somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লাবড়াডাগাবড়া ৪: বাচ্চাদের পেপার পড়তে নেই

২৬ শে মে, ২০০৭ রাত ৮:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাচ্চারা বই পড়ে যতটা না শেখে তার চেয়ে বেশী শেখে চারপাশ থেকে, দেখে, শুঁকে, শুনে, খেয়ে আর ধরে। সেটার ভাল দিকও আছে, খারাপ দিকও হয়ত আছে। তবে খারাপ দিক থাকলেও কিছু করার নেই, এটাই নিয়ম। আবার এই যে বাচ্চাদের দেখে-শুনে-শুঁকে শেখার মাঝে অনেক মজার মজার ঘটনাও ঘটে। হঠাৎ কি প্রসঙ্গে সেদিন নিজের জীবনের এরকম ছোট ছোট ব্যাপারগুলো মনে পড়ল। ওহ, কি প্রসঙ্গে মনে পড়ল, 'গড অভ স্মল থিংস'টা পড়তে গিয়ে।

যারা 'টু কিল আ মকিংবার্ড' বইটা (আমার এপর্যন্ত পড়া সেরা উপন্যাস) পড়েছেন তাদের নিশ্চয়ই স্কাউটের কথা মনে আছে। মা-হারা স্কাউট আইনজীবি বাবার স্টাডিতে খুটখুট সময় কাটাতে কাটাতে তিন-চার বছর বয়েসেই পড়তে শিখে ফেলেছিল। ছোটবেলায় আমারও অনেকটা সেরকম হয়েছিল, তবে সেটা মায়ের কাছে। মা সারাদিন রান্নাবান্না সংসারের কাজের পর সন্ধ্যায় খবরের কাগজ নিয়ে বসতেন, বাবা আপাদের পড়াতে বসতেন। আমি মার কোল ঘেঁষে বসে পড়ার ভাব করতাম। ভাব করতে করতে কিভাবে যেন চার-সাড়েচার বয়েসের দিকেই পেপারের শিরোনাম (বড় অক্ষরগুলো) পড়ার মতো হয়ে গেলাম।

তখন আমার বদ্ধমূল ধারনা ছিল যে পেপারের বড় অক্ষরগুলো ছোটদের জন্য লেখা হয়, আর ছোট অক্ষরগুলো বড়দের জন্য।
তো, ছেলে বলেই হোক বোঝার সুবিধা বলেই হোক, মা পেপার পড়তে বসলে আমি টুক করে খেলার পাতাটা সরিয়ে নিতাম, কারণ ওতে ফুটবলের ছবি দেখা যেত।

এমনি একদিন দেখলাম, শিরোনাম লেখা "মোহামেডান বিজয়ী, আজাদ ধরাশায়ী" টাইপের কিছু আর শিরোনামের ঠিক উপরে দুজন খেলোয়াড় বল কাড়াকাড়ি করছে তার ছবি।
আমার খালাতো ভাইয়ের নাম ছিল আজাদ (ঠিক ধরেছেন, ৭১ এ জন্ম), ছবিতে দেখলাম একজন একজন বল নিয়ে খেলছে। আমাকে আর পায় কে! আমি মোটামুটি বুঝে নিলাম যে মোহামেডান একটা ছেলে, আর আজাদ আরেকটা ছেলে। অনেকদিন পর্যন্ত আমি জানতাম আবাহনী/মোহামেডান এগুলো মানুষের নাম।
স্কুলে ভর্তি হবার পর যখন দলবেঁধে ফুটবল খেলা শুরু করলাম, তখন বুঝলাম এটা অনেকে মিলে খেলে, আর ওগুলো ক্লাবের নাম।

আরেকটা মজার বিষয় ছিল 'সরকার' কে নিয়ে। পেপারেও দেখতাম, বাবা-মাকেও দেখতাম শুধু সরকারকে বকাবকি করে। সরকার এই করেনা, সেই করেনা।
আমার ছোট্ট মাথায় ঢুকে গেল সরকার হলো একটা খুব বাজে লোক।
একদিন আমার ব্যবসায়ী মেঝখালু তাঁর কর্মচারীকে নিয়ে ঢাকায় আমাদের বাসায় আসলেন। সেসময়, ব্যবসায়ীদের হিসাবরক্ষক কর্মচারীদের 'সরকার' বলা হতো।
আমাকে আর পায় কে! আমি মনে মনে হিসেব মিলিয়ে নিলাম 'এই সেই খুব খারাপ লোকটা তাহলে!!'

আমার পিঠাপিঠি বড় আপাটা যখন ক্লাস টুতে পড়ত তখনও আমি স্কুলে ভর্তি হইনি। কিন্তু ওর বাংলা আর চয়নিকা বইটার প্রতি তীব্র আকর্ষণ বোধ করতাম, মূল কারণ ওটার বাংলা অক্ষরগুলো বড়বড়, সব পড়া যায়। তো, সেখানে 'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো' গানটা ছিল, সাথে ছবি ছিল একটা ছেলে আর একটা মেয়ে। ছড়াটা পড়ে আমি বুঝেছিলাম কারও ভাইয়ের কোন খারাপ কিছু হয়েছে। আমি আপাকে জিজ্ঞেস করলাম, ঘটনা কি?
সে এখন আমাকে কোনভাবেই বোঝাতে পারছেনা, এই 'আমার ভাই'টা সবার ভাই। আমিও কোনভাবেই মানছিনা, আমি বলছি নিশ্চয়ই ছবির মেয়েটার ভাইয়ের কথা বলছে। এটা নিয়ে তুমুল ঝগড়া, মারামারি। ফলাফল হলো, আপা বলল তুই আর কোনদিন আমার বই পড়বিনা।

ভাগ্যিস 'সরকারে'র ব্যাপারটা মাকে জিজ্ঞেস করিনি, তাহলে হয়ত বলত 'খবরদার! কোনদিন পেপার পড়বিনা!!'
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০০৭ সকাল ১০:৪৪
৩৮টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×