somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নাসির উদ্দিন ইউসুফের সাক্ষাতকার

২৬ শে জুলাই, ২০০৭ রাত ৮:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঢাকার মঞ্চে বিনোদিনী নাটকের ৫০তম প্রদর্শনীর পর নাসির উদ্দিন ইউসুফ মঞ্চে নিয়ে এলেন নতুন নাটক নিমজ্জন। এটি ঢাকা থিয়েটারের ৩২তম প্রযোজনা। প্রথম মঞ্চায়নের পর নাটকটি দর্শকের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ ও আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বাংলাদেশের মঞ্চে নাসির উদ্দিন ইউসুফ বরাবরই নতুন ও বিস্ময়কর ধারার জন্ম দিয়েছেন। এবারও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। এবার তিনি মঞ্চায়িত করলেন স্থান-কাল নিরপেক্ষ একটি নাটক। নাটকটি লিখেছেন সেলিম আল দীন।
বিশ্বের নানা অঞ্চলে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞ, সামরিক শাসন, অপঘাতের বিস্তারিত বিবরণ নিয়ে লেখা হয়েছে নাটকটি। এতে আছে মানুষের অসহায়তা, প্রতিরোধ ও যুদ্ধের প্রতি ঘৃণার কাহিনীও। বহু বিস্তারি এ নাটকটিকে আশ্চর্য দক্ষতায় নাট্যরূপ দিয়েছেন নাসির উদ্দিন ইউসুফ। মঞ্চায়নের পর দর্শকরা একে বিশ্ব মানের একটি পরিবেশনা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এ নাটক ও তার নাট্য চিন্তা নিয়ে কথা বলেছেন যায়যায়দিনের সঙ্গে। কথা বলেছেন সাইমন জাকারিয়া ও মাহবুব মোর্শেদ। উপস্থিত ছিলেন সাইম রানা। ছবি তুলেছেন হাসান বিপুল।

আপনার নাটকের জার্নিটা আমরা জানি, সংবাদ কার্টুন থেকে মুনতাসির, শকুন্তলা, কেরামতমঙ্গল, কীর্তনখোলা, হাতহদাই। একেকটা পদক্ষেপের মধ্যে বিস্তর ফারাক। সর্বশেষ বিনোদিনী থেকে নিমজ্জন। এ দুটি নাটকের মধ্যেও বিস্তর পার্থক্য। একটা নাটক থেকে আপনার আরেকটা নাটক আলাদা হয় কিভাবে? চিন্তাগুলো কিভাবে আসে?

প্রথমত টেক্সট একটা জায়গা নির্ধারণ করে দেয়। টেক্সট একভাবে দাবি করে। নির্দেশককে টেক্সটই বলে দেয়, এটা আমি চাই। আর সময়টাও বলে। সময় একটা জায়গা তৈরি করে। কথার কথা হিসেবে বলছি, বিনোদিনী একটা সিম্পল, লিনিয়ার একটা কাজ। কিন্তু তার মধ্যেও অনেক বুনন আছে। সাধারণ একটা লিনিয়ার টেক্সটকে সুন্দর ঝকঝকে একটা প্রযোজনা করা এবং তাতে অভিনয় দক্ষতার প্রয়োগ ঘটানো।
অভিনয় দক্ষতাটা ছিল বিনোদিনীতে আমার মূল লক্ষ্য। দেখাতে চেয়েছিলাম পাওয়ার অফ অ্যাক্টিং কিভাবে একটা টেক্সটকে নাটক হিসেবে শৈল্পিক উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে।
অন্যদিকে নিমজ্জন বা অন্য যে কোনো জটিল নাটকে লক্ষ্য থাকে জটিল নাটকটিকে কতো সহজভাবে দর্শকের সামনে উপস্থাপন করা যায়। এগুলোতে দেখা যাবে প্রচুর কাজ আছে, প্রচুর অ্যাকশন বা মঞ্চ ক্রিয়া আছে এবং সেগুলোর সমন্বয় করতে হয়েছে। কোন প্রক্রিয়ায় কাজটা করি সেটা বলা মুশকিল। এমনকি সাইমনের বিনোদিনীর যে এ রকম প্রডাকশন হবে সেটা আমি বা সাইমন কেউই ভাবিনি। এখানেও তাই। প্রথমত একটা চেষ্টা ছিল। আমার একটা ভাবনা ছিল। একটা থেকে আরেকটার ফারাক ঘটে সময়, অভিজ্ঞতা, টেক্সটের একটা দাবি এগুলোর ফলে।

