somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ড. ইউনুস বিষয়ে আমি শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তকে সমর্থন করি

০৩ রা মার্চ, ২০১১ বিকাল ৪:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘটনা কিছুই না। শেখ হাসিনা ড. ইউনুসের নোবেল পুরস্কার কাইড়া নেন নাই। গ্রামীণ ব্যাংক বন্ধ কইরা দেন নাই। ইউনুসকে ক্ষমতা থিকা নামায়ে দেশ ছাড়া করেন নাই। ওনারে গ্রেফতার কইরা সাবজেলেও ভরেন নাই। নতুন একটা ব্যাংক তৈরি কইরা ইউনুসের ব্যাবসা লাটে উঠান নাই। শুধু দশকের পর দশক ধইরা ড. ইউনুস যেমনে গ্রামীণ ব্যাংকের এমডির পদটা আকড়ে ধইরা আছেন সেই পদটায় এতবছর ধইরা থাকা যে অবৈধ ও অনৈতিক সেইটা মনে করায়ে দিছে বাংলাদেশ ব্যাংক। শেখ হাসিনা সরাসারি ঘটনাটা ঘটানও নাই। দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসাবে এইখানকার সব ব্যাংকের ওপর আইনগত এক্তিয়ার বাংলাদেশ ব্যাংকের আছে। সেই আইন অনুসারে তারা সেইটা করতে পারে। এখন প্রশ্ন হইলো, এমডি পদ ছাড়াটাকে ড. ইউনুস এত সিরিয়াসলি নিতেছেন কেন?
ড. ইউনুস শান্তিতে নোবেল বিজয়ী একমাত্র বাংলাদেশী, প্রফেসর অব মাইক্রোক্রেডিট, ব্যাংকার টু দ্য পুউর। এমন তো না যে, উনি যদি গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি না থাকেন তাইলে কেউ তারে পাত্তা দিবো না। ওনার ক্রেডিবিলিটি ও পারসোনালিটি হারায়ে যাবে। তার চাইতে বড় কথা, এত বড় প্রতিষ্ঠান উনি গড়ছেন, এত সমৃদ্ধি পাইছেন, এত আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাইছেন- তারপরও কী কারণে ওনার এমডি পদ দখলে রাখা জরুরি হয়া পড়লো? এত উপরে উঠার পর বড় ব্যক্তিদের তো এমনেই ছোট পদ ছাইড়া বিতর্কের উর্ধ্বে উঠা লাগে। কিন্তু সেইটা যথাসময়ে না কইরা তিনি যে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের আদেশ পর্যন্ত ওয়েট করলেন, এইটা বিশাল সংকীর্ণতার পরিচায়ক।
তদুপরি, ঘটনা অতো বড়ও না। গুরুত্বের দিক থিকা একটা ব্যাংকের এমডিকে অপসারণ করা হইছে এই খবর সামান্য। এমডি পদে যিনি বইসা রইছেন তিনি ড. ইউনুস বা মো. জব্বার সেইটা বিষয় না। কিন্তু সরকারের, অর্থমন্ত্রণালয়ের এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎপরতা শুরু হওনের পর ড. ইউনুস এবং তার সমর্থক আন্তর্জাতিক মিডিয়া তিলরে তাল বানায়ে ফেলছে। ঘটনা এমন যেন, ড. ইউনুসকে গ্রেফতার করে অন্তরীণ করা হইছে কিংবা দুনিয়া থিকা সরায়ে দেওনের উদ্যোগ নেওয়া হইছে। যেন শান্তি পুরস্কার বিজয়ীর উপর এই আঘাত বিশ্বশান্তিতে আঘাত হানছে। ফলে, আন্তর্জাতিক মিডিয়া ত্রাহি ত্রাহি রব শুরু করছে। প্রথম আলো পইড়া একেবারে টাসকি খায়া গেলাম। ইউনুসের এই অপমান সইতে না পাইরা হিলারি নাকি বাংলাদেশ সফর বাতিল করছেন। ওবামার লগে হাসিনা সাক্ষাৎ হুমকির মধ্যে পড়ছে। ফ্রেন্ডস অব ইউনুস/ গ্রামীণ ব্যাংক সরকারকে জেরা করতেছে।