somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নারী উত্ত্যক্তকারীদের (ইভ টিজার) বেপরোয়া আগ্রাসন এবং পরিনামে নারীর আত্মহননঃ দায়ভার পরিবার-সমাজ-সরকারের উপরও বর্তায়

০২ রা নভেম্বর, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিগত বছরের উপাত্তগুলো বাদ দিয়েও হালে পত্রপত্রিকাগুলো থেকে প্রাপ্ত বেসরকারী পরিসংখ্যানে দেখা যায় মাত্র গত আটমাসে ২০ জন তরুণী আত্মহত্যা করেছে বখাটেদের উপদ্রবে! সৃষ্টিকর্তা কি নারীদের এতো বেশী কোমলমতি করে বানিয়েছেন যে নরকীটদের আক্রমণের শিকার হলে ’বাঁচার জন্য’ নারীর কেবল আত্মহননের পথই খোলা থাকে? নাকি এই আত্মহনন সমাজে নারীর কোনঠাসা অবস্থানের যে মর্মান্তিক পরিসংখ্যান তারই একটি সচিত্র বহিঃপ্রকাশ?

সত্যটা যদি এমনটাই হয় যে, কিছু উশৃংখল যুবকের ক্রমাগত নোংরা আক্রমণেই উঠতি বয়সী নারী অপমান আর লজ্জায় প্রথমত আত্মহননকেই বেছে নিচ্ছে তাহলে নরকীটদের বদলে এইসব 'দূর্বলচিত্তের’ নারীদের নিয়ে ভাবাটাই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই দূর্বলতা পুরুষ অপেক্ষা নারীর আপাত শারীরিক অবকাঠামোগত, সামর্থগত দূর্বলতা নয় বরং ’মানসিক দূর্বলতা’। এবার একধাপ গভীরে গেলে নারীর মানসিকভাবে দূর্বলতম হয়ে বেড়ে ওঠার উৎস হিসেবে উশৃংখল বখাটেদের নয়, বরং মূর্তিমান ’সমাজ ব্যবস্থাকেই’ পাওয়া যাবে। যেখানে কোন নারীকে নিয়ে অশ্লীল কেচ্ছাকাহিনী রটলে রটনাকারীর নয়, বরং সমাজ কর্তৃক খোদ ঘটনার শিকার নারীটির জীবন অতিষ্ট হয়ে ওঠার বহু ইতিহাস পাওয়া যায়। আর তখন ’বেচারী’ নারী মুখ লুকাতে চোখের সামনে একটি পথই উন্মুক্ত পায়- গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা। বিষ পানে আত্মহত্যা। এইসব জীবনের ’অপচয়’ যে সমাজের কিছু ভ্রান্ত দৃষ্টিকোণের কারণে উদ্ভূত সামাজিক অসহযোগীতার ফলাফল, সে কথা সমাজকে বোঝাবে কে? ২০ জন নারীর আত্মহত্যার কারণ দর্শিয়ে প্রত্যক্ষ ইন্ধনদাতা হিসেবে বখাটেদের আদলতের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোটা যেমন জরুরী, তেমনই প্রয়োজনীয় পরোক্ষ ইন্ধনদাতা হিসেবে একতরফা সমাজ ব্যবস্থাকে বিবেকের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোটা।

