somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নেড়িকুকুরের ইন্টারভিউ-ইনডিয়ার ট্রানজিট: তিতাস একটি প্রতিরোধের নাম

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ ভোর ৫:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
নয়া দিগন্ত



নেড়িকুকুরের ইন্টারভিউ
ইনডিয়ার ট্রানজিট: তিতাস একটি প্রতিরোধের নাম
শফিক রেহমান

গত সপ্তাহে আমার ইন্টারভিউতে বলেছিলাম ইনডিয়ান প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর ২০১১-র ঢাকা সফরের আগেই বাংলাদেশের কাছ থেকে ইনডিয়া করিডোর বা ট্রানজিট সুবিধা পেয়ে গিয়েছে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রত্যাশিত তিস্তা নদীর পানিবণ্টন বিষয়ে কোনো চুক্তি না করে শুধুমাত্র “দু:খ প্রকাশ” করে দিল্লিতে ফিরে যাওয়ার ফলে মনমোহন সিংয়ের এই সফর ইনডিয়ান দৃষ্টিকোন থেকে হয়েছে শতকরা একশ ভাগের চাইতেও বেশি সফল। ওই ইন্টারভিউতে আমি আরো বলেছিলাম, ১২ জানুয়ারি ২০১০-এ দিল্লিতে সফরের সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে পঞ্চাশ দফা বিশিষ্ট চুক্তিতে সই করেছিলেন তাতেই তিনি ইনডিয়াকে করিডোর বা ট্রানজিট সুবিধা দিয়ে এসেছিলেন। ইনডিয়ানরা এটাকে এখন বলছে “কানেকটিভিটি” সুবিধা।

৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর ২০১১-তে ঢাকায় এসে ইনডিয়ানরা তার আগের বছরে সম্পাদিত চুক্তির কিছু আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে এসেছিল। বাংলাদেশে আওয়ামী সরকারের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক গোপনীয়তা রক্ষা করা হলেও বিভিন্ন ইনডিয়ান সূত্রে জানা যায়, আশুগঞ্জ নৌ বন্দরের মধ্য দিয়ে করিডোর/ট্রানজিট/কানেকটিভিটি সুবিধা ইতিমধ্যেই বাস্তবায়িত হয়ে গিয়েছে। এরপর যথাক্রমে মংলা সমুদ্র বন্দর এবং চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের মাধ্যমে পরবর্তী ট্রানজিট সুবিধা প্রতিষ্ঠা করা হবে।

বাসরঘর, হানিমুন ও সংসার
আমি বলেছিলাম লন্ডনের ম্যাগাজিন ইকনমিস্টের ভাষায়, বাংলাদেশ ও ইনডিয়ার মধ্যে যে “আলিঙ্গনে একাকার” (Embraceable you , ৩০ জুলাই ২০১১) হবার সম্পর্কটি স্থাপিত হয়েছে তার বাসরঘর হয়েছে আশুগঞ্জে, হানিমুন হবে মংলাতে এবং সংসার হবে চট্টগ্রামে।

বাসরঘর বিষয়ে এই উপমহাদেশের মনুষ্যকুলের অসীম আগ্রহ এবং অশেষ কৌতূহল আছে। বিয়ের আগে বর ও বধূর ভাবনা থাকে বাসররাতে তাদের পারস্পরিক প্রতিক্রিয়া কেমন হবে? কন্যা পক্ষের আত্মীয় স্বজনদের আগ্রহ থাকে বাসরঘরটিকে সুন্দর করে সাজাতে। ফুলশয্যাকে আকর্ষণীয় করতে। আর তাই, এই দুর্লভ মুহূর্তটিকে প্রায়ই চিত্রায়িত করে বাংলা ও হিন্দি মুভিগুলো, যাদের কল্যাণে বাসরঘরের সময়টি অত্যন্ত প্রাইভেট হওয়া সত্ত্বেও আমরা পাবলিকলি দেখতে পাই। আমাদের কৌতূহল কিছুটা হলেও মেটাতে পারি।
আমিও কৌতুহলী হয়েছিলাম আশুগঞ্জের বাসরঘরটিকে কিভাবে সাজানো হয়েছে সেটা জানতে।

