হঠাত করেই ঘটনাটা মনে পরলো , তখন সম্ভাবত ক্লাস সেবেনের ছাত্র , ৬ মাসিক পরিক্ষা চলছে , তো অংক পরীক্ষার , পরীক্ষার প্রশ্ন পত্র হাতে নিয়ে দেখি একটাও অংক পারিনা

তো আর কি করার পরিক্ষা ফেলে তো আর পরীক্ষার হল থেকে বেড় হয়ে যেতে পারিনাহ

একটা মানসম্মানের ব্যাপার আছেনাহ , তাই বহুত কষ্ট কইরা পরীক্ষার খাতায় প্রথম পৃষ্টায় একটা অংক করলাম , অংকটা না করলে প্রথম পাতা খালি থাকবে তাই বাধ্য হয়েই করতে হল , ওটাই ছিলা জীবনের প্রথুম বানিয়ে লেহা অংক

বাংলা যে কুনু বিষয় হলে বানাইয়া লেখা যায় , কিন্তু অংক বানাইয়া লেখা

আর খাতা জমা দেওয়ার সময় স্যারেরা দেখলে তো জিগাইবো তুই এতো ক্ষন কি করেছোচ

তাই শাঁক দিয়ে মাছ ডাকা আরকি

তো বসে আছি একটা অংক করেই , কি করা যায় সবে মাত্র ১০ মিনিট শেষ হলো ,আর তিন ঘন্টা বাকি

চোখে মুখে সরিষা ফুল দেখতাছি

, এখনই যদি পরীক্ষার হল থেকে বেড় হয়ে যায় তাহলে তো সবাই চাইয়া চাইয়া দেখবে আর বলবে ছেলেটা পড়ালেখা করেনা , তাই কুনু অংক লিখতে পারেনাই :

তাই বসে বসে কলম কামড়াচ্ছি

এক স্যার আইয়া কয় লেখচনা কেন :/ এইভাবে বইয়া রইছচ কেন ? তখন আর কি করার , পরীক্ষার খাতা তো সব পেজই খালি কিছুই লিখি নাই

তাই আর কি করার , ছবি আকা শুরু করে দিলাম , মাছের ছবি , পাখির ছবি , গাছের ছবি , ঘড় বাড়ি বন জংলের সব কিছু আইক্কা শেষ কইরা হালাইছি

এহন আর কি আকুম খুজ্জা পাইতেছিনা

, ছবি আকতে আকাতে দেখি সব পেজে লেখা শেষ , মনে মনে ভাবলাম এইবার খাতা জমা দিয়া চলে যাই

কিন্তু না তখন দেখি অন্য ছাত্ররা এস্টা পেজ নিচ্ছে লেখার জন্য

তাই মনে হলো একটা রয়েল বেঙ্গল টাইগার আকা উচিৎ , নাইলে স্যারে মাইন্ড খাইবো

তাই আমিও একতা এস্টা পেজ নিলাম

ছুন্দর কইরা সব জ্ঞানবুদ্ধি ঢাইল্লা রয়েল বেঙ্গল টাইগারের ছবি আইক্কা হালাইলাম

এখন দেখি লেখার মতন আরো অনেক পেজ বাকি আছে , কি করা যায়

মনে মনে ভাবলাম আমাদের স্কুলটা আর্ট করি

সব জ্ঞানবুদ্ধি দিয়া স্কুলটা আর্ট করলাম

তখন মনে মনে ভাবলাম না যেহেতু অংক পরিক্ষা তাই অংক স্যারের ছবিটা আর্ট করা উচিৎ , নাইলে স্যার মাইন্ড খাইবো

,মনে মনে ভাবলাম তাকে একটু পামপট্টি দিয়া দেখি পাশ নাম্বার দিলেও দিয়া দিতে পারে

তাই স্যারের ছবি আকার চেষ্টা করলাম , যাই হোক একটা মানুষের ছবি তো অন্তত আকছি

পরে দেখি এইডা তো আঙ্গো স্যারের মতন দেখা যায়না
তাই হাতে একটা ব্যাত ধরাইয়া দিলাম

এইবার দেখে মনে হয় কুনু পাগল লাঠি লইয়া দৌড়াইতাছে

ঠিক তখনই লাস্ট বেল বেজে উঠলো , স্যারে কয় খাতা জমা দেও আর সময় নাই , তাই আর কি করার , সেই ছবিটির নিচে দিয়া লেইক্ষা দিলাম এটা আঙ্গো রিয়াজ স্যার , আমাদের অনেক ভালো করে অংক শিখায়

