বেশ কয়েকদিন ধরে ‘ত” এর কথা খুব মনে পরছে। সেই ছোটবেলা থেকে আমরা যেই পাড়ায় থাকতাম সেই একই পাড়ায় তারাও থাকতো। আবার আব্বা আর "ত" এর আব্বা বলা যায় একসাথেই জায়গা কিনেছিলেন সেখানে। প্রায় ২০ বছরের মত "ত" এর বাবা ছিলেন সৌদিতে। পরে বাংলাদেশে চলে আসেন এবং এখানেই স্থায়ীভাবে থাকা শুরু করেন। ছোটবেলা থেকে তাই "ত" এর সাথে আমার খুব খাতির ছিল। যদিও ওর সাথে আমার ছিল বিস্তর ফাঁরাক। তাই কোথাও একটা বাধা অনুভব করতাম সবসময়ই।
"ত" ছোটবেলা থেকেই ছিল খুব দুষ্ট, নারী ঘেষা (সময়ের সাথে সাথে), কথা দিয়ে মানুষকে ভুলিয়ে ফেলা, পোংটা, গান বাজনা, মাস্তি প্রিয়, ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু ওর ছোট ভাইটি ছিল ওর তুলনায় একেবারেই আলাদা। “ত” আমার এক ক্লাস বড় হলেও আমরা সবাই একসাথে খেলাধুলা করতাম, আড্ডা মারতাম, এমনকি মাঝে মাঝে দলবলে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াতাম।
আমার এইচ এস সি পরীক্ষার পর তার বাবা আমার সাথে "ত" কেও চাইলো আমার সাথে ভর্তি করাতে স্নাতকে। কারণ "ত" খুব অমনোযোগী পড়াশোনায়। একদমই করতে চায় না। আমার ১ বছরের সিনিয়র হয়েও কি কারণে জানি সে ১ বছর গ্যাপ দিল।
আর তাই তার বাবা আমার সাথে তাকে ভর্তি করালো। পাড়ায় আমি শান্ত, ভদ্র, মনযোগী ছেলে হিসেবে পরিচিত ছিলাম সবসময়। আমার সাথে "ত" থাকলে হয়তো সে একটু আমাকে ফলো করে চলবে এই ধারনা থেকে তার বাবা আমাকে ওর দায়দায়ীত্ব আমার উপর দিয়েছিলেন। ইউনিভার্সিটি জীবনের একবারে শুরু থেকেই সে আমাদের ব্যাচের প্রাণ হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল। অন্যান্য ব্যাচের ছাত্র / ছাত্রীরাও তাকে বেশ সমাদর করতো। মানুষকে বিভিন্নভাবে তেল মেরে তার সমীহ পাওয়ার এক অপরূপ ক্ষমতা ছিল তার।
সাধারণত আমি এসব পছন্দ করতাম না। আমি সবসময় ওর বিপরীত অবস্থানে থাকতাম। কোনভাবেই তাকে বুঝিয়ে ঠিক পথে আনা যেত না। যা ওর বাবা মা রা চাইতেন। "ত" অনেক রাতে বাসায় ফিরতো। বাবা মা কিছু বললে সে তার গ্রাহ্য করতো না। মাঝে মাঝে আমাকে ফোন দিয়ে জানতে চাইতো "ত" কোথায় আছে। আমি সদুত্তর দিতে পারতাম না।
আমাদের ব্যাচের যেহেতু সে প্রাণ সেহেতু সে এই সুযোগটা কাজে লাগিয়েছিল। প্রথম থেকেই সে আমাকে নিয়ে ১১ জনের একটা বিশাল গ্রুপ তৈরি করে ফেলেছিল; কোনরকম কিছু না ভেবেই। আমি এটার প্রতিবাদ করেছিলাম। কিন্তু কোন লাভ হয় নি। এই ১১ জনের গ্রপটা বেশ পরিচিত ছিল সবার কাছে। আড়ালে অনেকে অনেক কথা বলতো। সিনিয়র ব্যাচের কাছে আমরা ছিলাম চক্ষুশুল।