আদালত বলতেই মনে পড়বে রাষ্ট্রের আইনব্যবস্থার কথা। নাগরিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার কথা। ঠিক কতগুলো জীবন বিসর্জিত হলে রাষ্ট্র তার সামাজিক অবক্ষয় সম্পর্কে অবগত হয়ে বিশৃংখলা কায়েমকারীদের নিয়ন্ত্রণে নিতে শাস্তির বিধান করে আইন প্রণয়নে উদ্যোগী হয়? যতদূর মনে পড়ে নব্বই দশকে এসিড সন্ত্রাস মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে গিয়েছিল। আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করে কোক-পেপসির মত এসিড কেনাবেচা হতো সেসময়। আর প্রতিদিন বিভিন্ন বয়সী নারীর ’পোড়া মুখের’ কাতরতা গুঞ্জরিত হতো পত্রিকার পাতায়। ঝলসে যাওয়া মুখের নারীর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকলে সরকার ২০০২ সালে এসিড নিয়ন্ত্রণ আইন প্রয়োগ করে। কিন্তু সেই আইন সয়ংসম্পূর্ণ নয় এবং এসিড সন্ত্রাসরোধে যথেষ্টও নয়। পরিসংখ্যানে দেখা ২০০৬ সালে নারী-পুরুষ-শিশু মিলিয়ে ৪৭ জন এসিড সন্ত্রাসের স্বীকার হয়। ২০০৫ সালে এই সংখ্যা ছিল ৫৮। ১৯৯৯ সালে মে থেকে ২০০৭ সালের জুন পর্যন্ত কেবল মাত্র সিরাজগঞ্জেই ১১৪ জন এসিড আক্রান্ত হয় । এসিড সন্ত্রাস ঘটনাগুলোর পেছনেও ছিল নারীকে উত্ত্যক্তকরণ । স্কুল-কলেজে উৎপাত, প্রেম অথবা বিয়ের প্রস্তাব এবং প্রত্যাখ্যান ইত্যাদি। এবং প্রতিশোধপরায়ণতা থেকে এসিড নিক্ষেপ। অতএব, নারীকে শারীরিক-মানসিকভাবে হেনস্তা করার নানারূপের উশৃংখলতা নতুন কিছু নয়।

উশৃংখলতার বর্তমান যে শিরোনামটি বহুলচর্চিত তা হচ্ছে ইভ টিজিং। দূর্ভাগ্যজনক হলো একটা লম্বা সময় পর্যন্ত ইভ টিজিং অনেকটা হাসিঠাট্টার বিষয় হয়েছিল। অনেকটা যেন ছেলেরা তো দু’চারটে ’টুকরো কথা’ বলবেই সুন্দরী মেয়েদের নিয়ে। কিন্তু এই টুকরো কথাগুলো নারী এবং তার পরিবারের জীবনে ছন্দপতন ঘটাচ্ছে অনেক বেশীই। ইভ টিজিং কি শুধুই টুকরো কথাতেই সীমিত? বেখেয়ালে নয়, ইচ্ছাকৃতভাবেই একজন পুরুষ একজন নারীকে ধাক্কা দিলেন। ভিড়ের মধ্যে গায়ে হাত দিলেন। এখানে মুখে কোন টুকরো টুকরো অশ্লীল বুলি নেই, কিন্তু শারীরিক অঙ্গভঙ্গিতে অশ্লীল ইঙ্গিত/আচরণ তো ঠেকিয়ে রাখা গেল না। এই অশ্লীলতাও তো নারীকে ’শারীরিকভাবে বিব্রত’ করার ভাষা।

ইভ টিজিং কারা করে? ঠোঁটের আগায় উত্তর রয়েছে সবার। বখাটেরা। উশৃংখল ছেলেরা। বিশ্ববিদ্যালয়প্রাঙ্গনেও ইভ টিজিংয়ের ঘটনা ঘটে। ওরা কি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিত তরুনের দল নাকি বখাটেরা? দু’চার বছর আগে বইমেলাতে নারী দর্শনার্থীদের বিব্রত পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে বলে বেশ কিছু খবর দেখানো-ছাপানো হয়েছিল গণমাধ্যমগুলোতে। এই ইভ টিজাররা কারা? কোন শ্রেনীর বখাটে? বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনের ঘুরঘুররত এসব নারী উত্ত্যক্তকারী আর নিঝুরি গ্রামের ইভ টিজার সুশীল চন্দ্র ম-লের মধ্যে পার্থক্য কী কী? 'কোন ইভ টিজাররা বখাটে গোত্রভূক্ত’ সে সংজ্ঞা নিরুপনের সময়টা এখনই।

এতো গেল ইভ টিজিং এর ’কাল-পাত্র’ নিয়ে কথা। ইভ টিজিংয়ের স্থানগুলো নিয়ে জানা যাক। মেয়ে অথবা নারী কোথায় কোথায় বখাটেদের উপদ্রবের স্বীকার হচ্ছে?

