(৪র্থ পর্বের পর)
{মুসলিম বিদ্বেষ ওদের জাতিগত। এ অভ্যাস ওদের বহু পুরান।
এ অভ্যাস ওদের দীর্ঘদিনের
এ অভ্যাস ওদের আদি ও অভয়ক্রম।
মুসলমানদেরকে অশ্লীল অশ্রাব্য ভাষায় গালি প্রদান এবং মুসলমানদের প্রতি মিথ্যা কালীমা লেপনের নিকৃষ্ট নজির স্থাপন করেছে। বঙ্কিম, ঈশ্বরচন্দ্র, নবীনচন্দ্র, রঙ্গলাল, হেমচন্দ্র, দীনবন্ধু মিত্র, দামোদর মুখোপাধ্যায়, থেকে খোদ রবীন্দ্রনাথসহ সব হিন্দু কবি-সাহিত্যিকই।
বাংলা সাহিত্যে এসব হিন্দু কবি সাহিত্যিকদের ঘৃণ্য সাম্প্রদায়িকতা ও চরম বিদ্বেষের শিকার হয়েছেন মুসলমানরা। বঙ্কিমচন্দ্র তার শেখা প্রায় সবকটি গালি ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাসে মুসলমানদের উদ্দেশ্যে প্রয়োগ করেছে।
‘ম্লেচ্ছ’ হতে শুরু করে ‘যবন’ পর্যন্ত। এমনকি প্রাচীনকালে বৌদ্ধদের দেয়া ‘নেড়ে’ গালিটাকেও সে উহ্য রাখেনি।
শুধু তাই নয়, তারা ম্লেচ্ছ, যবন, নেড়ে ছাড়াও মুসলমানদের পাষ-, পাপিষ্ঠ, পাপাত্মা, দুরাত্মা, দুরাশয়, নরাধম, নরপিশাচ, পাতকী, বানর, এঁড়ে, দেড়ে, ধেড়ে, অজ্ঞান, অকৃতজ্ঞ, ইতর এ জাতীয় কোনো গালি দিতে বাদ দেয়নি।
তন্মধ্যে রবীন্দ্রনাথ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে মুসলিম বিদ্বেষ ও হিন্দু সাম্প্রদায়িক শক্তিকে চাঙ্গা করার জন্য অনেক গল্প, প্রবন্ধ, উপন্যাস, কবিতা রচনা করেছে। রবীন্দ্রনাথের লেখনি তার সমকালীন হিন্দুদেরকে চরম মুসলিমবিদ্বেষী হতে উৎসাহিত করেছিল।
রবীন্দ্রনাথ কী রকম ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী ছিলো, তা একটা প্রমাণেই বুঝা যাবে।
তার ‘রীতিমত নভেল’ নামক ছোটগল্পে মুসলিম চরিত্র হরণ করেছে এভাবে-
“আল্লাহো আকবর শব্দে বনভূমি প্রতিধ্বনিত হয়ে উঠেছে।
একদিকে তিন লক্ষ যবন সেনা অন্য দিকে তিন সহস্র আর্য সৈন্য।
... পাঠক, বলিতে পার ...
কাহার বজ্রমন্ডিত ‘হর হর বোম বোম’ শব্দে
তিন লক্ষ ম্লেচ্ছ কণ্ঠের ‘আল্লাহো আকবর’ ধ্বনি
নিমগ্ন হয়ে গেলো।
ইনিই সেই ললিতসিংহ।
কাঞ্চীর সেনাপতি।
ভারত-ইতিহাসের ধ্রুব নক্ষত্র।”
শুধু ‘রীতিমত নভেল’ই নয়। রবীন্দ্রনাথ তার ‘সমস্যা’ ‘পুরান’, ‘দুরাশা’ ও ‘কাবুলীওয়ালা’ গল্পে মুসলমানদের জারজ, চোর, খুনি ও অবৈধ প্রণয় আকাঙ্খিণী হিসেবে উপস্থাপন করেছে। (নাঊযুবিল্লাহ!)
