somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মনোরশ্মি বিদ্যালয়

২৮ শে আগস্ট, ২০১০ ভোর ৪:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছোটবেলা থেকেই আন্টিকে আমার খুব ভালো লাগে। উনি আমাকে খুব ভালোবাসেন। ভালো কিছু রান্না হলে আমাকেও দিয়ে আসেন। যদিও ভালো রান্না তাঁর বাসায় খুব কমই হয়। আমার স্কুলের নতুন বই লাগলে তিনি স্কুল থেকে নিয়ে আসেন। তখন প্রাইমারী স্কুলের বই টিচারদের মাধ্যমে বিতরন হতো। বিক্রি হতো না। উনার একটাই কষ্ট, ছেলে মেয়ে হয় না। মাঝে একজনকে দত্তকও নিয়েছিলেন, কিন্তু তার মা এসে আবার তাকে নিয়ে গেছে। কিছুদিন পর অবশ্য মৃতপ্রায় এক মেয়ে শিশুকে নিয়ে আসেন এক গরীব মানুষের ঘর থেকে, সে এখন অনেক বড় হয়েছে।

আন্টিকে ভালো লাগলেও ভয় পেতাম আন্কেল কে। আন্কেলের সাথে নাকি জ্বিন-পরী থাকে। যখন তখন আমাকে ধরে নিয়ে গিয়ে বন্দী করে রাখতে পারে! ভয় থেকে আন্কেলের ধারে কাছেই যেতাম না। উনাকে সারাদিন দেখতাম সূর্যের দিকে তাকিয়ে আছেন। হাত দুখানা পিছনে বেঁধে নির্বিকার ভাবে তাকিয়ে থাকেন সূর্যের দিকে। কি যে দ্যাখেন আল্লা মালুম!

কিছুদিন পর দেখি আন্টির বাসার সামনে সাইনবোর্ড ঝুলছে, "মনরশ্মি বিদ্যালয়"। এইটা আবার কি! কাছে গিয়ে দেখি লেখা, "এখানে একমাসে সূর্যের আলো হতে প্রাপ্ত মনরশ্মির মাধ্যমে ইংরেজী শেখানো হয়। বিফলে মূল্য ফেরত।" আমি তো খুব খুশী! বাড়ী গিয়ে আম্মুকে বললাম, আম্মু আমি ইংরেজী শিখবো। আম্মু বলে, তোর তো টিচার আছে! আবার কোথায় শিখবি? আমি বলি, না, স্যার অনেক সময় নেয়, আমি এক মাসে শিখবো, মনরশ্মি বিদ্যালয়ে! আম্মু নাম শুনে বুঝলেন। বললেন, না, তুমি যে স্যারের কাছে পড়ছো তার কাছেই পড়। তোমার আর কোথাও যাওয়া লাগবে না। আমার মন টন খারাপ হয়ে গেলো। তবুও ঘুর ঘুর করি আন্কেলের রাস্তার সাথে ঘরটার আশপাশ দিয়ে। এই মনরশ্মি জিনিসটা নিশ্চয়ই মারাত্মক কোন কিছু! কিভাবে আন্কেল শেখায় সেটাই দেখবো। কিন্ত আন্কেল কে একাই মুখে হাত দিয়ে বসে থাকতে দেখি। মাঝে মাঝে রাস্তায় এসে দাঁড়িয়ে সূ্যের দিকে অপলক তাকিয়ে থাকেন।

আব্বু আম্মু লেখালেখি করেন। বেশ কিছু বইও বের হয়েছে। সামাজিক কর্মকান্ডে এলাকায় কিছু নাম ডাকও আছে। একদিন দেখি মহা তোড়জোড়! প্যান্ডেল বাঁধা হয়েছে বাড়ীর পাশের মাঠে। সেখানে মন্চের ওপর গম্ভীর মুখে বসে অনেক জ্ঞানী গুনি জন। কাহিনী কি? মনরশ্মি বিদ্যালয় পদক দেয়া হবে। আরি খাইছে! তা কে পাবে? আমার আব্বু আর আম্মু! ও! /:) অনেক বক্তৃতা আর ভাষনের পর দেয়া হলো সেই পদক। আমি আম্মুর কাছ থেকে চেয়ে নিয়ে দেখি মেডেলের উপর কি যেনো আঁকিবুকি আঁকা। ভাবলাম, এই দাগ গুলো নিশ্চয়ই মনরশ্মি দিয়ে দেয়া হয়েছে! পুরাই ভক্তি চলে এলো।

চললো না সেই বিদ্যালয়। ছাত্র-ছাত্রীর অভেবে মুখথুবড়ে পড়লো। তার কিছুদিন পরই দেখি আন্কলের রাস্তার সাথে রুমের দেয়ালে বিশাল দুইটা হাত আঁকা। তার মাঝে কতগুলো দাগ দিয়ে ভাগ করা, সেখানে লেখা, ভাগ্য, পড়াশোনা, চাকরি, বিবাহ ইত্যাদি ইত্যাদি। উপরে বড় বড় করে লেখা এখানে হাত দেখা হয়। ততদিনে কিছুটা বড় হয়ে গেছি। আমি আর আমার ছোট কাকু খালি হাসাহাসি করি। ছোটকাকু বলে, ঐ ছাগলটা আবার হাত দেখতে পারে নাকি? এর মাঝে আন্কেল আমরা যারা এলাকায় পিচ্চি পাচ্চা ছিলাম তাদের নিয়ে গেলেন গ্রামের বাড়ী। সেখানে বিশাল আয়োজন, মিলাদ হবে। মিলাদের উদ্যেশ্য নাকি জ্বীনকুল কে সন্তুষ্ট করা। আমরা পুংটা পোলাপান হুজুরের বয়ান না শুনে নেমে গেছি পাশের আখ ক্ষেতে। আখ ভাংতেছি আর মনের সুখে কল্পনা করতেছি আখ ক্ষেতের মালিক এসে ক্যামন চিল্লাচিল্লি করবে। গোটা বিশ-তিরিশ আখ ভেংগে নিয়ে এসে আম গাছে উঠেছি সবগুলো মিলে। পাশেই হুজুর বয়ান দিচ্ছে আর আমরা বিভিন্ন ডালে বসে আখ খাচ্ছি আর নজর রাখছি ক্ষেতের মালিক আসে কিনা। একটু পরে দেখি মাঠের মাঝ দিয়ে একলোক বিশাল এক দা হাতে ছুটে আসছে। মানে মানে নেমে ঝেড়ে দৌড় দিবো কিনা ভাবছিলাম আমরা সবাই। এরই মাঝে আন্কেল দেখি লোকটার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। আন্কেল কে দেখেই লোকটা ক্যামন চুপসে গেলো। দা টা ফেলে রেখে এসে হুজুরের বয়ান শুনতে লাগলো। আমরাও ভদ্র ছেলের মতো গিয়ে বসলাম। জীবনে সেইদিন প্রথম দেখলাম আগে মোনাজাত করে পরে সুরা-দরুদ পড়তে হয়। এগুলো নাকি জ্বীনদের সন্তুষ্ট করতে করা লাগে!

ছোট কাকুরে একদিন খুব খুশী খুশী দেখি। জিজ্ঞাসা করতেই বললো তার বিয়ে নাকি ২০০২ সালে হবে। আন্কেল হাত দেখে বলেছে। আমি কাকুর আগের কথা স্মরন করলাম। আম্মু একদিন দেখি হাতে তাবিজ বেঁধে দিচ্ছে। আমি এইসব বিশেষ পছন্দ করতাম না। জিজ্ঞাসা করতেই বললো, এটা নাকি ঐ আন্কেল দিয়েছে। পরে খুলে দেখেছি কি সব আরবীতে হিজিবিজি লেখা, ফেলে দিয়েছিলাম। আম্মু প্রশ্ন করতে বলেছিলাম হারিয়ে গেছে।

আমরা যতই শিক্ষিত হই, মনের মাঝে তবুও এক ট্যাবু কাজ করে। করে মনকে দূর্বল। তখনি আমরা ছুটে যাই ভন্ড জেনেও এসব ধান্দাবাজের করতলে। এখানেই পরাজিত হয় আমাদের সব শিক্ষা আর সচেতনতা।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ২:১৪
৯০টি মন্তব্য ৮৯টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×