তাঁর সম্পর্কে পরিচয় নতুন করে দেয়ার কিছু নেই -- তাও সামারাইজ করছি। যে বিশেষত্বগুলো তাঁর সম্পর্কে সবাই স্বীকার করে।
১. বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় পত্রিকাকলামিস্ট
২. বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী লেখক
৩. শিশু-কিশোরদের মাঝে বিজ্ঞানশিক্ষা প্রচলনের পাইওনিয়ার
৪. সূদীর্ঘ সময় আমেরিকায় ভালো বেতনে বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক গবেষণাগারগুলোর একটিতে কর্মরত থাকার পরও দেশে ফিরে এসেছেন, কমবেতনে সরকারী চাকুরী নিয়েছেন -- শুধুই দেশের জন্য, তাঁর অতিবড় নিন্দুকও মানবে।
৫. তিনি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের এত বেতন নিয়ে পরাশোনা করানোর বিরোধী, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে "খ্যাপ" দেয়ারও বিরোধী। (তাঁর একঘনিষ্ট ছাত্রের কাছেই শুনেছি, তাঁকে দেশের একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ডিপাঃ প্রধানের পদ সেধেছিল আড়াই লাখ টাকা বেতনে, চিন্তা করা যায়? বাংলাদেশে আড়াই লাখ টাকা বেতণ মানে রাজার হাল!! ... তিনি বলেছিলেন, আমাকে এর দশভাগের একভাগ দাও, বিনিময়ে ছাত্রদের বেতনও কমাও।)
তারপরও প্রশ্ন, এজন্যই কি তাঁর এত জনপ্রিয়তা?
পত্রিকা কলামিস্ট, ভালো লেখক, শিক্ষায় অবদান রাখা এবং চাইলেই বিদেশের কোন ভালো ইউনিভার্সিটিতে বেশ ভালো অবস্থানে থাকতে পারেন -- এমন ইউনিভার্সিটি প্রফেসরের সংখ্যা দেশে কম না। বুয়েটের সিএসই'র একজন শিক্ষককে চিনি যিনি জাপানের খুব উঁচুমানের একটি ইউনিভার্সিটি এবং অস্ট্রেলিয়ারও খুবই উঁচুমানের একটি ইউনিভার্সিটির এ্যাসোসিয়েইট প্রফেসরের অফার ফিরিয়ে দেশে তাঁর পুরোনো চাকুরী এ্যাসিসট্যান;ট প্রফেসর পদে যোগ দিয়েছিলেন, এখন হয়ত এ্যাসোসিয়েইট বা পুরো প্রফেসর হয়ে গেছেন। এরকম আরো অনেকে আছেন, আরো আনেকে।
তাহলে শুধু এই গুন গুলোর জন্য কি মুহম্মদ জাফর ইকবাল এতটা জনপ্রিয় হতে পারেন? আমার মনে হয়না।
তাঁর জনপ্রিয়তার কারণটা অন্যত্র। এবং এই অন্যত্রের কারণেই তাঁকে নিয়ে সামহোয়ারের কিছু অশ্লীল সদস্য কুৎসামূলক, মানসিক বিকৃতিসম্পন্ন পোস্ট দেয়।
সেটাই। মুহম্মদ জাফর ইকবালে জনপ্রিয়তার কারণ মুক্তিযুদ্ধের প্রতি তাঁর আবেগের প্রকাশ। তাঁর আবেগের প্রকাশ খুবই সুন্দর, এতই সুন্দর যে তরুন প্রজন্মকে সেটা ছুঁয়েছে পূর্ব-পশ্চিম-উত্তর-দক্ষিণ-উপর-নীচ, সবদিক থেকেই। সেই আবেগ থেকে তনি অনবরত এই প্রজন্মকে উৎসাহিত করছেন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে সমৃদ্ধ করতে, চেতনাকে জাগ্রত করতে। বিশ্বাস না হলে শুধু একটা পরীক্ষা করে দেখুন -- তাঁর ভক্ত প্রত্যকেটি তরুণ/তরুণীই একইভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাতে দারুণভাবে উদ্বুদ্ধ। তাঁর সরাসরি কিছু ছাত্রের সাথে কথা হয়েছে, আমি দেখেছি কি অদ্ভুত প্রেরণা নিয়ে তৈরী হয়েছে তারা। পরোক্ষভাবে তাঁর লেখার স্বাদ আমরা যারা পেয়েছি, তারাও নিয়ত প্রেরণা পেয়ে যাচ্ছি। এত সুন্দর করে চেতনাকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন খুব কমই,
কারণ মুক্তিযুদ্ধের প্রতি আবেগের এত সুন্দর প্রকাশ এবং একই সাথে এই চেতনার পক্ষে অবস্থানের এত সুন্দর দৃঢ়তা খুবই বিরল।
সেজন্য, অন্যশিবির থেকে কিছু আবোলতাবোল আঘাত আসবেই। তবে সেটা তাঁর প্রতি এই প্রজন্মের ভালোবাসাকে যে আরো বাড়িয়েই তুলবে -- তার প্রমাণ সামহোয়ারের গতকালের আলেকজান্ডারের পোস্ট।
শ্রদ্ধেয় জাফর ইকবালকে আবারও শ্রদ্ধা জানাই
ছবি: উইকিপিডিয়া
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মার্চ, ২০০৮ সকাল ৮:৫৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