বিশেষ করে ‘দুরাশা’ গল্পের কাহিনীটি আরো স্পর্শকাতর। এখানে দেখানো হয়েছে, একজন মুসলিম নারীর হিন্দু ধর্ম তথা ব্রাহ্মণদের প্রতি কি দুর্নিবার আকর্ষণ এবং এই মুসলিম নারীর ব্রাহ্মণ হবার প্রাণান্তকর কোশেশের চিত্র।
রবীন্দ্রনাথ এমন এক ব্যক্তি যে ভারতবর্ষব্যাপী শুধুমাত্র হিন্দুদের নিয়ে একক ও ঐক্যবদ্ধ হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আকাঙ্খা পোষণ করতো। মহারাষ্ট্রের ‘বালগঙ্গাধর তিলক’ ১৮৯৫ সালের ১৫ এপ্রিল ‘শিবাজী উৎসব’ প্রতিষ্ঠা করেছিল উগ্র হিন্দু জাতীয়তা ও সাম্প্রদায়িকতা প্রচার ও প্রসারের জন্য।
‘সঞ্চয়িতা’ কাব্যগ্রন্থে ‘শিবাজী উৎসব’ কবিতায় যবন, ম্লেচ্ছ রবীন্দ্রনাথ এ আকাঙ্খা করে বলে-
“এক ধর্ম কাব্য খ- ছিন্ন বিক্ষিপ্ত ভারত বেঁধে দিব আমি .......
........ ‘এক ধর্ম রাজ্য হবে এ ভারতে’ এ মহাবচন করিব সম্বল।”
‘শিবাজী-উৎসব’ নামক কবিতায় রবীন্দ্রনাথ আরো বলেছে শিবাজী চেয়েছে হিন্দুত্বের ভিত্তিতে ভারতজুড়ে এক ধর্ম রাজ্যের প্রতিষ্ঠা। কিন্তু বাঙালিরা সেটা বোঝেনি। না বুঝে করেছে ভুল।
কিন্তু এতসব ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী সাম্প্রদায়িক বক্তব্য দেয়ার পরও, এতসব লেখার পরও এদেশের মুসলিম নামধারী রবীন্দ্র পূজারী মহলের বোধোদয় হচ্ছে না! }
(২য় পর্বের পর )
শিবাজী উৎসব সম্পর্কে গিরিরাজা শঙ্কর রায় চৌধুরী লিখেছে, “তিলক প্রবর্তিত শিবাজী উৎসবে কবিতা, গল্প-উপন্যাস, গান ও নাটকে সে চেতনারই নানা ভাবে প্রকাশ ঘটে। তরঙ্গ বাংলাদেশেও আসিয়া লাগিয়াছিল। সখারাম গণেশ দেউস্কর সম্ভবত ১৯০২ সালে মারাঠার এই বীরপুজা বাংলাদেশে প্রবর্তিত করে। তদবধি মহাসমারোহে কয়েকবার কলিকাতা ও মফস্বলে শিবাজী উৎসবের সাম্বাৎসরিক অধিবেশন হইয়াছিল। রবীন্দ্রনাথ, বিপিনচন্দ্র প্রভৃতি সকলেই এই উৎসবে যোগদান করিয়াছিল। রবীন্দ্রনাথের শিবাজী উৎসব সম্বন্ধে কবিতাটি বাংলা সাহিত্যে অমর হইয়াছে। (সূত্রঃ গিরিরাজা শঙ্কর রায় চৌধুরী, শ্রী অরবিন্দু ও বাংলার স্বদেশী যুগ, নবভারত পাবলিশার্স, কোলকাতা, পৃঃ ২৭৩)।
ভারতে সতিদাহ প্রথাকে আইন করে বিলুপ্ত করে ব্রিটিশ সরকার। বিধবা হিন্দু রমনীদের বাঁচানো নিয়ে কবিতা বা প্রবন্ধ না লিখলেও
