যেহেতু সনেট কবির উদ্দেশে লেখাটি লেখা তাই লেখার শুরুটা করতে চাই সনেট সম্পর্কে কিছু কথা বলে।
সনেটের সাথে প্রথম পরিচয় হয় স্কুল এ থাকতে মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখা কপোতাক্ষ নদ এর মাধ্যমে। তখন কবিতা কি তাইতো বুঝিনা আবার সনেট? ওরে বাবা ! সেই সনেট পড়তে, তার অর্থ উদ্ধার করতে, অনুশীলনীর প্রশ্ন মুখস্ত করতে, সনেটের নিয়ম আরও কত কি প্রশ্ন এগুলো পড়তে গিয়ে দাত ভেঙ্গে যাওয়ার অবস্থা। আর সনেটের অন্ত্যমিল গুলো পড়তে গেলে তো তোতলামো শুরু হয়ে যেত
ঠিক কোন ক্লাস এ সনেট পড়েছি সেটি মনে নেই তবে স্কুল এ যত পড়া পড়েছি তার মধ্যে সবচেয়ে কঠিন ছিল সেই সনেট এমনকি তা পিথাগোরাসের উপপাদ্য, রসায়ন এর বিভিন্ন ক্রিয়া বিক্রিয়া ও ব্যাকরণ এর নিয়ম এর চাইতে ও কঠিন তখন সনেটের প্রতি কোন রকম ভালোবাসা জন্মেনি । ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি এমন করে কোন রকম শুধু পরীক্ষায় পাশ করার উদ্দেশে পড়া শেষ করি। তারপর আর সনেটের সাথে দেখা হয়নি। দেখা করার সাহসও হয়নি
এবার আসি সনেট লেখার নিয়ম কিংবা সনেটের বৈশিষ্ট্য কি ? এই বিষয়ে বলতে গেলে অনেক কিছু বলত হবে তবে আমি বেশী কিছু বলবো না শুধু দু একটা কথা বলতে চাই।
সনেট বা চতুর্দশপদী কবিতার উদ্ভব হয় ইটালিতে। বাংলা ভাষায় প্রথম সনেট রচনা করেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত। তিনি ইটালির কবি পেত্রার্ক এর সনেট থেকে অনুপ্রানিত হয়ে সনেট লিখেন। এবং তিনিই বাংলাতে এর নাম দেন চতুর্দশপদী কবিতা। সনেট কবিতার চরণ হতে হয় ১৪ টি যার প্রতিটি চরণে আবার সাধারনভাবে থাকতে হবে ১৪ টি অক্ষর। প্রথম ৮ টি চরণকে বলা হয় অষ্টক আর পরবর্তী ৬ টি চরণকে বলা হয় ষষ্টক। অষ্টকে মুলত ভাবের প্রবর্তনা এবং ষষ্টকে ভাবের পরিনতি।
তবে কেউ যদি সনেট নিয়ে আরও বেশী কিছু জানতে চান তাহলে আমাদের আরেকজন শ্রদ্ধেয় ব্লগার
"সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই" ভাইয়ার নিচের লেখা দুইটি পড়তে পারেন।
সনেটের অন্ত্যমিল ও পঙ্ক্তি-বৈচিত্র্য : প্রথম পর্ব
সনেটের অন্ত্যমিল ও পঙ্ক্তি-বৈচিত্র্য : দ্বিতীয় পর্ব
এখন আসি আমাদের প্রিয় সনেট কবির কথায় । সনেট কবির আসল নাম ‘ফরিদ আহমদ চৌধুরী’ । তবে আমি তাকে সনেট কবি বলতেই বেশী পছন্দ করি এবং সনেট কবি বলেই সম্বোধন করি। যদিও কবির আসল নামের টাইটেল আর আমার নিজের আসল নামের টাইটেল এক, “চৌধুরী”, কিন্তু আমি তাকে সনেট কবিই বলবো। তার পরিচয় সম্পর্কে আমার নতুন করে বলার কিছু নেই। কারন আমরা অনেকেই ইতোমধ্যে জানি তাকে। আমাদের আরেকজন প্রিয় ব্লগার “অচেনা হৃদি’ আপু সনেট কবিকে নিয়ে লেখা তার লেখায়ও অনেক কিছু বলেছেন কবি সম্পর্কে। কেউ কবি সম্পর্কে জানতে চাইলে পড়তে পারেন
একজন সনেট কবি
স্কুল এর সেই ভয়ংকর সনেট দেখার পর আর সনেটের সাথে দেখা হয়নি কিন্তু সামুতে আসার পর আবার বহুবছর পর দেখি সেই সনেট কবিতা আমাদের শ্রদ্ধেয় সনেট কবির লেখায় । কিন্তু এই সনেট দেখে মোটেও ঘাবড়ে যাইনি কারন এখানে তো আর কোন শিক্ষক নেই যে সনেট মুখস্ত করতে বলবে । সবচেয়ে বড় কথা সনেট কবির লেখা সনেটগুলো এত নির্মল যে আমি মুগ্ধতা নিয়ে পড়ি আর অবাক হই কিভাবে পারে কবি ?
