somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চশমা

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৭ দুপুর ১:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দীর্ঘ ও ক্ষুদ্র অভিলাষের লাঙল চষে
মাতামাতি, হাত খুলে দরদাম, এ নিয়ে বেশ ঘাম
ঝরেছে দেহে অথচ ক্ষেতে এখনও কর্ষিত নয় মাটি
আমার দিগন্তের জানালা খুলে দেখি চশমায় ঢাকা চোখ
তারপাশে হাহাকারে ঘোরে কৈশোরী রোদ, শিশিরের জলছাপ
একটু একটু করে বাড়ে তৃষ্ণা, কোঠরে অশ্রু
আর শ্যামল মাঠে ঘাসের বুকে শুয়ে থাকা দিনগুলি
আমার কাছে কয়েকটা ভাঙা গ্লাস আছে, একবার ছুঁয়ে দাও
ছেড়া ঘাস আছে, একটু দেখে নাও
আমার আছে সেই দিন, সেই চোরা কাঁপুনি
দেখে দেখে বেলা ভুলে হেঁটে যাওয়া আকাশের পথে
রাত্রির পথে, অঙ্গনে ফোটা ফুলেদের মাঝে, পাখিদের ডাকে
কথা বলে বাড়ী ফেরা
এই আছে দেখো কয়েকপৃষ্ঠা, লেখা আর লেখা
তোমার ফেলে দেওয়া অক্ষর, মেলে দেখা শহর
এইখানে একটু ছুঁয়ে দেখো যন্ত্রের স্বর, চশমার খাপ!
যদি তোমাকে আর কখনই না দেখি
না দেখি এইসব দিন, আকাশের মেঘ
মেঘেদের জল,
আমাদের সব ঠিক রবে, ঠিক রবে শৈশব
একাকী দুপুরে জানালার ধারে কবিতা লেখা
দূর গাঁয়ে জমিনের ঘাস, হাসেদের মৈথুন
নুয়ে পড়া ডালে বিড়ালের ঘরদোর, বৈকালী ভ্রমণ
সব কিছু এমনই রবে কালে কালে মহাকালে
কেউ এসে ঠিকই দেখবে সে খাতা
ঘাসেদের বুকে পায়ের চিন্থ, অন্য কোন পথিক
যেতে যেতে বিড়ালের বাড়ী বসে
করবে জলপান, আকাশের বুকে তখনও মেঘেদের সাথে
পাখিদের কলতান, ঘুরে ঘুরে একটা কিশোর
চশমার বাইরে জমাবে শিশির
ভেতরেও জমবে শিশির
গ্লাসের পরে দুই জলে মিশে
ঠিকই হারাবে তার পোড়া বুকে!

এই সড়কের ঐ পাশে
এই আকাশের এক ধারে
পদভারে লুণ্ঠিত মাটির জমিন চেয়ে থাকে
তার বুকে ক্ষত, তার মুখ নত, ঊর্ধ্বে কিছুটা বিরূপ
রোদেদের মহারাজা
বৃষ্টির দেবী, আকাশ রঙিলা
ঝরে পড়ে আর মুছে যায়
ধুয়ো তুলে উড়ে যায়
সাথে দুই যুগ, দুই মেরু বুক
আলাপের পরে আলাপে ক্ষেপে যাওয়া ঠোঁটে
অসহ্য নিয়ন্ত্রনী চারিধারের দেয়ালে
উচ্চকিত স্বরযন্ত্রের বিদ্রুপ

আমাদের হাতে সন্ধ্যা, দুপুর, বিকেলের জট
লুপ্ত সময়, অধরা প্রহর আর আশাবন্দী প্রেম
তোমার বুকে আরো ক্ষত থামানো আন্দোলন
আরো জোরে চেপে ধরা চাবুক, আরো জোরে মারো
আরো সেঁধিয়ে যাক কেটে দগদগে ঘা
নিষিদ্ধ লোবানে পুড়তে থাকা সম্মোহন
মানুষের মত মানুষ হোক, সামাজিক বোধ
নিয়ে লম্বিত হোক ময়দানে
সেই দুপুরে গাইবে ছন্দে, নিখাঁদ আনন্দে
ভুলে যাওয়া বিকেল, প্রহর, এক যুগলবন্দী
চশমার এই পাশে আমি গ্লাসের ময়লা ঘসে
দেখবো আমার পতিত বিকেল।
দেবে কি? তোমার ফেলা দেয়া চশমা?
এই ষড়যন্ত্রের আগে!

