somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এ জার্নি বাই প্লেন

২০ শে অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঈদের দিনে ঢাকা থেকে ফ্লাই করার মজা হইল ইকনোমি ক্লাসের টিকেট কাটলেও ফার্স্ট ক্লাসে বইসা আসা যায়। বোর্ডিং কার্ড দিদি মনি আমার প্রতি মহা সদয় হইলেন। প্লেনে ওঠার আগে বুঝিও নাই তিনি নিজে থেকে আমাকে প্রথম শ্রেনীতে উন্নিত করে দিসেন। প্লেনে উঠেতো আমার পুরাই ঈদ মোবারক!

ঢাকা টু কুয়েত ছয় সাড়ে ছয় ঘন্টার জার্নি। রাত এগারোটা পর্য্যন্ত বাইরে আড্ডা মেরে ঘরে ফিরে মালপত্র ওজন দিয়ে বান্দাবান্ধি করে আর ঘুম হয় নাই। ভোর রাতে এয়ারপোর্ট আসতে আসতে জটলাহীন ঢাকার রাস্তা ঘাট কি সুন্দর আর ফুরফুরে যে লাগছিল! আহারে, ইচ্ছে করছে না আর এমন ক্লান্তি নিয়ে দুই মহা সাগর পাড়ি দিতে। মনটা চাইছে মনিপুড়িপাড়ায় গিয়ে ঘুমায় থাকি। ঈদের পর দিন দুপুরে হলে গিয়ে র্পূণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী আর দেখতে পারলাম না। আফসোস!

ফার্স্ট ক্লাসে বসাইছে ঠিকই কিন্তু ইন ফ্লাইট এন্টারটেনমেন্ট সিস্টেম কাজ করে না। হেড সেট কানে লাগিয়ে কতক্ষন গুতাগুতি করে ক্ষ্যান্ত দিলাম। এই জাহাজে আবার লিকার সার্ভ করেন না। দেখি প্লেনের অমলেট নাস্তা খেয়ে এক ঘুমে কত দূর যাওয়া যায়...


কুয়েত নেমে পঞ্চাশ মিনিটের মাথায় আবার সিকিউরিটি চেকফেক সেরে দৌড়াতে দৌড়াতে লন্ডনের জাহাজ ধরি। জগতের সব চেয়ে ফইকরা এয়ার লাইন সার্ভিস এইটা। এই ফ্লাইটের ও ইনফ্লাইট এন্টারটেইনমেন্ট এক সিটের পিছনে কাজ করেতো আরেক সিটের সামনেরটা কাজ করে না। আমার সিটের সামনেরটা নষ্ট। ফ্লাইট হইল সাড়ে সাত ঘন্টা লম্বা। মহা মুসিবত! কতক্ষন আর চুপচাপ বসে থাকা যাবে? আমার পাশের দুই সিটে নিউইয়র্কের যাত্রী খালা-খালু। আমি চুপচাপ চক্ষু বন্ধ করে পরে থাকি আর এয়ারহোস্টেজ এসে কফি, কুকি, চিকেন বিরিয়ানী, জুস-ফুস যাই দিয়ে যায় উঠে উঠে খাই আর চোখ বুঝে ঝিমমেরে থাকি। পাশে বসা খালু সাহেব আলাপ করার ইচ্ছায় বারে বারে তাকান। আমার কারো সাথে আলাপ জমাতে ইচ্ছে করে না। ঝিমমেরে চোখ বুজে পরে থাকি। হাজার মাইল উপর দিয়ে জাহাজ উড়ে চলে। পার হয় অটলান্টিক মহাসাগর...

লন্ডনের হিথ্রো এয়ারপোর্ট দিয়ে কতবার যে যাওয়া আসা করলাম তার ইয়াত্তা নাই! এবারই ট্রানজিট টাইম সব চেয়ে কম। এর মধ্যে হিথ্রোর এক টারমিনাল থেকে আর এক টারমিনালে যেতে হয় বাসে করে। দুই দুইবার বেল্ট, জুতা, জ্যাকেট আর ব্যাকপ্যাক খুলে তন্ন তন্ন সিকিউরিটি চেক। আমার ম্যাকবুক এর সাথে হিথ্রোর ওয়াইফাই এর পুরানো পরিচয়। ফট করে ল্যাপটপ খুলে ফেইস বুক আপডেট দিয়ে দিলাম। জীবনে প্রথম যখন হিথ্রো এয়ারপোর্টে দশ ঘন্টা বসে কাটাই তখনতো আর ইন্টারনেট এর জামানা না, একটা কালেক্ট কল করতে সে কি কসরৎ করতে হয়ে ছিল! ধুমধাম কতক্ষন ফেইসবুক করে প্লেনে উঠে পরি। লন্ডন থেকে এযার কানাডার ফ্লাইট। এয়ার কানাডার ইনফ্লাইট এন্টারটেইনমেন্ট সিস্টেমটা খুবই ভালো। সেইরকম সব ফিল্ম, ডকু, টিভি শো, মিউজিক। কী চাই আর! আছে কার্টেসি বার সার্ভিস। প্রিয় পানেয়'র স্বাদ। ঈদের পরে আসমানের উপর শুরু হলো আবারো চাঁন রাইত! সেই রকম ফূর্তি আমার!


