somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি গল্প: ছিলা শামীমের বেহেশত

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৬ রাত ১০:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গল্পটি পড়েছিলাম দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদকীয়তে। সেখানেও মনে হয় অন্য কোথাও থেকে অনুবাদ করা ছিল। মূল গল্পটা পুরোপুরি মনে নেই। গল্পের মূলভাবটা ধরে রেখে নিজের মতো করে লিখছি।
------------------------------

শামীম ছিল বদের হাড্ডি। হেন খারাপ কাজ নেই যা সে করেনি। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, জুয়া, মাদকাসক্তি, পতিতালয়ে যাওয়া আসা, কাজে অকাজে মানুষের পেছনে লাগা - সবই সে করেছে। থাকত মোহাম্মদপুরে। আর মাথায় চুল ছিল কম। তাই তাকে মোহাম্মদপুরের ছিলা শামীম নামে সবাই চিনত। অপরাধ জগতের সবাই তাকে গুরু মানত। অল্প বয়সেই সে এমন ক্ষ্যাতি পেয়েছিল যে মায়েরা তাদের বাচ্চাকে খুব পাড়াত এই বলে, যে বাবু ঘুমিয়ে যা, নাহলে কিন্তু ছিলা শামীম আসবে।

সেই শামীম করল এক মস্তবড় ভুল। কম্পিউটার ব্যবহার শিখল, নতুন ধরনের চাঁদাবাজি, অনলাইন জুয়া এসবের জন্য। আর একই সময় সে সামহোয়্যারইনে ব্লগিং শুরু করল। আর এই ব্লগিং হইল গিয়া তার কাল। ব্লগে সে মনের আনন্দে নিজের কাজকম্ম নিয়া লেখতো। তার প্রতিপক্ষ গ্রুপ ছিল সেয়ানা। দুইয়ে দুইয়ে চার মিলায়া একদিন গিয়া খালাস কইর্যা ফালাইলো পোলাডারে।

খালাস হওয়ার পর পর শামীম একটু থতমত খেয়ে গেল। অনেকরে খালাস করছে কিন্তু আজকে যখন একজন এসে সোজা হার্ট বরাবর ছুরিটা ঢুকায় দিল তখন কেমন যেন দম বন্ধ লাগছিল। ছোটবেলায় একবার পানিতে ডুবতে গিয়েছিল। আজকেও সেই অনুভুতিটা ফিরে এসেছিল। কিছুক্ষন খাবি খাবার পর আর কষ্ট লাগছিলনা। খুব হাল্কা লাগছিল। তারপর উঠে বসে সে দেখল তার দেহ মাটিতে, বুক চেপে ধরে রক্তের মধ্যে পড়ে আছে। সে নিজেকে নিজে দেখছে। বহু হিন্দী ছবিতে দেখা বিষয়টা তার মাথায় ঢুকতে বেশী সময় লাগল না। সে বুঝতে পারল সে মৃত। বুঝতে পেরেই সে থতমত খেয়ে গেল। এখন? এখন কি হবে? পাড়ার হুজুর বলত খারাপ কাজ করতে করতে মারা গেলে দোজখ। তার কি তাহলে দোজখেই ঠাই হবে? নাকি ফেরারী প্রেতাত্মা হয়ে ঘুরে বেড়াতে হবে সারা পৃথিবী? ইস সে ধরেই রেখেছিল আগামী বছর হজ্জ্বটা সেরে ফেলবে। তার আগেই টেঁসে গেল। এখন উপায়? বসে বসে সে ভাবতে থাকে কারও জন্য কোন ভাল কাজ করেছিল কিনা। 'নাহ শালার কোন ভাল কাজই কি করি নাই?', ভেবে ভেবে কুল পায় না সে।

কিছুক্ষন পর হঠাৎ মাথার উপর নীল আলোর ছটা আসা শুরু করল। দেখেই বুঝতে পারল শামীম কোন ফেরেশতা টেরেশতা নিশ্চয়ই আসছে। শালার হলিউডের ফিল্ম মেকাররা না মরেও যে কিভাবে এইসব জেনে ফেলছে কে জানে? তবে ফেরেশতাকে দেখে একটু অবাকই হল সে। ইয়া লম্বা লম্বা দাড়ি তার ঠিকই, কিন্তু গায়ে পাতলা গেঞ্জি আর সাধারন একটা প্যান্ট পরা। আর পুটুস পুটুস করে চিনা বাদাম ভাঙ্গছে আর খাচ্ছে।