সরেজমিনে দেখার জন্য সেদিন সকালে চলে গেলাম কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে। ঢাকা-আশুগঞ্জ-নোয়াখালি ট্রেনে উঠলাম। মানুষের ভীড় কম ছিল। সকাল থেকে আকাশ মেঘলা ছিল। থেমে থেমে কখনো বা গুড়িগুড়ি, আবার কখনো বা মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল। গত কদিন ধরে এমনভাবেই চলছিল। আশ্বিন শুরু হলেও বৃষ্টি কমার লক্ষন ছিল না। আমার ভেজা শরীর দেখে দয়ালু গার্ডসাহেব করুণাপরবশ হয়ে ট্রেন থেকে নামিয়ে দিলেন না। আমি গুটিসুটি হয়ে এক কোণে বসে রইলাম।

কিন্তু সাতটায় ট্রেনটি ছাড়ার উদ্যোগ নিয়েও ছাড়তে পারলো না। যাত্রীরা বলাবলি করছিল, একটা বগিতে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা কাজ করছে না। দেখলাম সত্যিই তাই। কিছুক্ষণ পর আরেকটা ইঞ্জিন এসে ওই ত্রুটিপূর্ণ বগিটা বাদ দিয়ে অন্য আরেকটি বডি জোড়া লাগালো। নির্দিষ্ট সময়ের এক ঘন্টা পরে আটটার সময়ে ট্রেন ছাড়লো।

ভাবলাম, নির্দিষ্ট সময়ের এক ঘন্টা আগে সবগুলো বগি পরীক্ষা করানোর কোনো সিসটেম যদি রেল কর্তৃপক্ষ চালু করতেন তাহলে ট্রেন লেইট হবার এই দুর্ভোগ যাত্রীদের পোহাতে হতো না। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ সহজে প্রতিবাদ করে না। দুর্ভোগটাকেই মেনে নেয়। আর তাই ট্রেন লেইট হওয়াটাই সিসটেম হয়ে যায়।

সরাইলের অনুসন্ধানী কুকুর
অনুসন্ধানে পারদর্শিতার জন্য ঐতিহাসিকভাবে সরাইলের কুকুর বিখ্যাত। এরা কুকুর প্রজাতির সাইটহাউন্ড (Sighthound) উপজাতির সদস্য। দ্রুতগামী খরগোশ, হরিণ বা শিয়ালকে ধাওয়া করার জন্য এরা তাদের গন্ধের বদলে নিজেদের দৃষ্টিশক্তি বা আইসাইট (Eyesight)-এর ওপর বেশি নির্ভর করে। তাই এরা সাইটহাউন্ড নামে পরিচিত। অন্যান্য বিখ্যাত সাইটহাউন্ড হচ্ছে ইংলিশ/আমেরিকান গ্রেহাউন্ড, আরব অঞ্চলে সালুকি বা আল হার, আফগানিস্তানে তাজি বা আফগান হাউন্ড, সেন্ট্রাল এশিয়াতে তাইগান, মালিতে আজারওয়াখ, হাংগেরিতে ম্যাগিয়ার আগার, ইজিপ্টে ফারাও হাউন্ড, মরক্কোতে স্লাউঘি, উত্তর ও মধ্য ইনডিয়াতে রামপুর, পশমি ও ক্যারাভান হাউন্ড।

কিছু পন্ডিত ব্যক্তি মনে করেন উপরোক্ত দেশগুলোর মধ্যে কয়েকটিতে ইসলাম ধর্মের ব্যাপক প্রসারের সঙ্গে সাইটহাউন্ডের সম্পৃক্তি আছে। কুকুরকে নোংরা মনে করায় সাধারণ মুসলিমরা তাদের দূরে রাখলেও মুসলিম শাসক ও সেনাপতিরা সাইটহাউন্ডদের কাছে টেনে নিয়েছিলেন এবং আধিপত্য বিস্তারের জন্য কাজে লাগিয়েছিলেন। এখনো আরবের বেদুইনদের প্রিয় সালুকি। আফগানদের প্রিয় তাজি।

