শেখ মুজিবের স্বাধীনতা ঘোষণার মিথ বাস্টার......
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
একটা ছোট টেস্ট কেস দিয়ে শুরু করি।
ধরে নিন আপনি একজন জাজ।
একটা মার্ডার কেসের রায় দেয়ার জন্য বিচারকের আসনে বসে আছেন।
আপনার একটা ভুল রায়ে একজন নিরপরাধ মানুষ যেমন ফাঁসিতে ঝুলতে পারে , ঠিক তেমনি একজন ধুর্ত খুনী ছাড়া পেয়ে যেতে পারে।
আসামির বিপক্ষে সাক্ষ্য দিচ্ছে কারা ?
কিছু সাংবাদিক।
আর আসামির বিপক্ষে উপস্থাপিত তথ্য প্রমান কি ?
কিছু পেপার কাটিং।
দৈনিক রজনীগন্ধা
দৈনিক শাপলা শালুক।
দৈনিক রজনী গন্ধা লিখেছে –
ঐ তারিখে সেই স্থানে আসামি অমুককে খুন করেছে।
দৈনিক শাপলা শালুক লিখেছে –
সেই তারিখে ঐ স্থানে আসামী তমুককে খুন করেছে।
এর ভিত্তিতে অপরাধ প্রমানিত হয়েছে ধরে নিয়ে আপনি মৃত্যুদন্ডের রায় দিয়ে দেবেন ?
আমার ধারনা স্বাভাবিক যুক্তি বুদ্ধির মানুষ হিসাবে আপনার উত্তরটা হবে – না।
কিন্তু কেন না ?
কারন এটা জাস্ট একটা ছাপানো খবর।
ঘটনার কোন প্রত্যক্ষদর্শির সাক্ষ্য নয়।
ঠিক একই ভাবে কেউ একজন এসে পত্রিকা অফিসে বলে গেলো – শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছে.....
আর পত্রিকায় সেটা শেখ মুজিবের সাথে সরাসরি যোগাযোগ যাচাই না করে ছাপিয়ে দিলেই – শেখ মুজিব দ্বারা স্বাধীনতা ঘোষিত হয়েছে – এই ঘটনাটি সত্য প্রমান হয় ?
হয় না...
হ্যাঁ – পত্রিকার রিপোর্টই একটা সাক্ষ্য হতে পারে যদি সেই রিপোর্ট যেই সাংবাদিক করেছেন – সেই সাংবাদিক নিজেই ঘটনাটির প্রত্যক্ষ্যদর্শী।
কিন্তু যেসব বিদেশী পত্র পত্রিকার পেপার কাটিং দেখানো হয় এগুলোর একটাও শেখ মুজিবের সাথে সরাসরি যোগাযোগ – যাচাই করে ছাপানো নিউজ নয়।
এগুলোর একটা রিপোর্টারও ঘটনার প্রত্যক্ষ্যদর্শী নয়।
সবগুলোর ফরম্যাট প্রায় একই রকম –
জাস্ট বিফোর অ্যারেস্ট , হি প্রোক্লেইমড অন দি জিরো আওয়ার।
অথবা – ফ্রম আ ক্ল্যান্ডেনস্টাইন রেডিও স্টেশন ইন চিটাগাং, শেখ প্রোক্লেইমড।
এবং সবগুলোই তৃতীয় ব্যক্তি বা সূত্র থেকে পাওয়া।
মানে শুনে ছাপানো।
এই শুনে ছাপানো রিপোর্টগুলোকে সত্য বানানোর জন্য বিশাল বিশাল ফিরিস্তি হাজির করা হয়।
সবগুলো ফিরিস্তিকে ফ্লো চার্টের মত করে দেখালে সেটা হবে এই রকম –
এত বিশাল ঘোরপ্যাচ না করে স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার সবচেয়ে সরাসরি এবং শটকার্ট রাউট যেটা হতে পারতো সেটা মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীনের সহকারী মইদুল হাসান বলে গেছেন...
মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর কথোপকথন , পৃষ্ঠা ৩০ , প্রথম প্যারা
মইদুল হাসানের মন্তব্য
গ্রেফতার হওয়ার কিংবা স্বেচ্ছায় আত্নসমর্পনের আগে শেখ মুজিব যদি হোটেল শেরাটনে , সে সময়কার ইন্টারকন্টিনেন্টালে অবস্থান করা বিদেশী সাংবাদিকদের ফোন করে জানিয়ে দিতেন যে আমি বাংলাদেশকে স্বাধীন ঘোষণা করলাম – তাহলেই হয়ে যেতো।
তখন ব্যাপারটা দাড়াতো ক্যামন ?