মঞ্চায়নের ক্ষেত্রে আপনি কখনো প্রসেনিয়াম ব্যবহার করছেন। কখনো নাটককে মেঝেতে নামিয়ে আনছেন। নিমজ্জনের ক্ষেত্রে আমরা প্রসেনিয়ামের ব্যবহার দেখলাম।

আমার সব নাটকই বাইরে করার মতো। এ প্রযোজনাটি বাইরে অসম্ভব ভালো লাগবে। আমি বলে দিতে পারি, যদি গ্যালারিতে দর্শক বসে এবং ফোরে নাটকটি হয় তাহলে এটি আরেকটি মাত্রা পাবে এটা নিশ্চিত করে বলা যায়। কারণ আমরা যখন রিহার্সাল করেছি সেটা ফোরে করেছি এবং আমরা সেটা গ্যালারি থেকে দেখেছি।

দর্শকের কথা কি আপনি মাথায় রাখেন?

না, দর্শকের কথা আমার মাথায় থাকে না। থাকলে মনে হয় না যে, আমি নিমজ্জন করতাম। আমি প্রথমত আমার শিল্পকর্মটাই করি। আমি নিজেকে নিজে এন্টারটেইন করি। আসলে মানুষের প্রথম কাজ হচ্ছে, বাচার জন্য নিজেকে নিজে এন্টারটেইন করা। কেউ যখন লেখেন, তিনি লিখতে লিখতেই কিন্তু এন্টারটেইন হন। আমি কোনো লঘু এন্টারটেইনমেন্টের কথা বলছি না। শৈল্পিক প্রক্রিয়ার মধ্যে যে এন্টারটেইনমেন্ট থাকে আমি সেটার কথা বলছি। পরিশ্রমের মধ্যে এন্টারটেইনমেন্ট থাকে। কেউ যে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে হাটছে বা লিখছে সে প্রক্রিয়ার মধ্যেই তার এন্টারটেইনমেন্ট থাকে। এটা মানে তো শুধু দুটি নাচ-গান না বা ওয়েস্টার্ন মিউজিক নয়। যদি দর্শকের কথা বলি তবে দর্শক লঘু সঙ্গীতেও আনন্দ পায়, ইনডিয়ান কাসিক শুনেও আনন্দ পায়, নজরুল সঙ্গীতেও পায়, রবীন্দ্র সঙ্গীতেও পায়। প্রশ্নটা খুবই প্রাসঙ্গিক এ কারণে যে, আমার নির্দেশিত বিভিন্ন নাটক বিভিন্ন চরিত্র ধারণ করেছে।

থিয়েটারে খুব কম নির্দেশকের ক্ষেত্রেই দেখা যায় তার একটা নাটক থেকে আরেকটা নাটক আলাদা হয়।

সেটা মনে হয় ডিজাইনের কারণে ঘটে। ওরা যে প্রডাকশন ডিজাইন করে সেখানে আমার মনে হয় সবারই ভাবার অবকাশ আছে। আমরা যখন একটা প্রডাকশন থেকে আরেকটা প্রডাকশনের দিকে যাবো তখন সেই মধ্যবর্তী সময়ে আগের শেখা কিছু জিনিস আনলার্ন করবো। নতুন কিছু জিনিস জানবো। নতুন কিছু ভাষা শিখবো। শিল্পের ভাষা আমাকে আয়ত্ত করতে হবে। সে প্রক্রিয়াটা আছে কি না আমি জানি না। কিন্তু আমার মধ্যে ব্যাপারটা আছে। আমি সাংঘাতিক রকমভাবে মিউজিক পেইন্টিং এগুলো শিখেছি। বিনোদিনী পর্যন্ত যা শিখেছি তারপর গত আড়াই বছরে অনেক কিছু ভুলে গিয়ে নতুন কিছু বিষয় শিখেছি। এমনকি বিনোদিনী নাটকটি আমি ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। তা না হলে নতুন কিছু আমি করতে পারবো না। প্রডাকশনের ব্যাপারে, বিশেষ করে নাটকের প্রডাকশনের ব্যাপারে নাটকের ভাষার দক্ষতা বাড়ানো উচিত। যদি এটা বাড়ে তবে এর প্রয়োগের ক্ষেত্রেও এর প্রভাব পড়বে।
নিমজ্জনের মতো জটিল টেক্সট নিয়ে আমি যখন কাজ করতে গিয়েছি তখন নাটকের ভাষা নিয়ে অসম্ভব রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হয়েছে। নিমজ্জনের স্ট্রাকচারের দিকে তাকালে দেখা যাবে, বাংলাদেশে প্রচলিত স্বাভাবিক নাট্য ক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এ নাটকে আমি এগোনোর চেষ্টা করিনি। তাহলে এটা সাদামাটা একটি নাটক হতো, স্টেটমেন্ট ধর্মী কাজ হতো। গল্পের কাঠামোর মধ্যে থিয়েটার ঢুকে যেতো। যদি গল্পের কাঠামোর মধ্যে ঢুকে যায় তবে সেখান থেকে বের করার উপায়টা কি? উপায় হচ্ছে, প্রথমেই গল্পটাকে অস্বীকার করা। তারপরও কিন্তু একটা স্ট্রাকচার তৈরি হয়। ঘর কতো রকমে বানানো যায়? ঘর তো ঘরই। লালন যেমন বলেছেন, শরীরের ভেতরে একটা অসীমতা আছে। তেমনি করে স্ট্রাকচারের ভেতরেও একটা অসীমতা আছে।
যেহেতু নিমজ্জন আমার শেষের দিকের কাজ। এতে আগের কাজগুলোর চেয়ে অনেক বেশি দুঃসাহসী হওয়া সম্ভব হয়েছে। আমি মনে করি, নাটক যদি নাটকের ভাষায় মঞ্চে নির্মিত হয়, যেটা বিনোদিনীতেও দেখা যাবে বা যে কোনো নাটকে। বিনোদিনীতে দেখা যাবে, নাটকের টেক্সটের প্রভাবের চেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে নাটকীয় মুহূর্ত তৈরির জন্য নানাভাবে ভাষা প্রয়োগের একটা সাধারণ প্রবণতা আছে।

নাটকের ভাষা নিয়ে বলুন।

প্রত্যেকটা শিল্পমাধ্যমের আলাদা ভাষা আছে। পেইন্টিং যে আকা হয় তাতে রঙ, তুলি, ভাবনা, রেখা, বিন্দু এগুলো হচ্ছে তার ভাষা ও উপকরণ। সেটা দিয়ে পেইন্টিং তৈরি করতে হয়। মিউজিকে যেমন সা রে গা মা পা ধা নি সা। তারপর রাগের ব্যাপারগুলো আছে। সেগুলো আমাদের অ, আ বা এ বি সি ডির মতো নয়। কিন্তু সেগুলোও ভাষা। থিয়েটারে তেমনি করে এর অভিনয়, দেহ, টেক্সট, আলো মিউজিক সব মিলিয়ে একটা ভাষা নির্মিত হয়। এগুলো ঠিক আক্ষরিক অর্থে বলা যাবে না। এগুলো বোধ থেকে, অভিজ্ঞতা থেকে তৈরি হয়।
এখন স্টানিস্লাভস্কি, পিটার ব্রুক বা মায়ারহোল্ডের কথা যখন বলি বা ব্রেখটের কথা বলি তখন থিয়েটার ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করার প্রবণতা থেকে কিংবা থিয়েটার ব্যবহার করার প্রবণতা থেকেই কিন্তু একজন আরেকজনের থেকে আলাদা হয়ে ওঠেন। কেউ এগিয়েছেন বা কেউ ভিন্ন রকম কাজ করেছেন। সবাই এক রকম হননি। ব্রেখট যখন এলিয়েনেশন তৈরি করার কথা ভেবেছেন তখন স্টানিস্লাভস্কি সে রকম করে ভাবেননি। আবার এখন পিটার ব্রুক তার অভিজ্ঞতাকে ব্যবহার করে অন্য রকম গভীরতায় চলে গেছেন।
তারা মনেই করছেন, থিয়েটার হলো ইমিডিয়েট থিয়েটার। এ মুহূর্তের থিয়েটার। এখনই হচ্ছে, এখনই শেষ। তারা মনে করছে, এম্পটি স্পেসের থিয়েটারের কোনো বিকল্প নেই। আমার মনে হয়, তারা সব সময়ই চেষ্টা করেছেন থিয়েটারকে গল্পের আড়ষ্ট কাঠামো থেকে বের করে নিয়ে যেতে। থিয়েটারকে আলাদা জায়গায় দাড় করাতে চেয়েছেন।
ছোট গল্প, বড় গল্প বা উপন্যাসের নিজস্ব ভাষারীতি আছে। ওই ছন্দ ও ভাষারীতিতে কি থিয়েটার এগুবে? না। আমরা চ্যালেঞ্জ করেছিলাম এ জায়গাটায়। এটা করতে গিয়ে অন্য ভাষা থেকে নেয়ার কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু সেটাকে অবলম্বন করে যদি কাজ করি তবে আমার থিয়েটার আলাদা হবে না। থিয়েটার আলাদা শিল্প মাধ্যম হিসেবে দাড়াবে না। বাংলা থিয়েটারের জটিলতা এখানেই। সে তার ভাষা ব্যবহারে ব্যর্থ হয়েছে।