কিন্তু বাংলাদেশের গভীরে, সরাইলে, কীভাবে এই সাইটহাউন্ড প্রজাতির কুকুরে আবির্ভাব ঘটেছিল? কথিত আছে বৃটিশ আমলের শুরুর দিকে এই এলাকায় মজলিশ শাহবাজ নামে এক জমিদার ছিলেন। এই জমিদারের নামে এই এলাকায় মজলিশপুর ও শাহবাজপুর নামে দুটি গ্রাম আছে। মজলিশ শাহবাজের হাতীশালে হাতী ছিল। ইরান থেকে আগত এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে তিনি দুটি হাতীর বিনিময়ে একটি নারী সালুকি নেন।

একদিন জমিদার তার প্রিয় সালুকি কুকুরটিকে নিয়ে শিকারে গিয়েছিলেন। এক সময়ে গভীর বনে কুকুরটি হারিয়ে যায়। মনের দু:খে জমিদার ফিরে আসেন। এক মাস পরে সেই সালুকি ফিরে আসে জমিদার বাড়িতে। তখন সে অন্ত:সত্ত্বা। সবাই মনে করে ওই বনে কোনো নেকড়ে দ্বারা সে গর্ভবতী হয়েছে। সেই থেকে সরাইল কুকুরের প্রখর দৃষ্টিশক্তির সঙ্গে যুক্ত হয় নেকড়ের ক্ষিপ্রতা। সরাইল কুকুর হয়ে ওঠে বিশ্বখ্যাত।

এখন সরাইল কুকুরের সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছে বলে শুনেছিলাম। চলমান ট্রেনে আমি সৃষ্টিকর্তার কাছে অভিযোগ করছিলাম, কুকুররা তো মনুষ্যকুলের মতো জন্ম নিয়ন্ত্রন পদ্ধতি অনুসরণ করে না। তাহলে কেন সরাইল কুকুরের সংখ্যা কমে যাচ্ছে? মনুষ্যকুলের নির্বুদ্ধিতা ও অবহেলার ফলে সরাইল কুকুরের বংশ রক্ষায় যে বিপদ হয়েছে, তা থেকে তাদের উদ্ধারের জন্য প্রার্থনা করছিলাম।

দুই ঘন্টা পরে দশটায় ট্রেন আশুগঞ্জে পৌছালো। আমার ভাগ্য ভালো ছিল। প্ল্যাটফর্ম থেকে সিড়ি দিয়ে নিচে নামার পরপরই স্থানীয় এক ভদ্রলোকের সাথে একটি সরাইল কুকুরকে দেখলাম। সেও আমাকে দেখে ছুটে এল। তার মনিব তাকে নিরস্ত করতে পারলো না। আমরা দুজনা দৌড়ে পালিয়ে গেলাম।

এরপর আশুগঞ্জ-আখাউড়া-আশুগঞ্জ পর্যন্ত সে আমার সঙ্গে সারাক্ষণ ছিল। সে তার নাম বলেছিল অ্যালেকজান্দার। সংক্ষেপে তার পালক তাকে অ্যালেক বলে ডাকেন।

পরিচয় পর্ব শেষ হবার পর আমি অ্যালেককে জানালাম আশুগঞ্জে কেন এসেছি। শুনে সে খুব খুশি হয়ে বললো, তোমার আরো আগেই এখানে আসা উচিত ছিল। আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া পর্যন্ত ট্রানজিট সুবিধা কয়েক মাস আগেই ইনডিয়া নিয়ে নিয়েছে। শেখ হাসিনার উপদেষ্টা ড.গওহর রিজভি সত্যই বলেছেন, “১৯৭৪ সালের মুজিব-ইন্দিরা চুক্তিতেই ইনডিয়াকে ট্রানজিট সুবিধা দেয়ার কথা বলা আছে। আমরা এখন সেই চুক্তিই বাস্তবায়ন করবো। নতুন কোনো চুক্তি বা প্রটোকলে সইয়ের প্রয়োজন নেই। ইনডিয়াকে ট্রানজিট দিতে ৪০ বছর অপেক্ষা করেছি। আর অপেক্ষা করতে আমি রাজি নই।” চলো আমার সঙ্গে। নিজের চোখে দেখে বুঝে নাও আশুগঞ্জ-আখাউড়ায় কী হচ্ছে।