উড়ে এসে দাঁড়াতেই সে বলল, "বৎস তুমি মারা গেছ"।

শামীম একটু রেগেই গেল, "সে তো দেখতেই পাচ্ছি"।

"তোমার কর্মফল অনুযায়ী তোমার স্থান নিধর্ারন করা হবে", বলেই ফিরিস্তী পড়া শুরু করল ব্যাটা।

"আচ্ছা হইছে ফিরিস্তী পড়ন লাগব না। এখন কি করতাম সেইটা কন।", তাকে থামিয়ে দেয় শামীম।

"হুমম এসো আমার সাথে", বলে তার হাত ধরে উড়াল দেয় সে।

পত পত করে তার ইয়া লম্বা লম্বা সাদা দাড়ি উড়ছে। হাত দিয়ে ধরে দেখার লোভ সামলাতে পারল না সে। দাড়িতে হাত দিতেই ব্যাটা চোখ গরম করে তাকাল আর তার হাতে আগুন ধরে গেল। ভয়ে হাত ঝাড়তেই আগুনটা নিভে গেল। অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখল শামীম হাতের কোন ক্ষতি হয় নাই। যারপরনাই অবাক হলো সে। ততক্ষনে তারা একটা বিরাট রাজপ্রাসাদের সামনে এসে দাঁড়াল। শামীম ভাবল কোন আইন আদালত টাইপের কিছু হবে। সে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই ব্যাটা টের পেয়ে গেল।

বলল, 'না এটা কোন আইন আদালত না। এটা তোমার বাড়ি। তুমি আজকে থেকে এখানেই থাকবা। যা চাইবে তাই পাবে। সত্তরটা হুর পরী থাকবে তোমার সাথে। যার সাথে যেমন ইচ্ছা করতে পারবে কেউ কিছু বারন করবে না। সুস্বাদু সব খাবার, পৃথিবীর সেরা সব বিনোদন সব পাবে। অনন্তকালের জন্য ভোগ করতে পারবে সব।'

শামীম কিছুক্ষন হাঁ করে থাকিয়ে থাকল দাঁড়িয়াল ব্যাটার দিকে। তারপর আবার প্রাসাদের দিকে তাকিয়ে থাকল হাঁ করে। সাদা পাথর দিয়ে ঘেরা স্বর্গ একখানি যেন। তাহলে কি তার বেহেশত নসীব হল? কিছু বলে উঠার আগে দেখে দাঁড়িয়াল ব্যাটা গায়েব। একটু ভীরু ভীরু পা ফেলে সে আগিয়ে গেল। সাথে সাথে দুজন হুর ছুটে এল। এসেই তাকে জড়িয়ে ধরে আদর করে ভিতরে নিয়ে গেল। নিজেরই বিশ্বাস হচ্ছিলনা। নিজের গায়ে চিমটি কেটে দেখল, কোন ব্যাথা লাগল না। নাহ, আসলেই সে মরে গেছে। দুনিয়ায় এতো পাপ কাজের কি তাহলে এই পরিনাম। বাহ, শেষ পর্যন্ত বেহেশত। নিজেকে চুমা দিতে ইচ্ছা করল। একটা বিরাট বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই মনে হল আরামে ঘুম এসে যাবে। কি মনে হতেই সে ভাবল আচ্ছা মুরগীর চাপ, পরোটা খাওয়া যাক। যেই ভাবা, সেই দেখে যে তার সামনে খাবার হাজির। এই না হলে বেহেশতে, ভাবতে ভাবতে মুরগীর চাপ আর পরোটা খাওয়া শুরু করল সে। হুর গুলোকে তারিয়ে তারিয়ে দেখতে দেখতে ভাবল যাক দিন গুলো তাহলে মন্দ যাবে না।

দিন কয়েকের মধ্যে অপার্থিব আনন্দে শামীম ভাসিয়ে দিল নিজেকে। যা চাচ্ছে তাই পাচ্ছে। সত্তরটা নারীর সাথে কাম। গ্রুপ সেক্স, পায়ু কাম সবকিছু এক্সপ্লোর করে দেখছে। আনন্দ, মহা আনন্দ। মাস ছয়েক তার মহা আনন্দে কাটল। তারপর একদিন হঠাৎ রাতে তেত্রিশ আর ছেচলি্লশ নম্বর হুরটা যখন রাতে আসল তখন তাদের দেখেই তার মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল। কোন কারন নেই তবু "খানকি, মাগী" বলে ঘর থেকে বের করে দিল। তারপরও যখন ছেচলি্লশ নম্বরটা যাচ্ছিল না তখন একটা ছুরি বসিয়ে দিল তার পেটে। ভাগ্যিস ওখানে কেউ মরে না, পরিবতর্ীত হয়ে যায়। নইলে একেবারে রক্তারক্তি হয়ে যেত। সেদিন রাতে শুয়ে মন ভরে গান শুনল। তারপর দিন থেকে তার আবার পুরোনো রুটিন। এরকমই চলছিল।