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হইতেছে, পুরা বাংলাদেশ একদিকে আর ইউনুস একদিকে। বাংলাদেশ, বাংলাদেশের সরকার ও মানুষের চাইতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ইউনুস বড়। একজন ব্যক্তিকে রাষ্ট্রের অধিক গুরুত্ব দিয়া রাষ্ট্রের অধিক ক্ষমতায়ন কইরা যুক্তরাষ্ট্র যে নীতিগত ভুল করতেছে সেইটা শোধরানোর জন্য হইলেও মানুষের উচিত ইউনুসের বিপক্ষে দাঁড়ানো।
ড. ইউনুসের অনেক অবদান আছে। ক্ষুদ্রঋণ আইডিয়া হিসাবে অনেকের কাছেই ভাল। শুধু ভাল না, অনেকেই মনে করেন দারিদ্র কমাইতে এইটার ভূমিকা আছে। অনেক দেশ এই মডেল নিছে। এর জন্য ইউনুস সম্মানিত হইছেন। নোবেল সহ বহু পুরস্কার পাইছেন, পৃথিবীর নিয়ন্ত্রকদের সান্নিধ্য পাইছেন। এই সান্নিধ্য সম্মানের অর্থ এই না যে, উনি এ দেশের আইন-কানুনের উর্ধ্বে উইঠা গেছেন। এদেশের এক রকম নিয়ন্ত্রণ বনে গেছেন। উনি অনেক কাজ করছেন, সেই কাজের মধ্যে ভুলভ্রান্তি থাকতে পারে, না থাকাটাই অস্বাভাবিক। অনিয়ম হইতে পারে। সেই অনিয়মের প্রতিবিধানও দরকার। সেই প্রতিবিধানের জন্য ওনাকে দেশের প্রচলিত আইন ও কানুন মানতে হবে। যদি যদি মনে করেন, ফ্রেন্ডস অব ইউনুসরা তাকে আইনের উপরে স্থাপন করবে। তাকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা মানে সরকারের বা বাংলাদেশের বিপদে পড়া তাইলে, আমি বলবো, শুধু এমডি পদ থিকা অপসারণ নয়, ড. ইউনুসের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি তদন্ত পরিচালিত হওয়া উচিত।
ড. ইউনুস আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় একটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করছেন এবং সেই ধারণা বেশ কল্কে পাইছে যে, শেখ হাসিনা তাকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ মনে করে। কথাটা একদিক দিয়া সত্য। আবার মিথ্যাও। ব্যক্তি হিসাবে ড. ইউনুস শেখ হাসিনা বা খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দূরের কথা জনসমর্থনের রেসে দৌড়ানোর যোগ্যতাও তার নাই। ইউনুস নিজে রাজনৈতিক দল করা চেষ্টা কইরা বুঝছেন, এইটা বড় কঠিন জিনিশ। ফলে তিনি পিছায়ে গেছেন। পিছায়ে গিয়া যে তিনি আবার কইতেছেন, হাসিনা তারে প্রতিপক্ষ মনে করে সেইটার কারণ কী?