সরাইল কুকুরের প্রধান বৈশিষ্ট হচ্ছে তাদের কপালে এবং পায়ের পাতায় শাদা চিহ্ন থাকে। তাদের শরীর লম্বাটে হয়। কোমর পাতলা হয়। সাধারণত গায়ের রং গ্রে বা ছাই রংয়ের হয়। কারো গায়ের রং ফন (ঋধহি) বা ঘিয়ে রংয়ের হতে পারে। বাঘের মতো তাদের গায়ে কালো স্ট্রাইপ বা ডোরাকাটা থাকে। তবে এই ডোরাকাটার রং খুব হালকা হয়।

আমার নতুন পাওয়া বন্ধু অ্যালেকের গায়ের রং ছিল গ্রে। তাই তার কালো স্ট্রাইপ ছিল প্রচ্ছন্ন। তার শরীর স্বাস্থ্য ছিল ভালো। আমি নেড়িকুকুর। অভাবী কুকুর। অভিজাত অ্যালেকের তুলনায় হতশ্রী। তবুও অ্যালেক আমাকে খুব আপন করে নিল।

ইনডিয়ান জাহাজ কোথায় ভিড়ছে
এই এলাকায় মেঘনা নদীর ওপরে দুটি বৃজ আছে। ভৈরব বাজার থেকে আশুগঞ্জ পর্যন্ত একটি রেলওয়ে বৃজ। লাল রংয়ের লোহার এই বৃজ বৃটিশ আমলে বানানো হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে পাকিস্তানিরা এই বৃজের একটি অংশ বা স্প্যান ভেঙ্গে দিয়েছিল। স্বাধীনতার পর রাশিয়ান কারিগরি সাহায্যে এই বৃজ রিপেয়ার করা হয়। রেলওয়ে বৃজের পাশেই তৈরি হয়েছে মোটরযান চলাচলের জন্য শাদা কংকৃটের বৃজ। বৃটেনের সাহায্যে বানানো এই বৃজের নাম ছিল “বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য মৈত্রী সেতু”। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাসীন হবার পরে এই বৃজের নাম হয়েছে “সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতু”।

বেচারা বৃটিশ সরকার। চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র নির্মাতা চায়নিজ সরকারের মতো তাদেরও হজম করতে হয়েছে এই নাম পরিবর্তন।

মেঘনার দক্ষিণ তীরে এই দুটি বৃজ আশুগঞ্জের যেখানে এসে শেষ হয়েছে তার নাম হচ্ছে চরচারতলা। এখানেই আছে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সাইলো এবং তার চারপাশে সরকারি জমি।

অ্যালেক ওই জায়গাটা আমাকে ঘুরিয়ে দেখালো। বললো, ভবিষ্যতে ইনডিয়ানরা এখানেই তাদের জেটি বানানোর প্ল্যান করেছে। কয়েকটি অ্যাডভান্স ইনডিয়ান টিম এখানে এসে মাপজোক করে গেছে। তারা জানে, চাইলেই হাসিনা সরকার এখানে জমি দিয়ে দেবে।
তাহলে এখন কোনখানে ইনডিয়ান জাহাজগুলো ভিড়ছে? কোথায় তাদের মাল খালাস করছে? আমি জানতে চাইলাম।
সেটা এখান থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে। চলো আমার সঙ্গে। অ্যালেক বললো।
টিপটিপ বৃষ্টির মধ্যে আশুগঞ্জ শহরের একটু ভেতরে ঢুকে আবার অ্যালেক আমাকে নিয়ে এল মেঘনা নদীর তীরে যেখানে আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন অবস্থিত।

অতিকায় কনটেইনার
এই পাওয়ার স্টেশনের জেটিতে আছে একটি শক্তিশালী ক্রেইন যেটা দিয়ে আনুমানিক ২৪৫ টন মাল বা কনটেইনার স্থানান্তরিত করা সম্ভব। ইনডিয়ানরা সেই জেটি ও ক্রেইন কাজে লাগিয়েছে ২৯ মার্চ ২০১১ থেকে। ত্রিপুরার পালাটানায় ৭০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য আনুমানিক ৭০ থেকে ১৩০ টন ওজনের কনটেইনার ইনডিয়ার হরিয়ানা থেকে এনে এখানে নামানো হচ্ছে। অ্যালেক বললো।
তোমার এই ডিটেইলসগুলো কি নির্ভুল ? ৭০ থেকে ১৩০ টন ওজনের কনটেইনার? আমি প্রশ্ন করলাম।
ইনডিয়ানরা যেসব কনটেইনার এখান দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সে বিষয়ে কোনো সঠিক তথ্য কেউ আমাদের দিচ্ছে না। সুতরাং এসব তথ্য কিছুটা অনুমান নির্ভর। আমরা শুনেছি এই ধরনের অতিকায় কনটেইনার, চুক্তিপত্রে ইনডিয়ানরা যাকে বলেছে ওভারসাইজড ডাইমেনশনাল কার্গো বা সংক্ষেপে ওডিসি, সে রকম ৯৬টি কনটেইনার এই জেটি থেকে স্থল পথে আখাউড়া স্থল বন্দরে নিয়ে যাওয়া হবে। তারপর সেখান থেকে ত্রিপুরায়। ইতিমধ্যে আর্টিকুলেটেড লরিতে (Articulated Lorry) প্রায় ৬০টি কনটেইনার নিয়ে যাওয়া হয়েছে ত্রিপুরাতে। বাকিগুলো কোথায় আছে সেটা একটু পরেই দেখবে। এখানে দেখ, একটা ইনডিয়ান জাহাজে একটি কনটেইনার জেটিতে নামানোর অপেক্ষায়। অ্যালেক বললো।

দেখলাম বড়বড় অক্ষরে এবিসি ইনডিয়া লিমিটেড লেখা একটি বিশাল কনটেইনার ওই জাহাজের পুরো ডেক জুড়ে আছে।
এবিসি ইনডিয়ার লোকাল এজেন্ট কে? আমি জানতে জানতে চাইলাম।
এবিসি ইনডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ভারি কনটেইনার ও যন্ত্র পরিবহন ও ডাইভারশন রোড তৈরির দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশি একটি প্রতিষ্ঠান। অ্যালেক জানালো।
এখান থেকে আর্টিকুলেটেড লরিগুলো যায় কখন?
রাত বারোটার পরে। তার আগে এদের চলাচল নিষিদ্ধ। রাত বারোটা থেকে ভোর ছয়টার মধ্যে এরা চলাচলের অনুমতি পেয়েছে। যখন রাত বারোটার পর এরা চলা শুরু করে তখন এদের সামনে পেছনে থাকে বাংলাদেশের পুলিশ গার্ড। প্রথমে এই লরিগুলো আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন জেটি থেকে ওঠে ঢাকা-সিলেট হাইওয়েতে। ডুয়াল লেনের এই হাইওয়েতে ১০ কিলোমিটার চলার পরে সরাইল রাউন্ড এবাউট বা গোল চত্বরে এসে এরা হাইওয়ে ছেড়ে ওয়ান লেনের সরু রাস্তায় চলতে থাকে। সেখান থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দূরে ভাতশালা হয়ে ওরা পৌছায় বাংলাদেশ-ইনডিয়া বর্ডারে আখাউড়া স্থল বন্দরে। চলো এখন সেই পথে। অ্যালেক বললো।

ওর সংগে চলা শুরু করলাম। ভাবছিলাম আশুগঞ্জ পাওযার স্টেশন বাংলাদেশের একটা অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান বা কিপয়েন্ট ইনস্টলেশন (Keypoint Installation)। এ রকম একটি গুরুত্বপূর্ণ কোনো ইনডিয়ান প্রতিষ্ঠানের ত্রিসীমানাতে কোনো বাংলাদেশিকে যেতে দেয়া হবে কি? অথচ আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশনের তীরে তাদেরই ক্রেইন ফ্যাসিলিটি কি নির্ঝঞ্ঝাটে ইনডিয়ানরা ব্যবহার করছে। এসব সুবিধার জন্য ইনডিয়ানরা কতো ভাড়া বা ফিস দিচ্ছে সেটা কে বলবে?

