somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডা. মিথিলার সেই চিরকুট: ‘তোমার অসুখী হওয়ার দরকার নেই’

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আত্মহত্যার পূর্বে স্বামীর উদ্দেশ্যে চিরকুট লিখে গিয়েছিলেন ডা. তানজিলা জাহান মিথিলা (২৮)। মূলত প্রেম করে বিয়ে করা স্বামীর পরকীয়া মেনে নিতে পারছিলেন না তিনি। মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরেই তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নেন বলে অভিযোগ মিথিলার পরিবারের।

এদিকে এই ঘটনায় মিথিলারর মামা খন্দকার শরীফ উদ্দিন বাদী হয়ে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে ডা. মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলার পর ‘অসুস্থ’ হয়ে পড়েছেন ডা.মিজানুর।

একাধিক সুত্রে জানা যায়, ডা. মিজানুর রহমানের সঙ্গে এক সহকর্মীর পরকীয়া ছিল। মাস দুয়েক আগে হাসপাতালের চেম্বারে তাদের দুজনকে অন্য সহকর্মীরা আটক করে। এ বিষয়টি নিয়ে মিজানুর-মিথিলা দম্পতির দাম্পত্য কলহ চলছিল। ডা. মিজানুর ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার।

গত রোববার রাতে হাসপাতালের আবাসিক কোয়ার্টার থেকে মিথিলার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এসময় তার বিছানার ওপর থেকে একটি চিরকুট উদ্ধার করা হয়। যেখানে লেখা ছিল, ‘তোমার অসুখী হওয়ার দরকার নেই’।

পারিবারিক সূত্র জানায়, মিজানুর রহমান চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) থেকে এমবিবিএস পাস করার পর বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে যোগ দেন। মিথিলাও বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করার পর ঢামেক হাসপাতালে ইন্টার্নশিপে যোগ দেন। এই হাসপাতালে কর্মসূত্রে দু’জনের মধ্যে পরিচয়। এক পর্যায়ে প্রণয়ের সূত্রে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের পাশে চিকিৎসকদের ছয় তলা ভবনের নীচতলার ফ্ল্যাটে তারা থাকতেন। মাস দুয়েক আগে মিজানুর রহমানের সঙ্গে তার এক সহকর্মীর পরকীয়া সম্পর্কের খবর হাসপাতালে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকে তাদের দাম্পত্য জীবনে নেমে আসে অন্ধকারের অমানিষা।

প্রতিদিন তাদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ হতো। এ নিয়ে কোয়ার্টারে বসবাসরত অন্য সহকর্মীরাও বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য কয়েকবার বৈঠক করেন। স্বামীকে পরকীয়ার রাস্তা থেকে ফেরাতে না পেরে এক পর্যায়ে নিজে হতাশায় ভুগতে থাকেন। এরই জের ধরে ডা. মিথিলা আত্মহত্যা করেছেন বলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।

তাদের দুজনেরই কর্মস্থল ছিল ঢামেক হাসপাতালে। দেড় বছর আগে পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু, বিয়ের পর তাদের সংসারে শান্তি ছিলনা। বিভিন্ন কারণে কলহ লেগেই থাকতো। সদ্য অনুষ্ঠিত স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের নির্বাচন নিয়ে প্রচণ্ড ব্যস্ত ছিলেন মিজানুর রহমান। মিথিলা তার স্বামীকে বিভিন্ন কারণে রোববার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একাধিকবার ফোন দিয়েছিলেন। কিন্তু, তিনি ফোন রিসিভ করেননি। একাধিকবার মোবাইল ক্ষুদে বার্তা পাঠান। তবুও তিনি কলব্যাক করেননি তিনি। পরে অভিমানে ‘তোমাকে অসুখী হওয়ার দরকার নেই’ বলে একটি চিরকুট লেখেন তিনি। চিরকুটটি তিনি বেডের ওপরে রাখেন। এরপর সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় দড়ি পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন।

স্ত্রীর মৃত্যুর পর মিজানুর রহমান ‘অসুস্থ’ হয়ে ঢামেক হাসপাতলের কার্ডিওলজি বিভাগে ভর্তি হয়েছেন। তবে মামলা এড়াতেই ডা. মিজানুর রহমান গ্রেপ্তার এড়াতে অসুস্থতার কথা বলছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান ডা. অধ্যাপক ওয়াদুদ চৌধুরী জানান, স্ত্রী মারা যাওয়ার কারণে মিজানুর রহমানের হার্টে ব্যথা (পেইন) হচ্ছে। তাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।

তবে শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জামশেদ আহমেদ জানান, আসামি সুস্থ হলেই তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

ঢামেক হাসতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. কাজী মো. আবু শ্যামা জানান, নিহতের শরীরে গলায় দাগ ছাড়া অন্য কোনস্থানে আঘাতের চিহ্ন নেই। কিন্তু নিহতের পরিবার ‘অন্য’ অভিযোগ করায় ভিসেরা পরীক্ষা করার জন্য মহাখালীর রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে।

হাসপাতাল সুত্রে জানা যায়, সোমবার ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে ময়না তদন্ত শেষে ডা. মিথিলার লাশ গ্রহণ করেন তার মামা খন্দকার শরীফ উদ্দিন। এসময় মর্গের সামনে মিথিলার মা রোকেয়া বেগম বার বার মুর্চ্ছা যাচ্ছিলেন। মর্গের সামনে মিথিলা স্বামী ডা. মিজানুর রহমানকে দেখতে পেয়ে রোকেয়া বেগম ‘বিলাপ’ করে বলেন, ‘শুধু তোমার জন্য আমার মেয়ে মারা গেলো। তুমি আমার মেয়ের খোঁজ রাখলে না। তুমিতো আরেকটি বিয়ে করবে। কিন্তু আমার মেয়েকে তো আর ফিরে পাব না।’

মিথিলার বাবার নাম মো. ফিরোজ মিয়া। গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা জেলার সদর থানার মনোহর এলাকায়। মিথিলার মামা খন্দকার শরীফ উদ্দিন বলেন, ‘ছোট থেকে মিথিলা মেধাবী ছিল। স্বপ্ন দেখতো চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করবে। কিন্তু স্বামীর মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে অকালে মারা গেলো!’

সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৫০
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×