ঘটনা-১ পড়তে ক্লিকান
দ্বিতীয় ঘটনা : ছোট বেলায় আমি বেশ ভিতু প্রকৃতির ছিলাম। আমাদের বাড়ি থেকে মুল রাস্তায় বের হতে ঘন বন জংগল পাড়ি দিতে হতো। আমার সমবয়সি কেউই যেহেতু আমার সাথে একই ক্লাসে পড়তো না তাই বেশ বিপদে ছিলাম। একা একা ঐ রাস্তা পেরিয়ে স্কুলে যেতে চাইতাম না। আম্মাই রাস্তা পর্যন্ত এগিয়ে দিতেন এবং বিকাল ৪ টার পর নিয়ে আসতেন। দিনের বেলায়ও রাস্তাগুলো অন্ধকার থাকতো, শেয়াল ডাকতো, বাশের ঝাড় থেকে মড়মড় শব্দ কানে যেতেই কলজে শুকিয়ে আসতো।
৮৮ সালের বন্যার সময় আমাদের বাড়ির পাশের এক কাকা ঘুমের মধ্যেই মারা যান। কেউ বলছিলো সাপের কামরে মারা গেছে, কেউ বলছে প্রেসারের রোগী ছিলো, অনেকে অনেক কিছুই বলছিলেন অবশেষে কোন কারনই উৎঘাটন হলো না। বন্যার পানিতে সব জায়গাই ডুবে রয়েছে, কোথায় মাটি দিবে ভেবে পাচ্ছিলো না অবশেষে তারা সিদ্ধান্ত নিলো জংগলের পাশে একটা উচু ডিবি আছে সেখানে কিছু মাটি ফেলে ওখানে কবর দেয়া হবে। কবর দেয়ার একদিন পড়েই দেখা গেলো কবর ফেটে গিয়ে লাশ দেখা যাচ্ছে। কয়েকবার ঠিক করা হলেও মাটি ফেটে লাশ দেখা যাচ্ছিলো। এবং বেশ কিছু অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে লাগেলো। কেউ কবরের উপর আগুন জ্বলতে দেখলো, কেউবা সাদা কাপর পরিহিত কাউকে, কেউবা রাতে কবরের পাশ দিয়ে হেটে গেলে উপর থেকে কেউ প্রসাব করে শরির ভিজিয়ে ফেলতো। যেহেতু মূল রাস্তায় যেতে কবরটি পরতো তাই সবাই রাতে বিকল্প রাস্তা খুজে সেখান দিয়ে যাতায়ত করা শুরু করলো। আব্বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে সন্ধ্যা ৭ টায় ফিরতেন এবং বাসায় এসে বলতেন ঐ কবরের পাশে আসলেই শরীর ভার হয়ে উঠে। আব্বাও বিকল্প রাস্তা ব্যবহার শুরু করলেন। মৃত কাকার ছোট ভাই বিডিআরে চাকুরী করতেন সে একদিন রাত ২টার সময় বাড়িতে ফিরছিলেন। ঐ কবরের কাছে আসতেই তার সামনে নাকি (তার মুখে শোনা) বিশাল দেহের এক মানুষ বাধা হয়ে দাড়িয়েছিলেন। কাকা নাকি অনেক জোড়ে চিৎকার চেচামেচি করেছিলেন। অবশেষে বাসায় এসে জ্ঞান হারিয়েছিলেন এর বেশ কয়েকবছর পর তিনিও হঠাৎ মারা গেলেন। আর আমিতো বাড়িতে থাকাকালিন ভুলেও রাতে ও রাস্তায় পা মাড়াইনি।
ঢাকাতে আসার পর তো চাকুরীর খাতিরে অনেক জেলায়ই যেতে হয়েছে রাত বিরাতে চা খেতে খেতে অনেক রাত পর্যন্ত আড্ডা দিয়েছি কোন অশরি শক্তিরই সন্ধান পাইনি শুধুমাত্র ত্রিপুরার সেই ঘটনা ছাড়া। ঢাকায় আসার পড় সেই রাস্তায় কবরের পাশের ঘটনা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম। ঢাকা থেকে বাড়িতে যাচ্ছিলাম রাত ১১টায় পৌছলাম মুল রাস্তায়, জংগল পেরিয়ে যাচ্ছিলাম ঝিঝি পোকার শব্দ, ঠক ঠক শব্দ করে পাখি ডাকছিলো বেশ ভালোই লাগছিলো। যান্ত্রিক ঢাকা শহর ছেড়ে এমন সুন্দর পরিবেশ বেশ মজাই লাগছিলো কিন্তু কবরের পাশে আসতেই সেই বিপত্তি মনে হলো আমার শরীরের মধ্যে কেউ ঢুকে পড়েছে। পা চলছিলো না, শরীর ভার লাগছিলো, পিঠে থাকা ব্যাগটা হাতে নিলাম নাহ্ তবু ভার লাগছে। ৪০ সেকেন্ড এর রাস্তাটা আর যেনো ফুরাচ্ছেনা, কোন মতে ব্যপক শক্তি প্রয়োগ করে আগাচ্ছিলাম, পাশের বাড়ির নারিকেল গাছটার কোনায় আসতেই সাই করে শরীর থেকে মনে হলো কেউ বেরিয়ে গেলো আমিও হালকা বোধ করলাম এবং এক দৌরে বাড়িতে। বাড়িতে গিয়েই ঘটনাটা বললাম, আব্বা, আম্মা বকাবকি করছিলো কেন আমি একা আসতে গেলাম। আমি ঘটনাটায় হত বিহব্বল হয়ে পরলাম। হুজুরেরা বলতেন কবরের কাছে গেলে নাকি নিরাপদ! ভুত, পেত্নী নাকি কবরের কাছে ঘেষতে পারে না? তাহলে এ কবরের কাছ দিয়ে হেটে গেলে এমন কেনো হয়। যতবার রাতে ঐখান দিয়ে একা গিয়েছি প্রতিবারই এমন ঘটছে, সেদিন দেখলাম তার ছেলেরা কবরটাকে ইট পাথরে বাধাচ্ছে আমার বলতে ইচ্ছে করছিলো যে এখান থেকে কবর সরিয়ে তোদের ব্যাক্তিগত কবরস্থানে নিয়ে যা। কিন্তু বলা হয়নি ওরা আবার কি ভাবে! এবার হয়তো বাড়িতে গিয়ে রাতে বাধানো কবরের পাশ দিয়েই যেতে হবে, আগেতো কবরটা অস্পষ্ট ছিলো এখনতো দূর থেকেই কবরটা দেখতে পাবো। তাহলে নতুন কিছু ঘটনা ঘটার কি অপেক্ষা করছে রাতে হেটে যাওয়া মানুষের কপালে!

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



