somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পেট্রিফাইড ফরেস্ট - পাথর হয়ে যাওয়া বনভুমি

১৭ ই জুন, ২০০৬ রাত ১০:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

('স্যাডোনার রুপ দেখিয়াছি আমি তাই...' এর পরবতর্ী অংশ)

সেডোনা ছেড়ে যেতে যেতে আমাদের খিদে পেয়ে গেল। এক শহরে নেমে আমরা তাই খাওয়া দাওয়া করে নিলাম। তারপর পেট্রিফাইড ফরেস্ট শহর পৌছতে পৌছতে বিকাল 4টা বেজে গেল। আমরা একটু চিন্তিত ছিলাম - যদি পার্ক 5টায় বন্ধ হয়ে যায় তাহলে তেমন কিছু দেখে ফেরা হবে না। গেটে টিকেট কেটে দেখলাম পার্ক 7টা পর্যন্ত খোলা। সস্তির নিশ্বাস ফেলে ঢুকে পড়লাম পার্কে।

নাম শুনে যতটা এক্সাইটিং মনে হয় ভেতরে ঢুকলে হঠাৎ করে ততটা ভাল লাগে না। এই উঁচু শুষ্ক মালভুমি একসময় বিস্তৃত সমতল ভুমি ছিল, যার মধ্যে দিয়ে বয়ে চলত বেশ কয়েকটি স্রোতস্বীনি। লম্বা পাইনের মত গাছ জন্মাত এখানে। বিভিন্ন প্রজাতির ফার্ন, সাইকেড, আর অন্যান্য উদ্ভিদের মাঝে কুমির সদৃশ সরীসৃপ, বিশাল আকৃতির উভচর প্রানী, আর ছোট ছোট ডাইনোসর বাস করত।

বড় বড় গাছ - Araucarioxylon, Woodworthia আর Schilderia - ভেঙ্গে পড়ত আর নদীতে ভেসে যেত। পলি, কাদা আর অগ্নুৎপাতের ছাই গাছের গুঁড়িগুলোকে ঢেকে ফেলত। এই জমে ওঠা আস্তরন গুঁড়িগুলোকে বাতাসের অক্সিজেনের সংস্পর্শে আসতে বাঁধা দিত আর ক্ষয়রোধ করত।

সিলিকা-মিশ্রিত পানি মাটি থেকে চুইয়ে চুইয়ে ঢুকে পড়ত গাছের গুঁড়ি গুলোতে আর গাছের টিসু্য গুলোকে সরিয়ে নিজেরা জমাট বেঁধে বসত সেখানে। এইভাবে সিলিকা দানাবেঁধে রূপান্তিরিত হত কোয়ার্টজে এবং গুুঁড়ি গুলো পেট্রিফায়েড উড হিসেবে সংরক্ষিত হতে শুরু করে।

প্রায় 225 মিলিয়ন বছর আগে ট্রায়াজিক সময়ের শেষদিকে এই ঘটনাগুলো ঘটেছে বলে ধারনা করা হয়। সে সময়ের পরে এই এলাকা পানিতে ডুবে যায়, বন্যাগ্রস্ত হয়, আর পলির আস্তরে ঢাক পড়ে যায়। পরবতর্ীতে প্রাকৃতিক ভাবে এই এলাকা সামুদ্রিক সমতল থেকে ভেঙ্গে উপরের দিকে উঠে আসে। আর এই প্রবল চাপে বিশাল বিশাল গাছের গুঁড়ি গুলো ভেঙ্গে উপরে উঠে আসে।

তারপর সময়াবর্তনে বাতাসে, বৃষ্টিতে ধুয়ে মুছে যায় গাছের গুঁড়িগুলোকে ঢেকে রাখা শক্ত পলিস্তর। বের হয়ে আসে পাথর হয়ে যাওয়া গাছ পালা আর প্রানীর ফসিল। ভবিষত্যে হয়ত আরো পলিস্তর সরে বেরিয়ে আসবে লুকানো ফসিল।

এই পেট্রিফায়েড ফরেস্ট ঘিরে অনেক গল্প ছড়িয়ে আছে। প্রাচীন মানুষের পেশার ধরন কি ছিল তা সহজেই অনুমান করা যায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রমান গুলো দেখলে। পার্কে বিভিন্ন জায়গাগুলো প্রায় 10,000 বছরের পুরোনো ইতিহাস ধারন করে রেখেছে। পুরো গল্পটা যদিও বের করা সম্ভব হয়নি, সেখানে যে বিভিন্ন পেশার বিস্তার ঘটেছিল সেটা বোঝা যায়। সেখানে বাসা বেঁধেছিল ঘুরে বেড়ানো প্রজাতি থেকে বেরিয়ে আসা কৃষি ভিত্তিক জনপদ - pubelos। তাদের অস্তিত্বের প্রমান যদি 1400 সাল নাগাদ হারিয়ে যেতে থাকে তথাপি ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাসন পত্র, পেট্রোগি্লফস এদের পরিচয় বহন করে।