আমরা ঢাকা-সিলেট হাইওয়ে দিয়ে যাচ্ছিলাম। কিছু পরেই দেখলাম সেই স্পটটি যেখানে মোটর দুর্ঘটনায় পাশেই জলাশয়ে ডুবে অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান নিহত হয়েছিলেন। তার স্মরণার্থে এখানে একটি স্মৃতি ফলক বসানো আছে। সেই ফলকে সাইফুর রহমানের নাম এখনো আছে। অদূর ভবিষ্যতে এই নামটিও আওয়ামী সরকার বদলে দেবে কি?

ইনডিয়ান আর্টিকুলেটেড লরিগুলো চলাচল সত্ত্বেও ঢাকা-সিলেট হাইওয়ের প্রায় দশ কিলোমিটার অংশ এখনো অক্ষত আছে। এই হাইওয়ের দুই পাশে বহু অটো রাইস মিল আছে। সেই সব মিল সংলগ্ন স্থানে প্রায় পাঁচ ফেট উঁচু ত্রিকোন আকৃতির অসংখ্য বাশের টোপরে ঢেকে রাখা হয়েছে ধান। শুকানোর পরে সেই ধান মিলিং হবে।

দেখলাম সোনারামপুরে তিনটি স্থানে এবং সুলতানপুরে একটি স্থানে প্রায় ৩০টি কনটেইনার রাখা হয়েছে। আর রাখা হয়েছে আর্টিকুলেটেড লরির দ্বিতীয়াংশ বা ট্রেইলার (Trailer) যেটা বহন করে কনটেইনারকে। কিন্তু সেখানে আর্টিকুলেটেড লরির প্রথমাংশ ইঞ্জিন বা ক্যাব (Cab) অর্থাৎ ড্রাইভিং অংশটি নেই। এসব কনটেইনার ও ট্রেইলার বাংলাদেশে রেখে ক্যাব ও তার ড্রাইভার চলে গিয়েছে ত্রিপুরাতে।
কিন্তু কেন?
সে প্রশ্নের উত্তর পেলাম একটু পরে।

১৩০ চাকার ঘর্ষনে ক্ষতবিক্ষত পথ
ইতিমধ্যে অ্যালেক ইনডিয়ান ট্রেইলারের চাকার সংখ্যা গুনে বললো, এখানে আছে মোট ১২০টি চাকা। আর আমি জানি ড্রাইভিং ক্যাব বা ইঞ্জিনের অংশে আছে ১০টি চাকা। মোট ১৩০টি চাকার এই লম্বা ও চওড়া ট্রাকগুলো যখন রাস্তা দিয়ে যায় তখন অন্য কোনো ট্রাক বা গাড়ির পক্ষে সম্ভব হয় না এদের ওভারটেক করা। পাহারাদানকারী বাংলাদেশি পুলিশ এদের নির্বিঘ্নে চলাচল নিশ্চিত করে বটে, কিন্তু এদের পেছনে তখন হয় সুদীর্ঘ ট্রাফিক জ্যাম। এ বিষয়ে মানুষ প্রতিবাদ করে না। নালিশ করে না। অ্যালেক বাংলাদেশি মনুষ্যকুল সম্পর্কে তির্যক মন্তব্য করলো।

সরাইল গোল চত্বর বা বিশ্বরোড সরাইল মোড় পেরিয়ে আমরা ডান দিকে টার্ন নিলাম। ভাতশালা হয়ে আখাউড়া স্থল বন্দরের দিকে চলা শুরু করলাম।

