somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এই ১৭ পয়েন্টের চেকলিস্ট আপনাকে পিরামিড স্কিমের ফাঁদে পা দিয়ে সর্বস্বান্ত হওয়া থেকে রক্ষা করবে...

২২ শে জুন, ২০১১ দুপুর ১২:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





পিরামিড স্কিম হচ্ছে এমএলএম কোম্পানিগুলোর অবৈধ রুপ। পিরামিড স্কিম এর মার্কেটিং প্ল্যান দেখতে সত্যকারের ডিরেক্ট সেলিং/এমএলএম কোম্পানির মত মনে হলেও মূলত ডিষ্ট্রিবিউটরদের ঠকিয়ে নিজের পকেট ভারী করাই এসব কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতাদের উদ্দেশ্য থাকে।

ইন্টারনেটের এই যুগে যেকোন বিষয় সম্পর্কে অনায়াসে মুহূর্তের মধ্যেই তথ্য খুঁজে বের করা সম্ভব। আর এই যুগেই পিরামিড স্কিমের সংখ্যা নিত্যদিনই বেড়ে চলেছে। ইন্টারনেটকে তথ্য প্রচারণা এবং ফলস মার্কেটিং এর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে বহু ঠগবাজ ও প্রতারক সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে পয়সা হাতিয়ে নিচ্ছে।

পিরামিড স্কিম নিয়ে পূর্বেও লিখেছি। তবুও বারংবার এটা নিয়েই লেখার প্রয়াস পাই। যখন আমি নিজে পিরামিড স্কিমের কবলে পড়ে প্রচুর অর্থ এবং সময় অপচয় করেছি তখনই পিরামিড স্কিম সম্পর্কে এক্সটেনসিভ রিসার্চ করেছি নেট ঘেঁটে এবং বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রচুর রেফারেন্স নিয়ে।

পিরামিড স্কিমে সময় নষ্ট করে আমি নিজে বুঝেছি যে পিরামিড স্কিম চিনতে পারাটা খুব কঠিন কোন কাজ নয়। কিন্তু পর্যাপ্ত জ্ঞান এবং তথ্যের অভাবে মানুষ এসব অবৈধ কোম্পানীর প্রতারণার ফাঁদে পা দেয় এবং প্রচুর লস সাফার করে। সে কারণেই বারংবার পিরামিড স্কিম সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি এবং পিরামিড স্কিম চেনার উপায়গুলো নিয়ে লেখার চেষ্টা করি।

নিচে পিরামিড স্কিম এর মার্কেটিং প্ল্যান এর ব্যবচ্ছেদ ঘটানোর চেষ্টা করা হলো ১৭ টি পয়েন্টের মাধ্যমে। খুব ঠান্ডা মাথায় চিন্তা সহকারে পড়লে আশা করি বুঝতে অসুবিধে হবেনা।


তো চলুন দেখে নেয়া যাক কোন ১৭ টি বিষয় একটি মার্কেটিং প্ল্যানে থাকলে সেটাকে পিরামিড স্কীম হিসেবে চিহ্নিত করা যায়ঃ


১. মার্কেটিং প্ল্যানটি এমন হবে যেখানে কোম্পানীর সবগুলো বা অধিকাংশ পণ্যই কেবলমাত্র এর ডিস্ট্রিবিউটর কর্তৃক ব্যবহৃত হবে তা সেটা যত দামী এবং হাই কোয়ালিটিরই হোক না কেন। বিপরীতভাবে বললে বলা যায়, কোন কোম্পানীর পণ্যের মূল ক্রেতা যদি কেবলমাত্র এর ডিষ্ট্রিবিউটররা হয়ে থাকে এবং ডিষ্ট্রিবিউটরদের বাইরে কোম্পানীর পণ্যের কোন মার্কেট ডিমান্ড না থাকে তবে সেটা পিরামিড স্কিম।