আমার ইদানীং চোখে কিছুটা ঝামেলা হচ্ছে
একটাকে দুইটা দেখি, দুইটাকে চারটে
তোমার তো সেই প্রয়োজন ফুরিয়েছে
কতদিন খালি চোখে দেখো নি চারিধার
তারপরে পৃথিবীর ঘাসেদের প্রান এসেছে
সবুজ হয়েছে প্রতিটি ডগা
আকাশের নীল আরো নীলভ
বাতাসের দেখেছো ঘ্রান
আমি তো সেই কবে থেকে তোমার চোখে
দেখি সব, দেখি আমাকেও
এখন কিছুটা ক্লান্ত হয়েছি
তোমার খুলে ফেলা চশমাটিকে
প্রয়োজন বেশি!

চোখেতে ঝাপটাঝাপটি, ইদুরের দৌড়
মাতালের সাথে মাতালের খেউড়
কোনদিকে দুইতালে দুই হাতে
সাধাসাধি, আশাবাদী, গন্ডগোল
পেছনে জ্বালা, হাড়কালা কেপ্টানো
দুইঅঙ্গে সবসঙ্গে মহাজোট
এখন আমার দৃষ্টি দরকার
দেখার দরকার পরিশোধ
কতটুকু প্রেমে নির্বান এই সকালভোর
রাত্রিদিনের অপেক্ষা
একটা চশমা পেলে বড় স্পষ্ট
দেখা যেতো, তোমার না হয় অনেকটা আছে
আমার দেখো চোখ খালি
দেবে কি এইবার ফেলা দেওয়া একখানি?

অন্যেরা দেখুক বিবর্তন, কয়েকপ্রস্থ শুকনো ভ্রু
স্যাতস্যতে ভিজে যাওয়া মুখ
বিবস্র দেখে নিক ক্রন্দন, দৌর্বল
আহার, সমাহার, বিহার আর সংগম
তাদের থাক পড়ে অজস্র সময় দেখিবার
আমার এইবেলা, সারাবেলা
সবই একাকার, দেখি নাই কিছু চোখে হারাবার
যা দেখি তাই দেখি, আর কিছু নাই পড়িবার
একটু গিয়েছে ম্লান অক্ষির গোলকে ঘূর্ণি
কেবল ফেলে দেয়া চশমার যেকোন একটি
আমাকে আবার দেখাবে
ফেলে আসা দিন, লুটোপুটি!

একদিন পরে অপরিচিত মানবের মত
হঠাৎ উদয় হলো ছিন্নতা, সব মিলে ভিন্নরা
অনন্য, আর আপনেরা হয়ে গেলো পর
পরের মত, দূরের মত যেন ছিল না পরিচয়
কোনকালে, তারপরে আলোগুলো অদ্ভুত হলো
অদ্ভুতভাবে নিয়ন হলো, তারাদের মত তারাদের
মেলা, চোখের আলোয় রঙে রাঙা আর বিন্দুর মত
এক টুকরো জল, টুপ করে হারায় অতল
রাজপথে টুংটাং বিবাগী সাইকেলে একাকী জীবন
ঘোরে চারপাশে ছোটে চারচোখে
এইখানে ছিল একদা বসবাস, হাত ধরে বসে থাকা
এইখানে ছিল চশমার যাপন অবকাশ
একবার ফিরিয়ে দাও, সোনালী ফ্রেম
চশমার খাপে তোলা সব রোদেলা দুপুর
একবার দাও, ভাঙাচোরা চশমা!

মাছরাঙ্গাঃ তোমার ঘরের দুয়ার পরে লাগিয়ো একটা কৃষ্ণচুড়া
রঙের ফাগুন আগুন দিনে আমায় একটু মনে পড়া
ভরবিকালে সন্ধ্যা যবে মৃদুমন্দ দখিন পবন
ভূ-তলেতে পাপড়ি লুটাই, তোমায় করি পদচুম্বন।
তোড়ার মত গোছায় ছিঁড়ে শিয়র পাশে রেখে দিও
ভেবো না আমি ঘুমিয়ে আছি, সবুজ ঘাস নাড়িয়ে নিও।
আলতো করে রাখবে তারে অবহেলার কৃষ্ণচুড়া
ব্যথা যেন না পাই মোটে, দেখিয়ো না আবার কাজের তাড়া
একলা একা আসবে তুমি, আমার সময় ভাগের নয়
সবার কথা তুলবে বটে, আমার কথাই ঊর্ধ্বে রয়।
এখন না হয় আমিই বকি তখন নাহয় তুমিই বোলো
সারাজীবন ইচ্ছে হেরে জয়ের সূচক তোমার র'লো।
কখনও হাসা কখনও কাঁদা কথার মাঝে কথার ছল
রাগলে তথা ঝোঁকের মাথায় কাটিও না অনেক পল।
দুর্বাগুলি জড়িয়ে রবে দেহের মাঝে সবুজ প্রাণ
রিক্ত শিশির সিক্ত রেখে বুঝাব যে বুকের টান।