আপনি যে টেক্সট ব্যবহার করেছেন তার ভাষাও কিন্তু আলাদা। সেটা কি নাটকের ভাষা রীতিকে দাড় করাচ্ছে?

না। সেটা সম্পূর্ণ আলাদা ব্যাপার। নিমজ্জন কি শুধু ভাষারীতির ওপর দাড়িয়ে থাকছে? লেখ্য ভাষার ওপর আমরা নির্ভরশীল ছিলাম না। সব মানুষ কি বুঝেছে ইনকা মায়া থেকে, ইজিপশিয়ান সিভিলাইজেশন থেকে এ পর্যন্ত আসার পরিভ্রমণটা? এটা তাদের জানার প্রয়োজন নেই।
আমরা যারা নাটক করবো তাদের জানার প্রয়োজন আছে। আমাকে অনেকে বলেছে, দর্শক বুঝবে না। কিন্তু আমার আরেক বন্ধু বলেছে, দর্শক সব থেকে বেশি বুঝবে। আমি তার সঙ্গে একমত। আমি শোর আগে বলেছি, রমনার বটমূলের সেই হত্যাকা-ের দৃশ্য বা একুশে আগস্টের সেই ছিন্নভিন্ন পা আমাদের সবার অভিজ্ঞতায় আছে। যে ভূমিতে দাড়িয়ে আছি সে ভূমি কিন্তু রক্তাক্ত। তাহলে গণহত্যার চিত্র কঠিন হলে আমি কমিউনিকেট করতে পারবো না এটা ঠিক নয়।

নিমজ্জনে বহুদিন পর আপনি সিনিয়র কর্মীদের বাইরে গিয়ে নতুন কর্মীদের নিয়ে কাজ করলেন। কেন?

