somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মাহবু১৫৪
জীবনে সহজেই কোন কিছু পাবার আশা করাটা বোকামী। অনেক ঘাত প্রতিঘাত পার হয়েই আসতে হয় কাংক্ষিত লক্ষে। এই পথ এত সোজা নয়। অনেক ভুল ভ্রান্তি আছে সেই পথ চলায়। হয়তো আরো অনেক কোথিন হবে সামনের পথ টুকু। তারপর ও হার মেনে নেয়ার পক্ষে আমি নই। জয়ী যে আমাকে হতেই হবে।

আমার পাড়াত বন্ধু “ত” এবং .....

৩০ শে এপ্রিল, ২০১২ রাত ১:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বেশ কয়েকদিন ধরে ‘ত” এর কথা খুব মনে পরছে। সেই ছোটবেলা থেকে আমরা যেই পাড়ায় থাকতাম সেই একই পাড়ায় তারাও থাকতো। আবার আব্বা আর "ত" এর আব্বা বলা যায় একসাথেই জায়গা কিনেছিলেন সেখানে। প্রায় ২০ বছরের মত "ত" এর বাবা ছিলেন সৌদিতে। পরে বাংলাদেশে চলে আসেন এবং এখানেই স্থায়ীভাবে থাকা শুরু করেন। ছোটবেলা থেকে তাই "ত" এর সাথে আমার খুব খাতির ছিল। যদিও ওর সাথে আমার ছিল বিস্তর ফাঁরাক। তাই কোথাও একটা বাধা অনুভব করতাম সবসময়ই।

"ত" ছোটবেলা থেকেই ছিল খুব দুষ্ট, নারী ঘেষা (সময়ের সাথে সাথে), কথা দিয়ে মানুষকে ভুলিয়ে ফেলা, পোংটা, গান বাজনা, মাস্তি প্রিয়, ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু ওর ছোট ভাইটি ছিল ওর তুলনায় একেবারেই আলাদা। “ত” আমার এক ক্লাস বড় হলেও আমরা সবাই একসাথে খেলাধুলা করতাম, আড্ডা মারতাম, এমনকি মাঝে মাঝে দলবলে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াতাম।
আমার এইচ এস সি পরীক্ষার পর তার বাবা আমার সাথে "ত" কেও চাইলো আমার সাথে ভর্তি করাতে স্নাতকে। কারণ "ত" খুব অমনোযোগী পড়াশোনায়। একদমই করতে চায় না। আমার ১ বছরের সিনিয়র হয়েও কি কারণে জানি সে ১ বছর গ্যাপ দিল।

আর তাই তার বাবা আমার সাথে তাকে ভর্তি করালো। পাড়ায় আমি শান্ত, ভদ্র, মনযোগী ছেলে হিসেবে পরিচিত ছিলাম সবসময়। আমার সাথে "ত" থাকলে হয়তো সে একটু আমাকে ফলো করে চলবে এই ধারনা থেকে তার বাবা আমাকে ওর দায়দায়ীত্ব আমার উপর দিয়েছিলেন। ইউনিভার্সিটি জীবনের একবারে শুরু থেকেই সে আমাদের ব্যাচের প্রাণ হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল। অন্যান্য ব্যাচের ছাত্র / ছাত্রীরাও তাকে বেশ সমাদর করতো। মানুষকে বিভিন্নভাবে তেল মেরে তার সমীহ পাওয়ার এক অপরূপ ক্ষমতা ছিল তার।

সাধারণত আমি এসব পছন্দ করতাম না। আমি সবসময় ওর বিপরীত অবস্থানে থাকতাম। কোনভাবেই তাকে বুঝিয়ে ঠিক পথে আনা যেত না। যা ওর বাবা মা রা চাইতেন। "ত" অনেক রাতে বাসায় ফিরতো। বাবা মা কিছু বললে সে তার গ্রাহ্য করতো না। মাঝে মাঝে আমাকে ফোন দিয়ে জানতে চাইতো "ত" কোথায় আছে। আমি সদুত্তর দিতে পারতাম না।

আমাদের ব্যাচের যেহেতু সে প্রাণ সেহেতু সে এই সুযোগটা কাজে লাগিয়েছিল। প্রথম থেকেই সে আমাকে নিয়ে ১১ জনের একটা বিশাল গ্রুপ তৈরি করে ফেলেছিল; কোনরকম কিছু না ভেবেই। আমি এটার প্রতিবাদ করেছিলাম। কিন্তু কোন লাভ হয় নি। এই ১১ জনের গ্রপটা বেশ পরিচিত ছিল সবার কাছে। আড়ালে অনেকে অনেক কথা বলতো। সিনিয়র ব্যাচের কাছে আমরা ছিলাম চক্ষুশুল।

১১ জনের গ্রপ করা হলেও কিছুদিনের মধ্যেই টের পেলাম এই বিশাল গ্রপ থেকে ২/৩ টা ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপ তৈরি হয়েছে। অনেকের সাথে মতের মিল হচ্ছে না, কিংবা আরো অনেক সমস্যার কারণে এই প্রব্লেমটা হচ্ছে। এই ১১ জনের গ্রুপে ৩ / ৪ জন মেয়েও ছিল। "ত" এর সাথে সবার বেশ অন্তরংতা ছিল। তবে ছেলেদের কেউ কেউ তাকে দেখতে পারতো না তার অতিরিক্ত হুজুর হুজুরের জন্য।

আমাদের গ্রুপেরই এক মেয়ের সাথে তার বেশ অন্ত্রঙ্গতা চরম আকার ধারণ করে। যদিও মেয়েটা আমাদের কাছে খুব বেশি সুবিধার মনে হয় নি। আমি অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেও তাকে ঠিক পথে আনতে পারে নি। অনেকেই কানাঘুষা করা শুরু করেছিলো যে "ত" এর সাথে সেই মেয়ের রিলেশন নিয়ে। "ত" কে সরাসরি জিজ্ঞেস করেছিলাম কিছু আছে কি না তাদের মধ্যে কিন্তু সে বিষয়টা সেভাবে না বলে এড়িয়ে যেত। ঘন্টার পর ঘন্টা তাদের ফোন বিজি থাকতো। মাঝে মাঝে তাদের ২ জনকে একসাথে দেখা যেত।

এই যখন অবস্থা তখন আমার ধৈর্য্যচুত্যি ঘটলো। কি করা যায় তাই চিন্তা করতে লাগলাম। কারণ "ত" এর সাথে ভালমত মেশার পর ওর সম্পর্কে আমি কোন ভাল কিছু পায় নি। বরং দিন কে দিন তার অধঃপতন হচ্ছিল। ওর বাবা মা যেই পথ থেকে ফেরাতে চেয়েছিলেন তাকে সেটা আর হয় নি। আমি তখন এক বিকেলে "ত" এর বাসায় যেয়ে তার বাবা মা কে সব ঘটনা খুলে বললাম। আর তাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছিলাম কারণ আমার পক্ষে "ত" কে কন্ট্রোলে রাখা আসলেই সম্ভব ছিল না। সব কথা তাদের কাছে বলে আমি বিদায় নিয়েছিলাম।

এর পর থেকেই "ত" এর সাথে আমি সবরকম যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিলাম। যদিও সে বেশ কয়েকবার আমার সাথে কথা বলে, কিংবা দেখা করতে চেয়েছিল কিন্তু আমি তাকে সেই সুযোগ দেই নি। এরই মধ্যে ১১ জনের আমাদের সেই গ্রুপ ভেঙ্গে ২/৩ টা আলাদা গ্রুপ হয়ে গিয়েছিল। অনেকে ইউনিভার্সিটি ছেড়ে দিয়েছিল ১ বছর কিংবা ২ বছরের মাথায়ই। আর আমি গ্রুপ ভঙ্গে কিছুদিন একা একা চলতে লাগলাম।

"ত" আমার জুনিয়র হয়ে গিয়েছিল একটা পরীক্ষায় নকল করে। নকল ধরেছিলেন আমাদের বিভাগীয় হেড। পরে "ত" কে উনি আমাদের এক সেমিষ্টার নিচে নামিয়ে দিয়েছিলেন।
এখনও তার সাথে আমার কোন কথা হয় না। "ত" হয়তো আগের মতই আছে। এখনও সে বিয়ে করে নি। দেশ থেকে চলে আসার সময় ভেবেছিলাম তার সাথে শেষ কথা বলে আসবো। কিন্তু পরে চিন্তা করে দেখলাম যে দরকার নাই।


আর এভাবে করেই হয়ত কেটে যাবে বাকিটা জীবন।
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×