ধরা যাক, আমার ঘরে মার্কস বা অ্যাঙ্গেলসের ছবি টাঙানো আছে। অথবা ধরা যাক, লেনিন, স্ট্যালিন বা মাও সে তুং আছে। কী মানে তৈরি হয়?
অথবা ধরা যাক আমার ঘরে বলিভিয়ার জঙ্গলে ঘোরা চে, ফিদেল ক্যাস্ট্রোর সঙ্গে চে অথবা চে'র যে কোনো ছবি টাঙানো আছে। এর মানেই বা কী তৈরি হয়?
কেউ ঘরে লেনিন, মাও বা মার্কসের ছবি টাঙানোর চেষ্টা করেছেন কি না জানি না। মনে মতো একটা পোস্টার সাইজ ছবি পেতে এই ঢাকা শহরে আপনাকে ঘেমে যেতে হবে। যদি না আজিজ মার্কেটের রবিন আহসান সম্প্রতি এদের কোনো পোস্টার না ছেপে থাকে। কিন্তু চের ছবি খুঁজুন। আপনি আমেরিকায় থাকেন, আর ব্রিটেনে, ঢাকা কি বরিশালে চে'র ছবি সহজেই পাবেন। সে ছবি অনায়াসে বাঁধিয়ে ঘরের দেয়ালে এঁটে দিতে পারেন।
ধরা যাক, আপনার বাড়ি কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ বা রাজশাহী। আপনার দেয়ালে চে'র ছবি। কেউ কোনো সন্দেহ করবে? আপনি যে মতবাদে বিশ্বাসী তা নিয়ে কারো মনে কোনো সন্দেহ তৈরি হবে? কেউ আপনার দ্বারা আক্রন্ত বোধ করবে? উত্তর না বাচক হবে বলেই আমার ধারণা। কিন্তু দেয়ালে মাও সে তুংয়ের ছবি টাঙিয়ে দেখুন। আপনি নিমেষে কত মানুষের সন্দেহ, ভীতি আর বিরোধিতার মুখে পড়েছেন।
কারো ছবি টাঙানোর অর্থ তাহলে তৈরি হয়? ঘরে ঘরে, দেয়ালে দেয়ালে রাজনীতি চলে। মণীষা কৈরালা, প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, ঐশ্বরিয়া রাই, কার্ল মার্কস, অনুকুল ঠাকুর, লেনিন, মাও সে তুং, চে গুয়েভারা যাকেই বেছে নেন। একটা অর্থ তৈরি হবে। সেটা কী?
চে গুয়েভারার জন্মদিন উপলক্ষে ব্লগে বেশ কয়েকটি পোস্ট হয়েছে। পারভেজ চৌধুরী পাঁচ বা ততোধিক পোস্ট দিয়েছেন। সুন্দর একটি লেখা দিয়েছেন ফারহান দাউদ। লেখাগুলো আমাকে একটা ভাবনায় ফেলে দিলো। দেখলাম, ব্লগে যেখানে মার্কসবাদের বিরোধিতা খুব চালু ব্যাপার সেখানে চে'কে নিয়ে এতো লেখা কারো বিরক্তি বা বিরোধিতা তৈরি করতে পারলো না। তাহলে বিপ্লবী চে'র ইমেজ বিপ্লবের বদলে আমাদের সামনে অন্য কোনো ইমেজে হাজির হয়েছেন? তিনি কি এখন যথেষ্ট বিপ্লবী নন? প্রতিক্রিয়াশীলদের ঘাটানোর যথেষ্ট ক্ষমতা তার নেই?
আজিজ মার্কেটে হোসিয়ারি শিল্প বিকাশের সুফল হিসাবে চে'র ছবি কত সহজেই না আমাদের বুকে পিঠে ঠাঁই করে নিয়েছে। কোর্ট পিন সহ নানা সুভ্যেনিরে চে ভাল আইটেম। চে ক্যাপ, চে ক্যাফে, চে শার্ট, চে পাইপ। কত কিছু। মার্কিন সমাজে যেখানে মার্কসবাদ মোটামুটি নিষিদ্ধ, কিউবা শত্রু দেশ, ফিদেল শত্রু ব্যক্তি সেখানেও চে তরুণদের মধ্যে বড় আইকন। সমাজের কর্তারা চে ইমেজ নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত কি না বোঝা যায় না। কিন্তু মাও সে তুং বা লেনিন চে'র জায়গা নিয়ে কী হতো? একটু ভাবা দরকার।
আমি কি কোথাও ভুল করছি? যে প্রাকটিসিং মার্কসিস্ট। লাতিন আমেরিকার জনগণের আন্দোলনে তার বড় ভূমিকা। চে'র প্রথম জীবনের মোটর সাইকেল ডায়েরিজ আমাকে ভীষণ অনুপ্রাণিত করেছিল। বীরত্ব, সাহস আর কষ্টে একাকার হয়ে তার শেষ জীবন আমাকে গভীরভাবে তাড়িত করেছিল। চে' যতদিন দিন বেঁচেছিলেন ততোদিন সাম্রাজ্যবাদী ও তাদের দালালদের শত্রু ছিলেন। তাকে হত্যা না করা পর্যন্ত শত্রুরা থামেনি। সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে তিনি শেষদিন পর্যন্ত সোচ্চার ছিলেন। তাহলে, এখন সাম্রাজ্যবাদ তাকে নিয়ে ভীত নয় কেন?
চে কি একজন সক্রিয় মার্কসবাদী নাকি একটি মতবাদের প্রবক্তা?
চে কি বাস্তবতাবাদী বিপ্লবী প্রক্রিয়াকে উৎসাহিত করে নাকি রোমান্টিসিস্ট করে তোলে?
চে কি নির্বিবাদী মার্কসিস্ট ইমেজ তৈরি করে?
চের ইমেজ কি সাম্রাজ্যবাদীরা নতুন করে তৈরি করেছে?
চে কেন মার্কস-বিরোধীদের মধ্যেও সমান জনপ্রিয়?
চে কে ভালোবাসতে কি মতবাদ বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় না?
চে কি একটা স্টাইল?
চে কে তাহলে?
চে গুয়েভারা : শুধু আইকন নাকি একটা মতবাদ?
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
৩৯টি মন্তব্য ৩৩টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।
এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।
ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন
মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?
আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন
দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস
রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------
ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন
জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।
জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন