somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সর্ষে ভাবনা: বিচার বিভাগের স্বাধীনতা

১৬ ই এপ্রিল, ২০১০ সকাল ৮:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিচার বিভাগ প্রশাসনের কবলমুক্ত, অর্থাৎ স্বাধীন না হলে একটা সভ্য রাষ্ট্র আশা করা যায়না; কারণ সহজ, প্রশাসনের তখন জবাবদিহিতা থাকেনা। আশ্চর্য ব্যাপার হলো আমাদের দেশে স্বাধীনতার পর প্রায় ৩৭ বছর কাগজে কলমেও বিচার বিভাগ স্বাধীন ছিলোনা! ২০০৭ সালের শেষ দিকে সম্ভবতঃ, বিচার বিভাগ স্বাধীন হয়। তবে যতদিন স্বাধীন ছিলোনা, একদিক দিয়ে মনে হয় ভালোই ছিলো। তখন অকল্পনীয় পর্যায়ের অনাচার-অন্যায়-দূর্নীতি দেখলে ভাবতাম বিচার বিভাগ স্বাধীন না বলেই এ দেশে এরকম হবুচন্দ্র রাজা আর গবুচন্দ্র মন্ত্রীর সিস্টেম চলছে। অর্থাৎ সান্ত্বনা পাবার একটা ছুতো ছিলো, এখন সেটাও নেই!

গত বিএনপি-জামাত জোট সরকারের সময় বিচার বিভাগ স্বাধীন ছিলোনা। এর আগের আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের সময়েও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ছিলোনা। কিন্তু সেসময় হয়তো "ঠ্যাডা" কিছু বিচারক ছিলেন। "ঠ্যাডা" শব্দটি বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে ব্যবহৃত হয়, মানে হলো, "ঘাড়ত্যাড়া", তবে প্রায়ই কিছুটা ইতিবাচক অর্থে ব্যবহার হয়, বিশেষ করে কাউকে যখন টলানো যায়না তখন।

মজার ব্যাপার হলো, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের আগের টার্মে পরাধীন বিচার বিভাগের এক ঠ্যাডা বিচারক ঠিকই কাগজে কলমে প্রশাসনের সর্বোচ্চ ব্যক্তিত্ব এবং বাস্তবে প্রশাসনের সর্বেসর্বা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কথাবার্তা বলার সময় "সামলে" বলার উপদেশ দেয়ার মতো সাহস দেখিয়েছেন।
আবার গত বিএনপি-জামাত জোট সরকারের সময়েও আরেকজন ঠ্যাডা বিচারক সরকারের মূল অংশীদার দল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা যাকে পারলে বিএনপির লোকজন পুজা করে, সেই জিয়াউর রহমানের ১৯৭৫ সালের ক্ষমতারোহনকে "অবৈধ" বলে রায় দেয়ার মতো সাহস দেখান।

সে হিসেবে বর্তমানের স্বাধীন বিচার বিভাগের কাছ থেকে আমরা আরো সাহসী রায় আশা করতে পারি। অথচ কি দেখা গেলো?

পরাধীন বিচার বিভাগ বিএনপির শাসন আমলের মতো সময়ে জিয়ার ক্ষমতারোহনকে অবৈধ ঘোষনা করলেও, স্বাধীন বিচার বিভাগ কয়েকমাস আগে এরশাদের অবৈধ ক্ষমতারোহনের মামলাটি খালাস করে দিয়েছেন।

পরাধীন বিচার বিভাগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বুঝে শুনে কথা বলার উপদেশ দেয়ার গাট্স রাখলেও স্বাধীন বিচার বিভাগ তাঁর নামে করা মামলা দিনে পাঁচবার দশবার করে বহুমূত্র রোগীর মতো একের পর এক শুধু খালাসই করে যাচ্ছেন। যে দেশে একটা সামান্য জমির মামলার নিষ্পত্তি হতে হতে কয়েক পুরুষ পেরিয়ে যায়, সে দেশে প্রশাসনের সর্বেসর্বার নামে করা মামলা আঙুলের তুড়ি বাজানোর মতোই স্বল্পসময়ে খারিজ হয়ে যায়। কিসের ভিত্তিতে কেন এসব খালাস হয়, কেউ জানেনা।

শুধু প্রধানমন্ত্রীই নন, স্বাধীন বিচার বিভাগের অধীনে দেখা যায় ১৩ বছর করে সাজাপ্রাপ্ত সব রাজনৈতিক নেতারা খালাস পান, কারো কারো শাস্তি মওকুফ হয়ে জলজ্যান্ত লোকটি জেল থেকে বের হয়ে আসেন;সেদিন আবার দেখা গেলো হাজী সেলিম আরেকজন "মহামানবে"র একশো সাঁইত্রিশটি মামলার মধ্যে একশোটিই খারিজের আয়োজন চলছে। বলি, বাকী সাঁইত্রিশটিকেও সাঁই করে উড়িয়ে চাঁদে পাঠিয়ে দিলেই তো হয়।

ভাবেচক্রে মনে হচ্ছে, বিচার বিভাগ স্বাধীন হওয়ায় এখন পোয়াবারো জ্যোতিষীদের। মামলা কোর্টে ওঠার আগেই উনারা একশোভাগ গয়ারান্টিসহ বলে দিতে পারবেন মামলার রায় কি হতে যাচ্ছে। এদেশের জ্যোতিষীরাও বলদ প্রকৃতির, একটা বেকুবও এখনও সুযোগটা কাজে লাগানো শুরু করেনি!

সব দেখে মনে হচ্ছে, বিচার বিভাগ আসলে স্বাধীন হলো কার হাত থেকে? প্রশাসনের হাত থেকে? নাকি "ঠ্যাডা" কিছু বিচারকের হাত থেকে?

বাংলাদেশকে নিয়ে আমার তেমন কোন উচ্চাভিলাসী স্বপ্ন নেই, ব্যক্তি আমি আসলে সেই অর্থে জাতীয়তাবাদী না।

আমি শুধু চাই এই দেশে সঠিকভাবে আইনের শাসনটুকু প্রতিষ্ঠিত হোক, আইনের যথাযথ প্রয়োগের পরিবেশ, চর্চাটুকু চলা শুরু হোক। সেটা না হলে এদেশ শুধু অধঃপতনের দিকেই ছুটে যাবে, প্রতিবছর যতই ধনাত্মক মানের জিডিপি বৃদ্ধির হার দেখানো হোক না কেন।


লেখাটি আমরাবন্ধু'র স্বাধীনতা দিবস সংকলনে পূর্বপ্রকাশিত
৫টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×