আমার মতে, তিনি বাইরে একটা রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে নিজেরে হাজির করতে চান। তার রাজনৈতিক অভিলাষ চরিতার্থ করার জটিল পথে এই দাবি একটা সুড়সুড়ি দিতে পারে। কিন্তু এইটা সত্য ইউনুস না, ইউনুস যে সিস্টেমের অংশ সেই সিস্টেমটা শেখ হাসিনার প্রতিপক্ষ। শুধু শেখ হাসিনা না- খালেদা জিয়া সহ বাংলাদেশের পুরো রাজনৈতিক প্রক্রিয়ারই প্রতিপক্ষ এরা।
এরা কখনো ফ্রেন্ডস অব ইউনুস, কখনো ফ্রেন্ডস অব সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার, কখনো জাতিসংঘের কর্তা, কখনো দাতাগোষ্ঠী। এই গোষ্ঠীটাকে যারা চিনেন নাই, তারা ওয়ান ইলেভেনের শিক্ষা মিস করছেন। বস্তুত, এই গোষ্ঠীটাকে সহজ ভাষায় বলা যায়, ফ্রেন্ডস অব ওয়ান ইলেভেন। এদের কারণেই, এদেশের মানুষকে দুই বছরব্যাপী জরুরি অবস্থার কষ্ট সহ্য করে নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করতে হইছে। ফ্রেন্ডস অব ওয়ান ইলেভেনের কারণে হাসিনাকে গ্রেফতার হইতে হইছে, দেশ ত্যাগ করতে হইছে, জেল খাটতে হইছে, এমনকি দলীয় নিয়ন্ত্রণও হারানোর সংকটে পড়তে হইছে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পরিচিতি, মার্কিন ক্ষমতাধরদের সঙ্গে বন্ধুত্ব, জাতিসংঘে অবস্থান ইত্যাদি কারণে ড. ইউনুস ফ্রেন্ডস অব ওয়ান ইলেভেনর নেতা। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্মানের জন্য যেমন তিনি সম্মানিত তেমনি আমাদের আন্তর্জাতিক বিপত্তির জন্য তিনি দায়ী। তিনি আমাদের জন্য সুপ্ত আহমেদ চালাবি বা এলবারাদি। ফলে, তার বিষয়ে সাবধান থাকা জরুরি।
ইউনুস এখন বিপদে পড়ায় কারা বেশি তড়পাইতেছে এইটা একটু খেয়াল করা দরকার। একটু চোখ বোলাইলেই দেখবেন, এই গোষ্ঠীটাকে আমরা সবাই চিনি। এরাই ফ্রেন্ডস অব ওয়ান ইলেভেন।
আমি শেখ হাসিনার রাজনীতিকে সমর্থন করি না। শেখ হাসিনার কর্মসূচির প্রতিও আমার আস্থা নাই। কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকেই হউক আর ওয়ান ইলেভেনের অপমানের জন্যই হউক, শেখ হাসিনা যেমনে ফ্রেন্ডস অব ওয়ান ইলেভেনের মৌচাকে ঢিল মারছেন সেইটারে আমি সমর্থন করি। রাজনীতিক হিসাবে শেখ হাসিনা জানেন, এই মৌচাকের মৌমাছি কত বিষধর। তাদের হুল ফোটানোর ক্ষমতা কত বেশি। তবু যে তিনি একেবারে রাণী মৌমাছির গায়ে হাত দিছেন, সেইটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি নিশ্চয়ই জানেন কত আন্তর্জাতিক ও জাতীয় হুল তাকে মোকাবেলা করতে হবে। কিন্তু সেইগুলারে কেয়ার না কইরা তিনি ছোট হইলেও ড. ইউনুসের বিরুদ্ধে যে পদক্ষেপ নিছেন তাতে সমর্থন দেওয়াটা নাগরিক হিসাবে আমাদের দায়িত্ব। এই বিষয়ে বিএনপি যে নীতি নিছে সেইটা বুইঝা নিছে বইলা আমার মনে হইতেছে না। তাদের মনে রাখা উচিত আওয়ামী লীগের বিপক্ষে গেলেই সেইটা তাদের পক্ষে না। এমন কিছু দেশে আছে যা বিএনপির যেমন আওয়ামী লীগের জন্যও তেমন বিপদের কারণ।
কারণ ফ্রেন্ডস অব ওয়ান ইলেভেন একদা আমাদের দেশে অগণতান্ত্রিক শাসন ঘটাইছিল। আগামীতেও ঘটানোর ক্ষমতা তাদের হবে না সেটা মনে করা ঠিক হবে না।
২৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×