somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফিনল্যান্ডে উচ্চশিক্ষার ব্যাপারে কিছু তথ্য

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১১ ভোর ৫:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি ফিনল্যান্ডে আসার পর পরিচিত অনেকেই এই ব্যাপারে জানতে চেয়েছেন।সবাইকেই আমি ব্যাক্তিগত ভাবে রিল্পাই দেওয়ার চেষ্টা করেছি। যদিও এইটা অনেক সময় সাপেক্ষ ছিল। তাই চিন্তা করলাম যে ব্লগ লিখলে হয়তো সবার জন্য আরো উপকারি হবে।

ফিনল্যান্ডে সাধারনত ২-টা ভাগঃ
১. আন্ডারগ্রাডঃ- ব্যাচেলর
২. পোষ্টগ্রাডঃ- মাস্টার্স এবং পি এইচ ডি

আন্ডারগ্রাডঃ

ওদের আন্ডারগ্রাড গুলো মূলত পলিটেকনিক বেইজড। এইখানে আন্ডারগ্রাডের জন্য ভর্তি পরিক্ষা দেয়া লাগে।ভর্তি পরিক্ষা দেওয়ার জন্য প্রথমে অনলাইনে আবেদন করতে হয়।ফরম পুরন করার সময় পলিটেকনিক /বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রমানুসারে ৪-টা চয়েস দেওয়া যায়। এরপর এস.এস.সি, এইস.এস.সি-এর মার্কশীট, সার্টিফিকেট ও অন্যান্য প্রয়োজনিও কাগজ পত্র সহ, যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম চয়েস সেই ঠিকানায় পাঠিয়ে দিতে হবে। এরপর ওরা ভর্তি পরিক্ষার তারিখ, সময় জানিয়ে আপনাকে চিঠি পাঠাবে। ভর্তি পরিক্ষার প্রাপ্ত নম্বরের উপর ভিত্তি করে আপনার চয়েস লিস্টের যেকোন একটাতে ভর্তির সুযোগ পাবেন। ভর্তি পরিক্ষা এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে হয়ে থাকে। আর অনলাইন আবেদন করার শেষ সময় সাধারনত ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহ। এই লিঙ্কে আরো বিস্তারিত জানতে পারবেনঃ Click This Link

আন্ডারগ্রাডের ব্যাপারে এরচেয়ে বেশি আমার ধারনা নাই। যদি পরবর্তিতে আরো তথ্য পাই, তাইলে যোগ করবো।

এই পোস্টে আরো অনেক দরকারি তথ্য পাওয়া যাবেঃ Click This Link

মিনহাজ ভাইকে অনেক ধন্যবাদ তার সুন্দর এবং তথ্যবহুল পোস্টের জন্য।

পোষ্টগ্রাডঃ

পোষ্টগ্রাডে ভর্তির জন্য কোনো পরিক্ষা দেওয়া লাগেনা। অনলাইনে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের যোগ্যতা অনুযায়ী প্রয়োজিনয় কাগজপত্র ওদের ঠিকানায় পাঠিয়ে দিতে হবে। এরপর আপনার এডমিশন কনফার্ম হলে ওরা আপনাকে মেইল দিয়ে জানাবে। এমনকি এডমিশন কনফার্ম হওয়ার পর আপনি চাইলে ১ বছর ডেফার/পোস্টপন্ড করতে পারবেন।

ফিনল্যান্ডে একটা সুবিধা হল আপনি ফাইনাল ইয়ার স্টুডেন্ট হলেও আবেদন করার সুযোগ পাবেন। যেমন আপনার ফাইনাল রেজাল্ট পেতে পেতে যদি আবেদনের তারিখ শেষ হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে কাগজপত্র পাঠানোর সময় আপনি বিশ্ববিদ্যালয়/ডিপার্টম্যান্ট থেকে ইস্যু করা একটা লেটার পাঠাতে পারেন, যেখানে উল্ল্যেখ করা থাকবে যে, আপনার রেজাল্ট খুব তাড়াতাড়ি পাবলিশ করা হবে। আর যেহেতু ট্রান্সক্রিপ্ট পাওয়ার সুযোগ নাই, তাই যতটুকু পর্যন্ত রেজাল্ট পাবলিশ হইসে, সেইগুলার কপি সাথে পাঠালেই হবে।

আমি তাই করছিলাম। এবং আমি এইখানে এসে ক্লাস শুরু ২ মাস পর আমার মেইন ট্রান্সক্রিপ্ট জমা দিসি। এইখানে রুলস গুলো স্টুডেন্টদের জন্য খুবই নমনীয়।