মাছরাঙ্গাঃ তোমার ঘরের দুয়ার পরে লাগিয়ো গাছ কৃষ্ণচুড়ার
রঙীন সাজে সাজব গাঢ় কষ্ট ভুলে সর্বহারার
পাখিরা যখন শব্দ করে বারেক তাকাও নিকট শাখে
তোমার নাম জপ্ত করি চিরল চিরল পাতার ফাঁকে।
কুজ্জ্বঝটিকার পরত ঠেলে আগুন জ্বলে চার দুয়ার
খোপায় গোঁজা হলুদ হয়ে বোশেখ আসে ফের আবার
আটপৌরে পোশাক গায়ে, উৎসবের ব্যস্ত সাজ
রুটিন করা মিলন থেকে ছোট্ট এই নামটি বাদ
দেখব সেকি বড্ড তাড়া ঘুরিয়ে দিচ্ছ ঘড়ির দম
কৃষ্ণচুড়ার নাজুক শাখা ঝুকিয়ে বলি ওম,ওম, ওম।
তোমার ঘরের দুয়ার পরে লাগিও একটা কৃষ্ণচুড়া
অযতনেই বাড়বে ভাল, অযত্ নেই জীবন সারা।

একদম সেই এগারো ক্লাসের আবেগের কথা
প্রথম চশমার ফ্রেম পছন্দ নিয়ে ঝক্কি
হলো কি তোমার মত, আরেকটু চৌগোলা
দোকানী হন্ত হয়, ডেরাজের পরে ডেরাজের ধুল ওড়ে
চোখে লেগে থাকে তোমার চশমার ফ্রেম
এইবার বুঝি হলো, মাইনাস ওয়ান
তোমার মত চোখে দেখি চশমার বাহিরে
গ্লাসে বিন্দু বিন্দু ধুলো পড়ে
মুছি না বহুদিন, মুছতে পারি না
তুমি ওড়নার আচলে মুছবে বলে
চশমায় দেখবো আমার আয়না
চোখের গ্লাসে ফুটবো আমি !

একদিন আমাদের মত ঘরে ঘরের মধ্যে আমাদের
একদিন হয়তো কোন কালে কোন আড়াল থাকা বিকালে
একদিন চশমায় ঘেরা পৃথিবীর সমতটে
এসব ছিল না, থাকে না বলে!

একদিন হয়তো এই বিশুদ্ধ সময়টুকুর কুলকুচি
হাত পেতে ছোঁয়াবো ঠোটে, চশমা ছেড়ে
একদিন চশমার বন্ধনীতে চোখের সাথে রষ্মির
সন্বন্ধ যাবে ছিড়ে, চোখে খোলা আসমান
ধুমধাম পা পেলে হাঁটবো ঘাসে, সরিষার ক্ষেতে
একদিন এই চশমার আড়াল থেকে মুক্তি দেব
শরীরী বন্দীশ, একদিন খালি চোখে দৌড়ে যাব
সোনালী বিকেলে, বিকেলের দুইতিন ধাপ পেড়ুনো রাতে
একদিন দেখবো, দুইদিন দেখবো, তিনদিন, চারদিন
প্রতিরাতে, প্রাতে, বর্ষায়, রোদে, শীতে আর ভিজে চুপচপে
কথারা কথায় হন্যে হয়ে পালাবে নিশ্চুপ
তোমার ঠোঁটে ছোয়াবো জিভের দস্যি
একদিন চশমাদের রাজত্ব তাড়িয়ে দেবে লেসিক সম্রাট
সেই ভোরে আমার চোখের থাকবে নিকটে!
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ রাত ১০:১০
২২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×