somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাহাড়, নীল সাগর আর ধু-ধু মরুভূমির মিতালী -UAE(ছবি ব্লগ)!

১৫ ই জুলাই, ২০১৬ দুপুর ২:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[ফুজিরাহ শহর]
বিস্তৃর্ন এলাকা জুড়ে লাল বালি আর উচুনিচু রাস্তার মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছে মন। জলশূন্য দিগন্ত জোড়া মরুভূমির মরীচিকা। উচু নিচু পথ বেয়ে ছুটে চলছি। গন্তব্য যেন গহিন পাহাড়ের অন্তরালে। কোথায়ও মরুভূমির বুক চিরে ,কোথায়ও পাহাড় কেটে, আবার কোথায়ও সমুদ্রের গা ধরে, সে এক অনুপম রাস্তা। ছোটবেলা থেকেই শুনে এসেছি পাহাড় মানুষের মনকে উঁচু করে , সাগর মনকে করে বড় আর ধু-ধু মরুভুমি ? জানি না :) দুবাই থেকে শারজাহ হয়ে আমাদের গন্তব্য -> কালবা ->ফুজিরাহ-> খোর ফাক্কান -> দিব্বা -> মাসাফি।

[লাল বালির চর]

[শারজাহ থেকে যাওয়ার রাস্তার দৃশ্য]

[পাহাড়ের মধ্যে ছবির মতো সাজানো একে-বেঁকে চলা রাস্তা ]

মরুভূমির তপ্ত বালুতে উটেরা দল বেঁধে ছুটে চলছে। নীলাকাশে ঝকঝকে রোদে দূরে আকাশচুম্বী পাহাড়ের মধ্যে ছবির মতো সাজানো রাস্তাঘাট।পাহাড়ের বুক চিরে উঁচু-নিচু এঁকে-বেঁকে রাস্তা কেটে তৈরি করা হয়েছে শারজাহ-কালবা মহাসড়ক। চারদিকে পাহাড় , সেখানে নেই সবুজের সমারোহ আছে পাথরের পর পাথর দিয়ে সাজানো পাহাড় আর সমতলে ধু-ধু মরুভূমি। গাড়ি ছুটে চলার আওয়াজ ছাড়া চারিদিক নিরব-নিঃস্তব্দ ৷ রাস্তার দু’পাশে গাছপালা নেই বললেই চলে। মহাসড়কের পাশে দৃষ্টিনন্দন বিশাল বিশাল পাথরের পাহাড়গুলো ঐতিহ্যময় ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

[উঁচু উঁচু পাহাড়ের সারি ]

[পাহাড়ের মধ্যে উঁচু-নিচু একে-বেঁকে চলা রাস্তা ]

পাভেল ভাইয়ের কথা বলার দক্ষতা অসাধারণ। যেকোনো বিষয় অনেক সুন্দর ভাবে ব্যাখ্যা দিতে পারেন।ভাইয়ের সাথে ঘুরতে যাওয়ার আলাদা একটা আনন্দ আছে। আমরা এখন যাচ্ছি ভুতের সুড়ঙ্গ দেখতে। টানেলের সম্মুখ ভাগে (গাড়ির স্টপেজ) জিন-ভুতের একটা মিথ চালু আছে । দাড়িয়ে থাকলে মনে হবে আপনাকে কেউ টেনে ধরছে। কোথায় ও কেউ নাই কিন্তু মনে হবে জিন-ভূত আপনাকে নিচের দিকে টানছে। অন্যরকম রোমাঞ্চকর ভয়জাগানিয়া অনুভূতি। প্রথমে পাভেল ভাইয়ের কাছ শোনার পর ততটা রোমাঞ্চকর মনে হয় নি কিন্তু গাড়ি থেকে নামার পর মনে হলো এইবুঝি ভূত টেনে ধরছে। জায়গাটা ততটা ঢালু না তারপরও নিজ জায়গায় দাঁড়িয়ে ব্যালেন্স রাখাটাই একটা চ্যালেঞ্জ। আমাদের তিনজনের একই অবস্থা। বৈজ্ঞানিক ভাবে এটাকে বলে গ্রাভিটি হিল বা ম্যাগনেটিক ফিল্ড। নতুন অভিজ্ঞতা নিতে পেড়ে বেশ আনন্দিত।

[ম্যাগনেটিক ফিল্ডে দাঁড়িয়ে আবির আর পাভেল ভাই ]

দুপাশে বিশাল পাহাড় আর ভিতর দিয়ে আধা কিলোমিটার ব্যাপী সুড়ঙ্গ পথ। সুড়ঙ্গের ভিতরে আছে সোডিয়াম বাতি , এসি এবং সতেজ বায়ু নির্গমনের ব্যবস্থা। সুড়ঙ্গে প্রবেশের পর মনে হলো গাড়ি শুধু ঢালু পথে নিচের দিকেই নামছে। গা ছমছম করা অনুভূতি নিয়ে অপর পাশের রাস্তায় পৌছালাম।

[টানেলের ভিতরের একটি দৃশ্য]

[উঁচু উঁচু পাহাড়ের সারি ]

সামনে উঁচু উঁচু পাহাড়ের সারি । দিগন্তের নীল ছুঁয়ে মেঘবালিকারা চুমু দিয়ে যায় পাহাড় চূড়ায়। প্রকৃতির এসব মায়াবী পাহাড় আর নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক নৈসর্গিক সৌন্দর্য অবলোকন করতে করতে আমরা পৌঁছলাম কালবা শহরে। প্রাকৃতিকভাবে মনোমুখদ্ধকর শহরের বুকে ধারণ করে আছে নান্দনিক সাগরসৈকত। যেখানে পাহাড় যেন স্নান করতে নেমেছে সাগরে।নীলাভ আকাশটা যত সুন্দর, তার চেয়ে বেশি সুন্দর তার বিশালতা। সুনীল সমুদ্রটা যত সুন্দর, তার চেয়ে বেশি সুন্দর তার বয়ে নেওয়া ঢেউ । আকাশের নীল আর সমুদ্রের নীল এখানে মিলেমিশে একাকার। ঝিকিমিকি সূর্যের আলো আর তিনিঝিনি মুক্ত ও সতেজ বাতাসের পালকিতে দুলে চলছি। পাহাড় আর নীল আকাশের মিতালী সাথে মৃদু মন্দ বাতাস আর ছন্দময় ঢেউ দেখতে হলে আপনাকে এখানে আসতেই হবে।

[বনাঞ্চলীয় জলাভূমির মতো সাগরের কোল ঘেঁষে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব জলবন]

[প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব জলবন]

[আকাশের নীল আর সমুদ্রের নীল মিলেমিশে একাকার ]

[লেকের উপর সেতু]

কালবা থেকে আমাদের গন্তব্য ফুজাইরাহ । এটি আরব আমিরাতের একটি প্রদেশ । শহরের চারপাশের নান্দনিক স্থাপত্য নয়নাবিরাম সবুজের সমারোহ চোখে পড়ার মতো। ফুজিরাহ শহরে একটু ঘুরে চলে আসলাম খোর ফাক্কান সমূদ্র বীচে। সুউচ্চ পাহাড় গুলোর কোল ঘেসে বিশাল সমুদ্রের কল্লোলিত তরঙ্গ সংকুল, গর্জন করে ধেয়ে আসা সাগরের ঢেউয়ের সাথে পাথরের লুকোচুরি খেলায় নান্দনিক সৈকতে পরিণত হয়েছে "খোর ফাক্কান"। আকাশ ছুঁয়েছে সাগরকে, মেঘ ছুঁয়েছে পাহাড় আর পাহাড় নেমেছে সাগরে। বিস্তৃত উঁচু পাহাড়। মেলেছে দু হাত প্রকৃতির আধার। সাগরের গর্জন আর মিষ্টি শীতল হাওয়া মনে দোলা দিয়ে যায়।

[খোর ফাক্কান বিচের ফুটপাথ]

[আকাশের রং চুরি হয়েছে যেখানে]

[স্বচ্ছ পানিতে মাছ দেখার চেষ্টা]

[নীল জলে ভাসমান জলযান]


সাগর সদা গতিচঞ্চল প্রতীক পৃথিবীর ।
সইতে জানে, বইতে জানে সারা জগৎময়,
সমুদ্র তাই ঐক্যবদ্ধ, পাহাড় ততো নয় ।
--------------------------------------------(ঐক্যবদ্ধ জল - নির্মলেন্দু গুণ )

অনিন্দ্য সুন্দর কবিতায় সাগর যতটা সুন্দর, বাস্তবে বোধহয় তার চেয়েও বেশি সুন্দর।

গাড়ী ছুটে যাচ্ছে দিব্বা-মাসাফি অভিমুখে। পেছনে সাগরের নীল রঙের অথৈ পানি। দিব্বা এবং মাসাফি হচ্ছে ফুজাইরাহ'র দুইটা ছোট উপশহর। মাসাফি তে আছে জুম্মা মার্কেট। কার্পেট , মাটির তৈরি জিনিসপত্রের জন্য বেশ বিখ্যাত।

[দিব্বায় সবুজের চাষাবাদ]

[জুম্মা মার্কেটে রাস্তার পাশে ফলের দোকান ]

মরুভুমি,সাগর আর পাহাড়ের রাজ্য সারাদিন আনন্দময় সময় কাটিয়ে ক্লান্তিভরা চোখের মাঝে হাজারও সুখস্মৃতি নিয়ে এবার দুবাই ফেরার পালা। সূর্য পশ্চিম দিগন্তে মিলিয়ে যাচ্ছে। ফেলে চলেছি একের পর এক পথের মায়া , পাহাড়ের পর পাহাড় আর ধু-ধু মরু বালির চর............

ছবি কৃতজ্ঞতা: আবির এবং কিছু ব্লগ থেকে ।
রাস আল খাইমা'র" (UAE) রহস্যময় ভূত-প্রেতের রাজ্যে স্বাগতম

সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুলাই, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫৭
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৮

আজ (১০ মে ২০২৪) রাত দুইটা দশ মিনিটে নিউ ইয়র্কের পথে আমাদের যাত্রা শুরু হবার কথা। এর আগেও পশ্চিমের দেশ আমেরিকা ও কানাডায় গিয়েছি, কিন্তু সে দু’বারে গিয়েছিলাম যথারীতি পশ্চিমের... ...বাকিটুকু পড়ুন

জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০৮ : পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২৪


পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

বিশেষ ঘোষণা : এই পোস্টে ৪৪টি ছবি সংযুক্ত হয়েছে যার অল্প কিছু ছবি আমার বন্ধু ইশ্রাফীল তুলেছে, বাকিগুলি আমার তোলা। ৪৪টি ছবির সাইজ ছোট করে ১৮ মেগাবাইটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×