লাবনির সাথে জনির পরিচয় বাংলাদেশের কোন এক প্রসিদ্ধ বাংলা ব্লগের মাধ্যমে। জনি প্রথম এই ব্লগে আসে। সে আসার ঠিক ৩ মাস পর ব্লগে আসে লাবনি। ভদ্র, সদালাপী, ক্রিয়েটিভ, আর সব থেকে বড় ব্যপার জনি ব্লগ এ খুবই জনপ্রিয়। সবাই তাকে এক নামে চেনে। যে কোন অনুষ্ঠানে জনি এর ডাক পড়ে সবার আগে। আলোচনার মধ্যমনি জনি। অন্যদিকে লাবনি ব্লগ এ প্রথম আসার পর থেকেই আস্তে আস্তে সবার মন জয় করে নিতে থাকে। লাবনি একটু রাগী হলেও ব্লগের সবাইকে সারাদিন হাসাতেই ব্যস্ত থাকে। মানুষকে সহজে আপন করে নেয়ার একটা দক্ষতা আছে তার মধ্যে। আর সে সবসময় হাসির পোস্ট দিতে থাকে। আবার মাঝে মাঝে সামাজিক অসঙ্গতি নিয়েও তার পোস্ট আসতে থাকে। ব্লগের সবাই লাবনি কে পছন্দ করেন কারণ সিনিয়র ব্লগারদের খুব শ্রদ্ধা করে সে। আর এতে ব্লগে সবসময় একটা খোশ মেজাজ লক্ষ করা যায়।
লাবনি প্রথম জনি এর ব্লগ এ কমেন্ট করেছিল তাও প্রায় বছর খানেক আগে। জনি সেই পোস্ট এ তার মাকে নিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিল। সেই পোস্ট এ প্রকাশ পেয়েছিল মাকে নিয়ে তার পরিকল্পনার কথা, ভালবাসার কথা, সুখের কথা, আর খানিকটা কান্না মেশানো কিছু কথা যা জনি এর জীবনে ওতপ্রতভাবে জড়িত। বলাই বাহুল্য সেই লেখা পড়ে ব্লগার ভাই বোন দের চোখ ভিজে গিয়েছিল। সবার মত লাবনির ও খুব ভাল লেগেছিল পোস্ট টা। সেই লেখা পড়ে তার চোখের পানি সামলাতে খুব কষ্ট হচ্ছিল। তাই কমেন্ট এ সে তা জানিয়েছিল জনিকে। জনিও বেশ অবাক হয়ে তার জবাব দিয়েছিল। এর কিছুদিন পর লাবনি একটা পোস্ট দিয়েছিল আর সেখানে সে তার জীবনের একান্ত ব্যক্তিগত কিছু কথা প্রকাশ করেছিল। লেখায় স্থান পেয়েছিল লাবনির নিসংতার কথা, মা হাড়ানোর কথা, তার বাবার সন্তান্দের প্রতি উদাসীনতার কথা, অবহেলার কথা। যা ছিল খুবই করুণ কাহিনি।
আর সে এই লেখাটি উৎসর্গ করেছিল জনিকে। ব্যস!! এভাবে করেই তাদের ব্লগ এর মাধ্যমে যোগাযোগ বাড়তে থাকে। এমন একটা সময় আসে যখন দেখা যায় লাবনি কমেন্ট করেছে আর তার ঠিক পরের কমেন্টটাই জনির। এটা আবার উল্টা টাও হয় মাঝে মাঝে। ২ জনের মতের মিল সবখানেই দেখা যায়। এটা বেশ অবাক করে তোলে ব্লগের অন্য সবাইকে। এর মাঝে একদিন ব্লগ এ বার্তা পায় জনি। খুলে দেখে লাবনি দিয়েছে। একটু যেন আশ্চর্য কিন্তু পুলকিত হয়ে যায় জনি। লাবনি তার সাথে দেখা করতে চায়, তার সম্পর্ক এ আরো জানতে চায় সে। জনি যেন বিশ্বাসই করতে পারে না ব্যপারটা। সে তাই হা বা না কিছু বলে না। সে শুধু লাবনি এর কাছ থেকে ফেইসবুক আই ডি টা চায়। লাবনি চিঠিটা পেয়েই তার আই ডি টা জনি কে দিয়ে দেয়। এই ঘটনার প্রায় ২ সপ্তাহ পর জনি তার ফেইসবুক ওপেন করে একটা ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পায়। জনির বুঝতে অসুবিধা হয় না যে কে এটা দিয়েছে।
তাই সে দেরি না করে তার ফ্রেন্ড লিস্ট এ অ্যাড করে নেয়। আর এভাবে করেই তাদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়তে থাকে। আর এ ব্যাপারটা তারা গোপন রাখে ব্লগের অন্যদের কাছে। কারণ এতে ঝামেলা হতে পারে তাই লাবনি কিছু জানাতে কাউকে নিষেধ করে। একে অপরকে যে তারা ভালবাসতে শুরু করে এটা ২ জনই ভাল মত উপলব্ধি করতে থাকে। লাবনি ৫ বছর এর ছোট জনি এর থেকে। কিন্তু তারপর ও ২ জনের রিলেশন এতটাই মজবুত হয়ে যায় যে লাবনি তুমি করে ডাকতে থাকে তাকে। জনি ও এতে মাইন্ড করে না। কারণ সে ততদিনে ভালবেসে ফেলেছে লাবনিকে।
এ ভাবে যখন তাদের রিলেশন চলছিল তখনই দেখা করার সিদ্ধান্ত নেয় জনি। লাবনিকে জানাতেই সে রাজি হয়ে যায়। কোন এক কুয়াশা মাখা বিকেলে তারা দেখা করে। আর সেদিনই লাবনিকে জনি তার মনের কথা জানায়। লাবনি কিছু সময় চায় জনির কাছে। ঔদিন আর তেমন কথা হয় নি। দিন যত যেতে থাকে ততই যেম ভাবনায় পড়ে যায় জনি। কারণ লাবনির সাথে যোগাযোগ হচ্ছে না তার। গত ১ সপ্তাহ ধরে তার কোন খবর নেই। ঠিক ১০ দিন এর মাথায় জনির কাছে ফেইসবুকে একটা চিঠি আসে। জনি খুলে দেখে লাবনি দিয়েছে তাকে। আর তাতে লাবনি তার মোবাইল নম্বরটা দিয়েছে। আর বলেছে নম্বরটা পাবার পর যেন জনি তাকে ফোন করে। জনি সাথে সাথে ফোন করে সেই নম্বর এ।
একটা রিং হওয়ার সাথে সাথে ওপাশ থেকে ফোন রিসিভ করার শব্দ পায় জনি। হেলো বলতেই ওপাশ থেকে লাবনির কন্ঠ শোনা যায়। কিছু বলার ভাষা যেন ২ জনই হাড়িয়ে ফেলে। জনি শুধু লাবনির নিঃশাস এওর অবিরাম শব্দ শুনতে পায়। পরে জনি সেই নিরবতা ভাঙ্গে। যেই কথা শোনার জন্য জনির আগ্রহ বাড়তে থাকে সেটা লাবনি জানায় না। কথা যখন প্রায় শেষের দিকে তখন লাবনি বুঝতে পারে জনি ছটফট করছে কিছু একটা শোনার জন্য। তাই সে জানায় সেই কাংখিত কথাটা। জনি কে সে ভালবাসে। আর এই ভালবাসাটা জন্ম হয়েছে জনির সেই মা নিয়ে লেখাটা পড়ে।
আর তখন থেকেই শুরু হয় তাদের নতুন জীবনের গল্প। দুইজনের এই ভালবাসার কথা এখনও ব্লগের অনেকেই জানেন না। তবে জনির কিছু ক্লোজ় ব্লগ বন্ধু আছেন তারাই শুধু জানেন বিষয়টা।
বিঃদ্রঃ গল্পের সব চরিত্র কাল্পনিক। বাস্তবতার সাথে এর কোন মিল নেই।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



