গল্পটি মূলত ইরানি গল্প। একসময় পারস্য থেকে অনেক ব্যবসায়ী এদেশে ব্যবসা করতে এসেছিল। তাঁদের কেউ কেউ এদেশে স্থায়ীভাবে থেকে গিয়েছিল। ধারণা করা হয় তাঁদের মাধ্যমে গল্পটি এদেশে প্রচলিত হয়েছে। তবে গল্পটি এখন আমাদের হয়ে গেছে। এর মধ্যে আর সেই ইরানি আমেজ নেই। গল্পটি মুখে মুখে প্রচলিত হতে হতে আমাদের অনেক আবহ এর মধ্যে ঢুকে গেছে। অনেকের মধ্যে ভুল ধারণা আছে যে বাসর রাতে বিড়াল মারা মানে সে রাতে কামলীলা সাঙ্গ করা। এটা আসলে ভুল। আমাদের দেশীয় আবহে চলুন জেনে আসি এর ইতিহাস-
গ্রামের নাম মহব্বতপুর। এই গ্রামে বাস করত দুই যুবক। একজনের নাম আলাল এবং আরেকজনের নাম দুলাল। তারা দু'জন ভালো বন্ধু এবং ভাই ছিল। তাঁদের বন্ধুত্ব এমনি ছিল যে, একজন আরেকজনকে রেখে কিছু করতে পারতো না। আলাল ছিল বোকা কিছিমের আর দুলাল ছিল একটু চালাক কিছিমের। এছাড়াও আলাল মেয়েদের দেখে ভয় পেত। মেয়েদের সামনে গেলে তার হাত-পা কাঁপত। আর দুলালের এই সমস্যা ছিল না। সে উল্টো সুন্দরী মেয়ে দেখলে আলালকে দেখিয়ে বলত-'দেখ, দেখ কত সুন্দর মেয়ে , চল গিয়ে কথা বলি?' এটা শুনেই আলালের হাত-পা কাঁপা শুরু করত। একদিন দুলাল বল-'চল বিয়ে করে ফেলি, তাহলে তোর আর মেয়েদের দেখে ভয় লাগবে না।' আলাল ভাই এর কথায় রাজি হয়ে গেলো। যেই ভাবা সেই কাজ সেই কাজ। তারা বিয়ে করে বউ নিয়ে আসলো। আলাল ছিল বোকা সে বাসর ঘরে বউ এর সাথে কি কি করবে সে বিষয়ে তালিম নিচ্ছিল দুলাল এর কাছ থেকে। দুলাল বেশ আত্মবিশ্বাসের সাথে বাসর ঘরে ঢুকলো। সে তার নতুন বউ এর ঘোমটা খুলতে গেলো আর বউ তাকে ধরাম করে একটি চড় বসিয়ে দিল। তার বউ বলল-'তুমি কেমন পুরুষ, অনুমতি ছাড়া বউ এর ঘোমটায় হাত দিলে যে?' দুলাল একদম থ-বনে গেল এবং বউ এর কথামত খাটের একপাশে শুয়ে পড়লো।
অন্যদিকে আলাল বেশ ভয়ে ভয়ে বাসর ঘরে ঢুকলো। সে তার বউ এর ঘোমটা খুলতে যাবে এমন সময় ম্যাও বলে আওয়াজ শুনলো। সে দেখলো যে একটা বিড়াল ঘরে ঢুকেছে। সে বিড়ালকে অনেক অপছন্দ করতো। বিড়াল দেখে তার মেজাজ বিগঢ়ে গেল। সে পিড়িতে একটা লাথি দিয়ে বিড়ালের দিকে ছুঁড়ে মারলো। পিড়ির আঘাতে বিড়ালটি সেখানে মরে রইলো। এটা দেখে আলালের বউ বেশ ভয় পেল। সে ভাবলো যে বিড়ালকে এভাবে মারতে পারে সে না জানি মানুষকে কিভাবে মারে? সে নিজেই ঘোমটা খুলে আলালের সেবা করতে লাগলো। পরের দিন প্রত্যেক ভাই তাঁদের রাতের অভিজ্ঞতা শুনতে চাইলো। আলাল তার অভিজ্ঞতার কথা তার ভাইকে বলল। সে এখন আর মেয়েদেরকে ভয় পায়না। তার বউ তার সব কথা শুনে। সব শুনে দুলাল খুব আফসোস করতে লাগলো। সে ভাবলো সেও একটা বিড়াল মারবে। সেদিন দিন রাতে সে একটা বিড়াল ধরে তার বউ এর সামনে মারতে উদ্ধত হল। সেটা দেখে দুলালের বউ একটা দা নিয়ে দাবড়াতে আসলো। তার বউ বল- 'তোমার কোন মায়া দয়া নেই, অবলা জীবকে মারতে আসছো?' দুলাল ভাবলো বিড়ালটা দেরি করে মারা হয়ে গেল। বাসর রাতে মারলে তার বউ তার নিয়ন্ত্রনে থাকতো। সে থেকে বউকে নিজের নিয়ন্ত্রনে রাখার জন্য বাসর ঘরে বিড়াল মারার গল্প প্রচলিত হয়েছে।
(গল্পটি আমাদের ষাণ্মাসিক সাময়িকী 'মাচাঙ' থেকে সংগৃহীত)
এছাড়াও আমাদের ফেইসবুক পেইজে গিয়েও আমাদের লোকসংস্কৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন-
লোকসংস্কৃতি রক্ষা করি (লোরক) সোসাইটি
কিসসা শোনার আসরঃ বাসর ঘরে বিড়াল মারার গল্প
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?
যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।
নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন
আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত
বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন
বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!
কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন
সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে
সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে
আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন
অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?
এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন