somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কল্পবলয়

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এক

পঁয়তাল্লিশ মিনিটের দীর্ঘ বিরক্তিকর লেকচার শেষ করে টিচার ক্লাস থেকে বের হতেই হাঁফ ছাড়ল ইশরা। ১২ টায় শুটিং আছে ওর। ঘড়ির কাটা এখন সাড়ে এগারোটা ছুঁই ছুঁই। হ্যান্ডব্যাগ থেকে মোবাইল বের করতে করতে সিড়ির দিকে এগোল ইশরা। সময়মত স্পটে পৌছুতে পারবে কিনা কে জানে! বিড়বিড় করতে করতে কল লিস্ট থেকে সাদিফের নাম্বার ডায়াল করলো।

‘হ্যালো! কই তুমি?’ ফোনটা ধরেই ব্যস্ত গলায় বলল ও।

‘এইতো ক্যান্টিনেই আছি। তুমি কই?’ পাল্টা প্রশ্ন করল সাদিফ।

‘আমি মেইন গেটের দিকে এগুচ্ছি। তুমি জলদি বাইক নিয়ে চলে আসো।’

‘যথা আজ্ঞা ম্যাডাম! আমি চলে আসছি!’

বাইকটা নিয়া ক্যাফেটেরিয়া থেকে বের হতে খানিকটা দেরী হয়ে গেল সাদিফের। গেইটের দিকে এগুতেই ও দেখতে পেল সাদা রঙের ড্রেস পরিহিতা এক রমনী বুকের উপর আড়াআআড়ি হাত রেখে বট গাছটার সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে। চোখগুলো জ্বলছে ওর, চুলগুলো বাতাসে হালকা উড়ছে। প্রচন্ড মেজাজ খারাপ করে রাখলেও উজ্জ্বল শ্যামলা বর্ণের মেয়েটাকে দারুণ নিষ্পাপ লাগছে দেখতে। ঘ্যাচ করে নিষ্পাপ সুন্দরীর সামনে ব্রেক কষল সাদিফ। হেলমেটটা ইশরার দিকে বাড়িয়ে দিতে দিতে বলল,

‘রেগে গেলে তোমাকে জল্লাদিনীর মত লাগে! ওহ! জল্লাদিনী বুঝলে না? জল্লাদের ফিমেল ভার্সন।’

কথাটা বলার পর ইশরার রাগে জ্বলজ্বল করা চোখ দেখে তাড়াতাড়ি করে কথাটা ঘুরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করল সাদিফ।

‘হয়েছে! হয়েছে! আর চোখ গরম করে তাকাতে হবে না। জলদি পিছনে চড়ে বসো। বারোটার মধ্যে তোমাকে স্পটে পৌঁছে দিতে না পারলে আমার চুলগুলো সব তোমার সম্পত্তি!’

‘তোমার চুল দিয়ে আমি করবটা কি!’

গোমড়ামুখে ঝাঝালো গলায় কথাটা বলতে বলতে বাইকে চড়ে বসলো ইশরা। সাদিফ সর্বোচ্চ গতিতে বাইক ছোটাল শুটিং স্পটের দিকে। ঠিক বারোটায় বিজ্ঞাপনের শুটিং আছে ইশরার।

দুই

‘ইশরাপু! ইশরাপু!’

যেন বহুদূর থেকে ডাকটা ভেসে আসছে। মাথাটা ঝিমঝিম করছে ইশরার। দুই হাতে মাথা চেপে ধরে সামনের দিকে তাকালো ও। ছোটবোন নুশরা দাড়িয়ে। হাত নাড়িয়ে বলছে তাকে।

‘ইশরাপু! মা বলেছে রুটি বেলতে, চা বানাতে।এরপর চাল ধুয়ে....’

‘আমি এসব জানি নুশরা!’

