somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোয়ান্টাম মেথড: আমাদেরকে কোন পথে ডাকছে - ১

০৩ রা জুলাই, ২০১১ দুপুর ১২:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১. ভূমিকা:
[এই প্রচেষ্টা মূলত বিশ্বাসী মুসলিম ভাই-বোনদের জন্য]
কাগজে কলমে বাংলাদেশ এখন একটি সেক্যুলার দেশ। আবার এ কথাও বলা হয়ে থাকে যে এটি ৮৮% মুসলমানের দেশ, এদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ। এই দুই সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী উপাধির মাঝে সমন্বয় সাধন করতে গেলে যে চিত্রটি ফুটে উঠে, তাই আসলে আমাদের দেশের বাস্তব অবস্থা।দেশকে সেক্যুলার করা সম্ভব হয়েছে সুদীর্ঘ সময় ধরে শুদ্ধ ইসলামিক জ্ঞানের চর্চা থেকে দেশের মানুষকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বিচ্ছিন্ন রাখার সুচিন্তিত পরিকল্পনা সফল হওয়ায়। অন্যদিকে, একইসাথে দেশের মানুষ তথাকথিত ধর্মভীরু হওয়ায় যে কোন ব্যবসা বা মতবাদ, তা ইসলামের সাথে যতটা সাংঘর্ষিকই হোক না কেন ইসলামিকভাবে প্যাকেট করে বাজারজাত করা হলে তাতে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়া যায় নিশ্চিতভাবে। ফলশ্রুতিতে এখন শূন্য (ক্ষেত্রবিশেষে মাইনাস) জ্ঞান নিয়েও যে টপিক নিয়ে উদ্দাম আলোচনায় মত্ত হওয়া যায় তা হল ‘ইসলাম’। জেনে, বুঝে, দল নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে ইসলাম পালন করার চেষ্টা এখন নিতান্তই ক্ষুদ্র, ব্যক্তিগত উদ্যোগের মাঝে সীমাবদ্ধ। আর সেই সাথে যে কোন ধরণের বিভ্রান্ত মতবাদ প্রচার করার জন্য বাংলাদেশ এখন উত্তম Fishing Ground-এ পরিণত।

এমতাবস্থায় যখন দেখি খুব কাছের মানুষগুলো অনুরূপ কোন কৌশল/প্রচেষ্টার ফাঁদে পা দিয়ে ঈমান হারাচ্ছে(In the eye of Allah) ,অথচ তা উপলব্ধিও করতে পারছেনা, তখন যে প্রবল কষ্টের অনুভূতি হয়, তার তাড়না থেকেই এই লেখার অবতারণা।

একজন মুসলিম এই দুনিয়ায় তার ক্ষণস্থায়ী আবাসকালে সবকিছু হারাতে পারে - অর্থ, খ্যাতি, সন্তান,সংসার। কিন্তু যা কখনো হারায় না বা হারাতে পারে না, তা হল জীবনের উদ্দেশ্য। কি করছি, কেন করছি-এ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকালে, যে কোন পরিস্থিতিতেই সে অবিচল থাকতে পারে । এই অবিচলতা তাকে এনে দেয় অনাবিল মানসিক প্রশান্তি। ‘শান্তি’র এই বিষয়টি ইসলামের সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। অপরপক্ষে যখন ঐশী জ্ঞানের পূর্ণাংগ চিত্রের সাথে সে সম্পূর্ণ ভাবে অপরিচিত থাকে, তখন নানা অতৃপ্তি, হাহাকার তাকে পেয়ে বসে। ‘শান্তি’র খোঁজে যে কোন কিছুকেই অবলম্বন করতে সে দ্বিধাবোধ করেনা। আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষের অবস্থাই এখন এমন। আমাদের মানসিক এই ক্রান্তিলগ্নে তাই শান্তি এবং সাফল্যের চাবিকাঠি নিয়ে উপস্থিত হয়েছে ‘কোয়ান্টাম মেডিটেশন’। আমাদের চারপাশের বহু ডুবন্ত মানুষ একে খড়কুঁটো ভেবে আঁকড়ে ধরছেন।