মাঝখানের অজানা অচেনা কেউ – টিএনটি অফিসে অলিমুদ্দিন সলিমুদ্দিন – এক টুকরো কাগজ – সাইক্লোস্টাইল কাগজ – বলধা গার্ডেনে ট্রান্সমিটার – ইপিআর সিগন্যালসের ট্রান্সমিটার – এত ভুগিচুগি অমুক তমুক – ত্যানায় ত্যানায় প্যাচাপ্যাচির কোন ঝামেলা নাই।
ইন্টারেস্টিং ব্যাপার দুটো –
[১]
সেদিন শেখ মুজিবের বাসায় টেলিফোন লাইন কাটা গিয়েছিলো ২৬ শে মার্চ ভোররাত ১টার মিনিট ১০ পরে।
[২]
সেই সময় শেখ মুজিবের উচিত ছিলো এবং সবচেয়ে সহজ সাধ্য উপায় ছিলো ধানমন্ডী ৩২ থেকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে একটা টেলিফোন করা এবং বিদেশী সাংবাদিকদের জানিয়ে দেয়া – আমি স্বাধীনতার ঘোষণা দিলাম , এটা এখন অল আউট যুদ্ধ , আর অপেক্ষার সময় নাই।
+ অথচ যেই টেলিফোন কলটা করা উচিত ছিলো শেখ মুজিবের নিজের , সেটা করেছিলো বিদেশী সাংবাদিকরা শেখ মুজিবের কাছে – বাংলাদেশ আক্রান্ত এই অবস্থায় শেখ মুজিবের মন্তব্য কি সেটা জানার জন্য এবং টেলিফোন কলটি করা হয়েছিলো গ্রেফতার হওয়ার মিনিট ১৫ আগে , রাত ১ টায়...
ট্যাংক ক্রাশ রিভোল্ট ইন পাকিস্তান , সেভেন থাউজেন্ড স্লটার্ড – এই রিপোর্ট টি করেছিলেন সায়মন ড্রিং ১৯৭১ এর ৩০ মার্চ লন্ডনের ডেইলী টেলিগ্রাফে।
রিপোর্টটি অনেক বড়।
মূল অংশটি দেখুন।
পুলিশ হেডকোয়াটার অ্যাটাকড সাব টাইটেলের নিউজটি পড়তে থাকুন।
As this was going on other units had surrounded the Sheikh’s house. When contacted before 1 a.m. he said he was expecting an attack any minute and that he had sent everyone except his servants and a bodyguard away to safety.
সুবর্ন সুযোগ থাকা সত্ত্বেও এবং পরিস্থিতি যতটা সর্বোচ্চ চূড়ান্ত হলে স্বাধীনতা ঘোষণা করা যায় ততটা চূড়ান্ত হওয়া সত্ত্বেও শেখ স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়নি।
এই টেলিফোন কলটির আরো কয়েকটি ক্রেডেনশিয়াল আছে।
+ শিরোনাম হোয়েন ট্যাংকস টুক ওভার দা টকিংস...
অস্ট্রেলিয়ার দা এজে ২৯ মার্চ ১৯৭১ এ এই রিপোর্টটি করেছিলেন হাওয়ার্ড হুইটেন যিনি সেইরাতে শেখ মুজিবের কাছে রাত ১ টায় করা টেলিফোন কলটার একজন প্রত্যক্ষ সাক্ষী।
রিপোর্টটার একদম ডানদিকের কলামে যান।
At one a.m a phone call to Sheikh Mujib’s home established he was there, but half an hour later the line was dead.
কোথাও কোন স্বাধীনতা ঘোষণার চিহ্নমাত্র নেই।
+ এই টেলিফোন কলটার কথা রবার্ট পেইনি’র বিখ্যাত ম্যাসাকার বইতেও আছে।
পেইজ ২২-২৩
+ এই টেলিফোন কলটার কথা ভারত থেকে প্রকাশিত ১৯৭২’র বাংলাদেশ ডকুমেন্টেও আছে ওয়াশিংটন পোস্টের রেফারেন্সে......
অন্যদিকে শেখ মুজিব নিজে কি দাবী করে গেসে ?
৯ টার বেশি পোস্টে দেয়া যায় না। তাই বাকি ছবি গুলো বাধ্য হয়ে কমেন্ট বক্সে দিচ্ছি।
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
বেবী মওদুদ এবং শেখ হাসিনা সম্পাদিত।
পেইজ-১৬
১০ ই এপ্রিল ১৯৭২ এ জাতীয় সংসদে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রসঙ্গে শেখ মুজিব...
(কমেন্ট বক্সে প্রথম ছবি)
এই চিটাগাং এ ওয়্যারলেসে স্বাধীনতার ঘোষণা কখন জানিয়েছেন শেখ মুজিব?
সেটা জানিয়েছেন ১৯৭২’র ১৬ ই জানুয়ারী সিডনী শ্যানবার্গকে যেটা ১৮ ই জানুয়ারী / ১৯৭২ এ নিউইয়র্ক টাইমসে ছাপানো হয়েছিলো.