ওকে থামিয়ে দিল ইশরা।
নুশরা ওর আপন মায়ের পেটের বোন নয়। ইশরার মা মরে যাওয়ার পর বাবা আবার বিয়ে করেছিলেন। নতুন মা প্রথম প্রথম খুব ভালো ব্যবহার করলেও এখন তার আচরণ গতানুগতিক সতমায়ের মতোই হয়ে গেছে। বাবাটাও কেমন যেন হয়ে গেছে এখন। আগে ইশরাকে না নিয়ে খেতে বসত না বাবা। ওর চোখের পানি সহ্য করতে পারতোনা। আর এখন কেন যেন ইশরার ব্যাপারে একদম উদাসীন হয়ে গেছে। কোন খবরই নেয়না ওর। যেন ইশরার কোন অস্তিত্বই নেই এই বাড়িতে। একমাত্র ছোটবোনটার সাথেই কথা বলে ও। বলতে গেলে নুশরাই ওর কথা বলার একমাত্র সঙ্গী।
মা অসুস্থ। তাই সংসারের যাবতীয় কাজ ইশরাকেই করতে হয়।

কোমর পর্যন্ত লম্বা চুলগুলো খোপায় গুটিয়ে নিয়ে রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ালো ও। কেন যেন বুক চিড়ে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল ওর।

প্রায় দেড়ঘন্টা পর রান্নাঘর থেকে বের হবার সুযোগ পেল মিলল ইশরার। রান্নাবান্না সব শেষ করে নিজের ঘরে এসে পাঁচ মিনিট রেষ্ট নিলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই বেরুতে হবে ওকে। ক্লাস আছে। মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে কাপড় বদলে পুরোনো আমলের আয়নাটার সামনে এসে দাড়ালো। গায়ের রংটা একসময় শ্যামলা ছিলো। রোদে পুড়ে তামাটে হয়ে গেছে এখন। হবেই বা না কেন? প্রতিদিন এই কড়া রোদের মধ্যে প্রায় দুই ঘন্টা করে বাসের জন্যে দাড়িয়ে থাকতে হয় ওর। বাবাকে বলেছিল একটা ছাতা কিনে দিতে। দেয়নি বাবা। হয়ত দিতে পারেনি। বুক চিড়ে আবার একটা দীর্ঘশ্বাস বের হতে চাচ্ছিল। সেটাকে চেপে রেখে বাসা থেকে বের হলো ইশরা।

সাত স্তম্ভের একটা ব্রিজের পাদদেশে ইশরার বাড়ি। ব্রিজটা একটা হাইওয়ের সাথে সংযুক্ত। জায়গাটা একটু নিরিবিলি আর জনশূন্য বলে এখানে বাস থামতে চায় না। ব্রিজের উপর দাড়িয়ে চারপাশে তাকালো ইশরা। আশে পাশের প্রকৃতি এতই সুন্দর যে এর দিকে তাকালে ক্লান্তি দূর হয়ে যায় ইশরার। অথচ প্রতিদিনই দেখে সে। তারপরেও মনে হয় যে নতুন করে দেখছে । নদীর দুই পাশের বাড়িগুলো যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা ছবি। ঘিঞ্জি বাড়ি নয়, গাছপালার ফাঁকেফাঁকে দুচারটা চৌচালা ঘর। ঘাটে কোষা নৌকা। অদ্ভুত সুন্দর দৃশ্য। হাটতে হাটতে ব্রিজের অন্যপাশে গিয়ে দাড়ালো ও। হাইওয়েটা নিচের রাস্তা থেকে অনেক উচুতে। নিচ থেকে ব্রিজের উপরের দিকে তাকালে ছোটখাটো একটা পাহাড়ের মতই লাগে। খাড়া পাহাড়ের মত অংশটায় বেড়ে উঠেছে ছোট ছোট গুল্মজাতীয় গাছ। সেখানে কয়েকটা ধুতরা ফুলও ফুটে আছে অযত্নে। এছাড়াও বন্য আরো কি কি ফুল যেন আছে। ওগুলো ইশরাকে টানে না। ও এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ধুতরা ফুলগুলোর দিকে। এগুলোকে দেখলেই ওর মাথায় কয়েকটা লাইন ঘুরতে থাকে। 'হাজার বছর ধরে' উপন্যাসের লাইন -

‘গুনে গুনে চারটা ফুল হাতে নিলেন ছমিরন বিবি। ওগুলো মুখে পুরে ঘুমিয়ে পড়লেন চিরদিনের মত। দিঘির পাড়ের সবচেয়ে উঁচু কবরটা এখনো চোখে পড়ে।’

গাড়ির তীক্ষ্ণ শব্দে সৎবিত ফিরল ইশরার। ঘাড় ফিরিয়ে দেখল ভার্সিটি যাবার বাসটা দাড়িয়ে আছে । অবাক হলেও চুপচাপ বাসটায় উঠে পড়ল ও।

তিন

প্রবল স্পিডে বাইক চলছে। ইশরা সাদিফকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। বারোটা বাজার ঠিক দুই মিনিট আগে স্পটে এসে পৌছালো ওরা। মেকআপ রুমে গিয়ে বিজ্ঞাপন দৃশ্যের জন্য তৈরি হয়ে বের হল ইশরা।

‘লাইট! ক্যামেরা! একশন!’

