somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছিন্ন গল্পগুচ্ছঃ ছোট্ট অন্তু

০৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পিচ্চিকাল পার করে ফেললাম প্রায়, কিন্তু এখনো সহ-পিচ্চিদের নিয়ে কিছু লিখি নাই, এটা শরমের ব্যাপার। আমার প্রিয় সময়টা আমি কাটিয়েছি দশ থেকে পনেরো বছর বয়সটাতে; বয়ঃসন্ধির সময়টা। কিন্তু সেটা নিয়ে পরে লিখব হয়তো কোন একদিন। বড় করে। দ্বিতীয় প্রিয় সময়টা হচ্ছে চার পাঁচ ছয় বছরের সময়টা। ভাবলাম এই বয়সী একটা পিচ্চিকে নিয়ে সিরিজ করা যাক। সিরিজটায় কেবল কিউট কিউট কাহিনি থাকবে না, পাশাপাশি থাকবে একটুখানি হাসি, একটুখানি দর্শন, একটুখানি ডার্ক হিউমার। একটু অন্যরকম।

সিরিজে যতটা মনোযোগ বা সময় দেওয়া দরকার তার কোনটাই এখন আমার নেই। কিন্তু এই জিনিসটা কিছুটা এগিয়ে না রেখেও শান্তি পাচ্ছি না। হয়তো এখন কিছু না লিখে রাখলে পরে পুরো ভুলে যাব, আর লেখা হবে না। তাই ছোট্ট করে কয়েকটা লিখে রাখলাম।

পিচ্চির নাম অন্তু। তার 'ঘেউ' নামে একটা কথা-বলা-পোষা-কুকুর আছে; তার একটা ডাইনোসর-সঙ্গী আছে। অন্তু নিজের জগতে মেতে থাকা খুবই ব্যস্ত একজন মানুষ। ওকে নিয়ে আমি আগামি দেড় বছরে মোট একশো টা স্নিপেট বা ছিন্নগল্প লিখব বলে প্লান করেছি। ইনশাল্লাহ ব্লগে পোস্টাবো সব। দ্যাখা যাক কেমন হয়!


#১


'আব্বু, আব্বু!'
-কি বাবা?
'আব্বু, মানুষের বাচ্চা কিভাবে হয়?'
- [থতমত খেয়ে] কেন বাবা?
'বলো না আব্বু!'

অন্তুর বাবা কিছুক্ষণ ভাবেন, ছেলের কৌতূহলী উৎসুক চেহারা দেখে তার ভেতরে ভেতরে হাসি পেয়ে যায়। মাথায় বুদ্ধি খেলে একটা।

-সত্যি জানতে চাও?
'হ্যাঁ আব্বু!'

অন্তুর বাবা উবু হয়ে ছেলের মাথায় হাত রাখেন, তারপর খুব গম্ভীর গলায় বলেন, 'কাঁচাবাজার থেকে কচি টসটসে মানুষের বাচ্চা কিনে আনতে হয়। আলু পটলের পাশেই বিক্রি করে। অনেক দাম।'

অন্তুর চোখ বড় বড় হয়ে যায়, 'আমাকেও ওখান থেকে এনেছিলে? কত দিয়ে কিনেছিলে?'

-তোমাকে? এক কেজি পটলের সাথে ফ্রি দিয়েছিল। আমি প্রথমে নিতে চাই নি, বলেছিলাম গা থেকে কেমন পচা পচা গন্ধ আসছে, এটা নেব না; কিন্তু কি করার, জোর করে গছিয়ে দিয়েছিল।

অন্তু আরও বড় বড় চোখে কথাটা শোনে, তারপর হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করে, 'আম্মুউউ দ্যাখো আব্বু কি বলে...আমাকে নাকি ফ্রি দিয়েছিল...আম্মুউউ আমার গায়ে নাকি গন্ধ...'

সাথে সাথে অন্তুর মা-র সন্দেহভরা কণ্ঠ ভেসে আসে পাশের ঘর থেকে, 'অ্যাই তুমি ওকে কি শিখাচ্ছো...'


#২


অন্তু ঘেউয়ের কাছে এসে মাথায় হাত দিয়ে চিৎকার করে উঠল, 'ঘেউ বাঁচাও! আমি শেষ!'

ঘেউ নাক চুলকাতে চুলকাতে বলল, 'কেন কি হয়েছে?'
-আব্বুর চশমা আছে না?
'হুঁ।'
-আমাকে ধরতে মানা করেছিল, মনে আছে?
'হুঁ।'
-আমি একটু আগে ধরেছিলাম।
'তাই কি! আব্বু তো আর দেখেনি, নাকি?'
-না, কিন্তু...
'কিন্তু কি?'
-মানে, ধরে একটু পরেছিলাম।
'ওফ, মূল কথায় আসো।'
- ...তারপর কিভাবে যেন ভেঙ্গে গেছে...

'ভেঙে গেছে? ইয়াল্লা!' ঘেউ ধড়মড়িয়ে উঠে বসে, 'কিভাবে?'
-মানে আমি ঘোড়ায় চড়ে [সোফায় লাফাতে লাফাতে] চশমা পরে দেখছিলাম কেমন লাগে। আমার কি দোষ! বজ্জাত চশমা, ছিটকে পড়ে গেছে। আব্বু জানলে আমি শেষ! এখন কি করি? বুদ্ধি দাও!