(কমেন্টে দ্বিতীয় ছবি)
স্লিপিং ইন হিজ রুম সাব-টাইটেলের এই নিউজে শেখ মুজিব জানিয়েছে –
রাত ১০-৩০ এ চিটাগাং এর কোন এক গোপন আস্তানায় শেখ মুজিব টেলিফোন কল করেছে এবং তার বিশ্বস্ত লোকদেরকে শেষ নির্দেশ দিয়ে দিয়েছে যেটা পরে রেকর্ডেড হয়েছে এবং সিক্রেট ট্রান্সমিটার থেকে প্রচারিত হয়েছে।
শেখ মুজিব রক্ত মাংসের মানুষ।
ফেরেশতা না।
তার পক্ষে মিথ্যা বলা সম্ভব।
এবং স্বাধীনতার ঘোষণা প্রসঙ্গে শেখ মুজিব মিথ্যা বলেছে।
পয়েন্টগুলো মিলিয়ে দেখুন।
[১]
শেখ মুজিব নিজের মেয়ে শেখ হাসিনার সম্পাদিত বইয়ের সুত্রানুযায়ী জাতীয় সংসদে বলে গ্যাছে – চিটাগাং এ ওয়্যারলেসের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা জানিয়েছে।
সে সময় রেডিও ট্রান্সমিশন কিংবা টেলিভিশন ট্রান্সমিশন ছাড়া আর কোন ওয়্যারলেস মিডিয়া ছিলো না।
এখন যেমন ওয়াইফাই ইন্টারনেট আছে, ওয়্যারলেস সেলফোন আছে - তখন এগুলো ছিলো না।
অন্যদিকে সিডনী শ্যানবার্গকে বলেছে – চিটাগাং এ টেলিফোন কল করেছে।
টেলিফোন ১৯৭১'র সে সময় কেবল (Cable) কানেক্টেড মিডিয়া / ওয়্যার্ড (Wired) মিডিয়া।
এটি কোন ওয়্যারলেস মিডিয়া নয়।
একবার ওয়্যারলেস , আরেকবার টেলিফোন – দুটো দাবি-ই একই ব্যক্তি শেখ মুজিবের।
[২]
রাত ১০-৩০টা।
সময়টা খুব স্পষ্ট করে জানিয়েছে শেখ মুজিব সিডনী শ্যানবার্গকে।
সেদিন রাত ১০-০০ থেকে ১১-০০ এর মধ্যে ধানমন্ডি ৩২ এ শেখ মুজিবের সাথে চিটাগাং এ একটি অসরাসরি যোগাযোগ হয়েছিলো কেবলমাত্র একজন ব্যক্তির মাধ্যমে।
নঈম গওহর।
রাত ১০-০০ থেকে ১০-৩০ এর মধ্যে নঈম গওহর শেখ মুজিবের সাথে ধানমন্ডি ৩২ এ দেখা করতে আসেন এবং শেখ মুজিব নঈম গওহরকে কিছু ইন্সট্রাকশন দেন যেগুলো নঈম গওহর প্রায় সাথে সাথে চিটাগাং এ টেলিফোন করে এম আর সিদ্দিকীকে জানান।
২০১০ / ২৫ শে মার্চ , দৈনিক সমকাল।
নঈম গওহরের কলাম
নঈম গওহরকে বলা ‘Don’t surrender arms, liberate Chittagong and proceed towards Comilla’ এই কথাগুলোকেই শেখ মুজিব নিজের স্বাধীনতার ঘোষণা বলে চালিয়ে দিয়েছে।
এই কথাগুলো নঈম গওহর চিটাগাং এ ফোন করে এম আর সিদ্দিকীকে জানিয়েছে।
এই হচ্ছে শেখ মুজিবের সেই রাত ১০-৩০ এ চিটাগাং এর গোপন আস্তানায় ফোন করে জানানো স্বাধীনতার ঘোষনা।
স্পষ্ট মিথ্যাচার।
নঈম গওহরের টেলিফোনকে নিজের টেলিফোন বলে চালিয়ে দেয়া এবং ডোন্ট সারেন্ডার আর্মস, লিবারেট চিটাগাং কথাগুলোকে স্বাধীনতার ঘোষণা বলে চালিয়ে দেয়া।
সবচেয়ে হাস্যকর যেটা – সিডনী শ্যানবার্গের কাছে বলা ১০-৩০ টায় নঈম গওহরের ফোনকে যদি শেখ মুজিব নিজের করা স্বাধীনতার ঘোষণা দাবী করে, তাহলে স্বাধীনতা দিবস দাড়ায় ২৫ শে মার্চ।
২৬ শে মার্চ না।
স্বাধীনতার ঘোষণা কিভাবে হয়েছিলো – এটি একটি ঘটনা।
ঘটনা মানে ইনফরমেশন ক্লাস্টার।
একটার সাথে আরেকটার ক্রস চেক মেলালেই সত্যটা বের হয়ে আসে।
মুজিব পীরের পান্ডাদের কথায় স্বাধীনতার ঘোষণা – ঘোষক নির্ধারিত হবেনা।
চোখ রাঙ্গানি দেখিয়ে , মাস্তানী- ষন্ডামী গুন্ডামী করে বই পুড়িয়ে সত্য দাবিয়ে রাখা যায়না।
নোটেড বাই
দাসত্বের লেখালিখি
৩৮টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
আমাদের দাদার দাদা।
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।
আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন
জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?
আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন
খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?
খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।
পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা
মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন
চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়
অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন