somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুই শিয়ালের ঢাকা শহর দেখার কিচ্ছা

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সকাল ১১:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশের এলাকায় অনেক শিয়াল বাস করে। তারমধ্যে দুই শিয়ালের (কুমার শিয়াল এবং কুমারী শিয়াল) ছোটবেলা হতেই খুব ভাব। কুমার শিয়ালের নাম মিথান আর কুমারী শিয়ালের নাম মিঠাই। মিঠাইয়ের মা খুব কড়া। যখন তখন তাকে বের হতে দেয় না। তাই মিথান রাত ১১টার পর এভাবেই ডাকছে,,,হুক্কা হুয়া আ-স -স-সসসস। মিঠাই শুনতে পেল যে মিথান তাকে ডাকছে। তাই চারদিকে তাকিয়ে সে দেখল তার মা আর দুইভাই ঘুম আসছে। চুপ চুপ করে বাইরে আসলো। তখন আকাশ ভেঙ্গে জোৎস্মা ঝরছে। তারাভরা আকাশ আর ঝিরঝির বাতাস সব মিলিয়ে দারুণ একটা সময় । মিঠাই চারপাশে তাকায়, তারাভরা আকাশের দিকে তাকিয়ে আনন্দে ডাকে হুক্কা হুয়ায়ায়ায়া,,,, মিথান লেজ নাড়তে নাড়তে এগিয়ে আসে। দুজন দুজনের মাথা ঠেকিয়ে আনন্দ প্রকাশ করে। এবার দুজন একটা ঝোপের আড়ালে এসে বসে। মিঠাই বলল, ইস আর একটু হলেই মার কাছে ধরা খেয়ে যেতাম গো। মিথান বলল দেখ এই ইউনিভারসিটির কিছু ছেলেমেয়ে এখনও পড়ালেখা করছে। মিথান কাছের একটা গাছের নীচে দেখিয়ে বলল,’ঐযে দেখ দুজন এখন দুজনকে পড়ছে। মিথান শব্দ করলো,,,,হুররে হুয়া, হুররে হুয়া। তারপর দুজন এক এক করে কথার মালা বুনতে লাগলো। একসময় মিথান বললো, জাহাঙ্গীর নগরএর এই পড়া দেখতে আর ভাল লাগে না, চল যাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাব। সেখানের নতুন পড়া দেখবো। আরও দেখবো ঢাকা শহরএর ওলি গলি, চিরিয়াখানা, পার্ক আরও কতকি! মিঠাইয়েরও খুব ভাল লাগলো,,,আর নয় এখানে,,এবার ঢাকা শহরটা ঘুরে দেখতেই হবে। বুদ্ধি করলো আগামীকাল সন্ধা হলেই দুজন রওয়ানা দিবে।
সেই প্রতীক্ষিত সময় আসলো। দুজন ঢাকা শহরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিল। সাভার বাস স্ট্যান্ডের কাছে আসতেই দেখা দিল একটি ট্রাক ধীর গতিতে চলছে। তাতে দুজন লাফ দিয়ে উঠলো। ট্রাক ছুটে চলেছে ঢাকার উদ্দেশ্যে। দুজন এখন দুজনার। কতযে খুশি হয়েছে তারা,,,ফিস ফাস করে কথা বলছে। ড্রাইভার ব্যাটা বুঝতেই পারছে না। আসাদগেটের কাছে আসতেই একটা মিছিল দেখতে পেল তারা। বিপরীত দিক হতে আরও একটা। মিঠাই অবাক হয়ে মিথানকে বললো ’এ কেমন আজব শহর, এখানে সন্ধারাতেও মিছিল। তাদের পড়া নাই।’ কিন্তু ততক্ষণে ট্রাকের পিছন দিক হতে আগুন ধরিয়ে দিল কিছু পিকেটার। দুজন দুদিকে লাফ দিয়ে পড়লো। এলোপাথারী দৌড়াতে লাগলো দুজন। মিঠাই এক সময় থামলো। হাঁফাতে লাগলো,,,, ’ঢাকা শহর ঘুরে দেখা হলো না, কত প্রেমের কথা বলা হলো না, কত আবেগ প্রকাশ পেল না,,,হু হু হুমমমমা হুয়া করে কাঁদতে লাগলো মিঠাই। কাঁদতে কাঁদতে একসময় ঘুমিয়ে পড়লো ।
খুব সকালে রাস্তা দিয়ে এক রিক্সাওয়ালা যাচ্ছিল। এক পথচারী বললো এই রিক্সা যাবে? রিক্সাওয়ালা বলল যাব কিন্তু কোথায়। পথচারী বলল, উত্তর ঢাকায়। রিক্সাওয়ালা বলল, নারে ভাই উত্তর ঢাকায় যাওয়া যাবে না। উত্তর ঢাকায় গেলে আমার ঠ্যাং ভাইঙ্গা দিব অন্য রিক্সাওয়ালারা। আমি বাপু পারমু না। রিক্সাওয়ালা বিরবির করে বলতে লাগলো ’উত্তর ঢাকায় একখান বিয়া করছিলাম, ওহানে ঝামেলা, পাওনাদাররা টাকা পাইব।’ পথচারী তখন নিরুপায় হয়ে হাটা ধরলো। মিঠাইএর ঘুম এসময় ভেঙ্গে গিয়েছে। সে খুব চিন্তায় পড়ে গেল। কি করবে? সে চিন্তা করতে লাগলো মিথান এখন কি করছে??? ইসসিরে যদি দুজন একসাথে থাকতাম... তাহলে কত মজাই না হতো। এদিকে খুধাও লেগেছে। খাওয়া দরকার। কিন্তু কোথায় পাওয়া যাবে খাবার। চিন্তা করতে করতে সে হাটা দিল। একটা মুদির দোকানের দেখা পেল। দেখলো মুদির দোকানের মালিক দোকানে নেই । কে যেন দোকানের পিছনে প্রাকৃতিক কাজ সেরে নিচ্ছে। সেই হয়ত দোকানের মালিক। মিঠাই তখন দোকানের কলার কাদি হতে গোটা দশেক কলা নিল। ১০০ কদম সামনের দিকে হাটতেই দেখতে পেল মুরগীর খাঁচা। উহ্ মুরগীগুলো!!!! আহারে কতদিন খাইনা!!! সেদেখলো মুরগীওয়ালা একজন লোকের সাথে কথা বলছে। এই সুযোগ। আর দেরী করা যায় না। যেই ভাবা সেই কাজ। কলা ফেলে দিল। খাঁচার কাছে এগিয়ে গেল। মুখ গলে দিল মুরগীর খাঁচার ভিতর। হা করে দুটো মুরগী ধরলো। মুরগী মুখে করে ছুটে ছলেছে মিটাই। কোন দিকে তার তাকাবার সময় নাই। এবার একটু খান্ত দিল। হাপিয়ে গিয়েছে। দেখলো মুরগী দুটো তাজা আছে, কিন্তু নিস্তেজ হয়ে পড়েছে। খুব খুশী হলো ,,একটা তার নিজের আর একটা মিথাইএর। কিন্তু কিভাবে সে তাকে খুঁজে পাবে। এক পত্রিকাওয়ালা বলছে,,খবরের কাগজ নিবেন খবরের কাগজ। উত্তরের গরম গরম খবর। মিঠাই ভাবলো, বাহ্ আমি উত্তরে এসে পড়েছি। মিথান যদি উত্তরে থাকতো তাহলে খুব ভাল হতো। একজন লোক মিঠাইকে তারা করতেই সে আবার দৌড় দিল। দৌড়াতে দৌড়াতে একেবারে চিড়িয়াখানার কাছে এসে পৌছাল। মিঠাই কাঁদতে কাঁদতে ডাক দিল হুক ----হুক---হুক্কা হুয়াওওওওওওওওওও। আকাশে প্রতিধ্বনিত হলো সেই শব্দ। দূর হতে মিঠাই দেখলো তার মিথান অন্য একটা শিয়ালের সাথে নিবিড়ভাবে খোসগল্প করছে। একজনের মাথা অন্যজনের মাথায় ঠেকাচ্ছে। মনে কষ্ট নিয়ে মিঠাই ভাবতে লাগলো....ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের পড়া দেখতে এসেছিলাম...তা তো হলোই না... এখন নিজের ভালবাসার মিথানেরই অন্য শিয়ালের সাথে পড়া দেখতে হচ্ছে। মিঠাইএর মন ভী-ষ-ণ খারাপ হয়ে গেল। উহ্ আর নয় এই খাজ কাটা খাজ কাটা দালান কোঠার শহরে। সবাই এখানে শুধু ভাগাভাগি করে। শহর ভাগাভাগি হয় । এখানে ভালবাসাও ভাগাভাগি হয়। মিঠাই কাঁদতে লাগলো হুয়ায়ায়া হুক্কাহুয়াওওওওও নানানানা..... সে ধীর গতিতে সাভারে যাওয়ার জন্য হাটা শুরু করতেই মিথান পিছন হতে ডাক দিল। চল মিঠাই চিড়িয়াখানার ভিতর আমাদের আরো বন্ধুদের দেখে আসি। তারা কেমন আছে। আমরা মুক্ত কিন্তু তারা বন্ধী। যতই তারা আরামে থাকুক না কেন আমাদের মত স্বাধীন নয়। বোটানীক্যাল গার্ডেনে যাব, কত কচি কচি মুরগী খাব। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেখতে যাব। সেখানে ছাত্রছাত্রীদের পড়া দেখবো। মিঠাই আর পিছন ফিরে তাকালো না। সামনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। মিথান গান শুরু করলো হুহুহুক্কা হুয়া যেও না সাথী,,,,,হু হু হুক্কা হুয়া পথ ভুলে যাবে যে তুমি,,,,হুহুহুক্কা হুয়ায়ায়া।

(বি: দ্র: মানিকগঞ্জ হতে ঢাকায় ফিরছিলাম। রাত তখন ৯টা। বেরসিক বাসটার চাকাটা নষ্ট হয়ে গেল,,,, ঠিক জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে। চাকা ঠিক করার কাজ চলছে। একটু পরেই শুনতে পেলাম শিয়ালের হুক্কা হুয়ার শব্দ। অনেক বছর পরে শিয়ালের ডাক শুনতে পেলাম। ভাবলাম শিয়াল মামাকে নিয়ে কিছু একটা লেখা-লেখি করলে মন্দ হয় না। লিখলাম ঠিকই--- কেমন হয়েছে জানিনা। আপনারা কিছু যোগও করতে পারেন। )
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৮
২২টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×