বিশাল এই জায়গার এক মাথা থেকে ড্রাইভ করে আরেক মাথায় পৌছতেই প্রায় ঘন্টা খানেক লেগে যায়। আমরা বেশ কিছু স্পটে নেমে পেট্রিফায়েড গাছের গুঁড়ি, প্রাচীন লোকদের থাকবার জায়গা, পেট্রোগি্লফস এগুলো দেখলাম। যদিও একটা ছোট্ট পেট্রিফায়েড গাছের টুকরোও নেয়া নিষেধ, আশেপাশের এলাকার ব্যাক্তি মালিকানাধীন জমিতে পাওয়া টুকরো গুলো পলিশ করে খুব সুন্দর গিফট আইটেম হিসেবে বিক্রি হয় কিছু দোকানে। আমরা সবাই ছোট বড় আইটেম কিনলাম সেখানে।

ততক্ষনে সন্ধ্যা 7 টা বেজে গেছে। পার্ক রেঞ্জার দেখলাম ঘুরঘুর করছে আশেপাশে। আর সবাইও পার্ক থেকে বের হয়ে যাচ্ছে তাই আমরাও আর দেরী না করে রওনা দিলাম ঘরের দিকে, সঙ্গে নিয়ে কিছু স্মৃতি আর পলিশড পেট্রিফায়েড গাছের একটুকরো।


ছবি পরিচিতি
1। লং উডস নামের একটা সাইটে
2। pubelo নামের যায়গাটায় যেখানে মানুষের নির্দশন পাওয়া গেছে
3। কিছু পেট্রোগি্লফসের সামনে আমি - র্যাটল স্নেকের ভয়ে আমার মুখ শুকিয়ে আছে যদিও
4। ক্রিস্টাল ফরেস্টের ফলক
5। ক্রিস্টাল ফরেস্টে আমি ও আমার স্ত্রী মৌটুসী
6। ওখানকার একটি মিউজিয়ামে পলিশড একটা গাছের গুঁড়ি
7। কিছু ডাইনোসরের নির্দশনের সামনে
8। আমেরিকার বিভিন্ন জায়গায় পাওয়া পেট্রিফায়েড গাছের ধরন দেখিয়ে একটা তুলনামূলক চিত্র

বি:দ্র: তথ্যগুলো টিকিটের সাথে দেয়া এক ব্রশিওর থেকে সংগৃহীত। বিস্তারিত পাবেন এখানে:
http://www.nps.gov/pefo/pphtml/nature.html

সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সব দোষ শেখ হাসিনার !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৬


অনেকদিন পর zahid takes এর ডা. জাহেদুর রহমানের এনালাইসিস ভিডিও দেখলাম। জুলাই আন্দোলনের পূর্বে বিশেষত যখন র‍্যাব স্যাংশন খায় তখন থেকেই উনার ভিডিও দেখা আরম্ভ করি। শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামাত/ শিবির কারনামা-১✅

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:৪১



জামাত শিবির ২০০১ নির্বাচনের পরে নাজিরহাট বাজারে চল্লিশ জনের নামের তালিকা ঝুলিয়ে দিয়েছিল । যাদের হত‍্যা করবে তাদের নাম। বাবা কথাগুলো বলছিল মাকে, আমি ওখানেই ছিলাম। মা রান্না করছিলো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিঝুম মজুমদার: সত্যের পক্ষে এক নির্ভীক কণ্ঠ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪

নিঝুম মজুমদার: সত্যের পক্ষে এক নির্ভীক কণ্ঠ

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন যত দ্রুত বদলাচ্ছে, তত দ্রুতই বদলে যাচ্ছে সত্যের রূপ—কেউ লুকিয়ে ফেলতে চায়, কেউ বিকৃত করে, কেউ আবার নিজের স্বার্থে তা ব্যবহার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার মাঈনউদ্দিন মইনুলকে ১৩ বছর পুর্তি উপলক্ষে অভিনন্দন।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৭



সামুর সুসময়ের আদর্শ ব্লগারদের মাঝে মাঈনউদ্দিন মইনুল হচ্ছেন একজন খুবই আধুনিক মনের ব্লগার; তিনি এখনো ব্লগে আছেন, পড়েন, কমেন্ট করেন, কম লেখেন। গত সপ্তাহে উনার ব্লগিং;এর ১৩ বছর পুর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিয়তির খেলায়: ইউনুস ও এনসিপিনামা

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫৪



২০১৪ সালে মুক্তি পাওয়া আমেরিকান চলচ্চিত্র 'আনব্রোকেন' একটি সত্যি ঘটনার ওপর নির্মিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে, আমেরিকান বোমারু বিমানের কিছু ক্রু একটি মিশন পরিচালনা করার সময় জাপানিজ যুদ্ধ বিমানের আঘাতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×