বেসামরিক প্রশাসনে সরকারি চাকরিজীবীদের আর্থিক সহায়তা ও অনুদানের পরিমাণ বাড়িয়েছে সরকার। এখন থেকে চাকরিরত অবস্থায় কোনো সরকারি চাকরিজীবী মারা গেলে তার পরিবারের সদস্যরা আর্থিক অনুদান হিসেবে আট লাখ টাকা পাবেন।
এছাড়া চাকরিতে থাকাকলে গুরুতর আহত হয়ে কেউ স্থায়ীভাবে অক্ষম হলে তার পরিবারের সদস্যরা চার লাখ টাকা সহায়তা পাবেন।
২৯ জুলাই এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, গত ১ জুলাই থেকেই কার্যকর এটি ধরা হবে।
খুবই ভালো প্রস্তাব। অথচ বেসরকারী চাকরীজীবীদের বেলায় কি হবে? এদের বেলায় কি সরকারের কোন দায় ভার নেই? অথচ কয়টা সরকারী প্রতিষ্ঠান লাভের মুখ দেখে? দেশকে এগিয়ে নিতে, দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে ভুমিকা পালন করছে? সরকারী কোন খাতটি থেকে দেশের সর্ব সাধারণ মানুষ মান সম্মত সেবা পাচ্ছে বলতে পারেন?
বাংলাদেশ রেল, বিমান বাংলাদেশ, সবই লস প্রজেক্ট। বিআরটিসি তো কবেই শেষ। সরকারী পাটকল চিনি কল যাই বলেন, সবই লস আর লস, সরকারী প্রতিষ্ঠান লাভের মুখ কেউ দেখে না, লাভ দেখে সরকারী ব্যক্তিরা। প্রশাসনের কথা বলে লাভ নেই। এটা সবাই জানেন। কার কত বেতন আর কে কত টাকার গাড়ি বাড়িতে চড়েন, সেটা এই সমাজে নতুন করে ব্যাখ্যা বিশ্লেষনের প্রয়োজন নাই। তারপরেও তাদের আরো সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করে লাভ টা কি হচ্ছে, যদি সততা, স্বভাব দূর্নীতি দূর না হয়?
পক্ষান্তরে বেসরকারী উদ্যোক্তাগন একের পর এক কল কারখানা মিল ফ্যাক্টরী ঠিকই খুলছেন। লাভ না হলে কি ব্যবসা বাড়ানো সম্ভব? তারা ব্যাংক থেকে লোন করছেন, ব্যবসা করছেন, লাভ করছেন, সুদ সহ ব্যংককে টাকা পরিশোধ করছেন। দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখছেন। অথচ সমাজে এই বেসরকারী লোকদের কোন স্ট্যাটাসই নেই!
আগে একসময় সমাজের এই ক্ষত গুলো নিয়ে নাট্য শিল্পিরাও সোচ্চার ছিলেন। বিটিভিতে এমন প্রচুর নাটক প্রচারিত হয়েছে, যেখানে দেখানো হয়েছে যে সমাজে সংসারে সৎ সততার জয় হয়েছে, সৎ সততার মূর্ত প্রতীক মধ্যবিত্ত শ্রেনী মানুষেরা বিত্তের মাঝে নয়, চিত্তের মাঝে সুখে শান্তিতে বসবাস করছে, ঘুষখোর কর্মকর্তা কর্মচারীরা আইনের আওতায় সাজা পাচ্ছে, সমাজে নিগৃহিত হচ্ছে। এখন কোথায় সমাজের সেই চীত্র?
ফ্যাস্টাসী কিংডম আর শাহবাগের শিশুপার্ক দেখলেই সহজে অনুমেয় এই দেশে সরাকরী আর বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মাঝে তফাতটা কত। অথচ তার পরেও এই দেশে বেরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীদের কোন স্ট্যাটাস নাই। তারা সমাজ দেশ রাষ্ট্রের জন্য যতই করুক না কেন, কোন ক্রেডিট নেই। আছে শুধু প্রতি পদে পদে সরকারী খরচ আর নিগৃহ। তাদের জন্য কোন সুখবর ঘোষিত হয় না।
একটি ব্যঙ্গ কার্টুনে দেখেছিলাম, বিচারের দিনে সৃষ্টিকর্তার কেঁদে ফেলেছেন, যখন তিনি একজন বেসরকারী কর্মচারীকে বিচারের কাঠগড়ায় দাড় করিয়েছেন। ঘটনাটি এরকম
স্বর্গের দরজায় তিনজন লোক দাড়িয়ে আছে। ঈশ্বরের অলৌকিক বজ্রকন্ঠ ভেসে এলো ' তোমাদের মধ্য থেকে কেবল একজন ভেতরে আসতে পারবে' ১ম ব্যক্তি: আমি ধর্মপূজারী... স্বর্গে ঢোকার অধিকার আমার সবচেয়ে বেশী। ঈশ্বর নিশ্চুপ।২য় ব্যক্তি: আমি সমাজ সেবক, সারা জীবন আপনার সৃষ্টির সেবা করছি, তাদের দুঃখ দুর করেছি, স্বর্গে ঢোকার অধিকার আমারই বেশী। ঈশ্বর নিশ্চুপ। ৩য় ব্যক্তি: আমি সারা জীবন একটা প্রাইভেট কম্পানীতে চাকরী........... 'থাম' ঈশ্বরের ধরা গলার আর্তনাদ ভেসে এলো ' আর একটা শব্দও বলবি না....আমারে কান্দাবি নাকি পাগলা...আয় ভেতরে আয়.... তোর সারা জীবন বসের ঝাড়ি খাওয়া, প্রমোশন না হওয়া, বছর শেষে বেতন না বাড়া, অফিস পলিটিক্স সামলানো, বিনা পয়সায় ওভারটাইম, রাত করে বাড়ি ফেরা, বাসে ঝুলে আসা যাওয়ার কষ্ট, উইকইন্ডে বাসায় কাজ করা, পরিবারকে সময় না দেওয়া, সংসার চালানোর কষ্ট.....কয়টা বলবো...সেন্টিমেন্টাল করে দিলি রে পাগলা......আয় ভেতরে.....
এমন কিছু পাওয়ার আশায় বোধ হয় বেসরকারী চাকুরীজীবীরা সংসারের সমাজে গ্লানি, ঘৃণা , বঞ্ছনা সব সয়ে সমাজ সংসারের ঘানি টানে। তারা রাস্তায় উল্টো পথে গাড়ি চালাতে পারে না, চালালেই জরিমানা আর ট্রাফিকের মামলার সাথে ফ্রী চোখ রাঙানি দেখতে হয়, আর পাশাপাশি ফ্লা্গ ষ্ট্যান্ড লাগানো গাড়ি উল্টোপথে তার পাশ দিয়েই ভো করে বেরিয়ে যায়, স্যলুট পায়! সমাজ এভাবেই তাদের মূল্যায়ন করে .........
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:২৯