- স্কুল-কলেজ এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ও। স্কুল-কলেজের ক্ষেত্রে কি গ্রাম কি শহর বিশেষত ’বালিকা বিদ্যালয়/উচ্চ বিদ্যালয়গুলোর’ বাইরে অগনতি ছেলেদের দাঁড়িয়ে থাকার চিত্রটি সবখানেই একই। বিদ্যালয় থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরের চিত্রটিও যে খুব সুস্থ নয় তারও বহু নজির রয়েছে। আর তাই শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রী লাঞ্ছিনার বিচার চাইতে গণ আন্দোলনে নামতে হয় আমাদের।

-যে কোন মেলায়। সেটা বইমেলা হোক অথবা বাণিজ্যমেলা। ’বিশেষ সুযোগলাভে’ ভিড়ভাট্টাই বড় কথা বখাটেদের জন্য।

- পাবলিক বাস। সেই ভিড়ভাট্টার মধ্যে সুযোগ বুঝে পুরুষ তার হাতের ’কাম’ মিটিয়ে নিচ্ছে। এখানে সেইসব ’কামোদ্দীপ্ত বাসযাত্রীরা’ বিভিন্ন বয়সী। বিভিন্ন পেশাজীবি এবং শ্রেণীর। এদেরকে তথাকথিত বখাটে সংজ্ঞাতে ফেলা যায়না। তাহলে নারী উত্ত্যক্তকারীদের কেবলমাত্র ’বখাটে’ উপাধি দিলে বিষয়টা অনেক হালকা হয়ে যায়।

- কর্পোরেট হাউজ। পেশাগত জীবনে সহকর্মী অথবা বসদের দ্বারাও ’ইঙ্গিতপূর্ণ আহ্বানের’ মুখোমুখি হতে হয় অসংখ্য নারীকে। এই উদাহরণের পর ’বখাটেদের’ সংজ্ঞা নিয়ে আমাদের ভাবনার পরিধির আরো প্রসারণ ঘটানো জরুরী হয়ে পড়ে।

- আন্তর্জাল। এটিকে ’ডিজিটাল ইভ টিজিং’ বলা যেতে পারে। ওয়েব সাইট, ব্লগ এগুলোতে নারী যে কারো দ্বারা, যে কোন সময় আক্রান্ত হতে পারেন। অশ্লীল উক্তি, ইঙ্গিতপূর্ণ কথা এবং অনেক ক্ষেত্রেই ব্যক্তিগত তথ্যাদি নিয়ে বহুমাত্রিক স্যাবোটাজের স্বীকার হতে পারেন নারী আন্তর্জালে। নারীর অসম্মতি সত্ত্বেও ইনিয়েবিনিয়ে নারীকে প্রেমের প্রস্তাব এবং প্রত্যাখানে সুকৌশলে হেনস্তা করার কিছু নজিরও ব্লগগুলোতে দেখা যায়। কমিউনিটি ব্লগ ও অজস্র ’ফ্রি’ সাইট খোলার সুযোগ থাকার কারণে এইসব তথ্যাদি চোখের পলকে নামে-বেনামে, ইচ্ছেমত ছড়িয়ে দেয়া যায় । কমিউনিটি ব্লগে আক্রান্ত নারী ব্লগাররা যখন কিছু সহব্লগার কর্তৃক আক্রান্ত হন, তখন ’বখাটেদের’ নিয়ে সংজ্ঞা নিয়ে আরো একবার ভাবনার অবকাশ একটি অবশ্যম্ভাবি বিষয়।

ইভ টিজিংয়ে আক্রান্ত নারীর পরিবার কী প্রতিকার নিচ্ছেন?
এই ২০১০ সালে এসেও দেখা যাচ্ছে মেয়ে সন্তানের মঙ্গলার্থে তার পরিবার মেয়েটির পড়ালেখা বন্ধ করে দিচ্ছে এবং তারপর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে তড়িঘড়ি করে মেয়েটির বিয়ে দেয়ার। ইভ টিজিংয়ের সূদূর প্রসারী কূফল কি টের পাচ্ছেন?

- একটি মেয়ে তার শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

- স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ হারাচ্ছে।

- শারীরিক/মানসিকভাবে প্রস্তুত হওয়ার আগেই বিয়ে করে সংসার জীবনে দ্বায়িত্ব নিতে হচ্ছে।

- সমাজ বা রাষ্ট্রের প্রতি এই মেয়েটিও যে কোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারতো এই ব্যাপারে সে অজ্ঞই থেকে যাচ্ছে।

- যে মেয়েটিকে তার পরিবার থেকে ইভ টিজিংয়ের মত ঘটনায় সাহসী কোন সমাধান পায়নি সে ভবিষ্যতে তার মেয়ে সন্তানকে কতটা সাহসী সহযোগীতা দিতে সক্ষম হবে?

- নতুন জীবনে স্বামীটি যদি মেয়েটিকে পূর্ণ সহযোগীতা না করে তবে কী হতে পারে স্বল্প শিক্ষিত এই মেয়েটির ভবিষ্যৎ জীবন?

তাহলে প্রকৃত প্রতিকার কী হতে পারে? আইন প্রণয়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এক্ষেত্রে। এবং ততোধিক গুরুত্বপূর্ণ হলো আইনের কার্যকরণ। আইন প্রণয়ণের পূর্বে জরিপ একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নয়তো সে আইন অদূর ভবিষ্যতেই তার বাস্তবিক কার্যকারিতায় দূর্বল প্রমাণিত হবে। এবং প্রতিবার কারো না কারো জীবনাবসানের পর সেই আইনের সংস্কারে অথবা নতুন আইন প্রণয়নে উদ্যোগী হবে সরকার। এটা অদূরদর্শীতা ছাড়া আর কিছুই নয়। তাই এধরনের আইন প্রণয়নের পূর্বে প্রয়োজনে সরকারি-বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাজে লাগিয়ে জরিপ চালিয়ে উপাত্ত সংগ্রহ করা যেতে পারে। আইন কার্যকরণের ক্ষেত্রে পরিবেশ আরো গুরুত্বপূর্ণ । মামলা সংক্রান্ত জটিলতা এমনিতেই আমজনতা এড়িয়ে চলে। তারওপর যদি তা নারী সংক্রান্ত হয়। এটা একরকম প্রতিষ্ঠিত সত্য যে, নির্যাতীত নারী যদি বিচারের আর্জি নিয়ে আইনের দ্বারস্থ হন, তবে বিচার প্রক্রিয়ায় জিজ্ঞাসাবাদকালীন সময়ে ’নানারকম’ প্রশ্নবানের সম্মুখীন হতে হয়। যার উত্তর দিতে অধিকাংশ সময়ই নারী এবং তার পরিবার স্বভাবতই বিব্রত-কুণ্ঠিত থাকেন। এই বিড়ম্বনা এড়াতে অন্তত মধ্যবিত্ত পরিবারের নারীরা মুখ বুঁজে অনেক অনাচার সয়ে যান। এবং সন্মান রক্ষার্থে পরিবারের সদস্যরাও নারীটির জন্য আইনের সরনাপন্ন হতে নিরুৎসাহিত বোধ করেন।

ইভ টিজিং অথবা নারী উত্ত্যক্তকরণ কিংবা নারী নির্যাতন বা নারীর প্রতি যৌন সন্ত্রাস রোধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার একটি জোড়ালে আহ্বান উঠেছে রাজপথ, মূলধারার গণমাধ্যম এবং বিকল্প গণমাধ্যম হিসেবে আন্তর্জালের কমিউনিটি ব্লগগুলোতে। সামাজিক প্রতিরোধের পূর্বশর্ত হলো প্রতিটি পরিবারগুলোর নিজস্ব সচেতনতা, সাহসীকতা এবং সহযোগীতা। একেকটি পরিবার যদি তার মেয়ে সন্তানটির পাশে বলিষ্ঠতা নিয়ে দাঁড়ায় তাহলে অন্তত মেয়ে সন্তানটি মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়বে না। এবং ’সমাজে মুখ দেখাবে কী করে’ সেই আড়ষ্ঠতায় আত্মহত্যার পথ বেছে নেবেনা। ”ক্ষমা করে দিয়ো বোন আমাদের। বখাটেদের হাত থেকে বাঁচাতে পারলাম না তোমাদের” - বোনের মৃত্যুতে ভাইয়ের কাতর অভিব্যক্তির প্রতি যথাযথ সন্মান রেখেই বলতে ইচ্ছে করে, বোনটিকে আত্মরক্ষার্থে লড়াই করার যোগ্য করে গড়ে তুলিনা কেন আমরা ?

সঠিক শিক্ষা নারীকে শিশুকাল থেকেই আত্মপ্রত্যয়ী করে তুলবে। সব সমস্যা একা মোকাবেলা করা হয়ত যায়না, কিন্তু যে কোন অঘটনকে মোকাবেলার ব্যক্তিগত আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলা জরুরী। ছোটকালে পড়েছিলাম চীন-জাপানের বাচ্চারা ছোটবেলা থেকেই নাকি কুংফু-কারাতে পারদর্শী। ভারতে বেশ কয়েক বছর ধরে স্কুটি বলে পরিচিত ভেসপা মোটর সাইকেলগুলো জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে নারীদের কাছে। এতে বাসের পেছনে ছোটা এবং বাসের ভিড় এড়াতে পারছে তারা সহজেই। মালয়শিয়াতে মুসলিম নারীরা বাস এড়াতে মোটর সাইকেল ব্যবহার করেন নিজস্ব পর্দাপ্রথা মেনে চলেই। আমরা বোনের লাশ নিয়ে মাতম করতে পারি কিন্তু আত্মরক্ষার্থে বোনকে কুংফু-কারাতে শেখার সুযোগ করে দেয়ার কথা আমাদের মস্তিস্কে একবারও আসে না। আর আমাদের বোনেরা/ নারীরা ভেসপা চালালে তো জাতই চলে যাবে আমাদের।

