somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা, জামাত-শিবিরের গোয়েবলসীয় প্রোপাগান্ডা ও একটি ব্লগীয় কাটাছেঁড়া

২০ শে অক্টোবর, ২০১০ দুপুর ২:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজো আমি বাতাসে লাসের গন্ধ পাই...
______________________________________________

আজ আমি এখানে কাঁদতে আসিনি
আমি আমার বাবার লাশের হিসাব দিতে এসেছি
কিংবা আমার ভাইটি, বড্ড যোয়ান ছিলো
মরে যাওয়ার সময় তো তাদের এসেছিলো না
ক্যামন যেন অদ্ভুতভাবে তারা মরে গেলো
গুলি আর বেয়নেট তখন বড়ই সস্তা
সাথে নারীর ইজ্জতটাও
মায়ের উপরে যখন রাজাকারটা উপগত হয়েছিলো
কাঁদতে পারিনি, অবাক হয়ে চেয়ে ছিলাম
রাজাকারটার মুখ য্যানো হয়ে উঠেছিলো
হায়েনার বিদীর্ণ হাসি মাখা মুখ
বোনটি বড় ছোট ছিলো, না পেরে বলে উঠেছিলাম
এক এক করে আসেন, সহ্য হবেনা যে!
বাবার রক্তে পা ভিজিয়ে
মায়ের পা ছুঁয়ে
বোনের ছেঁড়া ওড়নাটি কপালে বেঁধে
অস্ত্র যখন হাতে তুলে নিলাম-
হায়! সামনে কাদের দেখি?
এযে এ মাটির ই সন্তান, বাবা, ভাই!
তোরা কি মানুষ না?

( আজ আমি এখানে কাঁদতে আসিনি কবিতার লেখকের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলাম )

ব্লগে ব্লগে বাংলাদেশ জামায়াত-শিবিরের শুওরের বাচ্চা গুলো একাত্তরের শহীদদের সংখ্যা নিয়ে উপহাস, পরিহাস এমনকি মুক্তিযুদ্ধকে অপমান করে পোস্ট দিচ্ছে। তাদের মতে, ৩০ হাজার ও নাকি মারা যায়নি আমাদের মুক্তিযুদ্ধে। ভালো। খুব ভালো। শেখ মুজিব ইংরেজী ভালো জানতেন না, এটাও মেনে নিলাম। মেনে নিলাম পাকিস্তানি সৈন্য ও তাদের দেশীয় দোশর জামায়াত ইসলামী বাংলাদেশ উদ্ভূত রাজাকার বাহিনি, ছাত্রসংঘ ( বর্তমানে ছাত্রশিবির ) উদ্ভূত আলবদর ও আলসামস বাহিনীর হত্যায় অরুচি ছিলো। অরুচি ছিলো ধর্ষণ, লুন্ঠন ও অগ্নি সংযোগে। কিংবা হয়তো একাত্তরের গন্ডগোলে কোন মানুষই মারা যায় নাই! সবই বাকশালী অপপ্রচার।

ত্রিশ লক্ষ শহীদ : মিথ নাকি বাস্তবতা ? যুঞ্চিক্তের লেখা পোস্ট টি বাংলা ব্লগ ইতিহাসের অন্যতম এক মাইলফলক। খুব সুন্দর করে বিভিন্ন রেফারেন্স টেনে তিনি ৩০ লক্ষ শহীদের ব্যাপারটি বুঝিয়ে দিয়েছেন। পোস্ট টি সামুতে দিয়েছিলেন লাইট হাউজ । আজ পোস্ট টি দেখতে গিয়ে একটা কমেন্ট চোখে পড়লো-

তার দাবি তিনি তার ইউনিয়নে একটিও শহীদ খুজে পাননি।
ভালো।
শহীদের সংখ্যা বিষয়ক আরো একটি পোস্টে তার মন্তব্য চোখে পড়লো-


বাহ! খুব সুন্দর!

ব্লগে ব্লগে শহীদের সংখ্যা নিয়ে গবেষনাও কম হচ্ছে না! সোনার বাংলা ব্লগে ১৯৭১ এ মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে চলছে ব্যপক গবেষণা। প্রমাণ করে ফেলেছে শহীদের সংখ্যা ত্রিশ হাজার।

ব্লগে প্রকাশিত এমন কয়েকটি পোস্ট নিয়ে ব্লগার সামদ একটি চমৎকার পোস্ট দিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা । গাণিতিক ও যৌক্তিক ভাবে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে মৃতের সংখ্যা কতো হতে পারে। তারপরও যাদের এতো বিশ্লেষণ ভালো লাগছে না, তাদের জন্য একটি সহজ সরল হিসাব করার চেষ্টা করলাম।

সহজ সরল একটি হিসাবঃ

Wikipedia -র Bangladesh Liberation War শীর্ষক প্রবন্ধে দেখা যাচ্ছে এই যুদ্ধে মুক্তি বাহিনীর ১,৭৫,০০০ যোদ্ধা ও ভারতীয় সেনার ২,৫০,০০০ সৈনিকের সাথে পাকিস্তানের ৩,৬৫,০০০ সৈনিক ও ২,৫০,০০০ আধা-ফৌজের যুদ্ধ হয়েছিল।