ঘেউ এবার আবার থাবায় মুখ গুঁজে শুয়ে পড়ল। একটা বিশাল হাই তুলল দীর্ঘ সময় নিয়ে। তারপর জিভে চুকচুক শব্দ করে বলল, 'আমি ঘুমালাম।'
- 'ঘেউ!?'
'কি?'
-'বাঁচাও প্লিজ। প্লিইইজ। আমি নইলে একেবারে মরে যাব।'
'আম্মুকে বলো গিয়ে। আম্মুকে দেখে আব্বুই ভয় পায়।'
-'পাগল?? আম্মু জানলে আমাকে কাঁচা খেয়ে ফেলবে। হাড়গোড়ও আস্ত থাকবে না।'
'তাহলে... নতুন একটা চশমা কেনো।'
-হুমম, ভালো বুদ্ধি; দাঁড়াও। আসছি। এক মিনিট।

অন্তু এবারে নিষ্পাপ মুখে পাশের ঘরে গেলো। আম্মু কাজ করছিলেন, অন্তু গলা খাঁকারি দিয়ে বলল, 'আম্মু!'
- 'কি অন্তু?'
'ইয়ে, আব্বুর চশমা আছে না?'
- 'হ্যাঁ?'
'ওটার দাম কত?'
- 'কেন? একথা জিজ্ঞেস করছ কেন?'
'না, কোন কারণ নেই। এম্নি। আমার মাটির ব্যাংকে যত পয়সা জমেছে, সব দিয়ে কি একটা অমন চশমা কেনা যাবে?'

আম্মুর মুখে মেঘ জমল, 'অন্তু, তোমার আব্বুর চশমা কোথায়?'
-'ইয়ে, শোয়ার ঘরে।'
'কি করেছ চশমা?'
- 'কিছুই না। খালি... একটু... ভেঙ্গে গেছে...' বলতে বলতে অন্তু ভ্যাঁ করে কেঁদে দেয়, 'আমি আর করবো না আম্মু, সত্যি আম্মু সত্যি, আব্বুকে বোলো না... আব্বু রাগ করবে...'

অন্তুর এমন হঠাৎ বর্ষণে আম্মুর মুখ কোমল হয়ে আসে। আম্মু অন্তুকে কোলে জড়িয়ে নিয়ে চোখের পানি মুছে দেন, 'ধুর বোকা ছেলে, এমন করে কেউ কাঁদে? চশমা ভেঙ্গেছে তাই কি, আমরা আব্বুকে আরও সুন্দর দেখে আরেকটা কিনে দেব। আব্বু কিচ্ছু বলবে না। আর বললে আমরা ঘুষি দেব আব্বুকে। কাঁদে না বাবা আমার, সোনামণি।'

অন্তু মুখ তুলে কাঁদোকাঁদো মুখে বলল, 'প্রথম ঘুষিটা তুমি দিও। আমি আব্বুর চোয়াল নাগাল পাই না।'


#৩


[এজেন্ট অন্তু শিকারি চিতার মতো সতর্ক পায়ে বিমানের ককপিটের কাছে এগুতে লাগল।

তাকে ভুল খবর দেওয়া হয়েছিল, বিমানে সিক্রেট সার্ভিসের কোন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছিল না, এমনকি কোন যাত্রীই ওঠে নি। পুরো বিমানে স্রেফ লাগেজ ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল, আর ছিল এয়ার হোস্টেসের ছদ্মবেশধারি তিন জন আততায়ি। দল বেঁধে হামলা করেছিল ওরা, স্রেফ ভাগ্যের জোরে এখনো বেঁচে আছে ও। ট্রেনিঙয়ের বদৌলতে অতর্কিত হামলাতেও ভড়কে যায় নি অন্তু, কিন্তু মাথার ভেতরে রাগ সাপের মতো কিলবিল করছে ওর।

অ্যামবুশ করা হয়েছে ওকে!
বিশ্বাসঘাতকতা করেছে এজেন্সির কেউ!

কে? এই প্রশ্নের উত্তর বের করতে হবে ওকে। ককপিটের পাইলটরাও আততায়ি হতে পারে, এদের কব্জা করে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে।

ঠিক তখুনি বিমানটা ভীষণ জোরে থরথরিয়ে কেঁপে ওঠে, অন্তু ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে মুহূর্তের জন্যে। এই সুযোগে ককপিটের দরজাটা খুলে বেরিয়ে আসে একটা লিকলিকে লোক, হাতে ছুরি, প্রচন্ড গতিতে সে ঝাঁপিয়ে পড়ল অন্তুর ওপরে। বিমান সেই সঙ্গে নাক নিচু করে ডাইভ দিল বিপদজনক গতিতে...]

অন্তুর বাবা ভীষণ ব্যস্ত ছেলের দিকে চেয়ে মন্তব্য করলেন, 'দেখেছ কি মনোযোগ দিয়ে অন্তু বিমানটা নিয়ে পুতুল দিয়ে খেলছে? ওর খুব পছন্দ হয়েছে জিনিসটা বোধহয়। আশেপাশে কি হচ্ছে খেয়ালই করছে না!'

অন্তুর মা হাসলেন, 'ছেলে পাইলট হবে দেখো।'
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:৪৯
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×