আবেদন করার সময় মটিভেশন লেটার/স্টেইটমেন্ট অফ পারপাস টা ভাল করে লিখতে হবে। আর রেকমেন্ডেশনের ক্ষেত্রে প্রফেসরদের রেকমেন্ডেশন হলে ভাল হয়। কারন এডমিশনের ক্ষেত্রে ওরা এই দুইটা ব্যাপারে গুরুত্ত বেশি দেয়।

# আবেদনের সময়ঃ ডিসেম্বর - ফেব্রুয়ারি (কোন কোন টায় মার্চ পর্যন্ত)
# সাধারনত যা যা লাগেঃ
- মটিভেশন লেটার/ স্টেইটমেন্ট অফ পারপাস
- ২ টা রেকমেন্ডেশন লেটার
- টোফেল/আই.ই.এল.টি.এস
- জি.আর.ই (সাবজেক্ট ভেদে)
এছাড়া প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব সাইটে আবেদনের স্পেসিফিক রিক্যয়ারমেন্ট দেওয়া থাকে। তাই আবেদন পত্র পাঠানোর সময় ভাল করে দেখে নেবেন।

আরেকটা জিনিস এইখানে বলে রাখা ভাল। আবেদনের সময় সবকিছু নিজে নিজে করাই ভাল। কোন এজেন্ট বা দালাল না ধরাই ভাল। প্রসেসিংয়ের এই কাজ গুলাই ওরা করবে, মধ্যেথেকে আপনার কাছ থেকে টাকা নিবে।

এখন আসি টাকা-পয়সার ব্যাপারেঃ
সাধারনত ফিনল্যান্ডে মাস্টার্সে ফান্ড পাওয়া যায় না (ইরাসমাস ব্যাতিত)। পি.এইচ.ডি এর জন্য ও ফান্ড পাওয়া বেশ কঠিন। কিন্তু এইখানে মাস্টার্স করার পর পি.এইচ.ডি'র জন্য আবেদন করলে সহজে ফান্ড পাওয়া যায়। এইখানের সুবিধা হইল যে কোন টিউশন ফী দেওয়া লাগে না (শুধু মাত্র আলতো বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া, ২ নং লিঙ্ক দ্রষ্টব্য, এইটাতে ২০১১- ২০১২ থেকে টিউশন ফি দিয়ে দিছে।মানে এই বছর যারা আসবে তাদেরকে দিতে হবে। বছরে ৮০০০ ইউরো! /:)) শুধু থাকা খাওয়ার খরচ নিজে ম্যানেজ করা লাগে। থাকা খাওয়ার জন্য মাসে গড়ে ৩৫০-৩৭০ ইউরো খরচ পড়ে। তবে শেয়ারে থাকলে খরচ অনেক কম পড়বে।

# রোম ভাড়াঃ ২২০-২৪০ ইউরো
# খাওয়াঃ ৮০-৯০ ইউরো
# অন্যান্যঃ ২০-৪০ ইউরো

এই খরচের হিসাবটা একজনের একা থাকার ক্ষেত্রে। শহর ভেদে কম-বেশি হতে পারে।

থাকার জন্য স্টুডেন্ট এপার্টমেন্ট আছে। সাধারনত সবাই এটাতেই থাকে। আর স্টুডেন্ট এপার্টমেন্ট গুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের আশে পাশে হওয়াতে যাতায়াত খরচ নাই বললেই চলে। যেমন আমার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে বা নিত্যদিনের বাজার সদাই কিনতে কোন যাতায়াত খরচ লাগে না। কারন বিশ্ববিদ্যালয় বা ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে হেটে যেতে ৪/৫ মিনিট। সবই খুব কাছাকাছি দুরত্তে। তারপরও মাসে ১০/১৫ ইউরো বাস কার্ডে খরচ হয়।

আয়ের উৎসঃ
এইখানে স্টুডেন্টরা পার্টটাইম কাজ করার সুযোগ পায়। সপ্তাহে ২৫ ঘন্টা। তবে নতুন অবস্থায় এসে কাজ পেতে সমস্যা হয়। তাই আমি বলবো প্রথমে আসার সময় ৬-৮ মাসের থাকা খাওয়ার খরচ নিয়ে আসা ভাল।

পার্টটাইম কাজ সাধারনত ক্লিনিং কোম্পানি গুলোতেই হয়। কারন অন্যান্য কাজের জন্য ভাষাটা প্রধান সম্যসা। ফিনিশ ভাষা না জানলে অন্যান্য কাজ গুলো সাধারনত পাওয়া যায় না।

আই.টি স্টুডেন্টদের আরেকটা সুবিধা আছে। ডেমলা নামে একটা ওরগানাইজেশন আছে, যারা বিভিন্ন সফটওয়্যার কোম্পানি থেকে প্রজেক্ট নিয়ে স্টুডেন্টদের দিয়ে করিয়ে থাকে। অনেকটা ফ্রিল্যানসিংয়ের মত। আর এইরকম কাজের অভিজ্ঞতা পরবর্তিতে জবের জন্য ভাল হয়। আমি বর্তমানে এইরকম একটা প্রজেক্টে কাজ করতেসি। এমনকি আপনার কোন একাডেমিক প্রজেক্টের ক্রেডিট এই প্রজেক্টে ঢুকাতে পারবেন।
ডেমলার ব্যাপারে জানতে হলেঃ http://www.demola.fi

আইটির জন্য ফিনল্যান্ড ভাল অপশন। জবের অবস্থাও ভাল। নকিয়া ছাড়াও অন্যান্য সফটওয়ার ফার্মে কাজ পাওয়ার ভাল সুযোগ আছে। প্রথম বছর হয়তো একটু কষ্ট হবে। কিন্তু নির্দিষ্ট পরিমান ক্রেডিট সম্পন্ন করার পর জব/ফান্ডিং ম্যানেজ হয়ে গেলে তখন আরাম-ই আরাম!

আবার ৫০-৬০ ক্রেডিট সম্পন্ন করার পর টি.এ শিপের জন্য আবেদন করা যায়। আর টি.এ হলে মাস্টার্স থিসিস ও পরে পি এইচ ডি ফান্ডিং এর জন্য সুবিধা হয়।

মাস্টার্স করতে দেড় থেকে দুই বছর আর ১২০ ক্রেডিট সম্পপন্ন করা লাগে। কিন্তু আপনি চাইলে বেশি সময় ও নিতে পারেন। চার বছরের মধ্যে শেষ করলে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় গুলো দুই বছরের মধ্যে করার জন্য রেকমেন্ড করে। আর পি এইচ ডি'র ক্ষেত্রে সময়টা সাড়ে তিন থেকে ছয় বছর।

আপনি কোন পথে যাবেন?

# আপনার যদি চাকুরি করার ইচ্ছা থাকে, তাহলে মাস্টার্সই যথেষ্ঠ। এমনকি আপনি ৯০ ক্রেডিট সম্পন্ন করার পর, থিসিস করার পাশাপাশি জবের জন্য আপ্লাই করতে পারেন।

# আর যদি আপনি একাডেমিক লাইনে থাকতে চান তাহলে, টি এ শিপটা আপনার জন্য ভাল। এটা নির্ভর করছে আপনার উপর।

এইখানে কয়েকটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব সাইটের লিঙ্ক দিলামঃ

১. Click This Link

২. Click This Link

৩. http://www.uta.fi/admissions/

৪. https://www.jyu.fi/en/

৫. http://universityadmissions.fi/ (এইটা একটা সেন্ট্রাল এডমিশন সাইট।)

৬. Click This Link

আমার তথ্য গুলো বেশিরভাগই প্রকৌশল ও বিজ্ঞান বিষয়ের উচ্চতর শিক্ষার ব্যাপারে। তবে উপরের লিঙ্ক গুলোতে ব্রাউজ করলে আশা করি অন্যরাও রেলেভেন্ট জিনিস গুলো পাবেন।

এডমিশনের পর পরবর্তি প্রসেসিং নিয়ে আরেকটা পোস্ট দেওয়ার ইচ্ছা আছে। দেখা যাক কি হয়! আর এইটা আমার প্রথম পোস্ট। তাই এলে-বেলে হইতে পারে। হয়তো ঠিকমত সাজাইতে পারি নাই। কোন ভুল থাকলে ক্ষমা করবেন। পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ ভোর ৫:২৪
৩৪টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসের নায়িকাকে একদিন দেখতে গেলাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৫

যে মেয়েকে নিয়ে ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসটি লিখেছিলাম, তার নাম ভুলে গেছি। এ গল্প শেষ করার আগে তার নাম মনে পড়বে কিনা জানি না। গল্পের খাতিরে ওর নাম ‘অ’ ধরে নিচ্ছি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

×