১৬ই ডিসেম্বর আত্মসমর্পন করেছিলো ৯০ হাজার হানাদার। ধরি বাংলাদেশে এসেছিলো ১ লক্ষ সৈন্য। দীর্ঘ নয় মাসে যদি ১ লক্ষ সৈন্য ৩০ লক্ষ মানুষ হত্যা করে থাকে,

৩০ লক্ষ শহীদ
------------------ = ৩০ জন।
১ লক্ষ সৈন্য

অর্থাৎ প্রতিজন নয় মাসে হত্যা করেছে ৩০ জন বাংলাদেশীকে। প্রতিমাসে হিসাব করলে সংখ্যাটি দাড়ায় ৩ দশমিক ৩৩ করে। ৩ জন করেই ধরলাম।

দাঁড়ালো কি? প্রতিটি সৈন্য এক মাসে হত্যা করেছে মাত্র ৩ জন কে।

খুব বেশী মনে হচ্ছে? না, আমার কাছে কমই মনে হচ্ছে। তার কাছেও কম মনে হবে, যে পিতার লাস খুঁজতে নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে নদীর পানিতে হাজার হাজার লাস ভেসে যেতে দেখেছে। যে তার সমস্ত গ্রামকে চোখের সামনে পুড়ে যেতে দেখেছে, দেখেছে ৪০০-৫০০ মানুষকে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করতে।

আজ যখন দেয়ালে দেয়ালে নিজামী, মুজাহিদ, গোলাম আজম আর সাঈদীর মুক্তির দাবিতে পোস্টার দেখি, তখন কাঁদতে ইচ্ছা করে, অক্ষম আক্রোশে পাগল হয়ে যেতে ইচ্ছা করে, গুলি করে মারতে ইচ্ছা করে কুত্তার বাচ্চাগুলোকে। ইসলামের নাম ধরে যখন এইসব শুওরের বাচ্চার গেলমানি করতে দেখি তখন যা ইচ্ছা করে তা প্রকাশ করার ভাষা আমার জানা নাই। আল্লাহ এদের কোন পদার্থ দিয়ে তৈরী করেছেন তাও জানতে ইচ্ছা করে।


এরা পারে মায়ের ধর্ষণকারীর সাথে বুকে বুক মেলাতে, বোনের রক্তাক্ত ওড়না মাথায় বেঁধে নারায়ে তাকবীর হুংকার দিয়ে ঝাপিয়ে পড়তে, বাপের লাসের ওপর দিয়ে হেটে গিয়ে হত্যাকারীর পদলেহন করতে।

থুতু তোদের মুখে, মুতে দি তোদের মুখে, হেগে দি তোদের মুখে। তোরা যে থালে খাস, সেই থালে হাগতে পারিস। তোদের বিচার কোন সরকার করবে না, আমরাও করার ক্ষমতা রাখি না, কোন শাস্তি দেবো তাও বলতে পারি না। তোরা অনন্তকাল দগ্ধে মরবি যদি নরক থেকে থাকে সেই নরকে।

পাকিস্তানি এক কবি নিজেই বলেছেন,
“How can I embellish this carnival of slaughter,
how decorate this massacre?”
“the bitterness now so clear that
I had to listen when my friends
told me to wash my eyes with blood.”
ফৈয়াজ আহমেদ ফৈয়াজ

তারা নিজেরাই যখন ক্ষমা চাচ্ছে,


তখন এই দেশের মানুষ হয়েও তোরা বলতে চাস কোন গনহত্যাই হয় নি!

আরো একটা কথা বলে রাখি শোন, আওয়ামীলীগ যে বিচার করছে এইটা আই ওয়াস মাত্র। ১১০০০ এর মাঝে মাত্র ৫ জনকে ধরেই তারা ভাব দেখাচ্ছে বিচার হয়ে যাবে। বাদবাকি কি ধোয়া তুলসি পাতা?

কেনো করবে না জানিস? করলে তাদের দলেরই কয়েকজন খুব কাছের লোক বিপদে পড়ে যাবে।এই বার তারা বিচার শেষ করবে না। সামনের বার বিএনপি আসতেছে ক্ষমতায়, তারা বিচার স্থগিত রাখবে। তারপরের বার আবার এই একই ধুয়া তুলে লীগ আবার ক্ষমতায় আসবে, কিন্তু ততদিনে কোন যুদ্ধাপরাধী বেঁচে থাকবে না।

থুঃ তোদের রাজনিতীতে। আমাদের সাধারন জনগনের মন মানসিকতা তোদের নোংরা মন কোনদিনই বুঝবে না। তাই তোরা ইতিহাসের আস্তাকুড়েই পড়ে থাকবি।





সিপিজি প্রোডাকশন হোম।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ২:০৬
৩৯টি মন্তব্য ৩৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×