ম্লেচ্ছ, অস্পৃষ্য, যবন, রবীন্দ্রনাথের নজর পরে তাদের গো’ দেবতা বাঁচানোর দিকে। তখন সে গো’ দেবতা বাঁচানোর মিশন নিয়ে ময়দানে নামে শিবাজীর অন্ধভক্ত মহারাষ্ট্রের সাম্প্রদায়িক নেতা ‘বালগঙ্গাধর তিলক’। সে ১৮৯৩ সালে প্রতিষ্ঠা করে “গোরক্ষিণী সভা”। গরু বাঁচাতে গিয়ে তখন ভারত জুড়ে শুরু হয় মুসলিম হত্যা। ম্লেচ্ছ, অস্পৃশ্য, যবন, রবীন্দ্রনাথ, তিলকের এ মিশনে একাত্ম হয় এবং তার জমিদারী এলাকায় গরু কোরবানী নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এই হল, হিন্দু বাঙালী রবীন্দ্রনাথের রেনেসাঁ চেতনা।
ঐতিহাসিক নীরদ চৌধুরী তাই লিখেছে, “রামমোহন থেকে রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত সকলেই জীবনব্যাপী সাধনা করেছে একটি মাত্র সমন্বয় সাধনের, আর সে সমন্বয়টি হিন্দু ও ইউরোপীয় চিন্তাধারার। ইসলামী ভাবধারা ও ট্রাডিশন তাঁদের চেতনাবৃত্তকে কখনও স্পর্শ করেনি। -(সূত্র, Nirod Chandra Chowdhury, Autobiography of an Unknown Indian, p 196.)
ম্লেচ্ছ, অস্পৃশ্য, যবন রবীন্দ্রনাথকে তাই শিবাজীকে হিরো রূপে পেশ করতে হয়েছে। ম্লেচ্ছ, অস্পৃষ্য, যবন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর “শিবাজী উৎসব” কবিতায় শিবাজীর বীরত্বে মুগ্ধ হয়ে লিখেছে,
“হে রাজ-তপস্বী বীর, তোমার সে উদার ভাবনা
বিধর ভাণ্ডারে
সঞ্চিত হইয়া গেছে, কাল কভু তার এক কণা
পারে হরিবারে?
তোমার সে প্রাণোৎসর্গ, স্বদেশ-লক্ষ্মীর পূজাঘরে
সে সত্য সাধন,
কে জানিত, হয়ে গেছে চির যুগ-যুগান্তর ওরে
ভারতের ধন।”
এই হল রবীন্দ্রনাথের ভক্তিবোধ। এই হল রবীন্দ্র মানস ও চেতনা! তবে এটি শুধু রবীন্দ্রনাথের একার চেতনাগত সমস্যা নয়, এটিই মূল সংকট ছিল হিন্দু রেনেসাঁর কর্ণধারদের।
এখন দেখা যাক, যবন রবীন্দ্রনাথ যাকে “হে রাজস্বী বীর” বলে মুগ্ধ মনে কবিতা লিখেছে তার প্রকৃত পরিচয়টি কি? রবীন্দ্র মানস ও তার চেতনাকে বুঝতে হলে শিবাজীকেও বুঝতে হবে। এতে বুঝা যাবে রবীন্দ্র ভক্তদের রাজনৈতিক এজেন্ডা।
প্রশ্ন হল, সে কি আদৌ বীর ছিলো? শিবাজীর পরিচয় হল, মোঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে সে ব্যস্ত রেখেছিল মারাঠা অঞ্চলে লুকিয়ে থেকে অতর্কিত হামলার মধ্য দিয়ে। সম্মুখ সমরে আসার সামর্থ্য তার ছিল না। যুদ্ধে একবার পরাজিত ও বন্দী হওয়ার পর ফন্দি করে লুকিয়ে পালিয়েছিল। আরেক বার সম্রাট আওরঙ্গজেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সেনাপতি