somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাস আল খাইমা'র" (UAE) রহস্যময় ভূত-প্রেতের রাজ্যে স্বাগতম

২৪ শে জুলাই, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"চলে যাও এধাড়ছে " চলে যাও.. গায়েবী আওয়াজ পেয়ে আমরা চরম ভড়কে গেছিলাম। বিকট শব্দে গাড়ি ধাক্কা লাগার আওয়াজ। গাড়ি থেকে নেমে দেখি ধাক্কা লাগার মত কিছুই নেই। ইয়া বড় জলজ্যান্ত একটা কালো বিড়াল নিমিষেই উধাও। ভূত দেখা সেইসাথে ভূতের রহস্য উন্মোচন, অসাধারণ রোমাঞ্চকর ছিল দিনটি। ভূত নিয়ে লিখা ঠিক হবে কিনা (একটু ভিতু একটু সাহসী এই আমি) এই দ্বিধাদ্বন্দে কেটে গেছে অনেক দিন। অবশেষে সাহস সঞ্চার করে......

আপুদের অনুষ্ঠানস্থলে রেখে আমরা চারজন (পাভেল ভাই,রাশেদ ভাই ,লিমন ভাই আর আমি ) রহস্যময় ভুতের বাড়ি দেখতে যাই। প্রথমে ভুতের বাড়ি(ghost house) তারপর যাই ভুতের রাজ্যে (The Ghost Town of Ras Al Khaimah)। ভুতের বাড়ি সম্পর্কে বলে রাখি , এই বাড়িতে কেউ এসে থাকতে পারে না। সুরম্য একটি অট্রালিকা (ছবি প্রথম কমেন্টে) বছরের পর বছর পরিত্যক্ত হয়ে পরে আছে। এটা নিয়ে আমিরাতে বিস্তর মিথ চালু আছে। বাড়ির মধ্যে নাকি নাকি সুরে শোনা যায় এক অশরীরীর গলার স্বর। এ বাড়িতে কেউ আসলে তাদের গায়েবী আওয়াজে চলে যেতে বলা হয়। তাদের আসবাবপত্র ছুড়ে ফেলা হয়। সোজা দাঁড় করানো জিনিসপত্র উলটে যায়। রাতে কখনো কান্নার আওয়াজ কখনো খিলখিল হাসির শব্দ শোনা যায়। ঝনঝন শব্দে বাড়ি ঘর কেঁপে উঠে। ঝুম বৃষ্টির শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায়। বাড়িতে কোনো সংস্কার কাজ করা যায় না। রাতের অন্ধকারে ভেঙ্গে দিয়ে যায়।


[ভুতের বাড়ি]

আমরা ভুতের বাড়িতে পৌছানোর পর একটু উকি দিচ্ছি। দুপুর একটা বাজে, সুয্যি মামা মাথার উপর। বাড়ির গেটে বড় তালা ঝুলছে। গেটের ফাঁক গলে তাকাতেই সেই গায়েবী আওয়াজ ভেসে এলো "চলে যাও এধাড়ছে " চলে যাও.. আমরা ভয় পেয়ে একটু দুরে সরে আসি। রাশেদ ভাই বলছে , এটা ভুতের আওয়াজ হতে পারে। আমি বলছি ভিতরে একজনকে দেখতে পেয়েছি। রাশেদ ভাই এর উত্তর, ওটা মানুষরুপি জ্বীন। তারাতারি চলুন গাড়িতে যেয়ে বসি। আমি কিছু বলতে যাচ্ছিলাম কিন্তু ভুতের বাড়ি এসে ভুতের বিরুদ্ধে বলা, চেপে গেলাম। লিমন ভাই এটাকে মাফিয়াদের সেফ হাউজ বানানোর কৌশল হতে পারে বলে মত দিলেন। এখানে নেগেটিভ চার্জ থাকতে পারে বলে পাভেল ভাই এটাকে বিজ্ঞান নির্ভর ব্যাখা দেয়ার চেষ্টা করলেন। ভূত গাড়ির চাকা পাংচার করে দিতে পারে ,গাড়ির ভিতরে চলেন। ভয় একটি সংক্রামক , রাশেদ ভাইয়ের কথায় হারে হারে টের পেলাম।