ইভ টিজিংয়ের কারণ কী? অথবা ইভ টিজিং বেড়ে যাওয়ার কারণ কী? কেউ কেউ অনেক সাহসী হয়ে বলেন, আজকালকার মেয়েরা এমন ’হট’ চলাফেরা করে, ফলে ইভ টিজিং, নারী ধর্ষণ তো বাড়বেই। তাহলে ধরে নিচ্ছি ইভ টিজিংয়ের শিকার ’স্কুল-ইউনিফর্মধারী’ প্রতিটি মেয়েই অনেক ’হট’ । নিঝুরী গ্রামের রুপালী রানী বরাতিও অনেক ’হট’ ছিল। বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিমদেশগুলোতে একরকম বাধ্যগত পর্দাপ্রথা মেনে চলা যে সকল নারীগণ অহরহ নির্যাতীত হচ্ছেন তারাও নিঃসন্দেহে ’হট’। এমনকি যৌন নির্যাতনের শিকার মেয়েশিশুরাও তাহলে ’হট’। এখানে অনেকেই বলেন ধর্মীয় অনুসাশন মোতাবেক চললে এধরণের ঘটনা ঘটবেনা। ধর্মীয় অনুশাসন কারা মেনে চলবে? ইভ টিজার বখাটে ছেলেটি? নাকি ইভ টিজিংয়ে বিব্রত মেয়েটি? অনেক বক্তাই এক্ষেত্রে বিষয়টি ঘোলাটে রাখেন। কেউ খুব পরিস্কায় বাংলায় (অথবা ইংরেজীতে) বলেন না যে, প্রতিটি পুরুষের জন্য তার শিশুকাল থেকে ধর্মকর্ম, নীতিবোধের চর্চা করা ফরজ যাতে যে বাড়ন্ত থেকে ঢলে পড়া বয়স পর্যন্ত রিপুর তাড়না থেকে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। সামাজিক অবক্ষয়ের জন্য পারিবারিক মূল্যবোধের চর্চাকে দায়ী করা যায়। বাবা-মায়ে’র মধ্যকার বিরাজমান টানাপোড়েন, সংসারিক ঝগড়া সন্তানদেরও মধ্যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরী করে। সন্তান এক্ষেত্রে সম্পর্কের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়, প্রতিশ্রুতিহীন হয়। সাংসারিক এইসকল জটিলতায় ছেলে এবং মেয়ে সন্তান উভয়েই বিপথগামী হতে পারে। তবে সমাজ যেহেতু বরাবরই পুরুষকে অনেক ছাড় দিয়ে রাখে তাই পুরুষের নেতিবাচক কীর্তিগুলো প্রকাশিত হওয়ার সুযোগও থাকে বেশী। অপরদিকে রাষ্ট্র সুস্থ বিনোদনের ব্যবস্থা এবং পরিবেশ পালনে ব্যর্থ হলে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ঝুঁকে পাড়ে নিষিদ্ধ বিনোদনের দিকে ।

ইদানীংকালে বখাটেদের দৌরাত্বে যে স্কুল শিক্ষককে হারালাম, যে মা’কে হারালাম তাদের হত্যার বিচার না হলে এরপর কেউ প্রতিবাদী হতে সাহস করবেনা। প্রশাসন বলছে, এরা স্থানীয় বখাটে। এই সকল স্থানীয় বখাটেদের এতোটা সাহস কী করে হয় যদি না তারা কোন প্রভাবশালীর ছত্রছায়ায় থাকে? এই বখাটেদের কী কোন রাজনৈতিক পরিচয় রয়েছে? এই প্রশ্নের জবাব দিতে হবে প্রশাসনকে।

’শক্তের ভক্ত নরমের যম’ বলে একটি প্রচলিত প্রবচন রয়েছে। এ প্রবচনটি আমাদের দূর্বল সমাজ কাঠামোর জন্য প্রযোজ্য। নারীর তা সে সত্যিকার অর্থে দোষী হোক বা নির্দোষী একবার অপবাদ জুটলে তার প্রতি সমাজের তর্জনী উঠতে সময় লাগেনা। অথচ সেই সমাজই চুপটি মেরে, অসহায়ের মত চাঁপা রাণীর বুকের উপর মোটর সাইকেলের উঠে যাওয়ার দৃশ্য নীরব দর্শকের মত অবলোকন করে ।

বর্তমানে ইভ টিজিং প্রতিরোধে আন্দোলনের যে জোয়ার বইছে, এই জোয়ার যেন পূর্ণ কার্যকারিতা আনে। এমন যেন না হয়, আমরা রাজপথ কাঁপিয়ে তুলছি সুসজ্জিত ব্যানারে আর ওদিকে ইভ টিজারদের দৌরাত্ম বেড়েই চলেছে! কোন এক কলেজের ছাত্রী ইভ টিজিং এর শিকার হয়ে আত্মহত্যা করছে! এমন যেন না হয় আমি-আপনি ব্লগে ব্লগে ইভ টিজিং বিরোধী পোস্ট দিয়ে ভরিয়ে ফেলছি আর ওদিকে কোন এক নির্বোধ প্রতিবাদী প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে ইভ টিজারদের হাতে প্রাণ হারাচ্ছে!
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা নভেম্বর, ২০১০ রাত ১০:১২
৬৮টি মন্তব্য ৫৩টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×