আসুন,ইসলামের দৃষ্টিতে এই পদ্ধতিটি একটু আলোচনা করি।

প্রসংগত উল্লেখ্য যে এই লেখাটিতে ব্যবহৃত কোয়ান্টাম মেথড সংক্রান্ত সকল তথ্য তাদের ওয়েবসাইট, লিফলেট এবং টেক্সটবুক (সাফল্যের চাবিকাঠি কোয়ান্টাম মেথড - মহাজাতক [1]) থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। বিস্তারিত উৎস ফুটনোটে দেয়া থাকবে ইনশাআল্লাহ।

২. কোয়ান্টাম মেথড কি:




তাদের ভাষ্যমতে এককথায় এটি science of living. আশ্রম ও খানকার চৌহদ্দি থেকে বের করে ধ্যানকে গণমানুষের আত্মউন্নয়ন ও ব্যক্তিত্বের বিকাশে প্রয়োগ করাই উনাদের উদ্দেশ্য।

৩. টেক্সটবুকটির বিস্তারিত পর্যালোচনা:

কোয়ান্টাম মেথড বলতে আসলে উনারা কি বুঝাচ্ছেন তা জানার উদ্দেশ্য আমরা ওয়েব সাইট থেকে প্রাপ্ত ‘সাফল্যের চাবিকাঠি কোয়ান্টাম মেথড- মহাজাতক’ বইটির বিভিন্ন অধ্যায়ের মূল বক্তব্যের উপর আলোকপাত করব। প্রথমেই দেখা যাক ভূমিকায় কি বলা হচ্ছে-

৩.১.মেডিটেশন: শৃঙ্খলা মুক্তির পথ:

আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে মানুষ অপার সম্ভাবনা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। কিন্তু ভ্রান্ত বিশ্বাস/ সংস্কার তথা মনোজাগতিক শিকল তাকে পরিণত করে কর্মবিমুখ, ব্যর্থ কাপুরুষে। অন্যদিকে মুক্তমানুষ বিশ্বাস হচ্ছে সকল সাফল্য, অর্জনের ভিত্তি। বিশ্বাসই রোগ নিরাময় করে, ব্যর্থতাকে সাফল্যে আর অশান্তিকে প্রশান্তিতে রূপান্তরিত করে। দৈনন্দিন জীবন বেশিরভাগ চিন্তাশীল মানুষের জন্যই যুগে যুগে ছিল এক ক্লান্তিকর বিড়ম্বনা। ভাত খাওয়া, গোসল করা, কাপড় পরা, সংসার করা, প্রার্থনা করা-র একঘেঁয়েমি থেকে মুক্তি চেয়েছেন তারা।

ভ্রান্ত ধারণা ও সংস্কারের শৃঙ্খল মুক্তির পথ হচ্ছে মেডিটেশন। তখন প্রতিবারের প্রার্থনাতেঁই আপনি পুলকিত হবেন, প্রতিটি সেজদাই পরিণত হবে মেরাজে। মেডিটেশনের মাধ্যমেই আপনি সংযোগ সাধন করতে পারেন আপনার ‘অন্তরের আমি’র সাথে, আপনার শক্তির মূল উৎসের সাথে [2]। মেডিটেশনের পথ ধরেই আপনি অতিক্রম করতে পারবেন আপনার জৈবিক অস্তিত্বের সীমাবদ্ধতা।

এরপর অধ্যায় ১,২ তে মন সকল শক্তির উৎস, চেতনা অবিনশ্বর, প্রাণ রহস্যের চাবিকাঠি যে বিশ্বাস তা এক নতুন বিশ্বদৃষ্টি উন্মোচন (যাতে সব কিছুকে ব্যাখ্যা করা যায় কোয়ান্টা ফিজিক্সের মাধ্যমে), বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব এবং নানা সফল ব্যক্তিদের (যার মাঝে রয়েছে বিশিষ্ট ব্যালে নর্তকী, আত্মস্বীকৃত নাস্তিক স্টিফেন হকিং) জীবন কণিকা থেকে প্রমাণ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিস্তারিত উদাহরণ দেয়া হয়েছে বাংলাদেশে ফলিত মনোবিজ্ঞানের পথিকৃত এবং আত্মউন্নয়নে ধ্যান পদ্ধতির প্রবর্তক প্রফেসর এম.ইউ আহমেদের। তিনি ক্লিনিক্যালী মৃত্যুবরণ করার পরও পুনরায় জীবন লাভ করেন শুধু তাকে বাঁচতে হবে, তিনি ছাড়া দেশে নির্ভরযোগ্য মনোচিকিৎসক নেই......তার এই দৃঢ় বিশ্বাসের জোরে। [3]

অধ্যায় ৩-এ ব্রেনকে কম্পিঊটারের সাথে তুলনা করে সকল প্রক্রিয়ার নিয়ন্ত্রক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। অধ্যায় ৪ অনুযায়ী ব্রেনকে সুসংহতভাবে ব্যবহার করার নেপথ্যনায়ক হচ্ছে দৃষ্টিভঙ্গি। প্রোঅ্যাক্টিভ হতে উৎসাহিত করা হয়েছে পবিত্র বাইবেল এবং কোরআনে উল্লেখিত ইঊসুফ (আ.) এর কাহিনী থেকে!!!!




অধ্যায় ৫-এ ‘ধ্যানাবস্থার প্রথম পদক্ষেপ’ শিরোনামে ব্রেন ওয়েভ প্যাটার্ণ সারণী দেয়া হয়েছে যেখানে থিটা লেভেল সম্পর্কে বলা হয়েছে মেডিটেশনকালে সাধকরা এই স্তরে প্রবেশ করেই মহাচৈতন্যের (super consciousness) সাথে সংযোগ স্থাপন করতেন।এর পরবর্তী লেভেল-ডেল্টাতে দরবেশ ঋষিরা এই স্তরেও সজাগ থাকেন আবার মহাচৈতন্যে লীনও হতে পারেন। [4] এই মহাচৈতন্যের সংজ্ঞা বইটির কোথাও সুস্পষ্টভাবে দেয়া নেই।

মেডিটেশনের প্রথম ধাপ হচ্ছে ‘শিথিলায়ন’ যার মাধ্যমে ব্রেন ওয়েভকে আলফা লেভেলে নিয়ে মনের ধ্যানাবস্থা সৃষ্টি করা হয়। [5] তাদের ভাষ্য:

‘‘ ‘শিথিলায়ন’ পুরোপুরি আয়ত্ত হলেই আপনি মনের শক্তিবলয় নিয়ন্ত্রণের চাবিকাঠি হাতে পাবেন। ধ্যানাবস্থায় মন হয় ত্রিকালদর্শী, চেতনা অতিক্রম করে সকল বস্তুগত সীমা। মনের এই ধ্যানাবস্থার শক্তিকে প্রয়োগ করেই প্রাচ্যের সাধক দরবেশ ঋষিরা একদিন আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন। ইচ্ছা করেছেন - ঘটনা ঘটেছে। ইচ্ছা করেছেন - মানুষ রোগমুক্ত হয়েছে।আপনিও এ চাবিকাঠিকে কাজে লাগিয়ে অর্জন করতে পারেন অতিচেতনা। এই চাবিকাঠি দিয়েই দৃশ্যমান সব কিছুর পেছনে যে নেপথ্য স্পন্দন ও নিয়ম কাজ করছে তার সবটাকেই আপনি নিজের ও মানবতার কল্যাণে সক্রিয় করে তুলতে পারবেন।’’

এরপর অধ্যায় ৬ তে ‘শিথিলায়ন’ প্রক্রিয়া অর্জনের বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়েছে। অধ্যায় ৭,৮ তে নানা আত্মবিনাশী প্রোগ্রাম যেমন নেতিবাচক চিন্তা, হতাশা, অনুশোচনা, রাগ, হীণমন্যতা ইত্যাদি মোকাবেলা করার অব্যর্থ কৌশল হিসেবে ‘শিথিলায়ন’ কে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

