somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শোনেন বলি নতুন করে পুরান ঘটনা ...

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ দুপুর ১২:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোটবেলায় চোখ গোল গোল করে রেসলিং দেখতাম খুব; সেই পঁচাশি কি ছিয়াশি সালের কথা বলছি । তখন কিছু প্রিয় রেসলার ছিল । তারপর একসময় আগ্রহ হারিয়ে গেল যখন সেই টিমগুলোকে পাচ্ছিলাম না । আমার আম্মার আবার রেসলিং খুব পছন্দ। তিনি ঠিকই সময়-সুযোগমত কোন না কোন চ্যানেলে রেসলিং দেখতে বসে যান। গত কয়েক বছরের ক্রেজ ”রক” কে চিনতে হয়েছিল আম্মার কাছ থেকেই! এ্যাকশন মুভি দেখতে ভাল লাগলেও রেসলিং এর সাথে কেন যেন আর জমলই না আমার ! সেই আমি গত সপ্তাহে সাগ্রহে ছোটবেলার মত চোখ গোল গোল করে একটা জমজমাট রেসলিং দেখলাম । বিএনপি ভার্সেস বিএনপি ! বরকতুল্লাহ বুলু, সাবেক প্রতিমন্ত্রী এহছানুল হক মিলন এবং এক সাবেক এমপি বিলকিস ইসলাম ভার্সেস বিএনপির কিছু নেতারা। পুরোদস্তর ফ্রি-স্টাইল রেসলিং- হুটোপুটি, টানাটানি, ধাওয়া, হালকা-পাতলা চুলোচুলিও ছিল বোধহয়। মিলন সাহেব কিছু প্রতিবাদী ভাষণ দিলেন । ঠিক যেমন রেসলাররা মাইক কেড়ে নিয়ে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে অভিযোগ-অনুযোগ-হুমকি-ধামকি দেয় আর কি ! পত্রিকায় মহিলাদের প্রপ (বিভিন্ন বস্তু যেমন- জুতো, স্যান্ডেল ইত্যাদি) হাতে ভরতন্যাট্টম, কত্থক ভঙিমার ছবি দেখলাম। টিভি স্ক্রীন জুড়ে বুলু সাহেবের শার্টের ছেঁড়া অংশ উড়তে দেখলাম । কোন ধরনের (অশনি) সংকেত কি ? খেলা শেষের নাকি শুরুর ?

প্রত্যেক ঈদের আগে আগে অনেক বন্দীদের মুক্তি দেয়া হয় । এবারও তাই হচ্ছে। মুক্তি পেয়ে গেলেন সাকা চৌ:! মুক্তি পেয়ে গেলেন তারেক, খালেদা জিয়া । শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণ বসত: মাতা কর্তৃক পুত্রের রাজনীতি বর্জন নয়, সাময়িক বিরতী ঘোষনা হলো। খালেদা জিয়ার জৌলুসময় চেহারায় এক বছরের কারাবন্দীত্ব সুস্পস্ট; এখন দেশ ও জাতি কে নিয়ে ভাবার আগে ”ত্বকের যত্ন নিন ” -ই হওয়া উচিত তাঁর প্রধানতম কর্তব্য। তবে (সু)চিকিৎসার পর এই পড়ন্ত বয়সেও জলিল সাহেবের টসটসে চেহারার অটুটতা ভাল লাগল; যদিও উনার কিঞ্চিত স্মৃতিভ্রম হয়েছে নয়তোবা আমরই! যতদূর মনে পড়ে উনি চিকিৎসার্তে বিদেশ পাড়ি জমানোর আগে রাজনীতি থেকে অবসরের ঘোষনা দিয়েছিলেন। অথচ এখন দিব্যি নিজেকে সাধারণ সম্পাদক পদে পুনর্বহাল করে দিলেন। যদিও এরপর এই দ্বায়িত্বপদে ব্যক্তি পরিবর্তন সাধিত হলো। প্রশ্ন হলো, এই আলোচনা কি আগেই সেড়ে নেয়া যেত না ? অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা আনাড়ীর মত খেললে নতুন প্রজন্ম কাকে অনুসরণ, অনুকরণ করবে !