ছোটোবেলায় গল্প শুনেছিলাম ভূতপ্রেত ও জিন পরীরা গায়ে এসে ভর করে, তাই ভয় পেয়ে তাড়াতাড়ি গাড়ির ভেতরে এসে বসলাম। গাড়িতে উঠে ভুতের বাড়ির চারপাশ ঘুরে রওনা দেই ভুতের রাজ্যের দিকে। ওখান থেকে ১০ মিনিটের দুরুত্ব। এটা নিয়েও অনেক মিথ চালু আছে। এটা একটা জনমানব শূন্য পরিত্যক্ত শহর। ১৪শ শতকের দিকে শহরটি গোড়াপত্তন হয়। প্রচুর ভূত প্রেমী ট্যুরিস্ট আসে। একবার এখানকার গালফ নিউজের একদল সাংবাদিক সারারাত থেকে লাইভ আপডেট দিয়েছিল। অনেক ঘোস্ট হান্টার ও এসেছে ভূত খুজতে। "The Ghost Town Of Ras Al Khaimah" লিখে ইউটিউবে সার্চ দিলে অনেক ভিডিও পাবেন।


[ভূতের রাজ্যে আমরা কয়জন ]

ভূতের রাজ্যে গাড়ি পার্ক করতে যেয়ে ঘটল অঘটন। প্রচন্ড শব্দ হলো , মনে হচ্ছে কোনো মেটালের সাথে গাড়ি ধাক্কা খেয়েছে। আমরা দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে দেখি ধাক্কা লাগার মত কোনো কিছু সেখানে নেই। আমরা গাড়িতে উঠে একই জায়গায় কয়েকবার ঘুরানো হলো আর কোনো শব্দ পাই না। আবার রাশেদ ভাই ভয়ে কাচুমাচু হয়ে বলল এটা নির্ঘাত ভূতের কারসাজি। ভিতরে প্রবেশের আগেই ভয় বেড়ে গেল। একটা সাইন বোর্ড ঝুলছে "ফটোগ্রাফি নট এলাও"। বেশি ভিতর দিকে না যেয়ে আকাবাঁকা সরু পথে হাটছি। বাড়ি গুলা এতো পূরাতন যে মনে হচ্ছে এখনি বুঝি ধসে পড়বে। পাভেল ভাই বলছে ভূত থাকে আরেকটু ভিতরে সেদিকটায় চলেন। রাশেদ ভাই যেতে রাজি না। আমাদের ও একটু ভয় ভয় লাগছে। দুপুর বেলা ভূতে ধরার নাকি উপযুক্ত সময়। কোথায় ও কেউ নেই খাঁ খাঁ রোদ্দুর। ১০ মিনিটে মতো ভূতের রাজ্যে থেকে একরাশ ভয় নিয়ে আমরা ফিরে আসি।

ফিরে এসে আমাদের ভয়ের গল্প বলতেই অতি সাহসী তিন আপু (ত্রেজা আপু, মোন্তাহা আপু এবং ফ্লোরেন্স আপু) চ্যালেঞ্জ করে বসলো। তারা কোনো ভাবেই এটা বিশ্বাস করতে চায় না। তাদের কথা আমাদের নিয়ে চলেন। ঠিক হলো আমরা আবার সন্ধায় যাব। রাশেদ ভাই বেঁকে বসলেন , আমি যাব না। দুপুরে যেয়ে ফিরে আসছি সন্ধ্যায় গেলে আর ফিরতে পারব না। রাশেদ ভাইকে ছাড়াই পড়ন্ত বিকালে ভূতের বাড়ি পৌঁছাই। সাথে যোগ হলেন জোসেফ ভাই। ভূতের বাড়ির গেট থেকে প্রায় ১০০ মিটার দূরে গাড়ি পার্ক করে ভীতুর দল (ছেলেদের) দাড়িয়ে আছি। ত্রেজা আপুর নেতৃত্বে তিন আপু হাটতে হাটতে বাড়ির গেটের দিকে যাচ্ছে। আমরা ভাবছি ভয় পেয়ে এই বুঝি চিৎকার করে ছুটে আসবে কিন্তু হায় আসার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। দূর থেকে দেখছি তারা একজনের সাথে গেটের বাইরে গল্প করেই যাচ্ছে করেই যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর ফিরছে তিন সদস্যের সাহসী দল।