অধ্যায় ৯, ১০ তে আত্মবিকাশী প্রোগ্রাম হিসেবে অটোসাজেশন এবং মনছবি র বিবরণ দেয়া হয়েছে। অধ্যায় ১১,১২, ১৩ তে যথাক্রমে কল্পনাশক্তি, মনোযোগ বাড়ানোর কৌশল জানানো হয়েছে। অধ্যায় ১৪ তে কোয়ান্টা সংকেত, অধ্যায় ১৫ তে জাগৃতি এবং ঘুম নিয়ন্ত্রনের উপায়, অধ্যায় ১৬ তে স্বপ্নের সৃজনশীল প্রয়োগের কথা বলা হয়েছে যেখানে ইস্তেখারা সালাতকে বর্ণনা করা হয়েছে স্বপ্নচর্চা ও এর সৃজনশীল প্রয়োগের একটি বিশেষ মাত্রা হিসেবে।

বই এর অধ্যায় ১৭, ১৮, ১৯, ২০, ২১ গুলোতে যথাক্রমে ছাত্রজীবনে সফল হবার উপায়, কোয়ান্টাম নিরাময়, ওজন নিয়ন্ত্রনের উপায়, ড্রাগ এবং নেশা থেকে বিরত থাকার উপায় এবং সুস্বাস্থ্যের কোয়ান্টাম ভিত্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে।

এতক্ষণ ধরে বইটিতে ধ্যানের প্রথম ধাপের কথা বলা হয়েছে। পরবর্তীতে বাকি ধাপগুলোর ব্যাপারে শুধু আভাস দেয়া হয়েছে যাকে বলা হয়েছে অতিচেতনার পথে যাত্রা। এর পথ ধরেই কোয়ান্টাম গ্র্যাজুয়েটরা কমাণ্ড সেন্টার এবং প্রকৃতির সাথে একাত্মতার অনুভূতি লাভ করেন। নিচে আমরা বাছাই করা কিছু বিষয়ের উপর বিশেষভাবে আলোকপাত করব।

৩.২. মনছবি:

শিথিলায়ন প্রক্রিয়ায় মানুষের মাঝে এমন এক ক্ষমতা তৈরি হয় যার ফলে সে তার কল্পনা শক্তি দ্বারাই নিজের চাওয়া পাওয়া পূরণ করে ফেলতে পারে। নিচে বই এ উল্লেখিত একটি ঘটনা হুবহু তুলে ধরা হলঃ

‘‘এক ইঞ্জিনিয়ার।সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করার মনছবি দেখতে লাগল। ডিভি ভিসা পেয়ে গেল। ভিসা পাওয়ার পর মনছবি দেখতে লাগল সমমানের চাকরির, যাতে নিজের প্রকৌশল জ্ঞানকে কাজে লাগাতে পারেন। দেশে তিনি কাজ করতেন বিদেশি প্রতিষ্ঠানে। যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার দেড় মাসের মধ্যে একই প্রতিষ্ঠানে আগের চেয়েও দায়িত্বপূর্ণ পদে চাকরি হয়ে গেল তার।’’ [6]

৩.৩. কোয়ান্টাম নিরাময়:

রোগের মূল কারণকে মানসিক আখ্যায়িত করে এখানে মেডিটেশনের মাধ্যমে সকল রোগ ব্যাধি উপশমের পদ্ধতি ব্যাখ্যা করা হয়েছে। মনছবি বা ইমেজ থেরাপি ছাড়াও রয়েছে ‘দেহের ভিতরে ভ্রমণ’ নামক পদ্ধতি যেখানে রোগীকে প্রথমে শিথিলায়ন করতে বলা হয়, তারপর শরীরের নানা অঙ্গের মধ্য দিয়ে কাল্পনিক ভ্রমণ করতে বলা হয়। এতে সে তার সমস্যার স্বরূপ সম্পর্কে অন্তদৃষ্টি লাভ করে এবং নিজেই কমান্ড সেন্টারের মাধ্যমে সমাধান করতে পারে। যেমন:

একজন ক্যান্সারের রোগী তার ক্যান্সারের কোষগুলোকে কল্পনা করে সর্ষের দানারূপে।আর দেখে অসংখ্য ছোট ছোট পাখি ওই সর্ষে দানাগুলো খাচ্ছে। আর সর্ষের দানার পরিমাণ ক্রমান্বয়ে কমে আসছে। আস্তে আস্তে সর্ষের দানা নিঃশেষ হয়ে আসছে। সর্ষের দানাও শেষ, নিরাময়ও সম্পন্ন। [7]