২. মার্কেটিং প্ল্যানটি এমন হবে যেখানে রিটেইল সেল বা খুচরা বিক্রয়ের ওপর কোন রকম জোরারোপ করা হবেনা। এখানে খুচরা বিক্রয় বলতে এমন বিক্রয় বোঝানো হচ্ছে যেখানে কোম্পানীর পণ্যটি তার ডিষ্ট্রিবিউটর কর্তৃক একজন সাধারণ মানুষের নিকট বিক্রয় হবে যে মানুষটি কোনভাবেই কোম্পানীর সাথে ব্যবসা বিষয়ে জড়িত নয় তথা ব্যক্তিটি কোম্পানীর ডিষ্ট্রিবিউটর নয়। যদি কোন ডিষ্ট্রিবিউটর অন্য ব্যক্তিকে কেবলমাত্র ডিষ্ট্রিবিউটর তৈরীর লক্ষ্যে পন্য কিনতে উৎসাহী করে তার নিকট বিক্রয় করে তবে সেটাকে রিটেইল সেল হিসেবে বিবেচনা করা হয়না। কেননা সেক্ষেত্রে কোম্পানীর পন্যের মূল ক্রেতা বা ভোক্তা হবে কেবলমাত্র এর ডিষ্ট্রিবিউটররাই যেটা পিরামিড স্কিমের অন্যতম প্রধান লক্ষণ।

উদাহরণস্বরুপ, আপনি লাক্স বা লাইফবয় সাবান দোকানী তথা রিটেইলারের নিকট থেকে কিনে এনে ব্যবহার করেন। এখন আপনি যদি সেই সাবান বিক্রয় না করেন তথা রিটেইলার না হন তবুও লাক্স বা লাইফবয় কোম্পানীর কোন সমস্যা হবেনা কারণ কোম্পানীর পণ্য আপনি কেবলমাত্র ভোক্তা হিসেবে ব্যবহার করছেন, ব্যবসা করার জন্য নয়। যে কোন ব্যবসা টিকেই থাকে খুচরা বিক্রয়ের ওপর কারণ খুচরা বাজার থেকে কোম্পানীর পণ্যের প্রকৃত ভোক্তারা টাকার বিনিময়ে পণ্য কেনে এবং তখনই কোম্পানী লাভবান হয়। সুতরাং যদি কোম্পানীর পণ্যটি এমন হয় যে সেটা রিটেইল সেল করা যাচ্ছেনা তথা কোম্পানীর মার্কেটিং প্ল্যান দেখে ডিস্ট্রিবিউটর হিসেবে যোগ দেয়নি এমন মানুষদের নিকট বিক্রয় করা যাচ্ছেনা তবে চোখ বন্ধ করে অন্য দিকে দৌড় দিন!!!!!!! কারণ, যে প্ল্যানটি আপনি দেখছেন সেটা পিরামিড স্কিম।

৩. মার্কেটিং প্ল্যান এমন হবে যেখানে ডিস্ট্রিবিউটরদের মূল উপার্জন রিটেইল সেলের সাথে জড়িত থাকবেনা। অর্থাৎ যদি ডিষ্ট্রিবিউটরদের কমিশনের সিংহভাগ কেবলমাত্র এবং কেবলমাত্র রিটেইল সেল থেকে না আসে তবে সেটা পিরামিড স্কিম। রিটেইল সেল তথা খুচরা বিক্রয়ের ওপর কমিশনের সিংহভাগ নির্ভর না করলে নিশ্চিতভাবেই সেটা রিক্রুটিং এর নির্ভর করবে এবং সেক্ষেত্রে কোম্পানীর ডিষ্ট্রিবিউটরদের মূল লক্ষ্যই হবে অন্য ডিস্ট্রিবিউটর রিক্রুট করা যেটা একসময় পিরামিড স্কিমে রুপ নেবে।