প্রথমত নিমজ্জন একটা কঠিন টেক্সট। সেলিমের ল্যাঙ্গুয়েজ আরো বেশি জটিল হয়েছে। সে আকড়ে ধরতে চাচ্ছে পৃথিবীর সব বিস্ময়গুলোকে। সব বিস্ময় ও ঘটনাগুলোকে সে আকড়ে ধরতে চাচ্ছে, আকড়ে ধরতে চাচ্ছে। ভাষার কারুকাজ করতে গিয়ে সেলিম টেক্সটটাকে কঠিন করে ফেলছে।
দ্বিতীয়ত সেলিমের কাব্যগত একটা কৌশল আছে। এটা সেলিমের একটা জাদুকরি ব্যাপার। এটা বুঝে থিয়েটারটা করতে হবে। যদি তাই করতে হয় তাহলে সেলিম যেমন এক হাজার বই পড়ে এ নাটকটা লিখেছে তখন আমাকে তো একশটা বই পড়তে হবে। ওই জার্নিটা আমাকে বুঝতে হবে, জানতে হবে। আমার দলের ছেলেমেয়েদের সেটা জানতে হবে। সেই জানার সময়টা আমাদের সিনিয়র আর্টিস্টদের নেই।
এছাড়া আমি প্রয়োগরীতি নিয়ে প্রথমে নিশ্চিত ছিলাম না যে, কোন প্রয়োগরীতি দিয়ে থিয়েটারটা করবো। কিন্তু আমার এটা মনে হচ্ছিল যে, যেহেতু নাটকের ভাষার পূর্ণাঙ্গ ব্যবহারের একটা সম্ভাবনা আমার এ নাটকে আছে সেহেতু আমি শারীরিকভাবে সমর্থ মানুষগুলোকে নির্বাচন করি। এখানে মনে হয়েছে, যৌবনের কোনো বিকল্প নেই। তারুণ্যের কোনো বিকল্প নেই। শরীরের দিক থেকে তারুণ্য নেয়ার দিক থেকে তারুণ্য।
তাদের শুধু অভিজ্ঞতাটা কম। এদের দিয়ে যদি আমি থিয়েটার করি তবে একদিকে আমি ফেইল করতে পারি। সে চ্যালেঞ্জটা আমাকে নিতেই হবে। কিন্তু যদি সাকসেসফুল হই তবে বাংলা থিয়েটারের একটা মোড় ঘুরে যাবে। প্রতিটা দলে এ সমস্যা আছে। তারুণ্যের প্রতিভা, তারুণ্যের সম্ভাবনাকে এক্সপ্লোর করা হচ্ছে না। প্রাচ্য নাটকটিতেও কিন্তু তরুণদের প্রাধান্য দেয়া হয়েছিল। কিন্তু পুরনোদের মধ্যে যারা নিয়মিত তাদের আমি তরুণই মনে করি। আমার বয়স এখন ৫৭। আমি নিজেকে তরুণ মনে করি। আমার প্রতিদিনই জন্ম হয়, কারণ আমি থিয়েটার করি।

অনেক কাজ ও ব্যস্ততার মধ্যে আপনি সার্বক্ষণিকভাবে থিয়েটার করেন, এটা কিভাবে সম্ভব হলো?

মাথার মধ্যে অনেক চেম্বার থাকে। অনেক চেম্বার আমি শাট ডাউন করি। শাট ডাউন করি তারপর সে একা কাজ করে। আমার থিয়েটারের চেম্বারটা সব সময় খোলা থাকে। শুধু থিয়েটার নয়, শিল্প। কোনো গান শুনলেও আমি তাৎক্ষণিকভাবে উদ্দীপ্ত হয়ে উঠি।

বিশ্ব নাট্যদর্শনের অভিজ্ঞতা নিমজ্জনে কিভাবে যুক্ত হয়েছে?

আমার ও শিমূলের বড় একটা আগ্রহ আছে বিশ্বের নানা দেশের পেইন্টিং ও সঙ্গীত নিয়ে। আমি পৃথিবীর সব দেশ না ঘুরলেও অনেক দেশ ঘুরেছি। সেলিম অনেক সময় বলে, নিমজ্জনের দুই বন্ধু আমি আর সেলিম। সেলিম হচ্ছে অসুস্থ বন্ধুটা আর আমি হচ্ছি বিশ্ব ভ্রমণকারী। এটা ঠিক নয়। সেলিম আমাকে বলেছে। আমাকে যখন নাটকটা দেয় তখনই বলেছে। আমি বিভিন্ন দেশ ঘুরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে সেলিমকে বলেছি। ইতিহাস, আর্কিওলজি গণহত্যা ইত্যাদি নানা বিষয়ে আলাপ হয়েছে।
সেলিমের দুর্দান্ত একটা পড়ালেখা আছে। আসলে সেলিমের চোখ দিয়ে আমরা অনেক কিছু দেখি। প্রয়োগের দিক থেকে যদি প্রশ্ন আসে যে, কি করে এ প্রয়োগটা করতে পারলাম? সেখানে এখনকার টেকনলজিকে বুঝতে পারার ব্যাপারটা কাজে লেগেছে। প্রসেনিয়ামকে বুঝতে পারার ব্যাপারটাও আছে। শুধু প্রসেনিয়াম না অঙ্গন থিয়েটার হিসেবেও নাটকটা ভালো লাগবে। মঞ্চে শেডিউল সমস্যার কারণেই এ নাটকটা প্রসেনিয়ামে করতে হয়েছে। কিন্তু আমার প্রসেনিয়াম ভালো লাগে না। আমি এখনো মনে করি, আমি এটা এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে বা মহিলা সমিতিতে মাটিতে করবো। করবোই। তখন কালো ভূমির কালো রঙটা দর্শকের চোখে লেগে থাকবে। তার ওপর শাদা ফিগারগুলো চলাফেরা করবে। অথবা কালোর ওপর কালো ফিগারগুলো চলাফেরা করবে।
আমি স্বাধীন। কিন্তু যেহেতু সমস্যাগুলো আছে সেহেতু প্রসেনিয়ামের ভেতর আমাকে ঢুকতে হচ্ছে। আমার রাজনৈতিক একটা এক্সপোজার বহুদিন ধরে আছে। ছাত্রজীবন থেকে আমরা মার্কস-অ্যাঙ্গেলস, লেনিন থেকে গ্রামসি, চার্চিল কিংবা পরবর্তী পর্যায়ে আঁদ্রে মারলো থেকে শুরু করে এখনকার দেরিদা বা অ্যাডওয়ার্ড সাঈদ কেউ বাদ যাচ্ছেন না।
আমাদের কিন্তু যুদ্ধের অভিজ্ঞতা আছে। আমরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ দেখিনি কিন্তু আমরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও ভিয়েতনাম ওয়ার পেয়েছি। প্যালেস্টাইন হয়ে আমরা যেভাবে ইরাক ও আফগানিস্তানে পৌছেছি সেখানে আমাদের ধ্বংস ও হিংসার অভিজ্ঞতা আছে। আমাদের বিশ্ব অভিজ্ঞতা ইতিহাস থেকে নেয়া। এ অভিজ্ঞতা আছে আমাদের উপস্থিতির মধ্যে। কাব্যগতভাবে আমার যে ট্রেজারটা আছে বাংলা বা ইংরেজি সাহিত্যে। যেহেতু এ দুটি ভাষাতেই আমি পড়তে পারছি। সেটার ভেতর দিয়ে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। ওয়ার অ্যান্ড পিস ও আনা কারেনিনা থেকে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। গ্যেটের ফাউস্ট থেকে যে অভিজ্ঞতা আমাদের হয়েছে তাতে মেফিস্টোফেলিসের সঙ্গে বুশের বা লাদেনের তুলনা করতে আমার খুব একটা অসুবিধা হয় না। এ অভিজ্ঞতা শিল্পে কিভাবে এলো সেটা একটা জটিল প্রশ্ন।
আমাকে অনেকেই গত তিনদিন ধরে প্রশ্ন করছে যে, আপনি এ নাটকটা কিভাবে করলেন? আমি আসলে জানি না। জানলে বলে দিতাম কি করে করেছি।

নাটকের টেক্সট থেকে আমাদের আশঙ্কা ছিল এ নাটকের বীভৎসতা ও ভয়াবহতা হয়তো দর্শক গ্রহণ করতে পারবে না। কিন্তু যখন নাটকটা দাড়ালো তখন আমরা দেখলাম, বীভৎসতাকে ছাপিয়ে অদ্ভুত এক সৌন্দর্য সামনে এলো। কোরিওগ্রাফি, লাইট, আলো ইত্যাদির মাধ্যমে।

আমার যে কোনো কাজের সবচেয়ে বড় লক্ষ্য হচ্ছে আমি একটা সৌন্দর্য ধরার চেষ্টা করি। বনপাংশুলের প্রদর্শনীতে বলেছি, আপনারা আদিবাসীদের যে সংগ্রামের কথা বলেন আমিও সেটা বলেছি। এগুলোর চেয়ে বেশি আমি যে মেসেজটা আপনাদের দিতে চাই সেটা হলো এরা সুন্দর মানুষ। এদের ধ্বংস করবেন না। আমি যদি স্টাবলিস করতে পারি আদিবাসীরা সুন্দর মানুষ আমরা যেভাবে বলি সে রকম জংলি নয়। ওর ভেতরের বিউটি যখন আবিষ্কৃত হবে তখন ওকে আমার চেয়েও ভালো মানুষ বলে মনে হবে। আমার মনে হয়, বনপাংশুল সে কাজটা করতে সক্ষম হয়েছে। সুতরাং আমার নাটকের মূল লক্ষ্য সুন্দর একটা ভূমিতে ল্যান্ড করা।
নিমজ্জনে রবীন্দ্র সঙ্গীতের ব্যবহার যেভাবে করেছি সুর-তাল ঠিক রেখে লয়টা চেঞ্জ করে দিয়েছি
৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×