somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দ্বীপগ্রাম কাট্টলি বিল

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নিঃশব্দের জলাভূমি আর নীল আকাশের নিচে জেগে আছে কাট্টলি বিলের অনেকগুলো দ্বীপ । কাপ্তাই লেকের বিস্তৃত জলরাশির মাঝখানে এই দ্বীপগুলোতে গড়ে উঠেছে মানুষের বসতি । মৎস্য শিকারকে কেন্দ্র করে দ্বীপের বুকে গড়ে উঠেছে বাজার । জেলেদের নৌকা মেরামতের সরঞ্জাম আর শুটকি পল্লী গড়ে উঠেছে এই বাজারে । কাট্টলি বিলের দুরত্ব রাঙ্গামাটি সদর থেকে জলপথে প্রায় ৪ ঘন্টার - একমাত্র বাহন লঞ্চ বা দেশী বোট । আমাদের অবশ্য যাত্রাপথ ছিল লংগদু হয়ে । লংগদু থেকে কাট্টলি বিল দ্বীপের দুরত্ব প্রায় ২ ঘন্টার মত ।
সকালের কুয়াশা মোড়ানা স্নিগ্ধতাকে সঙ্গী করে মোটরবাইকে রওনা হলাম দিঘীনালা থেকে,আঁকা বাঁকা সরু পাহাড়ী পথ পেরিয়ে ১ ঘন্টায় পৌঁছে যাই লংগদু বাজারে । রাঙ্গামাটির পুরানো বাজারগুলোর মধ্যে অন্যতম লংগদু বাজার । পাশেই মায়ানী মুখ যেখানে কর্ণফুলীর উপনদী কাছালং মিশেছে । মায়ানী নদীর মুখে গড়ে উঠা মাইনী বাজার এই অঞ্চলের পুরাতন এবং প্রধান বাজার । বাজারের বেশীরভাগ ব্যবসায়ী বাঙালি । মায়ানী মুখ পেরিয়ে রাঙামাটির দিকে যেতেই সুমদ্র সদৃশ্ বিশাল জলরাশির বুকে দ্বীপের মত কাট্টলি বাজার । চারপাশে লেকের নীল জলরাশি জুড়ে শীতের আগমনী জানিয়ে দেয় মিষ্টি কুয়াশা ।
লেকের এই অংশজুড়ে মাছধরা নৌকার সারি । পানকৌড়ি আর নানা জাতের পাখির ঝাঁক বিলের চারপাশে। মূলত শীতের পাখি দেখতে কাট্টলি বিলে আগমন । মাছের প্রাচুর্যের কারনে কাট্টলি বিল পাখিদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ছোট সরালি,টিকি হাঁস,বড় সরালি,মাথা মোটা টিটি,গাঙচিল,গাং কবুতর,চ্যাগা,চখাচখিসহ নানান প্রজাতির পাখির ঝাকে মুখরিত পরো বিল । দেশী বোটে করে রওনা হলাম লংগদু ঘাট থেকে- যাত্রী সংখ্যা ১২ জন । নীল জলরাশির বুক চিড়ে ,ঢেউ তুলে চলেছে ইঞ্জিনচালিত বোট । জল শুধু জল-পাড়ি যেন গেছে ভেসে,মাঝপথে শুধু ছোট ছোট দ্বীপ আর দূরে পাহাড়ের সারি । মাঝপধথর এই দ্বীপগুলোতে মাত্র ২/১ টা পরিবারের বসবাস ।বর্ষায় এসব দ্বীপ পানির নীচে থাকে তাই প্রত্যেক পরিবারের যোগাযোগের জন্য একটা করে নৌকা আছে । জলের জীবন দেখতে দেখতে চলেছি কাট্টলি বিলের দিকে । দেখি দূরের পাহাড়গুলোকে চুম বুলিয়ে নীল মেঘ অবারিত জলরাশিকে নিজের রঙে রাঙিয়ে দিয়ে ভেসে বেড়ায় । জলের বুকে মাঝে মাঝে ভেসে উঠে পরিযায়ী পাখির ঝাঁক । বেশ কয়েকবছর ধরে অতিথি পাখির সমাগম ঘটে কাট্টলি বিলে । এই বিলে পাখি শিকার কমে যাওয়ায় পরিযায়ী পাখির সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে ।পাখির ঝাঁক দেখলেই বোটের গতি কমানো হয় ,যাতে পাখি উড়ে না যায় ।
পাখি ঝাঁক দেখতে দেখতে দুপুর নাগাদ পৌছে যায় কাট্টলি বিলে । লেকের নীলাভ স্বচ্ছ ঠান্ডা জলে দীর্ঘ স্নান শেষে ৩-৪ পদের তাজা মাছ সমেত মধ্যাহ্ন ভোজ সারলাম বাজারের শাহজাহান ভাইয়ের দোকানে । পরিতৃপ্তির স্বাদ নিয়ে কাট্টলি বিল থেকে আবার যখন রওনা হলাম লংগদুর পথে ততক্ষনে সোনালী সূর্য সোনা রঙা আলোয় চরাচরকে মুড়িয়ে দিয়ে মুখ লুকিয়েছে পাহাড় ঘেষা লেকের জলে ।

প্রয়োজনীয় তথ্য: আপনি যদি সাঁতার না জানেন তবে পানিতে নামবেন না,লেকের পানি বেশ গভীর । লাইফ জ্যাকেট ব্যবহার করতে পারেন । কাট্টলি বিলে রাতে থাকার কোন সুযোগ নেই । বিকেলেই আপনাকে ফিরে আসতে হবে । কাট্টলি বিল বিষয়ক যেকোন তথ্য ও সহযোগিতার জন্য যোগাযোগ করতে পারেন-01556-710043,01815856497 (সিএইচটি ট্র্যাভেল) ।
খেয়াল করবেন : কাট্টলি বিলের পানি খুবই স্বচ্ছ নীলাভ । লেকের পানিতে কোন বোতল,প্যাকেট,প্ল্যাষ্টিক ইত্যাদি ফেলবেন না ।
লেখা ও ছবি :সমির মল্লিক
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×