৪. মার্কেটিং প্ল্যানটি কেবলমাত্র ডিস্ট্রিবিউটরদের নিজস্ব ক্রয়ের ওপর ভিত্তি করে টিকে থাকবে। ডিস্ট্রিবিউটরদের বাইরে পণ্যের কোন রিয়েল মার্কেট ডিমান্ড তৈরী না হলে তথা ডিষ্ট্রিবিউটর ব্যতীত অন্যান্য সাধারণ মানুষ পণ্য ক্রয়ের প্রতি কোনরকম আগ্রহ পোষণ না করলে সেটা পিরামিড স্কিম। ডিস্ট্রিবিউটরদের কাজ কোম্পানী থেকে পণ্য ক্রয় করে কোম্পানীকে টিকিয়ে রাখা নয়, ডিষ্ট্রিবিউটরদের কাজ হচ্ছে কোম্পানী থেকে পাইকারী মূল্যে পণ্য কিনে সেটা খুচরা বাজারে বিক্রয় করা তথা কোম্পানীর ডিষ্ট্রিবিউটর ব্যতীত সাধারণ মানুষের নিকট বিক্রয় করা। পিরামিড স্কিমে ডিষ্ট্রিবিউটররা কেবলমাত্র অধিক বোনাস পাবার আশায় বা মার্কেটিং প্ল্যানে হায়ার পজিশন অর্জন করার জন্য কোম্পানী থেকে লার্জ ভলিউমে পণ্য ক্রয় করে থাকে এবং সেটা তারা খুচরা বাজারে বিক্রয় করেনা। ফলশ্রুতিতে কোম্পানী টিকেই থাকে কেবলমাত্র ডিষ্ট্রিবিউটরদের ক্রয়ের ওপর নির্ভর করে।

৫. মার্কেটিং প্ল্যানে খুচরা বিক্রয়ের চেয়ে রিক্রুটিং তথা ডিষ্ট্রিবিউটর যোগাড়ের প্রতি অধিক গুরুত্বারোপ করা হবে। খুব ভালভাবে মনে রাখুন, যদি আপনার আপলাইন বা আপনার টিমের মানুষ আপনাকে ডিস্ট্রিবিউটর নেটওয়ার্কের বাইরে কোম্পানীর পণ্য বিক্রয় এবং এই প্রক্রিয়ায় রেগুলার কাস্টোমার তৈরীর চেয়ে আপনার ডাউনলাইনে নতুন ডিস্ট্রিবিউটর যোগাড়ের জন্য অধিক জোর দেয় তবে তারা নিজের অজান্তেই তাদের নিজেদের এবং সর্বোপরি আপনার ব্যর্থতা ডেকে আনার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে!!!! অবিশ্বাস্য হলেও এটা সত্য। রিক্রুটিং এর মাধ্যমে কখনও কোন কোম্পানীর পণ্যের সত্যকারের মার্কেট ডিমান্ড তৈরী হয়না। সত্যকারের মার্কেট ডিমান্ড তৈরী হয় পণ্যের প্রকৃত ভোক্তা তথা কাস্টোমারদের সন্তুষ্টির ওপর ভিত্তি করে। আপনার আপলাইনের কাজ হচ্ছে আপনাকে পণ্যের মার্কেট ডিমান্ড তৈরীর ক্ষেত্রে উৎসাহ দেওয়া এবং সেটা করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আপনাকে সহায়তা করা। যদি এর অন্যথা হয় তবে দয়া করে সতর্ক থাকুন। এই ভুলটা ৯৯.৯৯% ডিস্ট্রিবিউটররাই করে থাকে যার কারণে ডিরেক্ট সেলস ইন্ডাস্ট্রিতে লসের হার এত বেশি।

৬. পিরামিড স্কিমগুলোর পন্যের প্রতি এর ডিষ্ট্রিবিউটরদেরই কোনরকম নিজস্ব আগ্রহ থাকেনা। উপর্যপুরি সেই পণ্যগুলোর কোনরকম প্রয়োজনীয়তাও ডিস্ট্রিবিউটররা অনুভব করেনা। তারা সেগুলো কেবলমাত্র মার্কেটিং করে অন্যের নিকট বিক্রয়ের আশায় ক্রয় করে। আর এভাবে যখন নিজেদের প্রয়োজনীয়তা ও চাহিদাকে উপেক্ষা করে কেবলমাত্র লভ্যাংশ লাভের আশায় মানুষ কোম্পানীতে ডিস্ট্রিবিউটর হিসেবে যোগদান করার জন্য উদ্বুদ্ধ হয়, তখনই মূলত সে তার ব্যর্থতার বীজ বপন করে টাকার বিনিময়ে!!! আমি জানি আপনাদের নিকট অবিশ্বাস্য ঠেকছে কিন্তু এ বিষয়টা লক্ষ কোটি বার ডিরেক্ট সেলস ইন্ডাস্ট্রিতে প্রমাণিত হয়েছে যে ডিস্ট্রিবিউটররা নিজেরাই নিজেদের প্রয়োজনে কোম্পানীর পন্য ব্যবহার করেনা। যদি তারা নিজেরাই নিজেদের পণ্য ব্যবহারে আগ্রহী না হয় তবে তারা কিভাবে আশা করে যে অন্য মানুষ তাদের পণ্য ব্যবহারে নিজে থেকে আগ্রহী হবে? এটা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণা।

