somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ইঞ্জিনিয়ার কবির আহমেদ মাধব
এটাই আমার একমত্র আইডি। আমার আর কোন আইডি নেই। আমার নাম,ছবি দিয়ে ফ্যাক কয়েকটা আইডি খোলা হয়েছে। সো সাবধান থাকুন। পারলে ওদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করুন। আমি করেছি,লাভ হয় নাই। ওদের যন্ত্রণায় কমেন্ট অপশনও বন্ধ রাখা হয়েছে ধন্যযোগ,সাথে থাকার জন্য।

‘লাল বাসে’র ছবি তুলেই ফরম্যাট হয়ে যাচ্ছে মোবাইল!

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১১:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘লাল বাসে’র ছবি তুলেই ফরম্যাট হয়ে যাচ্ছে মোবাইল!


অনেক জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে বাংলাদেশ সফরে আসছে টিম অস্ট্রেলিয়া। এমন খবর পেয়ে অফিস থেকে সংবাদ সংগ্রহের জন্য ছুটে গেলাম মিরপুর শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। মাঠে গিয়ে জানলাম বিসিবির মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস সাংবাদিক সম্মেলন করবেন বনানীতে। তাই সেখানে ছুটে গেলাম। ভীষণ খুশি আর অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট দলকে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতির কথা শুনে আবার যখন মিরপুর যাচ্ছিলাম তখন বৃষ্টির কল্যাণে মিরপুরের পিচঢালা রাস্তাটা পরিণত হয়েছে ইতালির ভেনিস নদীতে! একটু বৃষ্টি হলে যেখানে হাঁটু পানি জমে যায় সেখানে ভারি বর্ষণে জলজট আর যানজটের দুর্ভোগে যখন মানুষ নাকাল তখন দেখা গেলো একটা লাল বাস বীরদর্পে উল্টো পথে যাচ্ছে। অনেক চমৎকার দৃশ্য!

হাজার হাজার সাধারণ মানুষ ট্রাফিক জ্যামে বসে ইয়া নাফসি ইয়া নাফসি পাঠরত তখন মনে হয়েছিলো মহান সৃষ্টিকর্তা বুঝি তাদের দিকেই চোখ তুলে তাকিয়েছে! মনে হচ্ছে কোন বাধায় তাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না। কিন্তু একটু সামনে গিয়েই তারা পড়লো মহাবিপদে। এ যেন খাল কেটে কুমির আনার মত অবস্থা। চতুরমুখী ট্রাফিক জ্যাম লাগিয়ে বোকার মত দাঁড়িয়ে রয়েছে তারা।

দুকূল হারানো এই লাল বাস যাত্রীদের কষ্ট দেখে কিছু সাধারণ মানুষ ছবি তুলতে লাগলো। হয়তো তারা ভেবেছে তাদের এই চরম দুঃখের দিনে তাদের পাশে সবার দাঁড়ানো উচিত। তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়ার জন্য যে যার মত ছবি তুলতে লাগলো। কিন্তু বিধিবাম! ততোক্ষণে বিষয়টি টের পেয়ে গেছে লাল বাসের যাত্রীরা। তাদেরও তো একটা ইজ্জত আছে! না হয় উল্টা পথে বাস নিয়ে এই মুহরতে কষ্টের সাগরের (যদিও বালা যায় নদী) মাঝে আছে তাই বলে ছবি তুলবে!

তাই সবাই নিজেদের মানসম্মান বাঁচাতে তারুণ্যের শক্তি নিয়ে জাপিয়ে পড়লো সাধারণ মানুষদের ওপর। যাকে যেই ভাবে পারছে তার মোবাইল নিয়ে মুহূর্তে ফরম্যাট করে দিচ্ছে তারা। পথচারী থেকে শুরু করে বাসযাত্রী এমনকি রিকশাওয়ালার মোবাইল তারা নিজ দায়িত্বে ফরম্যাট করে দিতে লাগলো।

অন্যায় করলে শাস্তি তো পেতেই হবে। তাই তারা আমার ট্যাবটা নিজ দায়িত্বে নিয়ে নিলো। সাংবাদিক পরিচয় শুনে তো চার-পাঁচজন পারলে আমাকে একটু আদর করে দিতে চাচ্ছিলো। যদিও দয়ার বশবর্তী হয়ে অন্যদের মত আমার ট্যাবের মেমোরিও ফরম্যাট করে দিয়েছে। তাদের এমন আচরণে আমি মোটেই অবাক হয়নি। কারণ তারা তো প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গর্বিত শিক্ষার্থী। এভাবে ভুল পথে পরিচালিত হওয়ার এক প্রকার অধিকার তাদের আছে!

যদিও কিছুদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসগুলো মাঝে-মধ্যেই গাড়ি চলাচলের নিয়ম ভেঙে উল্টো পথে চলার ছবি ও প্রতিবেদন বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশের পর গত ২৫ জুলাই বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এক অভ্যন্তরীণ বৈঠকে কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো কর্তৃপক্ষ। ঘোষণা করা হয়েছিলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বাস উল্টো পথে চলাচল করলে ওই বাসের রুট বাতিল করা হবে। সেই সাথে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিলো, যদি কোনো বাস ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করেছে এমন অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে সেই অভিযুক্ত বাসের ছবি বা ভিডিওচিত্র যাচাই করে বাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। যদিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের এই সাবধানবাণীর পরদিনই উল্টো পথে চলেছে ‘চৈতালী’ বাস।

এর আগে উল্টো পথে গাড়ি না চালাতে গত ২০১৬ সালের মে মাসে রুল জারি করে উচ্চ আদালত। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কথাও উল্লেখ ছিল। কিন্তু প্রায়ই তা অমান্য করার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসের বিরুদ্ধে।

গত জুনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশাখী পরিবহনের একটি বাস উল্টো পথে চলতে গিয়ে রাজধানীর বিজয় সরণির কাছে একটি দুর্ঘটনা ঘটায়। এতে দুই মোটরসাইকেল আরোহী আহত হন। এই উল্টো পথে চলা নিয়ে ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে বেশ কয়েকবার।

তাই এবার নিজেদের রক্ষা করতেই তারা মিরপুর ১ এ এতো বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলো। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে উল্টো পথে যেতে নিষেধ করা হলেও সে নিষেধাজ্ঞা ভুলে উল্টো পথে চলছে তারা। তাদের এমন ছবি যদি আবারো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অথবা কোন সংবাদ মাধ্যমে চলে আসে তাহলে মহাবিপদেই পড়তে হবে।

এই বিশ্ব‌বিদ্যাল‌য়ের ছাত্র-শিক্ষকেরা ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতাসংগ্রাম, স্বৈরাচার দমন আন্দোলনসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অবদান রেখেছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু আজ সেই বিশ্ব‌বিদ্যা‌লয়ের ছে‌লেরা একটু সময় বাঁচাতে উল্টো প‌থে গি‌য়ে ঢাকা বিশ্ব‌বিদ্যালয়‌কে প্রশ্ন‌বিদ্ধ কর‌ছে প্রতিনিয়ত। ঢাকা বিশ্ব‌বিদ্যাল‌য় আপনাদের অন্যায় করতে শিখায়নি। তাই আপনাদের কাছে অনুরোধ করছি এই উল্টো প‌থে যাওয়ার সংস্কৃ‌তি বন্ধ ক‌রুণ। নিজেদের সম্মান অনেক ছোট করেছেন আর কত?

জলময় যানজট রাস্তা পাড়ি দিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে কার না ইচ্ছা করে কিন্তু তাই বলে অসংখ্য মানুষকে বিপদে ফেলে উল্টো পথে গাড়ি চালানো যে অপরাধ তা সাধারণ নিয়মে জানা সবার। এক তো অন্যায় তারপর সেই অন্যায়ের দোষ স্বীকার না করে অবলিলায় মানুষের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নষ্ট করা দুনিয়ার কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান করানো হয় না। কিন্তু দুঃখের এই বিষয় পুরো ঘটনাটি আজ ঘটিয়েছি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। অনেক মানুষের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ভরা মেমোরিকার্ড ফরম্যাট করে দিয়েছে তারা। অসহায় মানুষগুলো কি করবে বুঝতে না পারে যে যার মতো স্থান ত্যাগ করেছে। অনেকেই ভীত হয়ে বলেন, ‘ভাই কি করবো, এরাতো সব করতে পারে, আমি তো এদের কাছে কিছুই না’।

লেখকঃ মেজবা মিলন, স্পোর্টস সাংবাদিক
৪৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×