somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুভি টোকিও! (২০০৮) – গভীর সিনেমাটিক ধাঁধা

১৬ ই মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কেমন হইব যদি একদিন সকাল বেলা হঠাৎ আবিস্কার করেন যে আপনার বুকের মধ্যে একটা বিশাল ছিদ্র এবং খেয়াল কইরা দেইখা টের পাইলেন যে সকালের মিষ্টি রোদটা আপনার পিঠের মধ্য দিয়া ঢুইকা আপনার বুকের মধ্য দিয়া বাহির হইয়া ফ্লোরে গড়াগড়ি খাইতেছে? অর্থাৎ দেখলেন যে আপনার বুকের এপাশ-ওপাশ ছিদ্র হইয়া আছে। এবং আরও দেখলেন যে ছিদ্রের মাঝখানে আপনার মেরুদণ্ডটা একটা কাঠের মত দেখতে। তাড়াহুড়া কইরা আপনে আয়নার সামনে গিয়া দেখলেন। আপনে ভুল দেখেন নাই। আসলেই আপনার বুকে একটা ছিদ্র। বড়। আপনে ভয় পাইয়া গেলেন। এরপরে রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে টের পাইলেন যে আপনার একটা পা ধীরে কাঠে রূপান্তরিত হইতেছে। পরে আরেকটা পা। আপনে কোন রকমে নিজেরে নিয়া রাস্তার পাশে একটা বেঞ্চের উপর বসলেন। ইতিমধ্যে আপনার অর্ধেক শরীর কাঠ হইয়া গেছে। কিছুক্ষণ পর আপনে স্রেফ একটা কাঠের চেয়ারে পরিণত হইয়া গেলেন। নিশ্চয়ই ব্যপারটা জঘন্য হইব। কারণ আপনে কিছুতেই একটা কাঠের চেয়ার হইতে চান না। আমিও চাই না। কিন্তু চেয়ারে পরিণত হওয়ার পর আপনে টের পাইলেন যে আপনে চাইলেই যখন তখন চেয়ার হইয়া যাইতে পারেন, আবার মানুষও হইতে পারেন। তাইলে কিন্তু ব্যপারটা খারাপ হইব না। আপনে তখন মনের অনেক আকাঙ্ক্ষাই পূরণ করতে পারবেন।

এইরকম উদ্ভট ঘটনা দিয়া আপনার আকাঙ্ক্ষা পূরণের কথা কেন বলতেছি? কারণ স্বাভাবিক ঘটনা দিয়া আপনার মাইন্ডের সবগুলা ডাইমেনশন ছোঁয়া সম্ভব হয় না। এইরকম উদ্ভট তিনটা গল্প নিয়া ফ্রান্স, দক্ষিণ কোরিয়া, এবং জার্মানির তিনজন পরিচালক মিলা ২০০৮ সালে একটা সিনেমা বানাইছে, নাম টোকিও! সিনেমাটা শুরু হয় উপরের গল্পটা দিয়া। তিনটা গল্পই আপনার ভিতরে অদ্ভুত এক অনুভূতির জন্ম দিব। এবং সেই অনুভূতিটা হইব অসম্পূর্ণ। আপনার মন ঠিক বুইঝা উঠতে পারব না গল্পগুলার উদ্দেশ্যটা কি। তবে বুইঝা ফেলাটা নির্ভর করবে আপনার বুদ্ধিমত্তারে টপকাইয়া আপনে ফর্মলেস ডাইমেনশনে কতটুকু আরাম বোধ করেন সেইটার উপর।

আকাঙ্ক্ষা জিনিসটা আসলে কি?

এইটার সংজ্ঞায় যাওয়ার আগে আপনে খুব ভালো কইরাই বুঝতে পারেন যে এইটা মানুষ আর অন্যান্য প্রাণীদের মধ্যে একটা তফাৎ তৈরি করে। অন্যান্য প্রাণীদের আকাঙ্ক্ষাগুলা প্রায়ই অবজেকটিভ। অর্থাৎ এরা শুধু খিদা লাগলেই খাইতে চায়, বংশ বৃদ্ধির লাইগাই কেবল যৌনতায় লিপ্ত হয়, অন্যথায় না। কিন্তু মানুষের আকাঙ্ক্ষা অন্যরকম। তার বেশীরভাগ আকাঙ্ক্ষাই সাবজেকটিভ। মানুষ শুধু ব্যাসিক চাহিদা পূরণ কইরাই সন্তুষ্ট হইতে পারে না। আবার অনেক ক্ষেত্রে মানুষের ব্যাসিক চাহিদাগুলাও সাবজেকটিভ হইয়া যায়। এখন পর্যন্ত আমাদের জানামতে মানুষই হইল সবচাইতে উচু জাতের প্রাণী। এর কারণ তার একটা কক্মপ্লিকেটেড মাইন্ড আছে। এই মাইন্ড অনেক শক্তিশালী এবং একই সাথে বড়ই দুর্বল। এই মাইন্ড টিকে থাকে আকাঙ্ক্ষার উপর ভর কইরা। এইটার আকাঙ্ক্ষাগুলা বেশীর সময় পূরণ হয় না। হইলেও জুত মত হয় না। তাই এইটা সবসময় ক্ষুধার্ত, হিংস্র, আর অসুখী অবস্থায় থাকে। মানুষের মনে সবচাইতে অদ্ভুত দিক হইল সে বেশীরভাগ সময় তার রিচের বাইরের জিনিসগুলারে বেশী চায়, সেইটা হইতে পারে অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জিনিসও। এই চাওয়ার কারণে, আর কক্মপ্লিকেশনের কারণে সে চাইলেও অনেক কিছুই করতে পারে না। এই ব্যাপারটা পুরা মানবজাতিরে অসুখী কইরা তুলছে। আবার এই অসুখটাই মানুষরে বাঁচাইয়া রাখে। তবে চাইলে মানুষ এই অসুখ ছাড়াও বাঁচতে পারে। এইরকম ভাবে বাঁচাই হইল মানুষের উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন মাইন্ডের একটা দাবী। এইটা সে তখনই করতে পারে যখন নিজেরে নিজে চিনতে পারে, নিজের সবগুলা অজানা ডাইমেনশনরে রেকগনাইজ করতে পারে। এইটা করার জন্যে বা করানোর জন্য কিংবা দেখানোর জন্য তৈরি হয় টোকিওর মত সিনেমা।

এই সিনেমার তিনটা গল্পই ভিন্ন ভিন্ন ডাইমেনশনের। মেকিং খুবই ভালো। মুভির দ্বিতীয় গল্পটা এতই ভালো যে এইটা থাইকা উৎসাহিত হইয়া পরিচালক লিওস ক্যারক্স ২০১২ সালে ‘হলি মটরস’ নামে আরেকটা আসাধারন সিনেমা সৃষ্টি করছে। মুভিটার আইএমডিবির রেটিং ৭.১ । রটেন টমেটোতে ৭৫% ফ্রেশ।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২৩
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×