এ ফাঁদ থেকে মুক্তি পাওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে নিজেকে প্রশ্ন করা। যখন কোন কোম্পানীর প্ল্যান এবং পণ্য দেখবেন তখন নিজেকে কেবল একবার জিজ্ঞেস করুন :

"যদি আমি কোম্পানীর ডিস্ট্রিবিউটর না হতাম তথা এই পণ্যটি অন্যের নিকট বিক্রয় করে কমিশন পাবার চিন্তা না করতাম তবে কি আমি পণ্যটি নিজে থেকে ব্যবহারের জন্য প্রস্তাবিত মূল্যে কিনতাম?"

প্রশ্নটির উত্তর দেবার সময় নিজের সাথে সৎ হোন। যদি উত্তরটি না হয় তবে দয়া করে অন্য কোন কোম্পানী খুঁজুন। নতুবা ডিস্ট্রিবিউটর হিসেবে যোগদান করে নিজের ব্যর্থতার বীজ বপন করুন এবং সেই বীজে সার ও পানি ঢালুন!!!!

৭. অনেক কোম্পানীতে ডিস্ট্রিবিউটরদের একটা ম্যান্ডাটরি পারচেজ কোঠা থাকে। অর্থাৎ খুচরা বিক্রয় হোক বা না হোক, কমিশন অর্জনের জন্য একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্য প্রতি মাসে বা দুই মাসে কোম্পানী থেকে কিনতে হবে। এটা একেক কোম্পানী ভেদে একেক রকম হয়ে থাকে। এখানে বিষয়টা একটু কমপ্লেক্স। যদি এমন হয়ে থাকে যে আপনার খুচরা কমিশনের চেয়ে অন্যান্য কমিশন তথা টিম বোনাস বা সেল শেয়ার বা প্রফিট শেয়ার এর পরিমাণ অত্যধিক বেশি এবং সেটা অর্জনের জন্য আপনাকে প্রতি মাসে খুচরা বিক্রয়ের কথা ভুলে গিয়ে কেবলমাত্র ঐসব বোনাস নিয়ে চিন্তা করতে হচ্ছে তবে এটা একটা রেড সিগন্যাল। খুচরা বিক্রয় ব্যতীত অন্য কোন বোনাস বা কমিশন যখনই প্রাধান্য পাবে তখনই ডিস্ট্রিবিউটররা খুচরা বিক্রয়ের কাজ থেকে সরে এসে ঐসব বোনাস পাবার জন্য উঠে পড়ে লাগবে। আর সাধারণত ঐসব বোনাস পাবার জন্য যেটা করতে হয় সেটা হচ্ছে রিক্রুট। আর মাত্রাতিরিক্ত রিক্রুট যখন প্রধান কার্যক্রম হয়ে দাঁড়ায় তখন নিশ্চয় বুঝতে পারছেন কি ঘটে। পুরো বিষয়টা পিরামিড স্কিমে পরিণত হয়ে যায়। অধিকাংশ ডিস্ট্রিবিউটরদেরকে তখন লসের মুখ দেখতে হয়।

সুতরাং ম্যান্ডাটরি পারচেজ যাতে এমন না হয় যা অধিকাংশ নতুন ডিস্ট্রিবিউটরদের জন্য কন্টিনিউ করা কঠিন এবং যা খুচরা বিক্রয় ব্যতীত অন্যান্য বোনাস পাবার পূর্বশর্ত।