আমি প্রথমে দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম কারন আমি ভাবতাম যে সনেট কবিতা মানেই পড়তে গেলে আর অর্থ উদ্ধার করতে গেলে দাতভেঙ্গে যাবে এমন কবিতা। কিন্তু সনেট কবি কি নির্মল, স্নিগ্ধ আর কোমলভাবে সনেট কে উপস্থাপন করেন যেন প্রতিটা সনেট আমার মনের মধ্যে এক আলতো ছোঁয়া দিয়ে যায়। এক মৃদু বাতাস আর প্রশান্তি যেন বয়ে যায় আমার মনে
সনেট কবির সনেট পড়ে সনেট সম্পর্কে আমার ধারনা পুরোটাই পালটে যায় এবং সনেট কে ভালবাসতে শুরু করেছি তখন থেকেই ।
সেই ভালোবাসা থেকে একদিন নিজে গুগল এ সনেট নিয়ে কিছু পড়াশোনা করে ভাবছিলাম দেখি তো চেষ্টা করে লিখতে পারা যায় কিনা কিছু হাহা! কিন্তু আমি তো নিয়ম পড়েই অজ্ঞান আর লেখা তো দুরের কথা। তাই দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আমি সেই পথ থেকে ফিরে আসি এবং সেই দুঃসাধ্য সাধন করা আর সম্ভব হয়নি
কিন্তু সনেট কবি কলম ধরলেই যেন একটা সনেট লেখা হয়ে যায়। কি অদ্ভুত ক্ষমতা কবির। তাও আবার ৭৩৫ টি সনেট ? (জুন-২০১৮ পর্যন্ত) আমার তো ভাবলেই মাথা ঘুরিয়ে যায় কিভাবে সম্ভব ?
আর যখন দেখলাম কবি ব্লগের এক একজন করে প্রতিটা ব্লগার কে নিয়ে সনেট লিখছেন তখন তো তার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা আরও বেড়ে যায়। এমনিতে সনেট লেখা চারটি খানি কথা না তার উপর যখন একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে নিয়ে লিখতে হবে তখন তো কষ্ট টা আরও কয়গুন বেশী। আর কতখানি ভালোবাসা থাকলে একজন মানুষ, লেখক, কবি এই মহান কাজটি করতে পারেন তা ভাবতেই তো শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা জাগে মনে ।
সনেট কবির হাজারের বেশী সনেট লেখার ইচ্ছে আছে, আর ১৬০ জন ব্লগারের প্রত্যেককে নিয়ে ৩ টি করে সনেট রচনার মধ্য থেকে সেরাটা নিয়ে ১৬০ সনেটের ‘সনেট কাব্যে সামু ব্লগার’ নামে একটা কাব্য গ্রন্থ ছাপানোর ইচ্ছা আছে কবির। আমি দোয়া করি মহান সৃষ্টিকর্তা শ্রদ্ধেয় কবিকে হায়াত এবং সামর্থ্য দিন যেন তার স্বপ্ন পূরণ হয় আর ভাবতেই কি খুশী লাগে সনেট কবির লেখা সেই বইটিতে আমাকে নিয়েও একটি সনেট থাকবে
এবার আসি খুবই সাধারন একজন মানুষ আর আনাড়ি লেখিকা কথার ফুলঝুরির কথায় কথার ফুলঝুরি মানে আমি, বরাবরই মানুষের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য পাগল আমি মানুষের ভালোবাসা জমা করার অদৃশ্য একটা ব্যাংক এ আমার জন্য সবার হৃদয়ে যে ভালোবাসা তা জমা করতে চাই এবং টাকা পয়সার দিক দিয়ে নয় বরং মানুষের স্নেহ আর ভালোবাসা জমা করে আমি ধনী হতে চাই। এবং আল্লাহ্ এর রহমতে এখন পর্যন্ত, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, কর্মক্ষেত্র, বন্ধু মহল ও পরিবার সবার কাছে থেকেই অনেক আদর আর ভালোবাসা পেয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ! আর সামুও তার ব্যতিক্রম নয় । এখানে আসার পর থেকেই সবার ভালোবাসা পেয়ে আসছি আর আমার ভালোবাসা জমা করার ব্যাংক এও জমা হচ্ছে ভালোবাসা আর আমি হচ্ছি ধনী
ভাবতেই অবাক লাগে, যে আমি মাঝে মাঝে মন চাইলে দু একটা কোনরকম কবিতা লিখতাম সেই আমি এখন ব্লগে লিখি তাও আবার সামুতে আর সামুর বিখ্যাত সনেট কবির কবিতায় আমি । আর আমি কত ভালো আর গুণী লেখকদের সংস্পর্শে আছি। কত ভালোবাসা পাচ্ছি তাদের থেকে যারা আমাকে দেখেনি পর্যন্ত এবং জানেও না ব্যক্তিগত ভাবে। সামুকে অনেক ধন্যবাদ আমাকে এই সুযোগটি করে দেওয়ার জন্য।
সনেট কবির ব্লগারদের নিয়ে সনেট লেখা দেখে আমারও লোভ লাগত, আহ কবি কবে আমাকে নিয়ে লিখবে ? আজ আমার সেই স্বপ্ন পূরণ হল
ব্লগার কবি কথার ফুলঝুরি
আমি একটি কবিতা লিখেছি, যার প্রতিটি চরণের প্রথম অক্ষর মেলালে একটি বার্তা হবে, আমি এক বিশেষ কবির কবিতা দেখে অনুপ্রানিত হয়ে সেটি লিখেছি
প্রতিটি চরণের প্রথম অক্ষরে যখন মনের কথা উঁকি মারে
এবং কাল দ্বিতীয়বারের মত নিজের সেই লেখাকে আলোচিত ব্লগে দেখে অনেক খুশী ছিলাম আরও খুশী হয়েছিলাম এটা জেনে যে , সনেট কবির আমার কবিতার বিষয়টি ভালো লেগেছে এবং তিনিও তার প্রিয়াকে নিয়ে একই ঢং এ একটি সনেট লিখেছেন, আজকে সেটি পোস্ট করেছেন কবি
রাবু (কবি প্রিয়া)
এই লেখাটি সনেট কবির লেখা আমার সর্বকালের সবচেয়ে প্রিয় কবিতা। কারন কবিতাটি কবি তার প্রিয়া কে নিয়ে লিখেছেন এবং কবিতার মধ্যে একটি অসম্ভব সুন্দর বার্তা আছে। কবির লেখা আমার আরও একটি প্রিয় কবিতা হচ্ছে
সাহিত্য কন্যে সস-১ এটি
আমার মত অচেনা হৃদি আপুও লিখেছেন সনেট কবিকে নিয়ে । কিন্তু তাতে কি ? আমিও না হয় লিখলাম কবি কে নিয়ে তাকে নিয়ে যত বলবো ততই যেন কম।
একটা গান আছে “কথা যদি শুরু করি শেষতো হবেনা” ঠিক তেমন আমি যখন লেখা শুরু করি তখন যেন কলম আর থামতেই চায়না । এমনিতে কিন্তু আমি কথা কম বলি বাস্তবে, যদিও দু একজন বিশেষ মানুষ পাশে থাকলে আর যখন মন ভালো থাকে এবং অনেক খুশী থাকি তখন আমার বকবকানি থামতেই চায়না, আমিও হাপিয়ে যাই কথা বলতে বলতে। লিখতেও আমার এখন এত ভালো লাগে তাই হয়তো কলমও থামতে চায়না।
কিন্তু শেষ তো করতেই হবে । আর শেষটা করতে চাই আমাদের সামু ব্লগের সবার প্রিয় আর শ্রদ্ধেয় কবি সনেট কবিকে নিয়ে লেখা আমার কয়েকটি লাইন দিয়ে
নাম তাঁর ফরিদ আহমদ চৌধুরী
কিন্তু আমরা সবাই তাকে সনেট কবি হিসেবে চিনি
সনেটের বিশ্ব রেকর্ড ভেঙ্গেছেন যিনি !
আমাদের সবার প্রিয় সনেট কবি
হৃদয়ে একে যায় ভালোবাসার ছবি
তার সনেটে হয় সামুতে কলরব
তিনি যে আমাদের সামুর গৌরব !
শান্তিপ্রিয় আর নির্ঝঞ্ঝাট মানুষ, যাকে আমরা সবাই ভালোবাসি
তাঁর কাছে থেকে পেতে চাই সনেট, আরও বেশী বেশী !
দোয়া করি কবির স্বপ্ন হোক পূরণ
তিনি আমাদের হৃদয়ে থাকবেন আমরণ !
বিশেষ বার্তা সনেট কবির প্রতি “প্রিয় সনেট কবি, আমার খুব ইচ্ছে কোন এক বিশেষ কবির কবিতার নায়িকা হবার । তার কোন একটা কবিতা লেখার আয়োজনের উপলক্ষ হবার। আমার সেই ইচ্ছে পূরণ হয়নি, হবে কিনা তাও জানিনা, তবে আমি সনেট কবির কবিতার নায়িকা হতে পেরেছি, আমি পেরেছি সনেট কবির একটি কবিতা লেখার উপলক্ষ হতে। ধন্য আমি সনেট কবির এবং সামুর সবার ভালোবাসা পেয়ে।
(লেখায় কোন ভুল ত্রুটি পেলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন কবি)
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:০৭