বলে শুটিং শুরু করলেন ডিরেক্টর। অদূরে বসে সাদিফ দেখছিল ইশরাকে। নাহ! ওকে সাধারণ বেশভূষাতেই সুন্দর লাগে আপনমনেই ভাবল সাদিফ।

‘কৃষ্ণচূড়া গাছটা বেশি সুন্দর! তাই না?’ ইশরার গলা শুনে পিছন দিকে তাকালো সাদিফ।

‘শুটিং শেষ তোমার?’ পাল্টা প্রশ্ন করল ও।

মাথা ঝাকাল ইশরা। বলল, ‘আমার না গাছটায় চড়তে ইচ্ছা করছে! চড়ি আমি গাছটায়? লাল লাল কৃষ্ণচূড়ার সাথে ধবধবে সাদা ড্রেসে আমি। দারুণ মানাবে না, বলো? তুমি সুন্দর করে ছবি তুলে দিও। ফেসবুকে প্রোফাইল পিকচার দিব। ক্যাপশন হবে 'কৃষ্ণচূড়া গাছের ভূত!' নাহ! এটা না। ক্যাপশনটা হবে ‘কৃষ্ণচূড়া গাছের ভূতনী!’কি বলো?’

সাদিফের বড় বড় চোখ দেখে ফিক করে হেসে ফেলল ইশরা। বলল, ‘আরে বাবা! আমি তো মজা করছিলাম! কেউ কি এইভাবে গাছে উঠে? যদিও আমার সত্যি সত্যিই গাছে উঠতে ইচ্ছা করছে!’

‘হয়েছে! হয়েছে!’ এতক্ষণ পর কথা বলার ভাষা খুজে পেল সাদিফ। ‘এত উল্টাপাল্টা ইচ্ছা পোষণ করতে হবে না। আমাদের দেরী হচ্ছে - চলেন যাই!’

হেসে মাথা ঝাঁকিয়ে সায় দিল ইশরা।

চার

বাসটা যখন ভার্সিটি গেটে এসে থামে, ইশরা তখন দরদর করে ঘামতে থাকে। পরনের সূতি ওড়নাটা দিয়ে ঘাম মুছে ক্লাসের দিকে পা বাড়ায় ও। ইশরা কখনোই সাজগোজ করে না। সাধারণ কাজলটুকুও দেয় না চোখে। কারন বাসের প্রচন্ড গরমে কাজল গলে পেত্নীর মত দেখায় তাকে। সাদিফের সাথে কথা বলার প্রস্তুতি নিয়ে যেদিন এসেছিল, সেদিন ও কাজল দিয়েছিল। দিনটা ওর স্মৃতির পাতায় একদম স্পষ্ট হয়ে রয়েছে। কখনো ভুলবে না দিনটির কথা।

সাদিফ ওদের ডিপার্টমেন্টের সবচেয়ে সুদর্শন ছেলে। পড়াশোনায়ও বেশ ভালো। ডিপার্টমেন্টের বেশিরভাগ ছেলেমেয়েই ওর ফ্রেন্ড। হবেই বা না কেন? দেখতে সুন্দর আর পড়াশোনায় ভাল হলেও সাদিফ বেশ আন্তরিক। কোন অহংকার নেই। কিন্তু ইশরার ওর সাথেই কখনো কথা বলা হয়নি। আসলে ইশরা নিজেকে এক অদৃশ্য দেয়াল দিয়ে ঘিরে রেখেছে বলে কোন ছেলের সাথেই ওর বন্ধুত্ব হয় না। কিন্ত সাদিফের প্রতি এক অদ্ভুত ভালোলাগা অনুভূত হয় তার। সাদিফের সাথে বন্ধুত্ব করতে ইচ্ছে হয় খুব। তাই সেদিন বাসা থেকে বের হবার আগে মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিয়ে একটু সেজেগুজে বের হয়েছিল। ভার্সিটিতে গিয়ে দেখে সাদিফ এক দল ছেলেমেয়ের সাথে আড্ডা দিচ্ছে। ও এরকমই। সবসময় বন্ধুবান্ধব নিয়ে মেতে থাকে। কোনরকমে কাঁপতে কাঁপতে সাদিফের সামনে গিয়েছিল ইশরা।

কাঁপা কাঁপা গলায় বলেছিল, ‘সাদিফ! তোমার সাথে আমার একটু কথা ছিল।’

সাদিফ খুব স্বাভাবিকভাবেই জিজ্ঞেস করেছিল, ‘কি কথা? বল!’