আফজাল খাঁর নেতৃত্বে ১০ হাজার সৈন্যের এক বাহিনীকে তার বিরুদ্ধে প্রেরণ করেন। যুদ্ধের বদলে আলোচনায় ডেকে আফজাল খাঁকে সে হত্যা করে। সেটি ছিল কাপুরুষিত হত্যা। সে সময় আফজাল খাঁ তাকে ইসলামী উদারতায় আলিঙ্গনে বুকে টেনে নিয়েছিলেন। সে মুহূর্তে শিবাজীর বাঁ হাতে লুকানো “বাঘের নখ” দিয়ে আফজাল খাঁর দেহ ছিন্ন করে।
অথচ এ নিরেট কাপুরুষতা বীরতুল্য গণ্য হয়েছে যবন রবীন্দ্রনাথের কাছে, যা নিয়ে বিশাল এক কবিতাও সে লিখেছে। এ হল রবীন্দ্রনাথের বিবেচনা ও মানবতার মান! রবীন্দ্রনাথ বরং সে সব ঐতিহাসিকদেরও নিন্দা করেছে যাদের দৃষ্টিতে শিবাজী ছিলো এক বর্বর দস্যু। ম্লেচ্ছ, অস্পৃশ্য, যবন রবীন্দ্রনাথ তাঁদেরকে মিথ্যাময়ী বলেছে, এবং তাঁদের বিদ্রুপ করে লিখেছে,
“বিদেশীর ইতিবৃত্ত দস্যু বলে করে পরিহাস
অট্টহাস্য রবে
তব পুণ্য চেষ্টা যত তস্করের নিস্ফল প্রয়াস
এই জানে সবে।
অয়ি ইতিবৃত্ত কথা, ক্ষান্তু করো মুখর ভাষণ
ওগো মিথ্যাময়ী,
তোমার লিখন- ‘পরে বিধাতার অব্যর্থ লিখন
হবে আজি জয়ী।
যাহা মরিবার নহে তাহারে কেমনে চাপা দিবে
তব ব্যঙ্গ বাণী
যে তপস্যা সত্য তারে কেহ বাধা দিবে না ত্রিদিবে
নিশ্চয় সে জানি।”
ঐতিহাসিক ডঃ রমেশচন্দ্র মজুমদার ম্লেচ্ছ, অস্পৃশ্য, যবন রবীন্দ্রনাথ প্রসঙ্গে লিখেছেঃ “হিন্দু জাতীয়তা জ্ঞান বহু হিন্দু লেখকের চিত্তে বাসা বেঁধেছিল, যদিও স্বজ্ঞানে তাঁদের অনেকেই কখনই এর উপস্থিতি স্বীকার করবে না। এর প্রকৃষ্ট দৃষ্টান্ত হচ্ছে, ভারতের রবীন্দ্রনাথ যাঁর পৃথিবীখ্যাত আন্তর্জাতিক মানবিকতাকে সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে কিছুতেই সুসংগত করা যায় না। তবুও বাস্তব সত্য এই যে, তার কবিতাসমূহ শুধুমাত্র শিখ, রাজপুত ও মারাঠাকুলের বীরবৃন্দের গৌরব ও মাহাত্ম্যেই অনুপ্রাণিত হয়েছে, কোনও মুসলিম বীরের মহিমা কীর্তনে তিনি কখনও একচ্ছত্রও লেখেননি। যদিও তাদের অসংখ্যই ভারতে আবির্ভূত হয়েছেন। এ থেকেএ প্রমাণিত হয় উনিশ শতকী বাংলার জাতীয়তা জ্ঞানের উৎসমূল কোথায় ছিল।” (সূত্রঃ Dr. Romesh Chandra Majumder, History of Bengal, p 203.)
(ইনশাআল্লাহ চলবে)
প্রথম পর্ব- Click This Link
২য় পর্ব- Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা এপ্রিল, ২০১২ রাত ১:৩১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




