গত শুক্রবারের প্রথমআলো'য় মুহম্মদ জাফর ইকবালের "ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে আনা" ক্যাপশনের লেখাটি পড়ে মর্মাহত হয়েছি। জাফর ইকবাল স্যার আমার অত্যন্ত প্রিয় একজন লেখক। তাঁর লেখার যুক্তি উপস্থাপনগুলি মনে দাগ কাটে। ভাবলাম, ঘড়ির কাঁটা বিষয়ক লেখাটিতে তিনি সরকারকে তিনি কিছু সুপরামর্শ দেবেন যাতে এটা সফলভাবে ও সহজভাবে এদেশে চালু হতে পারে...
কিন্তু না, তিনি এটা চালুর বিরোধিতা করলেন। তিনি ৪/৫টি পয়েন্ট দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করলেন যে, এটা এদেশে চালুর কোন প্রয়োজনীয়তা নেই।
কিন্তু তাঁর একটি যুক্তিও আমার কাছে গ্রহনযোগ্য হলো না। ফলে এই ব্লগপোস্টের অবতারনা...
ক) আমেরিকায় গিয়ে নাকি তিনি প্রথম এই ঘড়ির কাঁটার পরিবর্তন দেখেন। তখন এটাকে জীবনের একটা বড় ধাক্কা হিসেবে তাঁর মনে হয়েছে। এটা চালু নাকি একটা বিরাট দন্ডযজ্ঞ।
স্যারের অবগতির জন্য জানাতে চাই, বাংলাদেশে থেকেও আমার মনে হয় না এটা চালু করা কোন বড় সমস্যা। ১৯ জুন রাতে চালু হলে ২০ জুন সকাল থেকে সব পত্রপত্রিকা, টিভি চ্যানেলে ঘড়ির কাঁটা পরিবর্তনের কথা বললেই হয় (এক ঘন্টা যোগ)। সবকিছু আগের সময় অনুযায়ীই চলবে।
খ) স্কুলের সময় অপরিবর্তিত থাকার কথা বলা হয়েছে। আসলে ৮টার স্কুল ৮টায়ই থাকবে, ৯ টার স্কুল ৯টায়ই থাকবে। সরকার হয়তো একথাটিই বলতে চেয়েছে। তবে ঘড়ির কাটায় এক ঘন্টা যোগ করে তারপর স্কুলে আসতে হবে।
সময় পরিবর্তন হবে একমাত্র নামাজের ক্ষেত্রে। এটা খুব সহজভাবে সম্ভব। সকল নামাজের সময়ের সাথে একঘন্টা যোগ করলেই নতুন নামাজের সময় নির্ধারিত হবে। সরকার এখনও এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়নি সেটাই আশ্চর্যের বিষয়...
গ) জাফর ইকবাল স্যার বলেছেন, আমাদের দেশ বিষুব রেখার কাছাকাছি দেশ। এখানে শীত ও গরমকালের মধ্যে দিনের আলোর পার্থক্য কম। তাই ঘড়ির কাটার পরিবর্তন করে কোন বিশেষ ফল লাভ হবে না।
স্যারের অবগতির জন্য জানাতে চাই, গরমকালে দিনের আলো থাকে প্রায় ১৪ ঘন্টা, আর শীতকালে থাকে সর্বোচ্চ ১০ ঘন্টা। এই ৪ ঘন্টার পার্থক্য কি কম? এখান থেকে একঘন্টা এগিয়ে এনে তার সফল ব্যবহার করলে আমাদের কী ক্ষতিটা হবে? সরকারের তো এই খাতে এক পয়সাও খরচ হওয়ার কথা নয়। দুই পয়সা লাভ হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে ক্ষতি কি?
ঘ) সবশেষে তিনি যে পুরোনো ও নন-টেক যুক্তিটি দিয়েছেন, তাতে কেবল হতাশই হয়েছি। এটা যদি লেখক হুমুয়ুন আহমেদ বলতেন, কিছুই মনে করতাম না। যুক্তরাষ্ট্রের বেল ল্যাবরেটরির সাবেক গবেষকের মুখে এটা কতটা মানানসই? তিনি বলেছেন, ঘড়ির কাটার পরিবর্তন না করে সরকার যদি সব অফিস আদালত, স্কুল কলেজ, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সবাইকে একঘন্টা আগে শুরু করে একঘন্টা আগে শেষ করে দেয়ার নির্দেশ দেয় তবে কাঙ্খিত ফলটি পেয়ে যাবে অনেক সহজে...
স্যারের কথায় একটা ব্যাপারে আশ্বস্ত হওয়া গেল যে "কাঙ্খিত ফল" বলে এখানে একটি বিষয় আছে তাহলে। কিন্তু সেই ফলটি লাভ করতে হলে সরকারের শুধু নির্দেশ দিলেই চলে না। কেউ মানবে তো কেউ মানবে না। আমাদের সরকারের তো তেমন কোন দক্ষতা বা যোগ্যতা নেই যে জনগণকে আইন মানতে বাধ্য করবে। ফলে সমস্যা থেকেই যাবে। তাছাড়া সবচেয়ে ব্ড় ব্যাপার হচ্ছে... লাইফস্টাইলের পরিবর্তনতো হবে না... একটা উদাহরন দিলে আশা করি সহজ হবে...
আমাকে যদি সকাল ৯টার পরিবর্তে সকাল ৮টায় অফিসে আসতে বলা হয় তাহলে কি এটা সহজ কাজ হবে? একঘন্টা আগে ঘুম থেকে উঠতে হবে। খুব কষ্টসাধ্য হবে বৈকি। এখন আমিতো রাত ১২টায় ঘুমাতে যাই। নুতন অফিসের সময় অনুযায়ী আমাকে এখন রাত ১১টায় ঘুমাতে যাওয়া উচিত। কারন সকাল ৬টায় আমাকে ঘুম থেকে উঠতেই হবে।
জাফর স্যারের কথা অনুযায়ী অফিসের শুরু ও শেষ একঘন্টা আগে করা গেলেও আমার রাতের ঘুমাতে যাওয়ার সময় কিন্তু এগিয়ে আনা সম্ভব নয়। ঘড়ির কাটায় পরিবর্তন হলে আমি তখন আপনা আপনি রাত ১১টায় (পূর্বের সময়) ঘুমাতে যাবো।
ডিএসটি চালু হলে বা গরমকালে ঘড়ির কাটায় এক ঘন্টা যোগ করা হলে লাইফস্টাইলে কোন পরিবর্তন হবে না। সবকিছু স্বাভাবিক ভাবে আগের মতই চলবে। বিমানের সময়্ও অপরিবর্তিত থাকবে।
এটা বহু বছর ধরে পরীক্ষিত একটা পদ্ধতি। উন্নত দেশগুলি এর থেকে কাঙ্কিত ফল লাভ করছে। আমরা এখনো শুরু করতে পারিনি...

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