ইশরা জবাব দেয়ার আগেই পাশ থেকে একজন বলে উঠল, ‘ইশরা! তুমি নিজে থেকে কথা বলতে এসেছ এখানে! ঘটনা কি বল তো? সূর্য কোন দিকে উঠলো?’

অপর একজন বলল, ‘আরে দেখ! দেখ! সেজেও এসেছিল বেচারী! মনে হয় প্রেমেটেমে পড়েছে। কার প্রেমে পড়েছো গো? সাদিফের?’

হাসির রোল পড়ে গেল এই কথার সাথে সাথে। কিন্ত ওদের বলা শেষ হয়নি তখনো।

আরেকজন বলে উঠল, ‘সেজে আসলে কি হবে? কাজল গলে যে ওকে পেত্নীর মত দেখাচ্ছে সেটা কি ও জানে?’

আর দাড়িয়ে থাকার সাহস পায়নি ইশরা। তীব্র হাসির রোল আর সাদিফের পিছুডাক উপেক্ষা করে দৌড়ে পালিয়ে এসেছিল ইশরা। আর কখনোই ওর সাথে কথা বলার চেষ্টা করে নি। ঘটনাটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে ক্লাসের দিকে এগোল ইশরা।

পাঁচ

বেশ কয়েকটি বিজ্ঞাপনচিত্রে মডেলিং করার পর পপুলারিটি বেড়ে গেছে ইশরার। এই মূহুর্তে সে তার বিশাল বড় ফ্ল্যাটের মেকআপ রুমে সন্ধ্যের পার্টির জন্যে তৈরি হচ্ছে। আর সাদিফ তখন সেই আলিসান বাড়ির মেকআপ রুমের সামনে দাড়িয়ে চিৎকার করে বলছিল, ‘ইশরা! আর কতক্ষণ লাগবে তোমার!’

ইশরা যখন তার গোল্ডেন কালারের পার্টি ড্রেসটা পরে বের হল, সাদিফ ওর পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষন করলো একবার। তারপর আক্ষেপ মিশানো কন্ঠে বলল, ‘আমি আমার সাদাসিধে ইশরাকে কবে ফিরে পাব? এই গ্ল্যামারাস ইশরাকে আমার ভাল লাগে না!’

ইশরা মনে মনে ভাবছে, ‘আমিও তো আমার আগের সাদিফকেই চাই। যে সাদিফ ধুপধাপ শব্দ না তুলে সিড়ি ভাংতে পারত না - শুধুমাত্র আমাকে চমকে দেয়ার জন্য চার তলার প্রতিটা সিড়ি নিঃশব্দে বেয়ে উঠত!’

সাদিফের হাতটা নিজের হাতে তুলে নিলো ইশরা। ওর চোখে চোখ রাখল। সম্মোহিত হয়ে একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে আছে ওরা।

ছয়

‘ইশরাপু! ইশরাপু! ইশরাপু!!!’

প্রতিদিনকার গতানুগতিক ডাকে ঘুমটা ভেঙে গেল ইশরার।

‘ইশরাপু! মা বলেছে.....’ মুখস্থ বয়ান দেয়া শুরু করতেই নুশরাকে থামিয়ে দিল ইশরা ।

‘প্লিজ নুশরা! আমাকে দশটা মিনিট একা থাকতে দাও!’