৮. কোম্পানীর পণ্যের যদি কোন রিয়েল ওয়ার্ল্ড মার্কেট না থাকে তবে সেটা অবশ্যম্ভাবী পিরামিড স্কিম। একটু ব্যাখ্যা করা যাক। বর্তমান পৃথিবীতে অধিকাংশ দেশেই ক্যাপিটালিজম অর্থ ব্যবস্থা বিদ্যমান। আর ক্যাপিটালিজমের প্রধান শর্ত হচ্ছে এখানে ফ্রি মার্কেট বিদ্যমান। তথা মুক্ত বাজার ব্যবস্থা ক্যাপিটালিজমের বৈশিষ্ট্য। মুক্ত বাজারের সংজ্ঞা হচ্ছে এখানে ভোক্তা বা ক্রেতারা তাদের ইচ্ছেমত পন্য কিনবে এবং উদ্যোক্তারা তথা ম্যানুফ্যাকচারাররা সেই ডিমান্ড বা চাহিদা অনুযায়ী পণ্য উৎপাদন করবে। যেহেতু মূলত কাস্টোমাররাই নির্ধারণ করে যে তারা কি ধরনের পণ্য কিনতে আগ্রহী সেহেতু এই বিষয়টির প্রতি উৎপাদনকারীদের লক্ষ্য রাখতেই হবে। নতুবা কোন উৎপাদনকারী সেটা বাজারে এনে সফলতার মুখ দেখবেনা।

এই ক্যাপিটালিস্টিক অর্থনীতিতে আপনি যদি এমন কোন পণ্য বিক্রয়ের চেষ্টা করেন যেটা কিনতে কনজ্যুমাররা তথা প্রকৃত ভোক্তাগন নিজে থেকে আগ্রহী হয়না তবে আপনি বৃথাই সময় নষ্ট করছেন। মুক্ত বাজারে ভোক্তারাই হচ্ছে সর্বেসের্বা। আপনি তাদেরকে কোন পণ্য বা সেবা চাপিয়ে দিতে পারেননা যদি না তারা নিজে থেকে সেটার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে এবং নিজে থেকে কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করে। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে আপনি হয়ত ফার্স্ট টাইম আপনার মার্কেটিংয়ের জোরে কোন পন্য চাপিয়ে দিলেন ভোক্তাকে। কিন্তু সেখানেই আপনার বড় ভুল যদি না পণ্যটি সত্য সত্যই কাস্টোমারের মন জয় করতে সক্ষম হয়। কারণ কাস্টোমার যদি সন্তুষ্টি লাভ করে পণ্য ব্যবহার করে, তবেই সে সেটা পুনরায় কিনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করবে এবং আপনার নিকট ফিরে আসবে। অর্থাৎ আপনি রিপিটেড বিজনেস করার সুযোগ পাবেন। আর এভাবে যখন অসংখ্য কাস্টোমার আপনার পণ্যের থেকে উপকারিতা পাবে এবং বারংবার কিনতে আগ্রহী হবে তখন আপনা থেকেই সেই পণ্যটির মার্কেট ডিমান্ড তৈরী হবে। এই মার্কেট ডিমান্ড হচ্ছে ক্যাপিটালিস্টিক অর্থনীতিতে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা এবং সেই ব্যবসা থেকে সম্পদ তৈরীর মূল চাবিকাঠি।

আপনি এমন অনেক পন্য পাবেন যেটা বাজারে রয়েছে কিন্তু কেউ কেনেনা। তো সেই পণ্যের উৎপাদনকারীর সাথে আপনি আপনার এমএলএম ব্যবসার তুলনা করুন। বুঝতে পারছেন তো? পণ্য বাজারে বের হল কিন্তু কোন ভোক্তা সেটা কিনছেনা - এরকম হলে ইউনিলিভারের মত কোম্পানীকেও ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে পথে বসতে হবে। আপনার কোম্পানীর পণ্য কেবল বাজারে বের হলে চলবেনা, প্রকৃত ভোক্তাগণ সেটা কিনতে আগ্রহী হতে হবে। তবেই আপনি ব্যবসা থেকে লাভের আশা করতে পারবেন।

