somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এমোরাল – (অ)নৈতিক

২৮ শে এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৩:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



তখন নাইট শিফটে কাজ করি। অফিস শুরু হয় রাত দশটায়, শেষ হয় সকাল সাতটায়। সারারাত লম্বা একটা ডেস্কে সারিবদ্ধ ভাবে বইসা সামনে দুইটা মনিটরের দিকে তাকাইয়া থাইকা, ডান হাত দিয়া মাউস নাড়াইয়া, দুই হাতের দশ আঙুল দিয়া কীবোর্ডে টিপাটিপি কইরা পার কইরা দিতাম রাতের পর রাত। কাজগুলা ছিল গদবাঁধা, তারমানে খুব একটা সহজ যে ছিল তাও না। মাঝে মাঝে এক্সেল শিটে প্লেসমেন্টের হিসাব মিলাইতে গিয়া কিংবা প্লাটফর্মে এডের রোটেশন বসাইতে গিয়া মাথার তারগুলাতে গিঁট লাইগা যাইত। সেইটা আবার ছুঁইটাও যাইত বেশীরভাগ সময়েই। সারারাত জাইগা থাকলে মধ্য রাতে সবারই খিদা লাগে। আমারও লাগার কথা। অফিস থাইকা মাঝ রাতে একটা নাস্তা দেওয়া হয় সবাইরে। সবাই খায়ও মজা কইরা। কিন্তু আমি বেশীরভাগ সময়ই সেই নাস্তা খাইতাম না। কেন খাইতাম না সেইটার পেছনের কারণটা ঘোলাটে।

রাত যখন ঘড়ির কাঁটায় তিনটা পার হইয়া যাইত, তখন পেটের মধ্যে একটা খিদার অনুভূতি তার সর্ব শক্তি দিয়া মোচড় দিতে থাকত। সেইটা চলত প্রায় আধা ঘণ্টা ধইরা। ওই মুহূর্তে যে চোখের পাতা দুইটার উপরও রাজ্যের ঘুম আইসা চাইপা বসত সেইটাও বইলা রাখা ভালো। কিন্তু মন যেহেতু জানে যে এখন খাওয়া কিংবা ঘুম কোনটাই সম্ভব না, তাই এই দুইটা অনুভূতি অনেক জোরাজুরি, ঘুরাঘুরি কইরাও বেশীক্ষণ টিকা থাকতে পারত না।

প্রায় প্রতি রাতেই ভোর পাঁচটার মধ্যে সব কাজ গুছানো হইয়া যাইত। বাকি দুই ঘণ্টা টিমের সবাই দুই দলে ভাগ হইয়া অনেক উৎসাহ নিয়া, চিল্লাচিল্লি কইরা, উত্তেজনায় ডেস্ক চাপড়াইয়া কম্পিউটারে ‘কল অব ডিউটি’ নামে একটা গেইম খেলত। এই গেইমটা ওরা প্রতি রাইতেই সমান উৎসাহ, সমান উত্তেজনা নিয়া খেইলা যাইত। প্রতিদিন ওরা কিভাবে ওদের উত্তেজনা একই খেলায় একই রকম ভাবে ধইরা রাখতে পারে সেইটা ভাইবা আমি বড়ই আশ্চর্য হইতাম। আশ্চর্য হইতে হইতে তখন আমি কোন একটা বইয়ের পিডিএফ কিংবা ইপাব কপি, কিংবা একটা সিনেমা নিয়া চুপচাপ দেখতে বইসা যাইতাম। ওদের চিল্লাচিল্লি আমারে খুব একটা বদার করত না। ঘড়িতে যখন সকাল সাতটা তখন কম্পিউটার বন্ধ কইরা একরকম তাড়াহুড়া কইরাই অফিস থাইকা বাহির হইয়া পড়তাম। চোখের ঘুম আর পেটের খিদাটা নিয়া আমি যখন বাসায় যাওয়ার পথে, তখন মনে হইত কোন রাজ্যের রাজা আইসা যদি তার রাজত্ব আমার হাতে তুইলা দিয়া এই মুহূর্তে বাসা ছাড়া অন্য কোথাও যাইতে বলে, আমি নির্দ্বিধায় তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করতে পারব। ওইদিকে বাসার কাছেই একটা নির্দিষ্ট হোটেলে আমার জন্য অপেক্ষা করতে থাকত চারটা গরম পরোটা, এক বাটি বুটের ডাল, আর একটা কুসুম কাঁচা ডিম পোঁচ। আমার এই নির্দিষ্ট হোটেলের নির্দিষ্ট নাস্তা, অতঃপর ঘরে গিয়া দরজায় খিল দিয়া সন্ধ্যা নাগাদ ঘুম দেওয়ার সাথে পৃথিবীর আর কোন কিছুই বিনিময় করা আমার পক্ষে সম্ভব বইলা মনে হইত না।

এইরকম ভাবে কোন এক সকালে অফিস থাইকা বাহির হইছি অন্যান্য কলিগদের সাথে। অফিস থাইকা মেইন রাস্তায় যাইতে একটা চিপা গলি পার হইতে হয়। গলির মধ্যে আছে একটা ইংরেজি ‘N’ আকৃতির মোড়। আমরা যখন ‘N’ এর প্রথম কোণায় পৌঁছাইলাম, দেখলাম একটা লোক মাটিতে পইড়া কাতরাচ্ছে। লোকটার বয়স পয়ত্রিশের মত হবে। পরনে লুঙ্গি, গায়ে একটা পুরাতন শার্ট। লোকটার বা চোখের পাশে একটা বিরাট রক্তাক্ত গর্ত দেখা গেল। কেউ একজন সেইখানে ধারাল কিছু দিয়া কোপ দিছে। গালের উপর রক্তের শুকনা ধারা দেইখা বোঝা গেল ঘটনাটা ঘটছে বেশ অনেকক্ষণ হইয়া গেছে। তার মুখ দিয়া বিভিন্ন আকৃতির গোঙ্গানি আওয়াজের সাথে মিশ্র হইয়া একটা কথাই বাহির হইয়া আসতেছিল, ‘ওরা আমার রিকশাটা নিয়া গেছে’। বুঝলাম লোকটা রিকশাওয়ালা। তার রিকশা নিয়া গিয়া তাঁরে আহত কইরা এইখানে ফালাইয়া গেছে। আমরা ছিলাম পাঁচ-সাতজন। তাঁরে নিয়া কি করব যখন কেহই কিছু বুইঝা উঠতে পারতেছিলাম না, তখন আমাদের মধ্যে আরমান ভাই তাড়াহুড়া কইরা গিয়া একটা রিকশা নিয়া আসল। আমরা ধরাধরি কইরা লোকটারে রিকশায় উঠাইলাম। আরমান ভাই লোকটারে নিয়া বসল রিকশায়। দশ মিনিট দূরত্বেই আছে একটা হাসপাতাল। (চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৩:৩০
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×