প্রায় ৪৫ কিলোমিটারের এই পথেই দেখলাম ইনডিয়ার ওডিসি যাত্রার ফলে কিভাবে বাংলাদেশের ম্যাপ বদলে গিয়েছে ১৩০ চাকার ঘর্ষণে সরু সিংগল লেনের কান্টৃ রোড হয়ে গিয়েছে ক্ষত বিক্ষত। ইট সুরকি পিচ উঠে গিয়ে সারা পথ জুড়ে হয়েছে বড় বড় পটহোল (Pothole) বা গর্ত। গত কয়েক দিনের অবিরাম বৃষ্টিতে ওই সব গর্তে জমেছে কাদাপানি। সেখানে চলাচলকারী সিএনজির ড্রাইভার ও যাত্রীরা ছিটকে ওঠা কাদাপানিতে হয়ে যাচ্ছেন কর্দমাক্ত।

কি আশ্চর্য। ওরা এত সেজেগুজে বেরিয়েছে। তারপর কাপড়জামা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তবু ওরা স্থানীয় আওয়ামী এমপি শাহ আলমের কাছে প্রতিবাদ করে না। ওই দেখ, একটা সিএনজিতে একজন প্রেগনান্ট নারী যাচ্ছেন। গভীর গর্তে সিএনজি ওঠানামার ধাক্কায় ওনার যদি মিসক্যারেজ হয়ে যায়, তাহলেও ওনার স্বামী প্রতিবাদ করবেন না। অ্যালেক দু:খ প্রকাশ করলো।

১৬টি ডাইভারশন রোডে জলাবদ্ধতা
সরাইল মোড় থেকে আখাউড়া স্থল বন্দর পর্যন্ত এই পথের ১৬টি কালভার্টের নিচ দিয়ে ডাইভার্শন রোড বানানো হয়েছে। এর ফলে কালভার্টের নিচ দিয়ে পানি চলাচল ও নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এর আরেকটি ফল হয়েছে কালভার্টের এক দিকের জমিতে জলাবদ্ধ পানির উচ্চতা বেশি। অন্য দিকের জমিতে কম। আর বৃষ্টির ফলে জলাবদ্ধতা সামগ্রিকভাবে বেড়ে গিয়েছে। কালভার্টগুলো অতীতের সাক্ষী হয়ে গুরুত্বহীনভাবে দাড়িয়ে আছে।

ডাইভারশন রোডগুলো খুবই শস্তায় করা হয়েছে। সেসবও ভেঙেচুরে গিয়েছে। গুরুত্বহীন পুরনো কালর্ভাট এবং নবনির্মিত কিন্তু ভাঙাচোরা ডাইভারশন রোডগুলো সারা হাওর এলাকাকে করেছে কুশ্রী। সোনার বাংলা এখানে হয়েছে ভাঙা পিচসুরকি ও কাদাপানির কালো বাংলা।

তিতাস একটি প্রতিরোধের নাম
কাউতলিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা ডিসি অফিসের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া তিতাস নদীর তীরে এসে দেখলাম আওয়ামী দেশ বিপন্ন করণ ও ইনডিয়ান আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রথম এবং সফল প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ করেছে তিতাস ।

কাউতলি দিয়ে বয়ে যাওয়া তিতাস নদীর এই নিম্নাংশটির ওপরে একটি বৃজ আছে। হেভি ইনডিয়ান ট্রেইলারের ধারণ ক্ষমতা এই বৃজের নেই। তাই এই বৃজের নিচে তিতাস নদীতে আটকে গিয়েছিল ইনডিয়ানরা। অগভীর এই অংশটিতে অসংখ্য সিমেন্ট ও বালির ব্যাগ ফেলে ট্রেইলার চলার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। অর্থাৎ , নদীতে বাধ দেয়া হয়েছিল। প্রায় ৬০টি ট্রেইলার পাস করার পরে সিমেন্ট ও বালির ব্যাগের ডাইভারশন পথটির মাঝের অংশ তিতাসের স্রোতে ডুবে গেলে আটকা পড়ে যায় ড্রাইভিং ক্যাবসহ ট্রেইলার। বহু কষ্টে ক্যাব ও ট্রেইলারকে উদ্ধার করা সম্ভব হলে, কনটেইনার ও ট্রেইলারকে সোনারামপুরে রেখে, ক্যাব ড্রাইভার শুধু ক্যাব চালিয়ে ত্রিপুরায় চলে যায়। পেছনে পড়ে থাকে সিমেন্ট ও বালির আধো ডোবা অসংখ্য ব্যাগ।