ধমক খেয়ে নুশরা রুম থেকে বের হয়ে যেতেই দুহাতে মাথা চেপে ধরল ইশরা ইসসসস! আজকের স্বপ্নটা এত্ত কেন সুন্দর ছিল? প্রতিদিনই ও স্বপ্ন দেখে। জীবনের অধরা স্বপ্নগুলোকে সে ঘুমিয়ে স্বপ্নের মাঝে দেখে। স্বপ্নগুলো এতই স্পষ্ট আর নিখুঁত যে যখন ও স্বপ্ন দেখে তখন মনেই হয়না যে ঘটনাগুলো বাস্তব নয়। অদ্ভুত এক কল্পবলয়ে আটকা পড়ে আছে ইশরা। আজকের স্বপ্নটা এতই মধুর ছিল যে ওর মনে হচ্ছিল - এই স্বপ্নের যদি কোন শেষ না থাকত! কল্পবলয়ের বাইরের এই একঘেয়ে, কষ্টের জীবনটা আর ভাল লাগে না ওর। কিন্ত এটাই তো বাস্তব। বাস্তবতাকে মেনে নেয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই ইশরার কাছে। চাইলেও ও স্থায়ীভাবে কল্পবলয়ে আটকে থাকতে পারবে না। প্রকৃতি তাকে সেটা করতে দেবে না। একটা কথা মনে পড়ল ওর।

Everything is never as it seems, You need to believe.

আরো কিছুক্ষণ ঝিম মেরে বসে থেকে বিছানা থেকে নামল ইশরা। অনেক কাজ পড়ে আছে।

রান্নাবান্না শেষ করে প্রতিদিনের মতই ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হল ও। দুই ঘন্টা জার্নি শেষে বাস থেকে নেমে ক্যাম্পাসে ঢুকতেই শহীদ মিনারের কাছ কে যেন চিৎকার দিয়ে বলে উঠল, ‘ইশরা! সাদিফতো এইদিকে! ওর সাথে কথা বলবে না? তোমার কি যেন গোপন কথা আছে ওর সাথে?’

একদল ছেলেমেয়ের প্রত্যেকে হেসে ফেলল এই কথা শুনে। ওই দিনের পর থেকে প্রায়ই এইসব কথা শুনতে হয় ইশরাকে। সবসময় মুখ বুজে সহ্য করে গেছে ও। আজকে আর পারল না। মুখে ওড়না চেপে ধরে কাঁদতে কাঁদতে ক্যাম্পাস থেকে দৌড়ে বের হল ও। কি করবে ডিসিশন নিয়ে ফেলেছে।

ব্রিজটার উপরে বাসটা এসে থামতেই ত্রস্তপায়ে নেমে পড়ল ও। ব্রিজ আর হাইওয়ের সংযোগস্থলে এসে দাড়ালো। বন্য ফুলের সাথে ধুতরাও ফুটে আছে সেখানে। হাত বাড়িয়ে গুনে গুনে চারটা ধুতরা ফুল তুলে নিল ও। ধুলোবালি আর দূষণের শহুরে আবহে জন্ম নেয়া এইসব ধুতুরার বীজ খেলে মানুষ নাকি মরে না, সব ভেজালের এই আমলে ধুতুরারও সেই বুনো তেজ আর নেই- হৃততেজ এই ধুতুরা বড়জোড় ঘুম পাড়িয়ে রাখতে পারে- দীর্ঘ আর গভীর ঘুম। 'হাজার বছর ধরে' উপন্যাসটা ক্লাসে পড়ানোর সময় স্যার কথায় কথায় এরকম কিছু একটা বলেছিলেন, মনে আছে ইশরার।

ও আচ্ছা, এখন তুমি তাহলে এভাবে লিখতে চাচ্ছঃ
ইশরা তো ঘুমাতেই চায়। যে ঘুম ওকে ওর কল্পবলয়ে আটকে রাখবে। যে কল্প বলয়ে ওর সব অধরা স্বপ্ন পূরণ হবে। যে কল্পবলয়ে সে অনন্ত সুখের জীবন খুঁজে পাবে।

বাসায় এসে চুপিচুপি নিজের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল ইশরা। বিছানায় বসে চারটা ধুতরা ফুলই মুখে পুরে নিল। ঘর অন্ধকার করে শুয়ে পড়লো ও। দীর্ঘস্থায়ী কল্পবলয়ে প্রবেশ করার আকাঙ্খা নিয়ে আঁখি মুদল ইশরা। মিষ্টি একটা হাসি ঠোঁটে নিয়ে চিরদিনের মত ঘুমিয়ে পড়ল ও। ওর অধরা স্বপ্নপূরণের পথে যাত্রা শুরু করল। তাতে ব্যাঘাত ঘটানোর আর কোন উপায় নেই কারো কাছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:০৩
২৩টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×