শিথিলায়ন প্রক্রিয়ার কার্যকারিতা সম্পর্কে এতে বলা হয়েছে ‘‘শিথিলায়নের মাধ্যমে ব্যথা উপশম করার জন্য আপনাকে সাধু সন্ন্যাসী বা ভিক্ষু হবার প্রয়োজন নেই। এজন্য নির্বাণ বা ফানাফিল্লাহর স্তরেও আপনাকে যেতে হবেনা। [8]

৩.৪. মাটির ব্যাংক:

মাটির ব্যাংকের কার্যকারিতার জ্বলন্ত উদাহরণে ভর্তি এ সংক্রান্ত লিফলেটটি। একটি মাত্র ঘটনা এখানে উল্লেখ করা হল-

‘‘ছেলের সামান্য জ্বর হয়েছে। সারাদিন ভালোই ছিল।তখন প্রায় রাত ১টা, বাসার সবাই ঘুমে। হঠাৎ গোঙ্গানির শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল। তাকিয়ে দেখি ওর পুরো শরীর মৃগী রোগীর মত খিঁচছে। বুকটা ধক করে উঠল। এই মধ্যরাতে কোথায় ডাক্তার পাব, কি করব ভাবছি আর আল্লাহকে ডাকছি। হঠাৎ চোখ পড়ল ড্রেসিং টেবিলের ওপর রাখা মাটির ব্যাংকে। তাড়াতাড়ি মশারির ভেতর থেকে বেরিয়ে মানিব্যাগ থেকে ৫০০ টাকার নোট ব্যাংকে রাখলাম। স্রষ্টার কি করূণা! মিনিট পাঁচেকের মধ্যে খিঁচুনি বন্ধ হল, সে ঘুমিয়ে পড়ল। পরদিন সকালে উঠে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করল যেন কিছুই হয়নি।’’ [9]

৩.৫. কোয়ান্টা সংকেত:

বইটির সংশ্লিষ্ট অংশে বলা হচ্ছে-

‘‘ কথিত আছে অলৌকিক শক্তিবলে ঋষিরা ইসম বা মন্ত্র উচ্চারণ করতেন আর যাদুর মত সব ঘটনা ঘটে যেত। যে কোন ঋষিরা মন্ত্র উচ্চারণের আগে বছরের পর বছর ইসম বা মন্ত্র জপ করতেন বা জিকির করতেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে আল্লাহ, ইয়াহু, ইয়া হক, ওম ইত্যাদি। ধর্মবহির্ভূত ধ্যানীরা নিজের পছন্দমত কোন শব্দ লক্ষ লক্ষবার উচ্চারণ করেন। তাদের বিশ্বাস এইভাবে অগণিতবার উচ্চারণের ফলে এই ধ্বনি এমন এক মনোদৈহিক স্পন্দন সৃষ্টিতে সহায়ক হয় যার ফলে সে তার মনোদৈহিক শক্তি পুরোপুরি একাগ্রভাবে ব্যবহার করতে সক্ষম হয়।’’ [10]

৩. ৬. কোয়ান্টা ভঙ্গি:



[11]

‘‘ আপনি মহামতি বুদ্ধসহ প্রাচীন ঋষিদের যে ভাস্কর্য দেখতে পান,তার বেশিরভাগই অভয়মুদ্রা করে সিদ্ধাসনে বসা। আর এই অভয়মুদ্রার আধুনিক নামই কোয়ান্টা ভঙ্গি।

কোয়ান্টা ভঙ্গির জ্যোতিষ বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা হল- হাতের বুড়া আঙ্গুলের ক্ষেত্র হল শুক্র বা ভেনাসের ক্ষেত্র । আর তর্জনীর ক্ষেত্র হচ্ছে বৃহস্পতির ক্ষেত্র।জ্যোতির্বিজ্ঞানে শুক্র ও বৃহস্পতি কল্যাণ ও সাফল্যের প্রতীকরূপে গণ্য। আর মধ্যমার ক্ষেত্র শনির ক্ষেত্র রূপে পরিচিত। শনি বিলম্ব ও বাধার প্রতীক। প্রাচীন ঋষিরা এ কারণেই ভেনাস ও জুপিটারের প্রবৃদ্ধিকেই সংযুক্ত করেছেন, এর সাথে শনির প্রভাবকে যুক্ত করতে চাননি।



কোয়ান্টা ভঙ্গি করে হাত সামনে এনে খেয়াল করলে দেখবেন হাতে আরবী আলিফ, লাম ও হে অর্থ্যাৎ আল্লাহু হয়ে আছে। অর্থ্যাৎ কোয়ান্টা ভঙ্গি করার সাথে সাথে আপনি প্রকারান্তরে স্রষ্টাকে স্মরণ করছেন।’’ [12]

৩.৭. কমান্ড সেন্টার:

কমান্ড সেন্টারকে একথায় বলা যায় মনের বাড়ির শক্তি ও কল্যাণ কেন্দ্র।মানব অস্তিত্বের যে অংশ স্থান কালে আবদ্ধ নয়, সে অংশ এই কমান্ড লেভেলে প্রকৃতির নেপথ্য নিয়ম ও স্পন্দনের সাথে সহজেই যোগাযোগ স্থাপন করে । যাকে তারা জীবনে কখনও দেখেননি, যার কথা জীবনে কখনও শোনেননি, শুধু তার নাম, বয়স ও ঠিকানা বলার সাথে সাথে তার এমন হুবহু বর্ণনা দিতে সক্ষম হন কোয়ান্টাম গ্র্যাজুয়েটরা যে প্রশ্নকর্তা নিজেই অবাক হয়ে যান। [13]

কমান্ড সেন্টারের প্রয়োগ:

‘‘ছেলে কোলকাতায় গিয়েছে, যাওয়ার পরে ২ দিন কোন খবর নেই।বাবা কোয়ান্টাম গ্র্যাজুয়েট, মাগরিবের নামাজ পড়ে মেডিটেশন কমান্ড সেন্টারে গিয়ে ছেলের বর্তমান অবস্থা দেখার চেষ্টা করতেই কোলকাতার একটি সিনেমা হলের গেট ভেসে এল।ছেলে সিনেমা হলের গেটে ঢুকছে। বাবা ছেলেকে তার উদ্বেগের কথা জানালেন। বললেন শিগগিরই ফোন করতে।’’ [14]

৩.৮. অন্তর্গুরু:

আধ্যাত্মিকতার পথে অগ্রসর হতে হলে একজন আলোকিত গুরুর কাছে বায়াত বা দীক্ষা প্রয়োজন। এছাড়া আধ্যাত্মিকতার সাধনা এক পিচ্ছিল পথ।যে কোন সময়ই পা পিছলে পাহাড় থেকে একেবারে গিরিখাতে পড়ে যেতে পারেন।

কমান্ড সেন্টার নির্মাণ করে সবকিছু ঠিক মত সাজানোর পর ধ্যানের বিশেষ স্তরে অন্তর্গুরুর আগমন ঘটে। অন্তর্গুরু প্রথমে সকল অশুভ প্রভাব থেকে মুক্তির জন্য ‘সাইকিক বর্ম প্রদান করেন যা অতীতের সকল অশুভ প্রভাব নিষ্ক্রিয় করে দেয় এবং ভবিষ্যতের এ ধরণের প্রভাব থেকে নিরাপদ রাখে। অন্তর্গুরুকে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা যত তীব্র হবে, তত সহজে আপনি তার দর্শন লাভ করবেন। এ ব্যাপারে বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা হয়েছে কোয়ান্টাম গ্র্যাজুয়েটদের।
[15]


৪. কোয়ান্টাম মেডিটেশন কেন করব?