তারপর থেকে সোনারামপুর ও সুলতানপুরে ট্রেইলার ও প্রায় ৩০টি কনটেইনার পড়ে আছে। ইনডিয়ান কর্তৃপক্ষ নিশ্চয়ই আশা করছে আগামী শুকনো মরশুমে ক্যাব ড্রাইভারকে ফিরিয়ে এনে তিতাসের এই অংশে আবার বাধ দিয়ে ট্রেইলারগুলোকে ত্রিপুরায় নেয়া সম্ভব হবে।

কাউতলি থেকে কয়েক কিলোমিটার পরে আখাউড়া স্থল বন্দরের পাশ দিয়ে হয়ে গিয়েছে তিতাস নদীর ঊর্ধাংশ। এই অংশটি আরো খরস্রোতা। এই অংশে তিতাসের প্রতিবাদ ছিল আরো গভীর, প্রতিরোধ ছিল আরো গহীন। এখানেও বৃজের পাশে নদীতে সিমেন্ট ও বালির ব্যাগ ফেলে ডাইভারশন রোড তৈরি করা হয়েছিল। অর্থাৎ ,এখানেও তিতাসের ওপর বাধ তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু ৬০টি ইনডিয়ান ট্রেইলার পাস করার পরে তিতাস বিদ্রোহ করে এবং পুরো ডাইভারশন রোড ডুবিয়ে দেয়। বাংলাদেশের মানুষ যে প্রতিরোধ করেনি সেই প্রতিরোধ বাংলাদেশের নদী করেছে।

তাই এখন ইনডিয়ানদের দুটি বিকল্প আছে। এক. বাংলাদেশ প্রবহমান বিদ্রোহী তিতাসের দুটি অংশে ট্রেইলার স্থায়ীভাবে চলার উপযোগী শক্ত দুটি বৃজ নির্মাণ করা। দুই. শুকনো মরশুমে আবার তিতাসের এই দুটি অংশে বাধ দিয়ে ট্রেইলার সাময়িকভাবে পারাপারের ব্যবস্থা করা। যেহেতু বৃজ নির্মাণটি হবে খুবই ব্যয় সাপেক্ষ সেহেতু ধারণা করা যায় ইনডিয়ানরা আবার তিতাসে বাধ দিয়ে প্রথমত তাদের ফেলে যাওয়া কনটেইনারগুলো নিয়ে যাবে এবং দ্বিতীয়ত পরবর্তী চালানগুলো ইনডিয়াতে নেবে।

বাকি অংশ মন্তব্যের ঘরে
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ দুপুর ১২:৫৬
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=হিংসা যে পুষো মনে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৮


হাদী হাদী করে সবাই- ভালোবাসে হাদীরে,
হিংসায় পুড়ো - কোন গাধা গাধিরে,
জ্বলে পুড়ে ছাই হও, বল হাদী কেডা রে,
হাদী ছিল যোদ্ধা, সাহসী বেডা রে।

কত কও বদনাম, হাদী নাকি জঙ্গি,
ভেংচিয়ে রাগ মুখে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণমাধ্যম আক্রমণ: হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন নূরুল কবীর ও নাহিদ ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:০৫


জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্স এবং গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ সেই স্বপ্নকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিউ এজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৪৯

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

সবাই যখন ওসমান হাদিকে নিয়ে রিকশাওয়ালাদের মহাকাব্য শেয়ার করছে, তখন ভাবলাম—আমার অভিজ্ঞতাটাও দলিল হিসেবে রেখে যাই। ভবিষ্যতে কেউ যদি জানতে চায়, এই দেশটা কীভাবে চলে—তখন কাজে লাগবে।

রিকশায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপিকেই নির্ধারণ করতে হবে তারা কোন পথে হাটবে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:০৫




অতি সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে ইদানীং আওয়ামীসুরের অনুরণন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিএনপি এখন জামাতের মধ্যে ৭১ এর অপকর্ম খুঁজে পাচ্ছে! বিএনপি যখন জোট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×