুলোর নাম আসলেই হাস্যকর যদিও সেগুলোর স্বাদ চেখে দেখা হয়নি।
তবে দেশের একজন সম্মানিত বিশিস্ট রন্ধনশিল্পি কে নিয়ে এই ট্রলের ও হাসি ঠাট্টার বিষয়টা আমার কাছে একটু অতিরিক্ত ও অশোভন ই মনে হয়েছে।



রান্না একটা শিল্প। অনেকটা এক্সপেরিমেন্ট। আমরা নিজেরা ও তো বাড়ীতে টিভি, ইউটিউব, রান্নার বই দেখে কিংবা নিজেদের বুদ্ধিতে মাঝে মাঝে নতুন নতুন রান্নার চেষ্টা করি। আমাদের রেসিপি বা রান্না ও মাঝে মাঝে অনেক ভালো আবার মাঝে মাঝে খুব ই জঘন্য হয়। কেকা ফেরদৌসি ও তেমন আমাদের অতি সহজ ও সহজলভ্য ও প্রিয় একটি খাবার নুডুলস কে কিছুটা অন্যরকম ঢং এ রান্নার চেষ্টা করেছেন। সবসময় একই রকম ভাবে রান্না করার রেসিপি টা কে একটু ভিন্ন ও নতুন মাত্রায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। হতে পারে সেটা নুডুলসের ভর্তা, নুডুলস এর সবজি পিয়াজু কিংবা নুডুলস দিয়ে শর্মা।

নাম শুনেই আমরা অস্থির। চিলে কান নিয়েছে শুনে কানের জায়গায় কান আছে কি নেই তা না দেখেই চিলের পেছনে ছুটছি, কিন্তু কেউ কি সেই রান্না বা রেসিপির স্বাদ নিয়ে দেখেছি কখনো আসলেই সেটা খেতে কেমন। এমন ও তো হতে পারে নামে যতটা হাস্যকর খেতে অতটা জঘন্য হয়তো না। কিংবা যদিও জঘন্য হয় আমাদের নিজেদের রান্না ও কি সবসময় বেহেস্তি খানা হয়? শুধু উনি একজন সেলিব্রিটি বলে তার অপরাধ যেন অমার্জনীয়। সেলিব্রিটি রা ও আমাদের মত রক্ত মাংসে গড়া একই দেশ ও একই গ্রহের মানুষ।



সম্প্রতি তিনি ফুল দিয়ে খাবার পরিবেশন করার জন্য বিখ্যাত হয়েছেন। হয়তো বিষয়টা হাস্যকর তবে নতুন কিছু নিয়ে আসতে হলে কখনো সেটা গ্রহণযোগ্য হয় কখনো হয়না। এটাই স্বাভাবিক। বড় কথা একঘেয়েমি থেকে বেড়িয়ে এসে উনি চেষ্টা করছেন রান্না ও রান্নার পরিবেশন কে নতুনত্ব দিতে।

আমরা হুজুগে মাতি বেশী। আর ফেসবুক হওয়াতে সেই হুজুগ পুরো দেশ জুড়ে ছড়িয়ে যেতে লাগে দুই মিনিট মাত্র। কাউকে বিখ্যাত বানাতে ও লাগে দুই মিনিট আবার একজন সম্মানিত ব্যক্তি কে নিয়ে ট্রল এর হাসাহাসি তে মেতে উঠতে ও লাগে মাত্র দুই মিনিট।
তবে একটা কথা স্বীকার করতে হবে। আমরা আসলেই অনেক মেধাবী জাতি সেটা বুঝা যায় ফেসবুক ও ইউটিউব এর বিভিন্ন ট্রল দেখলে। কি বুদ্ধি একেকজনের যারা এগুলো বানায়। আহারে, এই বুদ্ধি যদি তারা ভালো কোন কাজে ব্যয় করতো। আমার লেখায় মধ্যে যে ট্রল এর ছবি দুইটা দিয়েছি কেকা ফেরদৌসি কে নিয়ে করা এমন হাজারো ট্রল ছবি পাওয়া যাবে গুগল ও ফেসবুক ঘাঁটলে। মানুষকে মজা দেওয়ার জন্য যতখানি সময়, মেধা ও শ্রম ব্যয় করে এসব বানিয়েছেন যারা, ওইটুকু সময়, শ্রম ও মেধা যদি নিজের ব্যক্তিগত, পারিবারিক কিংবা সামাজিক কোন কাজে ব্যয় করতো তাহলে নিজেদের ই তো ভালো হতো।