ফিরে এসেই ত্রেজা আপুর রাগান্নিত প্রশ্ন কোথায় আপনারা ভূত দেখছেন কোথায় ? আমরা বললাম গেটের ভিতরে। গেটের ভিতরে তো দারোয়ান থাকে , ওর সাথে আমরা কথা বলে আসলাম। আমরা বললাম ঐটা দারোয়ানরূপি ভূত - রাশেদ ভাই বলছে। ত্রেজা আপু আমাদের কড়া একটা ধমক লাগিয়ে দিলেন। ওর সাথে আমাদের অনেক কথা হয়েছে। ও এখানে ৫ বছর ধরে আছে। কোনদিন ভূত দেখে নি। এইটা একজন আমিরাতির বাড়ি , তার স্ত্রী মারা যাবার পর এখানে কেউ থাকে না। এরপর থেকেই বাড়িটি পরিত্যাক্ত।প্রথমে হিন্দিতে কথা বলছিল, আমরা বাংলাদেশী শুনে ও তো মহা খুশি। দারোয়ান ভাইয়ের বাড়িও বাংলাদেশে। ও আমাদের পেয়ে অনেক খুশি ,অনেক গল্প করলো।

আমরা এবার অনেক সাহস নিয়ে ভুতের রাজ্যে ছুটে চলছি। গাড়ি পার্ক করে যখন ভিতরে হেটে চলছি তখন সন্ধ্যা বেশ ঘনিয়ে এসেছে। দিগন্ত বিস্তৃত কালো অন্ধকার মাটি ছুঁয়ে গেছে। আকাশের তারাগুলো বহু দূর হতে মিট মিট করে জ্বলে আমাদের দিকে নির্লিপ্ত চোখে চেয়ে আছে। আমরা দুপুরে যে পথ দিয়ে হাটছিলাম সে পথ দিয়েই ভিতরে যাচ্ছি। অন্ধকারে সবাই একটু ভিতু হয়ে পড়ছে। কোথায় ও একটু শব্দ হলেই চমকিয়ে উঠছি। শুরু হয় ভূত নিয়ে চলতি পথের আলাপচারিতা । ভূত দেখতে কেমন। ভূত সাদা কাপড় পড়ে থাকে। ভূত সবসময় বুড়ি হয়। আমাদের ধর্মে ভূত বলে কিছু নাই তবে জ্বিন আছে। এখানে জ্বিন ও থাকতে পারে। ভূতের ছায়া কখনো মাটিতে পরে না। আচ্ছা জ্বিন ভূত সবসময় মেয়েই হয় ছেলে হয় না ? একটা সাদা ভূত আমাদের সামনে দাড়ালে কি হবে ? গল্পের সাথে সাথে সবাই একটু একটু ভীতু হয়ে যাচ্ছি। সবাই ভয়ে জড়সড় হয়ে হাটছি। পাভেল ভাই বলছে ভূত থাকে ভিতরের গলিতে। চলেন ওদিকটায় যাই। সবারই সাহসের পারদ নিচে নেমে আসছে। কেউ সেদিকটায় যেতে চায় না। চলেন ফিরি। যে পথ দিয়ে এসেছি ওই পথ দিয়েই ফিরছি।

পথের ধারে ইয়া বড় একটা কালো বিড়াল। বিড়ালটা পিঠ উঁচু করে লেজ নাড়াচ্ছে, আর রুদ্র মূর্তিতে ঘোঁ ঘোঁ করছে । বড় বড় চোখ দুটো জ্বল জ্বল করে জ্বলছে। মনে হচ্ছে চোখে দুইটা টর্চ লাইট লাগিয়ে নিয়েছে। তাইলে কি ভূত-প্রেত, বিড়ালের রুপ ধরে আইছে ? ছোটবেলায় শুনেছি কালো বিড়াল সব শয়তানের নেতৃত্ব দেয় এবং ডাইনীরা পৃথিবীতে কালো বিড়ালের ছদ্মবেশ নিয়ে আসে। অতি সাহসীরা (আপুরা) সবাই মোটামুটি একটা চিৎকার দিয়ে ফেলেছে। এবার আমরা সত্যিই ঘাবড়ে গেলাম এবং ভয়ও পেলাম। শির শির করে উঠল শরীরের মধ্যে। এত বড় কালো বিড়াল কখনই দেখিনি। আমরা যতই বিড়ালের কাছাকাছি যাচ্ছি ও সরছে না। , ভয়ে শরীরের মধ্যে শিহরণ বয়ে যাচ্ছে। আমরা সবাই হাত ধরে চলছি। ওর খুব কাছে আসতেই জলজ্যান্ত একটা বিড়াল নিমিষেই উধাও হয়ে গেল। অন্ধকারে খুব একটা বুঝার উপায় ছিল না কোনদিকে হারালো। ভয়মিশ্রিত ভূতের রাজ্যকে বিদায় জানিয়ে দ্রুত গাড়িতে উঠলাম দুবাইয়ের উদ্দেশে।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুলাই, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২৮
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×