১১ জনের গ্রপ করা হলেও কিছুদিনের মধ্যেই টের পেলাম এই বিশাল গ্রপ থেকে ২/৩ টা ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপ তৈরি হয়েছে। অনেকের সাথে মতের মিল হচ্ছে না, কিংবা আরো অনেক সমস্যার কারণে এই প্রব্লেমটা হচ্ছে। এই ১১ জনের গ্রুপে ৩ / ৪ জন মেয়েও ছিল। "ত" এর সাথে সবার বেশ অন্তরংতা ছিল। তবে ছেলেদের কেউ কেউ তাকে দেখতে পারতো না তার অতিরিক্ত হুজুর হুজুরের জন্য।
আমাদের গ্রুপেরই এক মেয়ের সাথে তার বেশ অন্ত্রঙ্গতা চরম আকার ধারণ করে। যদিও মেয়েটা আমাদের কাছে খুব বেশি সুবিধার মনে হয় নি। আমি অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেও তাকে ঠিক পথে আনতে পারে নি। অনেকেই কানাঘুষা করা শুরু করেছিলো যে "ত" এর সাথে সেই মেয়ের রিলেশন নিয়ে। "ত" কে সরাসরি জিজ্ঞেস করেছিলাম কিছু আছে কি না তাদের মধ্যে কিন্তু সে বিষয়টা সেভাবে না বলে এড়িয়ে যেত। ঘন্টার পর ঘন্টা তাদের ফোন বিজি থাকতো। মাঝে মাঝে তাদের ২ জনকে একসাথে দেখা যেত।
এই যখন অবস্থা তখন আমার ধৈর্য্যচুত্যি ঘটলো। কি করা যায় তাই চিন্তা করতে লাগলাম। কারণ "ত" এর সাথে ভালমত মেশার পর ওর সম্পর্কে আমি কোন ভাল কিছু পায় নি। বরং দিন কে দিন তার অধঃপতন হচ্ছিল। ওর বাবা মা যেই পথ থেকে ফেরাতে চেয়েছিলেন তাকে সেটা আর হয় নি। আমি তখন এক বিকেলে "ত" এর বাসায় যেয়ে তার বাবা মা কে সব ঘটনা খুলে বললাম। আর তাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছিলাম কারণ আমার পক্ষে "ত" কে কন্ট্রোলে রাখা আসলেই সম্ভব ছিল না। সব কথা তাদের কাছে বলে আমি বিদায় নিয়েছিলাম।
এর পর থেকেই "ত" এর সাথে আমি সবরকম যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিলাম। যদিও সে বেশ কয়েকবার আমার সাথে কথা বলে, কিংবা দেখা করতে চেয়েছিল কিন্তু আমি তাকে সেই সুযোগ দেই নি। এরই মধ্যে ১১ জনের আমাদের সেই গ্রুপ ভেঙ্গে ২/৩ টা আলাদা গ্রুপ হয়ে গিয়েছিল। অনেকে ইউনিভার্সিটি ছেড়ে দিয়েছিল ১ বছর কিংবা ২ বছরের মাথায়ই। আর আমি গ্রুপ ভঙ্গে কিছুদিন একা একা চলতে লাগলাম।
"ত" আমার জুনিয়র হয়ে গিয়েছিল একটা পরীক্ষায় নকল করে। নকল ধরেছিলেন আমাদের বিভাগীয় হেড। পরে "ত" কে উনি আমাদের এক সেমিষ্টার নিচে নামিয়ে দিয়েছিলেন।
এখনও তার সাথে আমার কোন কথা হয় না। "ত" হয়তো আগের মতই আছে। এখনও সে বিয়ে করে নি। দেশ থেকে চলে আসার সময় ভেবেছিলাম তার সাথে শেষ কথা বলে আসবো। কিন্তু পরে চিন্তা করে দেখলাম যে দরকার নাই।
আর এভাবে করেই হয়ত কেটে যাবে বাকিটা জীবন।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