এমএলএম বা ট্রেডিশনাল উভয় পদ্ধতিতেই আপনি পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ পণ্য বা সেবা বিক্রয়ের চেষ্টা করতে পারেন। কিন্তু মূল বিষয় হচ্ছে পণ্যের প্রকৃত মার্কেট ডিমান্ড তৈরী হচ্ছে কিনা। যদি না হয় তবে এমএলএম বা ট্রেডিশনাল কোন ব্যবসাতেই সফল হওয়া সম্ভব নয়। আর সেখানেই পিরামিড স্কিমগুলো মানুষকে ধোঁকা দেয়। এরা এদের পণ্য সম্পর্কে এত সব চমৎকার কথা বলে থাকে যে সাধারণ মানুষ প্রথমে কিছুই বুঝে উঠতে পারেনা। আর মার্কেট ডিমান্ড বা ফ্রি মার্কেট সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা না থাকায় অধিকাংশ মানুষই কেবলমাত্র মার্কেটিং প্ল্যানের লোভে পড়ে এইসব প্রতারক কোম্পানীর ফাঁদে পা দেয়। ফলশ্রুতিতে তাকে লসের বোঝা বইতে হয়।

বি:দ্র: এমএলএম ব্যবসায়ে সফল হবার একটা সহজ উপায় হচ্ছে এমন কোন কোম্পানী বেছে নিন যেটা মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় এবং ব্যবহার্য জিনিস বিক্রয় করে থাকে। অর্থাৎ যেসব পণ্যের মার্কেট ডিমান্ড অলরেডি তৈরী হয়েই আছে সেসব পণ্য নিয়ে ব্যবসা করলে সফল হবার সম্ভাবনা বেশি। উদাহরণস্বরুপ বলা যায়, সাবান, শ্যাম্পু, ক্রিম, লোশন, নিউট্রিশনাল ফুড, ভিটামিন, সাপ্লিমেন্ট, কসমেটিকস ইত্যাদি। বিশ্বের প্রথম সারির নেটওয়ার্ক মার্কেটিং কোম্পানীগুলোর পণ্য তালিকার দিকে তাকালেই বুঝতে পারবেন কেন তাদের ডিষ্ট্রিবিউটররা সফল হতে পারে খুব সহজেই। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নেটওয়ার্ক মার্কেটিং কোম্পানী হচ্ছে এভন। এই কোম্পানী কেবলমাত্র মেয়েদের কসমেটিকস বিক্রয় করে অর্থাৎ লিপস্টিক, ক্রিম, লোশন প্রভৃতি বিক্রয় করে। এই কোম্পানীর ২০১০ সালের বিক্রয়ের পরিমাণ হচ্ছে ১০.৮৬৩ বিলিয়ন আমেরিকান ডলার!!! চিন্তা করুন, কেবলমাত্র ডিরেক্ট সেলস মডেল ব্যবহার করে এই কোম্পানী কি পরিমাণ সফলতা লাভ করেছে। এভনের পণ্যের মার্কেট ডিমান্ড অলরেডি সুপ্রতিষ্ঠিত এবং সে কারণে এখানে ডিস্ট্রিবিউটর হিসেবে সফল হবার চান্সও বেশি।

আরেকটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যে কেবলমাত্র মার্কেট ডিমান্ড আছে এমন পণ্য নিয়ে ব্যবসা শুরু করলেই হবেনা। দেখতে হবে পণ্যটির খুচরা মূল্য কত রাখা হচ্ছে। কেননা সে মূল্যেই আপনাকে পন্যটি প্রকৃত ভোক্তার নিকট তুলে দিতে হবে যারা কোম্পানীর মার্কেটিং প্ল্যানে অংশ না নিয়েও কেবলমাত্র পণ্য কিনেই সন্তুষ্ট থাকতে চায়। যদি কোম্পানীর পণ্যের খুচরা মূল্য অন্য কোম্পানীর একই জাতীয় পণ্যের তুলনায় অত্যধিক বেশি হয় তবে সেটা আসলে পণ্যভিত্তিক পিরামিড স্কিম। কারণ সেক্ষেত্রে আপনি পণ্যটি খুচরা বিক্রয় করতে পারবেননা। যার কাছেই বিক্রয় করতে চাইবেন তাকেই কোম্পানীর মার্কেটিং প্ল্যান দেখাতে হবে এবং পণ্য কিনে কোম্পানীর ডিস্ট্রিবিউটর হয়ে আয় করার জন্য প্ররোচিত করতে হবে। যেমন: একটি সাবানের দাম ধরা যাক ৫০ টাকা। এখন আপনি যদি কোন কাস্টোমারকে এমন একটি সাবান প্রদর্শন করেন যেটার মূল্য ৫০০ টাকা বা ততোধিক সেক্ষেত্রে সেই কাস্টোমার সাবানটি কেনার জন্য কতটুকু আগ্রহী হবে বলে আপনি মনে করেন? একই টাইপের পন্য সে প্রায় ১০ ভাগ কম দামে পাচ্ছে সুতরাং ৫০ টাকার সাবান ছেড়ে ৫০০ টাকার সাবান কেনার তার কোন রকম আগ্রহ তৈরী না হওয়াটাই স্বাভাবিক। তখন আপনি যদি তাকে বলেন যে এই সাবানটি ৫০০ টাকায় কেনার ফায়দা হচ্ছে ইচ্ছে করলে আপনি এই সাবান অন্যের নিকট বিক্রয় করে বাড়তি কিছু আয় করতে পারেন। নিঃসন্দেহে আপনার প্রস্তাবটা লোভনীয়। কিন্তু জেনে রাখুন যদি আপনাকে প্রতিনিয়তই এরকমভাবে পণ্য বিক্রয় করতে হয় তবে আপনি আসলে পণ্যভিত্তিক পিরামিড স্কীম কোম্পানী বেছে নিয়েছেন নিজের অজান্তে। দ্রুত সেই কোম্পানী থেকে সরে আসুন। সাময়িক লাভের জন্য দীর্ঘমেয়াদী পেইন কিনবেননা প্লিজ।

৯. যদি কোম্পানীর পণ্য ব্যতিরেকে অন্যান্য বস্তু যেমন ট্রেনিং ম্যাটেরিয়ালস, সাকসেস বুক প্রভৃতি কেনার জন্য আপনাকে বাধ্য করা হয় তবে সেটা পিরামিড স্কিম। ডিস্ট্রিবিউটররা সেলস টুলস কেনার জন্য পয়সা খরচ করতে পারে, সেটা অবৈধ নয়। কিন্তু যদি কোম্পানী থেকে এটাকে ম্যান্ডাটরি রিকোয়ার্মেন্টসে পরিণত করা হয় তবে মূলত কোম্পানী তার ডিষ্ট্রিবিউটরদের নিকট থেকে পয়সা হাতানোর লক্ষ্যে এটা করছে। খুব সতর্ক থাকুন এ ব্যাপারে। ডিস্ট্রিবিউটররা নিজেরা ফিক্সড করবে তার কোন ধরনের ট্রেনিং প্রয়োজন রয়েছে, কোন ধরনের সেলস টুলস তার পছন্দ বা কোন কোন প্রোগ্রামে সে অংশগ্রহণ করতে চায়। এটাকে ম্যান্ডাটরি রিকোয়ার্মেন্টসে পরিণত করা সম্পূর্ণ অবৈধ। তাতে কেবল কোম্পানীর মালিকদের পকেটই ভারী হবে, ডিস্ট্রিবিউটরদের আর্থিক ক্ষতির বেশি কিছুই হবেনা।