এই প্রশ্নের জবাবটা আসুন উনাদের ওয়েবসাইট থেকেই নেয়া যাক-

প্রশ্ন:
মেডিটেশন মনকে প্রশান্ত করে। আমি কোরআন-হাদীসের আলোকে জানতে পারলাম নামাজই একমাত্র মনকে প্রশান্ত করতে পারে। এর সঠিক ব্যাখ্যা জানতে চাই।

উত্তর:
মনকে প্রশান্ত করার মতো নামাজ যাতে আপনি পড়তে পারেন এজন্যেই মেডিটেশন দরকার। শুধু উঠা-বসা করলে, রুকু-সেজদা দিলে নামায হয় না। আমাদের দেশে নামাজীর সংখ্যা তো কম নয়- জুম্মার দিন বিশাল রাস্তা বন্ধ করে নামাজ হয়। যেভাবে আমরা নামাজ পড়ি তাতে যদি প্রশান্তি পাওয়া যেত, তাহলে আমাদের দেশে এত অশান্তি থাকতো না।

প্রশ্ন:
ধর্মের সাথে কি কোয়ান্টাম মেথডের কোনো বিরোধ আছে?

উত্তর:
কোয়ান্টাম মেথডের সাথে ইসলাম বা অন্য কোনো ধর্মের কোনো বিরোধ নেই। আমাদের দেশের বহু বিশিষ্ট আলেম এ কোর্সে অংশগ্রহণ করেছেন এবং তারা সবাই এক বাক্যে বলেছেন যে, এর কোনো সূত্রের সাথে আমাদের ঈমান-আকিদার কোনো বিরোধ নেই। বরং তারা অনেকে খুব দুঃখ করে বলেছেন যে, আমরা তো বলি, হুদরিল ক্বালব ছাড়া নামাজ হয় না। শুধু রুকু-সেজদা দিলে নামাজ হয় না, শুধু সূরা-কেরাত পড়লে নামাজ হয় না। নামাজের জন্যে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন হুদরিল ক্বালব, একাগ্রচিত্ততা। এই হুদরিল ক্বালব কীভাবে সৃষ্টি করতে হয় তা এখানে এসে শিখতে পেরেছি। [16]
Whatever your religion, your prayer or worship will definitely take a different dimension once learn to meditate.
However, meditation is not only for the religious. Whatever your belief or philosophy, meditation will help you attain peace, health or success.

তাহলে আমরা বুঝতে পারলাম যে কোয়ান্টাম মেডিটেশন করার জন্য ধর্ম বিশ্বাস কোন জরুরি বিষয় নয়। কোয়ান্টাম ফাউণ্ডেশনের সকল কার্যাবলীতে তাদের এই চিন্তাধারার পূর্ণ প্রতিফলন ঘটে। যেমন:

এখন কোয়ান্টাম শিশুকাননে রয়েছে ১৫ টি জাতিগোষ্ঠীর ৪ শতাধিক শিশু। মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, ক্রামা, খ্রিষ্টান এবং প্রকৃতিপূজারী - সকল ধর্মের শিশুরাই যার যার ধর্ম পালন করছে আর একসাথে গড়ে উঠছে আলোকিত মানুষ হিসেবে। [17]

কিন্তু কারো যদি ধর্ম বিশ্বাস থেকেও থাকে তবুও তিনি উপকৃত হবেন। কারণ কোন ধর্মের সাথেই এর বিরোধ নেই।

(চলবে ইনশা'আল্লাহ্)

ফুটনোটসমূহ:

[1]পরিবর্ধিত নতুন সংস্করণঃ জানুয়ারী, ২০০০
[2]এখানে মানুষের ভিতর ঈশ্বরের অস্তিত্বের ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে - যা হচ্ছে সর্বেশ্বরবাদ - একাধারে "কুফর" ও "শিরক"। ইসলাম কেবল আল্লাহকেই সকল শক্তির মূল উৎস মনে করে - যাঁর সাথে কারো কোন সাদৃশ্য নেই এবং যিনি আরশের উপরে রয়েছেন।
[3]পৃঃ ২২-২৪
[4]পৃঃ ৫৮
[5]পৃঃ ৫৯
[6] পৃঃ ১১৫
[7] পৃঃ ১৯৪
[8]পৃঃ ১৯০
[9] দুঃসময়ের বন্ধু মাটির ব্যাংক
[10] পৃঃ ১৬১
[11]পৃঃ ১৬৩
[12]পৃঃ ১৬৪
[13]পৃঃ ২৩৩
[14]পৃঃ ২৪১
[15]পৃঃ ২৪৭
[16] http://quantummethod.org.bd/bn/question/1427
Click This Link
[17] http://quantummethod.org.bd/bn/shishukanon




১৫টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×