'কোথাও কেউ নেই' উপন্যাস একটি কালজয়ী উপন্যাসের তালিকায় স্হান করে নিয়েছে, এতে কোন সন্দেহ নেই। এই উপন্যাসের নাট্যরূপের একটি নাট্য চরিত্রকে কেন্দ্র করে এদেশে যে ঘটনার জন্ম হয়েছিল তা পৃথিবীর আর কোন দেশে হয়েছিল কিনা আমার জানা নেই। লেখক এবং পরিচালক একটি এপিসোডের কাহিনি পরিবর্তন না করার জন্য ওই এপিসোড প্রদর্শনের জন্য বাড়ি থেকে পালিয়ে থাকতে হয়েছিল। নিরাপত্তা ও হামলার আশঙ্কায় বাড়ি ঘেরাও করে রেখেছিল পুলিশ। তারপরেও বাড়িতে ককটেল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। উপন্যাসের নাট্যরুপের চরিত্রটির নাম ছিল 'বাকের ভাই' এই বাকের ভাইয়ের ফাঁসি ঠেকাতে সারাদেশে ঝড় উঠেছিল, দেশের জেলা, উপজেলায়, পাড়া মহল্লায় ফাঁসি ঠেকাতে কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সপ্তাহব্যাপী মিছিল, মিটিং, আন্দোলন এমনকি দেশের কোথাও কোথাও হরতাল অবরোধ দেয়া হয়েছিল। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে লেখককে কাহিনি পরিবর্তনের জন্য আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছিল। কাহিনি পরিবর্তন করা হয়নি, নাটক তার নিয়মেই প্রদর্শিত হলো বাংলাদেশের একমাত্র জাতীয় টেলিভিশনে। রাগে, ক্ষোভে, সেই রাতে কত ভক্তরা কত নাশকতামুলক কাজ করলো, কত যে টেলিভিশন ভাঙলো তার হিসেব আমার জানা নেই। যার কথা বলছি নিশ্চই বুঝে গেছেন পাঠকেরা। হুমায়ুন আহমেদ। তার লেখনি পাঠককে এতই সম্মোহিত করতে পারে যে তা সত্যিই বিস্ময়কর। তার অমর সৃষ্টি হিমু এবং মিসির আলী পাঠককে এতোটাই সম্মোহিত করেছে যে দেশে এবং দেশের অসংখ্য হিমুকে খুঁজে পাবেন আপনারা। কলকতার বইমেলায় হুমায়ুন আহমেদ একবার গিয়ে একটা স্টলে বসে আছেন এই সময় একটি ছেলে এসে তার পা ছুঁয়ে সালাম করে বললো 'আমি আপনার হিমু' লেখক বললেন 'আমার হিমু হলুদ পাঞ্জাবি পরে ঠিক আছে কিন্তু তার পায়ে কোন স্যান্ডেল থাকে না দেখি তোমার পা?' ছেলেটি তার স্যান্ডেলহীন নগ্ন পা দেখালো। হুমায়ুন আহমেদের লেখা বাংলা গদ্য সাহিত্যকে যে একটি আলাদা 'ফরম্যাট' প্রদান করেছে তা আমরা যারা গদ্য সাহিত্য নিয়ে একটু হলেও নাড়াচাড়া করি তারা নিশ্চই এব্যাপারটি ভালো ভাবেই উপলব্ধি করি। তার লেখার স্বীকৃতি স্বরূপ পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার, সম্মাননামা। কিন্তু সবচেয়ে বড় অর্জনটা কিন্তু এখনো আমরা পাইনি। দেশ বিদেশের অনলাইন সংবাদমাধ্যম, ব্লগগুলো 'নোবেল ফর হুমায়ুন আহমেদ' শিরোনামে ব্যাপক ক্যাম্পেইন শুরু করেছেন। যারা সাহিত্যে নোবেল পেয়েছেন তাদের নোবেল প্রাপ্তি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায় এই রকম যে সাহিত্যিকদের সাহিত্য বিশ্লেষন করার জন্য সেই লেখকের দেশের সর্বোচ্চ সাহিত্য একাডেমি নোবেল কমিটিতে কয়েকটি লেখাটি প্রেরন করে থাকে। কিন্তু আমাদের দেশের বাংলা একাডেমি কখনোই এ ধরনের উদ্যোগ নেয় নি। জীবিত থাকাকালিন কোন ব্যক্তির মুল্যায়ন আমরা বুঝতে পারিনা কিন্তু মৃত্যুর পর তার গুরুত্ব ফুলের সৌরভের মত ছড়াতে থাকে। এদেশে একবার বইমেলার স্টলে বসে ভারতীয় লেখক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় একটি মন্তব্য করেছিলেন 'শুধুমাত্র লিখেই যে জীবিকা নির্বাহ করা যায় তা হুমায়ুন আহমেদ কে না দেখলে বিশ্বাস করা সম্ভব হত না'। আসলেই তাই, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনা ছেড়ে দিয়ে শুধুমাত্র লেখালেখি করেই নাম, যশ, খ্যাতি, প্রতিপত্তি সবই অর্জন করেছেন হুমায়ুন আহমেদ। তার লেখার এমনই কাটতি যে, প্রকাশকেরা নতুন গাড়ি চালিয়ে এসে গাড়ির চাবি লেখকের হাতে দিয়ে অগ্রিম বুকিং দিয়ে যান। বইমেলায় একটি উপন্যাস প্রকাশিত হলে সেটার ২০ বারেরও অধিক পুনঃমুদ্রন করতে হয়। এমন লেখক কেন নোবেল পাবেনা? হুমায়ুন আহমেদের লেখা শুধু বাংলাতেই মুদ্রন নয় বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় মুদ্রন হচ্ছে। নন্দিত নরকে, এইসব দিনরাত্রী, কোথাও কেউ নেই, নি, শঙ্খনীল কারাগার, জোসনা ও জননীর গল্প, অয়োময়, জীবনকৃষ্ণ মেমোরিয়াল হাইস্কুল, জনম জনম, নক্ষত্রের রাত এর মত উপন্যাস গুলো যারা পাঠ করেছেন তার রেশ কাটতে নিশ্চই সময় লেখেছে এটা হলফ করে বলতে পারি। হুমায়ুন আহমেদ বাংলাদেশের গর্ব যার মর্ম আমাদের এখনই বুঝতে হবে। আমাদের নিজ নিজ অবস্হান থেকে কণ্ঠ উঠিয়ে বলতে হবে নোবেল ফর হুমায়ুন আহমেদ।
আলোচিত ব্লগ
আমি আর এমন কে

যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন
২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন
রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন
চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন
ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।