দুই বছরের একটি অবুঝ শিশুকে বাঁচাতে এগিয়ে আসুন। জন্মের পর থেকেই শিশুটি বিভিন্ন জটীল রোগের শিকার। উন্নত চিকিৎসার জন্য শিশুটিকে অতিসত্তর বিদেশে পাঠানো জরুরী। নচেৎ শিশুটির জীবনাবসান ঘটতে পারে। শিশুটির বাবা একটি প্রতিষ্ঠানের মেসেন্জার, যার পক্ষে এই বিপুল ব্যয়ভার বহন করা সম্ভবপর নয়। চিকিৎসাবাবাদ ১৫ লক্ষ টাকার প্রয়োজন। তাই শিশুটির জীবন বাচাতে অবস্থাপন্ন, হ্রদয়বান ব্যক্তিদের প্রতি আকুল আবেদন জানানো যাইতেছে। নিমোক্ত ব্যংকের প্রদত্ত একাউন্টে টাকা জমা দেয়া যেতে পারে। যোগাযোগের জন্য মোবাইল নাম্বারও দেয়া গেল।
হাতে ধরা পত্রিকাটির সাহায্যের আবেদনটি পড়া শেষ হলেই, রহিম মিয়া দীর্ঘস্বাস ফেলেন।
রত্নার কথা মনে পড়তেই চোখ তার ছলছল করে উঠে। তার তিনবছরের মেয়েটিকে শেষপর্যন্ত বাচানো যায়নি। এমনি একটি সাহায্যের আবেদনে অনেকে হাত বাড়িয়ে দিলেও তা পর্যাপ্ত ছিল না।
এটি ছিল প্রায় দুই বছরের আগের ঘটনা। একমাত্র মেয়ের হারানোর শোকে আর অর্ধাহার অনাহারে দুইমাস আগে তার বৌও তাকে ছেড়ে চলে গেছে তার মেয়ের কাছে। নি:সংগ জীবন যাপনে মাঝে মাঝে হাপিয়ে উঠেন রহিম মিয়া। আত্মহননের চিন্তাও মাথায় এসেছিল কয়েকবার। কিন্তু মহাপাপটি করতে তার মন সায় দেয়নি।
পত্রিকার সাহায্যের আবেদনকারীর লোকটির মত রহিম মিয়াও একটি ব্যক্তিগত মালিকাধীন প্রতিস্ঠানে গত বিশ বছর যাবৎ মেসেন্জারের চাকুরি করছেন।
অশান্ত মন নিয়ে ব্যংকে ঢুকলেন রহিম মিয়া। প্রতিষ্ঠানের একাউন্ট থেকে ১০ লক্ষ টাকা তুললেন। নতুন বিয়ে করা মালিকের ছেলে হানিমুনে বেড়াতে যাবেন দুবাই শহরে।
ব্যংক থেকে বেরিয়েই অপেক্ষমান গাড়িতে চড়ে বসেন রহিম মিয়া। গাড়ীর চালক হোসেইনকে বলেন আর একটি ব্যংকের কথা। শুনে কিছুটা অবাক হয় হোসেইন। অন্য কোথাও যাওয়ার কথা ছিল না এখন। রহিম মিয়া পত্রিকা দেখে ঠিকানাটাও বলে দেন তাকে।
মনের ভেতর তোলপাড় চলছে রহিম মিয়ার। তার হারাবার কিছুই নেই। টাকাগুলো সাহায্যের আবেদনকারীর একাউন্টে জমা দিতে একটুও বুক কাপবেনা তার। কিন্তু নীতিবোধে বাধছে তার। জীবনে বড় কোন অন্যায় করেনি সে। কারো একটি পয়সাও মেরে খায়নি। গাড়ী এসে থামে ব্যংকের দোরগোড়ায়। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে শুরু করেছে রহিম মিয়ার। সব দ্বিধা ছেড়ে ব্যংকের দিকে পা বাড়ায় সে, হাতে দশ লক্ষ টাকার প্যাকেট।
একাউন্টে পত্রিকাটি এগিয়ে দেয় রহিম মিয়া, কাচের ওপাশের লোকটিকে জানায় প্রদত্ত একাউন্টে কিছু টাকা জমা দিতে চায় সে। পত্রিকাটির হাতে নিয়ে দেখার পর পাশের আরেকজনের সাথে কথা সেরে নেয় লোকটি। তারপর তাকায় রহিম মিয়ার দিকে।
জানায় একাউন্টটি ক্লোজ করা হয়ে গেছে।
ব্যংকের বাইরে এসে আরেকবার দীর্ঘস্বাস ফেলে রহিম মিয়া, পত্রিকার শিশুটির কথা ভাবতেই তার বুকে মোচড় দিয়ে উঠে। রত্নার ভাগ্যই হয়তবা বরন করতে হয়েছে মেয়েটিকে। গাড়ীতে চড়েই অফিসের দিকে রওয়ানা দিতে বলে হোসেইনকে।
মাঝপথে কি মনে করে মোবাইলটা হাতে তুলে নেয় রহিম মিয়া, পত্রিকা দেখে বাটন চাপে। কথা সারা হয়ে গেলে স্বস্তির নি:শাস ফেলেন তিনি। বিদেশে চিকিৎসা পর শিশুটি এখন সুস্থ জীবন যাপন করছে। শিশুটির এক দুর সম্পর্কের নিঃসন্তান আত্মীয় ভিটেমাটি সব বেচে দিয়ে তার চিকিৎসা খরচ যুগিয়েছেন।
মনটা হালকা হয়ে যায় রহিম মিয়ার, পৃথিবীটাকে তার কাছে আর এত ধুসর আর বিবর্ন মনে হয়না। তার মনে হয় দুনিয়াতে এখনও অনেক ভাল মানুষ আছেন যাদের কল্যানে পৃথিবীর নির্মল বাতাসে স্বাস নিতে জগতের শিশুদের তেমন একটা কষ্ট হবেনা।