কিন্তু বেশিদিন পরে নয়। একইরকম মেজাজ খারাপ তার আবার হল। তারপর আবার সব ঠিকঠাক। এরপর ঘনঘন তার মেজাজ খারাপ হওয়া শুরু করল। বছর খানেকের মাথায় তার প্রায় সব সময়ই মেজাজ খারাপ থাকে এরকমটা হল। যারে তারে মারে, যার তার পেটে ছুরি ঢুকায় দেয়। যা ইচ্ছা তাই বলে। কিন্তু তার আর মেজাজ ভাল হয় না।

এরকম করতে করতে তার একসময় অসহ্য লাগা শুরু হল সব। সব কিছু এত সহজ। এতো ভাল। যে কিছু করতে ভাল লাগে না। পৃথিবীতে থাকতে একটা লক্ষ্য ছিল। সেরা গুন্ডা হতে হবে। সেরা কিছু করতে হবে। প্রতিপক্ষের এইটারে সাইজ করতে না পারলে বিপদ। সব সময় আয়ের চিন্তা, টিকে থাকার চেষ্টা। এইখানে এইসব কিছু নাই। কাহাতক আর ভালো লাগে?

এক পযর্ায়ে গিয়ে তার পুরো প্যারানয়েডের মতো মনে হতে লাগল নিজেকে। ধুর কোথায় এসে ফেঁসে গেছে সে। দুনিয়াতে থাকতে যা কিছু কাম্য ছিল তার সবকিছু ষোল আনার উপর দুই আনা, আঠারো আনা পেয়েও কেন ভাল লাগছে না! সে পাগলের মতো বাগানে ঘুরে বেড়াতে লাগল। হুর পরীদের দেখলে ছুরি হাতে তাড়া করা শুরু করল।

শেষে একদিন যে দরজা দিয়ে সে ঢুকেছিল সেখানে এসে শামীম চেঁচাতে লাগল, "হে খোদা, না বাল ছাল, হে ফেরেশতা, যে আমারে এইখানে নিয়া আসছিলা, সে কোথায়। একটু দেখা দাও"।

এইরকম অনেকক্ষন চেঁচামেচির পর তারে দেখা গেল পেয়ারা খাইতে খাইতে হাজির।

"কি হয়েছে চেঁচাচ্ছো কেন?", জিজ্ঞেস করে দাঁড়িয়াল।

"কি বলেন চেঁচাবো না? এইটা কিরকম বেহেশত দিলেন আমাকে? আমার তো কিছু ভালো লাগেনা। অসহ্য লাগে সব কিছু। বেহেশত এতো বোরিং হতে পারে তা আমার জানা ছিল না।"

দাঁড়িয়াল একটু হাসলেন। বললেন, "তোমাকে কে বলল যে তোমাকে বেহেশত দেয়া হয়েছে?" তারপর যেমনটি এসেছিলেন তেমনিভাবে চলে গেলেন তিনি।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৬ দুপুর ১:৫৯
৩২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

দুলে উঠে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৬

দুলে উঠে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

মন খুশিতে দুলে দুলে ‍উঠে
যখনই শুনতে পাই ঈদ শীঘ্রই
আসছে সুখকর করতে দিন, মুহূর্ত
তা প্রায় সবাকে করে আনন্দিত!
নতুন রঙিন পোশাক আনে কিনে
তখন ঐশী বাণী সবাই শুনে।
যদি কারো মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তরে নিয়ে এ ভাবনা

লিখেছেন মৌন পাঠক, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩০

তরে নিয়ে এ ভাবনা,
এর শুরু ঠিক আজ না

সেই কৈশোরে পা দেয়ার দিন
যখন পুরো দুনিয়া রঙীন
দিকে দিকে ফোটে ফুল বসন্ত বিহীন
চেনা সব মানুষগুলো, হয়ে ওঠে অচিন
জীবনের আবর্তে, জীবন নবীন

তোকে দেখেছিলাম,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×