আমরা যারা কেকা ফেরদৌসী কে নিয়ে ট্রল বানাই ও হাস্যরসে মেতে থাকি তারা কি এটা জানি যে তিনি একজন আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও সম্মান প্রাপ্ত রন্ধন শিল্পী। আমাদের দেশের রান্না ও আমাদের দেশের নাম কে যিনি দেশের গণ্ডি পার করে বিদেশের মাটিতে নিয়ে গিয়েছেন। রান্নার জন্য তিনি আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন। মাতৃভাষা বাংলায় লেখা রান্নার বই “স্বাস্থ্য সচেতন রান্না” বইটির জন্য তিনি ফ্রান্সের ইন্টারন্যাশনাল গরমাল্ড ওয়ার্ল্ড কুকবুক এ্যাওয়ার্ড ২০১০ বেস্ট টিভি সেলিব্রিটি শেফ রেস্ট অফ দা ওয়ার্ল্ড পেয়েছেন। ১৫০ টি দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় লড়ে ২০১০ সালে তিনি এই পুরস্কার জিতেছেন তিনি। এছাড়া ও তিনি যুক্তরাজ্য থেকে পেয়েছেন ব্রিটিশ কারী এ্যাওয়ার্ড।

এইযে বিশিষ্ট এই শিল্পী কে নিয়ে ট্রল বানাচ্ছে যে প্রজন্ম তাদের ও জন্মের আগে সেই ১৯৮৪ সাল থেকে তিনি দেশী বিদেশী রান্না নিয়ে কাজ করছেন।

প্রতি রোজার মাসে চ্যানেল আই তে করা তার রান্নার অনুষ্ঠান টি এ বছর ২০ বছরে পা দিল। হা অনেকে হয়তো বলতে পারেন চ্যানেল আই এর সাথে তার ব্যক্তিগত সম্পর্ক আছে। তবে কথা হচ্ছে যে কোন সাফল্য এর ক্ষেত্রে প্রশংসা ও উৎসাহ দেওয়ার মত মানুষ ও যেমন থাকবে তেমন থাকবে নিন্দুক ও সমালোচনা কারী।

এছাড়া ও পত্র পত্রিকা ও অন্যান্য চ্যানেল এ ও তার রান্নার অনুষ্ঠান প্রচার হয় এবং কেকা ফেরদৌসীর রান্না ঘর নামে তার একটি রান্নার স্কুল ও আছে।
কেকা ফেরদৌসীর লেখা কয়েকটি রান্নার বই-
১. ডায়াবেটিসের মজাদার রান্না
২. স্বাস্থ্য সচেতন রান্না
৩. দেশ বিদেশের রান্না
৪.হারানো দিনের রান্না
৫.সোনালী দিনের রান্না
৬.থাই, চাইনিজ ও ভারতীয় রান্না
৭.মাইক্রোওয়েভ ওভেনে রান্না
৮.ঝট পট আচার
৯.রকমারি নাস্তা
১০.মজাদার রান্না

ব্যক্তিগত জীবনে কেকা ফেরদৌসী চলচিত্র পরিচালক ও চলচিত্র সাংবাদিক মরহুম ফজলুল হক ও কথা সাহিত্যিক রাবেয়া খাতুনের কন্যা। ১৯৬০ সালের আগস্ট মাসে জন্ম তার। স্বামী ইমপ্রেস গ্রুপ এর পরিচালক আব্দুল মুকিত মজুমদার। তার দুই সন্তান সোনালী ও আকাশ।

আর বেশী কথা না বাড়িয়ে পরিশেষে শুধু এইটুকু বলতে চাই, কেকা ফেরদৌসী এর মত একজন আন্তর্জাতিক সম্মাননা প্রাপ্ত গুণী রন্ধন শিল্পী কে নিয়ে ট্রল বানিয়ে হাস্যরস করা টা খুব সহজ কিন্তু নিজের দেশের অতি সাধারন রান্না কে নতুন নতুন ঢং এ নিয়ে আসার চেষ্টা, সেই রান্না কে আন্তর্জাতিক পর্যায় পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার জন্য কতখানি ধৈর্য, শ্রম ও মেধার প্রয়োজন হয় তা কি ভেবে দেখেছি একবার ও ?

না ভাবলে এবার একটু না হয় ভাবি !

বিশিষ্ট এই রন্ধন শিল্পীর প্রতি আমার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।

সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:৩৫
২৭টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×