সাড়ে আট ঘন্টার ফ্লাইট। দীর্ঘ ১১ মাস কানাডার টিভি দেখি না সিবিসি'র ইনফ্লাইট চ্যানেল ব্রাউজ করতেই রানা প্লাজা নিয়ে বিশদ একটা রিপোর্টিং টাইপ ডকু দেখলাম। অল্পের মধ্যে পুরো ব্যাপারটা ধরে ফেলেছে। আমাদের দেশের একটা চ্যনেলেরও দেখবার দৃষ্টিটা এমন টু দি পয়েন্ট ঝরঝরে স্পষ্ট নয়। বস্ত্র মন্ত্রীর ইংরেজী শুনে প্লেনের থেকে ঝাপ দিতে মন চেয়ে ছিল। টাকা বোঝাতে কেমন বিশ্রী করে লোভীর মত দুই হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি আর তর্জনী দিয়ে মানি মানি করছিলেন, ইস্!

এয়ার কানাডার সিস্টেমে দুনিয়ার সিনেমা সম্ভার! কোনটা রেখে কোনটা দেখি! ক্লাসিক্স, ক্যানেডিয়ান, নিউ রিলিজ, আভা গাঁদ, ফ্যামিলি, কন্টেম্পোরারী, ওয়ার্ল্ড, ফ্রাঙ্কো সিনেমা। আমি এয়ার কানাডায় যখনি চড়ি সারাক্ষন পরে থাকি সিনেমা নিয়ে। সাড়ে আট ঘন্টায় তো আর সব দেখা সম্ভব না, তাই ঘুরে ঘুরে সব গুলি ছবির প্রমো দেখা শেষ করি প্রথম। তার পর যেই ছবি গুলি পরে দেখবো সেই নাম গুলি টুকে নি। আগামী মাসে রিলিজ হবে কানাডিয় প্রামাণ্যচিত্র ওয়াটারমার্ক। প্রমোশন দেখে ভীষন আগ্রহ বোধ করছি। প্রামাণ্যচিত্র নির্মানে ওস্তাদ দেশ কানাডা। গল্প কে নিয়ে ছবিটা হলে যেয়ে প্রথম ফুরসত এ ই দেখে ফেলতে হবে।



সিনেপ্লেক্সে এক দিন দেখতে চেয়ে ছিলাম ওয়ার্ল্ড ওয়ার জি সময় মেলাতে পারিনি। তাই দেখা শুরু করলাম ছবিটা। ডিনারে পাস্তা মিট সস দিয়ে রেড ওয়াইন খেয়েছি। বহু কষ্ট করে অর্ধেক ছবি দেখে আর দেখতে পারলাম না হলিউডের এই ট্রেশ। রেড ওয়াইন আমাকে দিল ঘুম পাড়িয়ে। লন্ডন টু টরন্টোর এই ফ্লাইটটা ভর্তি নয়। আমার পাশের সিটটা খালি। আমি ঠ্যাং ছড়িয়ে আরামের ঘুম দেই।



ঘুম থেকে উঠি এয়ার কানাডার খটখটে এক খালাম্মাটাইপ এয়ার হস্টেজ এর ডাকে। পলাশ নুরুল আফসারের কথা মনে করে খালাকে জিজ্ঞেস করি কার্লসবার্গ বীয়ারটা আছে কী না? খালা বললেন নাই। তার কাছে আছে হাইনেক্যান, কুরস লাইট আর মলসন ক্যানেডিয়ান। আমি এক প্যাকেট প্রিত্থজেল আর হাইনেক্যান নিয়ে দেখতে বসি ক্যানেডিয়ান থ্রীলার "ইরেজ্ড"। জোস মুভি! হলিউডের বস্তাপচা ওয়ার্ল্ড ওয়ার জি'র চেয়ে ঢের বিনোদন। বুদাপেস্ট এ গোপন মিশনে কাজ করা এক সিঙ্গেল ফাদার আর তার টিন এজ কন্যা'র রুদ্ধশ্বাস একশন থ্রিলার। খালাকে বলি খালা আরেকটা বীয়ার দেন, খালা এইবার এনে দেন মলসন ক্যানেডিয়ান। এয়ার কানাডার ফ্লাইটে কানাডার সিনেমা দেখবো আর হল্যান্ডের বীয়ার খাবো তাই কি হয়! চীল্ড ক্যানেডিয়ান বিয়ার এ চুমুক দিতে গিয়ে মনে হলো, ঢাকা শহরের সেই পুলিশটি যে রাস্তার মাঝে আমার ব্যাকপ্যাক খুলে চার ক্যান বাংলাদেশ মেড হান্টার দেখে আমাকে থানায় ধরে নিয়ে যেতে চেয়ে ছিল।



আর কিছুক্ষন বাদেই এয়ার কানাডার ৪৩৫ ফ্লাইটি কানাডার মাটিতে টরন্টোর পিয়ার্সন এয়ারপোর্টে নামবে। তারপর ইমিগ্রেশন পার হয়ে কনভেয়ার বেল্ট থেকে লাগেজ গুলি নিয়ে কাস্টম ছাড়িয়ে আবার অটোয়ার প্লেনের জন্য ছুটতে হবে... এয়ার কানাডার ফ্লাইটা মেঘের ভেলা ভেঙ্গে নীচে নামছে দ্রুত। কেবিনের ভেতরকার এয়ার প্রেশারের কারনে কানে তালা লাগে। মলসন ক্যানেডিয়ানের শেষ চুমুকটা সাগর আর তপুর জন্য দিয়ে কেবিন ক্রুর ঘোষনা মোতাবেক সীট বেল্টটা বাঁধি। প্রতিবার প্লেন টেকঅফ আর ল্যান্ড করার সময় মনে হয় এই বুঝি চাক্কাচুক্কা ভেঙ্গে মুখ থুবরে পড়বে প্লেন! দীর্ঘ এগারো মাস পর ফিরছি। ফিলিং এক্সাইটেড! ভালো থেকো বন্ধুরা। ভালো থেকো বাংলাদেশ। চীয়ার্স!
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫৮
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×