somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাকিস্তান, পারভেজ মোশাররফ, গণতন্ত্র ও প্রগতিশীল আর্মি

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০০৭ দুপুর ২:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার আগে পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গিতে ‌‌‌'পশ্চাৎপদ' দেশে প্রগতিশীল আর্মির ধারণাটা সবচেয়ে বেশি চোখে পড়তো আলজেরিয়ায়। এককালে ফ্রান্সের উপনিবেশ থাকা এই দেশটিতে কলোনিয়াল শাসকরা নিজেদের ভাবধারার একটি শ্রেণী গড়ে তুলতে পেরেছিল। ইউরোপমুখী বুদ্ধিজীবীদের বাইরে কলোনিয়াল শাসকদের সবচেয়ে কাছের মিত্র ছিল সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর অফিসাররা ইউরোপীয় লাইফ-স্টাইল ও সুযোগ-সুবিধায় অভ্যস্ত ছিল। তারা শুধু ইউরোপের স্বার্থই দেখতো না, বরং তারা ছিল প্রগতিশীলতার সবচেয়ে স্বার্থক ঝাণ্ডাধারী। বিভিন্ন সময়ে তারা অস্ত্রের মুখে প্রগতিশীলতাকে টিকিয়ে রেখেছে। শেষ পর্যন্ত ১৯৯১ সালে ইসলামিক সালভেশন ফ্রন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করলেও সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপে তারা ক্ষমতায় আসতে পারেনি। বরং ইসলামিস্টদের জয়লাভের মাশুল হিসেবে জনগণ গণতন্ত্রের বদলে গৃহযুদ্ধর মুখোমুখি হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত জনসমর্থণে কাজ হয়নি। বর্তমানে সেখানে পাশ্চাত্য শক্তি সমর্থিত মিলিটারি শাসন অব্যাহত আছে।
আলজেরিয়ার পাশাপাশি এ ধরনের প্রগতিশীল মিলিটারির সন্ধান পাওয়া গেছে তুরস্কে। সেখানেও ইউরোপ ইস্যু। ইউরোপের সঙ্গে একাট্টা থাকার জন্য তুরস্কের যতটুকু প্রগতিশীল থাকা দরকার তা সেনাবাহিনীই নিশ্চিত করে। নির্বাচনে কট্টর ইসলামিস্ট কি মডারেট ইসলামিস্ট যেই জিতুক না কেন সেনাবাহিনী প্রগতিশীলতার রাস্তা থেকে তাদের বিচ্যুতি ঠেকায়।
ইউরোপীয় চাঁইদের কাছে প্রগতিশীল আর্মির সাহায্যে আধিপত্য বিস্তারের আইডিয়া নতুন কিছু না হলেও আমেরিকার কাছে সম্ভবত তা নতুন ছিল। কোল্ড ওয়ারের সময় এশিয়া ও লাতিন আমেরিকায় তাদের সমাজতান্ত্রিক বহু আন্দোলন সংগ্রাম এমনকি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার হুমকি মোকাবিলা করতে হয়েছে। ফলে, তারা অপ্রগতিশীলতা, ধর্মভিত্তিক জঙ্গিবাদকেই নিজেদের রক্ষাকবচ বলে ভেবে এসেছে। এর ফল হিসেবে, ভারতীয় উপমহাদেশসহ বিভিন্ন দেশে সশস্ত্র ইসলামী জঙ্গিগোষ্ঠী গড়ে উঠেছে। এবং প্রি ও পোস্ট নাইন ইলেভেনে পরিস্থিতিতে তারা বুঝতে পেরেছে নিজেদের বানানো দানব এবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। ফলে, নতুন এই যুদ্ধে তারা ইউরোপীয় মডেল অনুসরণ করতে শুরু করে পাকিস্তান ও পারভেজ মোশাররফকে দিয়ে। পারভেজ মোশাররফ পাকিস্তানের মতো সামন্ততান্ত্রিক, বহুধাবিভক্ত সমাজের সেনাবাহিনীতে অন্যতম প্রগতিশীল। উনি ক্ষমতায় না থেকে যেকোনো গণতান্ত্রিক শক্তি যদি পাকিস্তানের ক্ষমতায় থাকতো তবে আফগানিস্তান দখল যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আরও কঠিন হতো।
যাই হোক, কেউ কেউ বলতে শুরু করেছেন যে মোশাররফের প্রয়োজন ফুরিয়ে এসেছে। পাকিস্তানে এখন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সময়। কিন্তু মোশাররফ এবং আর্মি কেন সেটা হতে দেবে। তারা তৎক্ষণাৎ প্রমাণ করে দিল পাকিস্তান ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় জঙ্গিবাদ এখনও বিরাট সমস্যা। অতএব আমাকেই রাখুন। হয়তো এ কথাও সত্য পাকিস্তানের সেনাবাহিনীতে মোশাররফের উত্তরসুরি কোনো প্রগতিশীল জেনারেল খুঁজে পাওয়া ভার। তাকে আবার আমেরিকার প্রতি একনিষ্ঠ থাকতে হবে। আর পুরো পাকিস্তানে ধর্মের বাইরে রাজনীতি পরিচালনা করতে পারে এমন কোনো রাজনৈতিক দল পাওয়া তো অনেক দূরের কথা।
সো, মোশাররফের গদি টলোমলো হলেও, পাকিস্তানে তার জনসমর্থন শূন্যের কোঠায় নেমে এলেও। সুপ্রিম কোর্ট তাকে অবৈধ ঘোষণা করলেও, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশসহ বিভিন্ন জায়গায় অস্থিরতা তৈরি হলেও, গণতন্ত্রের পথ সুদূরপরাহত হলেও ক্ষমতায় পারভেজ মোশাররফই থাকছেন। তার পশ্চিমা মিত্ররা উদ্বেগ প্রকাশ ছাড়া আপাতত আর কিছু করবেন বলে মনে হয় না।
পারভেজের সঙ্গে পাকিস্তান না থাকলেও আছে বুশ প্রশাসন, সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধ, প্রগতিশীলতার ঝাণ্ডা আর সে দেশের সুবিধাভোগী সিভিল সোসাইটি যাদের প্রতিনিধি প্রধানমন্ত্রী শওকত আজিজ।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই নভেম্বর, ২০০৭ দুপুর ২:২০
২১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×