আলজেরিয়ার পাশাপাশি এ ধরনের প্রগতিশীল মিলিটারির সন্ধান পাওয়া গেছে তুরস্কে। সেখানেও ইউরোপ ইস্যু। ইউরোপের সঙ্গে একাট্টা থাকার জন্য তুরস্কের যতটুকু প্রগতিশীল থাকা দরকার তা সেনাবাহিনীই নিশ্চিত করে। নির্বাচনে কট্টর ইসলামিস্ট কি মডারেট ইসলামিস্ট যেই জিতুক না কেন সেনাবাহিনী প্রগতিশীলতার রাস্তা থেকে তাদের বিচ্যুতি ঠেকায়।
ইউরোপীয় চাঁইদের কাছে প্রগতিশীল আর্মির সাহায্যে আধিপত্য বিস্তারের আইডিয়া নতুন কিছু না হলেও আমেরিকার কাছে সম্ভবত তা নতুন ছিল। কোল্ড ওয়ারের সময় এশিয়া ও লাতিন আমেরিকায় তাদের সমাজতান্ত্রিক বহু আন্দোলন সংগ্রাম এমনকি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার হুমকি মোকাবিলা করতে হয়েছে। ফলে, তারা অপ্রগতিশীলতা, ধর্মভিত্তিক জঙ্গিবাদকেই নিজেদের রক্ষাকবচ বলে ভেবে এসেছে। এর ফল হিসেবে, ভারতীয় উপমহাদেশসহ বিভিন্ন দেশে সশস্ত্র ইসলামী জঙ্গিগোষ্ঠী গড়ে উঠেছে। এবং প্রি ও পোস্ট নাইন ইলেভেনে পরিস্থিতিতে তারা বুঝতে পেরেছে নিজেদের বানানো দানব এবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। ফলে, নতুন এই যুদ্ধে তারা ইউরোপীয় মডেল অনুসরণ করতে শুরু করে পাকিস্তান ও পারভেজ মোশাররফকে দিয়ে। পারভেজ মোশাররফ পাকিস্তানের মতো সামন্ততান্ত্রিক, বহুধাবিভক্ত সমাজের সেনাবাহিনীতে অন্যতম প্রগতিশীল। উনি ক্ষমতায় না থেকে যেকোনো গণতান্ত্রিক শক্তি যদি পাকিস্তানের ক্ষমতায় থাকতো তবে আফগানিস্তান দখল যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আরও কঠিন হতো।
যাই হোক, কেউ কেউ বলতে শুরু করেছেন যে মোশাররফের প্রয়োজন ফুরিয়ে এসেছে। পাকিস্তানে এখন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সময়। কিন্তু মোশাররফ এবং আর্মি কেন সেটা হতে দেবে। তারা তৎক্ষণাৎ প্রমাণ করে দিল পাকিস্তান ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় জঙ্গিবাদ এখনও বিরাট সমস্যা। অতএব আমাকেই রাখুন। হয়তো এ কথাও সত্য পাকিস্তানের সেনাবাহিনীতে মোশাররফের উত্তরসুরি কোনো প্রগতিশীল জেনারেল খুঁজে পাওয়া ভার। তাকে আবার আমেরিকার প্রতি একনিষ্ঠ থাকতে হবে। আর পুরো পাকিস্তানে ধর্মের বাইরে রাজনীতি পরিচালনা করতে পারে এমন কোনো রাজনৈতিক দল পাওয়া তো অনেক দূরের কথা।
সো, মোশাররফের গদি টলোমলো হলেও, পাকিস্তানে তার জনসমর্থন শূন্যের কোঠায় নেমে এলেও। সুপ্রিম কোর্ট তাকে অবৈধ ঘোষণা করলেও, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশসহ বিভিন্ন জায়গায় অস্থিরতা তৈরি হলেও, গণতন্ত্রের পথ সুদূরপরাহত হলেও ক্ষমতায় পারভেজ মোশাররফই থাকছেন। তার পশ্চিমা মিত্ররা উদ্বেগ প্রকাশ ছাড়া আপাতত আর কিছু করবেন বলে মনে হয় না।
পারভেজের সঙ্গে পাকিস্তান না থাকলেও আছে বুশ প্রশাসন, সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধ, প্রগতিশীলতার ঝাণ্ডা আর সে দেশের সুবিধাভোগী সিভিল সোসাইটি যাদের প্রতিনিধি প্রধানমন্ত্রী শওকত আজিজ।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই নভেম্বর, ২০০৭ দুপুর ২:২০