স্যার অনেক ভালো আমরা যদি অংক না পারি তাহলেও স্যার আমাদের পিডায়না
খাতা জমা দিয়া আইয়া পড়লাম

সব পরিক্ষা শেষ , তার ২০-২৫ দিন পর রিয়াজ স্যার সবার পরীক্ষার খাতা নিয়ে ক্লাসে এসেছে , রেজাল্ট দিবে বলে , সবার রেজাল্ট দিলো

কিন্তু আমার নাম ডাকলোনা

মনে মনে কৈ ভালৈ হইছে , স্যার জিগায় তোমরা সবাই তোমাদের রেজাল্ট পেয়েছো ? সবাই জবাব দিলো হ্যা স্যার পাইছি

আমিও সাথে কইলাম হ্যা সার পাইছি

তখনই স্যার আমারে খুজতে লাগলো :O কয় আজকে কি লিংকন হুসাইন আসে নাই :

সে এইবার পরিক্ষায় সবার চাইতে বেশি নাম্বার পাইছে

সবাই তো অবাক , আমিও ব্যাঞ্চের নিচ থেকে মাথা বেড় করলাম

স্যারে কয় লিংকন হুসাইন অংক পরিক্ষায় ৯৯ পাইছে

স্যার কয় , কৈ লিংকন হুসাইন এই দিকে আয় ,আমি কৈ না স্যার , স্যারে কয় আইয়া তো খাতা নিয়াযা , তুই এইবার পরিক্ষা দিয়া স্কুলের মুখ উজ্জল করেছোচ



আমি আমার ১৫ বছরের শিক্ষক জীবনে এমন পরীক্ষার খাতা আর দেখি নাই

, আমি কৈ না স্যার :O শেষ মেষ স্যারের এতো রিকোয়েস্ট স্যারের সামনে না যাইয়া পারলাম না

যেতেই হলো স্যারের টেবিলের সামনে
P ক্লাসে একটা মাইয়া আছিল হেইডা আমার দুই চোখে বিষ

হেইডারে স্যারে কয় লাইব্রেরী থেকে ১৪ নাম্বার ব্যাতটা নিয়া আয় :O এই কথা হুনার পর আমার আত্মায় তো পানি নাই

স্যারে দমক দিয়া কয় সাড়া বছর তোগো কি শিখাইলাম :/ এই কয় আর পিডায় :'( এই অংক পরীক্ষার খাতায় এই গুলা কি, মাছে ছবি আঁকতে কইছে নাকি অংক অরতে কইছে ।
আর ঐ এইডা আমার ছবি আয় , আইডা আমার ছবি এই কয় আর পিডায়

আমি কি এমন নাকিরে ? ইচ্ছা মতন পিডাইতাছে , দুই রান মনে হয় লাল হইয়া রক্তাক্ত হইয়া গেছে , আর সইতে পারিনা

চোখ বন্ধ করে দিলাম বোঁ দৌড় , কে কারে ধরে

বাড়িতে আইলাম ফ্রিজ থেকে আইস বাইর কইরা দুতালার উপরে গিয়া দরজা জানালা বন্ধ কইরা পাছার মধ্যে আইস ঢলতে লাগলাম

তিন চার দিন তো চিত হইয়া ঘুমাইতেই পারি নাই

তার পর আর ৪-৫ দিন স্কুলে যাই না , স্কুলে যাওয়ার সময় হইলেই পেট ব্যাথা মাথ্যা ব্যাথার ঢং করতাম , কিন্তু এক দিন দুই দিন তিন দিন এইভাবে ঢং করার পর মা আর আমার কতা বিশ্বস করলো না

, হেইতেও পাষাণীর মতন আমার উপ্পে খেইপ্পা গেলো

কি আর করা বাধ্য হয়ে আবার স্কুল মুখী হতে হলো :



সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১০:৪২