অবশেষে আভাসে, গুঞ্জণে এতটুকু নিশ্চিত হওয়া যায় যে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। অনেকেই অবশ্য খুব হতাশ ; অনেকের ভাষ্যমতে এতোগুলো মাসের হাঁকডাক আদতে ”বজ্র আটুনি ফস্কা গেঁড়ো” ছাড়া কিছুই না। কেউ কেউ এ ক’মাসে ”কি পেলাম , কি পেলাম না” -র হিসেব মিলিয়ে নেন । তবে এ ক’মাসে আমাদের প্রাপ্তির ঝুলি অনেক নতুন জ্ঞানে টইটুম্বুর। আমরা জানতে পারলাম আমাদের প্রতিশ্রুতিশীল নেতারা দূর্নীতিতে কতটা পরিপক্ক! হাজতবাস পরিশেষে অনেক নেতাদের জন্যই অবকাশযাপন হলো বোধহয়! আর তাদের সগৌরবে মুক্তি ”সত্যের জয়” –এর সামিল! এখন নেতারা যদি মঞ্চে উঠে বলেন সীতা’কেও অগ্নিপরীক্ষা দিতে হয়েছিল তাহলে আর বলার কিই বা থাকে!

”মাইনাস-টু ফর্মুলা” এখন প্রবাদ বাক্যতুল্য! শোনা যাচ্ছে, হাসিনা-খালেদা’কে এক টেবিলে আনার ভাবনা চলছে। অনেক পুরোন হিন্দী ছবি ”শক্তি” -তে একই পর্দায় অমিতাভ বচ্চন আর দিলীপ কুমারের উপস্থিতি তুমুল আলোড়িত করেছিল দর্শকদের। ওই দুই বাঘা তারকাকে শেষ পর্যন্ত এক পর্দায় আনা গেলেও দেখা যাক, রাজনীতির পর্দায় আমাদের দুই নেত্রীকে জনগণ দেশের প্রয়োজনে এক সাথে পায় কিনা!

আজকাল বাসে ভিক্ষাবৃত্তির একটা নতুন পদ্ধতি লক্ষ্য করছি। বেশীরভাগ সময়ই ছোট ছোট মেয়েরা বাসে উঠে একটা করে চিরকুট সব যাত্রীদের কোলে রেখে দেয়। টাইপ করা চিরকুটে লেখা থাকে পরিবারের দুরবস্থার কথা; কেউ কেউ লেখে- চকলেট বেঁচে সংসারের খরচ চালায় কিন্তু রোজার মাসে চকলেট বিক্রি হয় না , তাই সাহায্য প্রার্থনা। পরিশেষে লেখা থাকে পড়ার পর চিরকুট ফেরত দিতে। এটার একটা ভাল দিক আছে, টাকা চেয়ে কানের কাছে কেউ ঘ্যান ঘ্যান করে না। বাসের সবাইকে চুপচাপ চিরকুট বিলানোর পর আবারও চুপচাপ চিরকুট সংগ্রহ চলে; কেউ যদি কিছু দিতে চায় তো চিরকুটের সাথে দিয়ে দেয়। আমি পরপর দু’তিন দিন ”চকলেট বেঁচে সংসার চালানো” টাইপ চিরকুট পেলাম ভিন্ন ভিন্ন জনের কাছ থেকে। বোঝাই যায় ব্যাপারগুলো সাজানো। এটা বুঝেও একটা চকলেটের দাম হিসেবে ২/৩ টাকা চিরকুটের সাথে দেই। সব জেনে-শুনে-বুঝে যদি দূর্নীতিগ্রস্থ নেতাদের আমরা বার বার কোটি কোটি টাকা যথেচ্ছভাবে লুটে নেয়ার জন্য ক্ষমতার মসনদে বসিয়ে মহাসমারোহে প্রতারণার সুযোগ দিতে পারি তবে এই শিশুগুলোর ছোট্ট প্রতারণার পেছনের দারিদ্রতা’র কাছে হলামই না হয় আরেকটু প্রতারিত!

আমরা এখন পলিটিক্যাল ইস্যুগুলোতে আরো বেশী হিপনোটাইজড! নতুবা যখন খবরের পাতায় মোটা হরফে লেখা আসে ”কিছুতেই লাগাম টানা যাচ্ছে না বাজার দরের”, তখন কেউ কেউ তারেক জিয়া’র মাথা ফেটে যাওয়ার ঘটনায় তান্ডব করি শহর জুড়ে; অথবা যখন ”রমজানের প্রথম দিনেই বাজার চড়া, ক্রেতারা অসহায়”, তখন পঞ্জিকা ঘাঁটি তারেকের মুক্তির শুভক্ষণের , হিসেব কষি খালেদা জিয়ার কারাবাসের মিনিট, ঘন্টা, সপ্তাহ, মাসের। ”রমজানেও ১৫শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি” -এর পরও তারেক জিয়ার মুক্তিতে আলোয় উদ্ভাসিত হয় কারো কারো মুখ! নেতাদের একের পর এক মুক্তির খবরে রাজনীতির মাঠ যখন সরগরম তখন আমাদের চোখ এড়িয়ে যায় ”২২ জেলায় লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি” !



সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:০১
৭২টি মন্তব্য ৪০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×