১০. যদি কোম্পানীর পণ্য মাত্রাতিরিক্ত দামে বিক্রয় করা হয় তবে সেটা পিরামিড স্কিম। এক্ষেত্রে পন্যের নামে মূলত কোম্পানী তার অবৈধ ব্যবসার চেহারা লুকিয়ে রেখেছে। যেটার উদাহরণ আমি ৮ নম্বর পয়েন্টে দিয়েছি। এখানে উল্লেখ্য এই যে, আপনার ডিরেক্ট সেলিং কোম্পানীর পণ্য অন্যান্য সকল কোম্পানীর পণ্যের চেয়ে সস্তা হতে হবে তা কিন্তু নয়। বিষয় হচ্ছে আপনার পণ্যের দাম এমন হতে হবে যেন সেটা ট্রেডিশনাল রিটেইল স্টোর তথা দোকানে অন্যান্য যে কোম্পানীর পন্য পাওয়া যায় তার সাথে কম্পিটিটিভ হতে হবে। আপনি যদি এমন পণ্য বিক্রয় করেন যেটার মূল্য ট্রেডিশনাল রিটেইল স্টোরের পণ্য হতে বেশি তবে খেয়াল করে দেখুন সত্যই সেটা ঐ পণ্য অপেক্ষা অধিকতর উন্নত মানের কিনা। যদি সত্যই পণ্যের কোয়ালিটি অত্যন্ত উন্নত হয় তবে সমস্যা নেই। কিন্তু যদি তা না হয় তবে সেটা পণ্যভিত্তিক পিরামিড স্কিম। এটা বোঝার সবচেয়ে ভাল উপায় হচ্ছে আপনি নিজে প্রথমে পণ্যটি ব্যবহার করুন। অতঃপর অন্য কোন ট্রেডিশনাল কোম্পানীর পণ্যের সাথে আপনার পণ্যটির গুণগত মানের তুলনা করাটা সহজ হবে। নিজেকেই প্রশ্ন করুন সত্যিই আপনার পণ্যটি সেই ট্রেডিশনাল কোম্পানীর পণ্য অপেক্ষা অধিকতর উন্নত মানের কিনা। যদি হয়ে থাকে তবে পণ্যটি সহজেই বিক্রয় করতে পারবেন কেননা যারা একবার ব্যবহার করবে তারা আপনা থেকেই দ্বিতীয়বার পণ্যটি কেনার জন্য আপনার শরণাপন্ন হবে।

এরপর আসবে দামের কথা। উন্নত মানের বলেই যে আপনি একটা শ্যাম্পু ২০০০ টাকা দিয়ে বিক্রয়ের চিন্তা করবেন তা হবেনা। মূল বিষয় হচ্ছে ট্রেডিশনাল রিটেইল স্টোরের পণ্যের সাথে আপনার কোম্পানীর পণ্যের মূল্য কম্পিটিটিভ হতে হবে যাতে একটা ব্যালেন্স থাকে, যাতে প্রকৃত ভোক্তাগণ আপনার উন্নত মানের পণ্যের জন্য অতিরিক্ত পয়সা খরচ করতে নিজে থেকেই উদ্যোগী হয়। যদি এর অন্যথা হয় তবে সতর্ক থাকুন। কেননা সম্ভবত আপনি পিরামিড স্কিমের আওতায় ফেঁসে গেছেন এবং মাত্রাতিরিক্ত মূল্যে পণ্য বিক্রয়ের চেষ্টা করছেন।

১১. যদি ইনভেনটরি লোডিং এর উপস্থিতি থেকে থাকে তবে সেটা পিরামিড স্কিম। ইনভেনটরি লোডিং এর শাব্দিক বাংলা করলে দাঁড়ায় তালিকাভুক্ত পণ্য মজুদকরণ।

এই মজুদকরণের বিষয়টি একটু ব্যাখ্যা করা যাক। একটি কোম্পানীতে একটি পণ্য থাকতে পারে অথবা একাধিক পণ্যও থাকতে পারে। পণ্যের সংখ্যা মূল বিষয় নয়। মূল বিষয় হচ্ছে কোম্পানীটি তাদের সদস্যদের দ্বারা পণ্য মজুদ করাচ্ছে কিনা। যদি কোন কোম্পানীর কমিশন প্ল্যান এমনভাবে সাজানো থাকে যে কোম্পানীতে পণ্য বিপণনকারী হিসেবে কাজ করতে হলে প্রথমে কোম্পানীর সদস্য হতে হবে এবং সদস্য হবার সময় প্রয়োজনের চেয়েও অত্যধিক পরিমাণে পণ্য ক্রয় করতে হবে তবে সেটা পিরামিড স্কীম হিসেবে চিহ্নিত করা যায়।

অত্যধিক পরিমাণে পণ্য ক্রয় করার মানে এই নয় যে দামী পণ্য ক্রয় করা। এর অর্থ হচ্ছে লার্জ ভলিউমে পণ্য ক্রয় করা এবং লার্জ ভলিউমে পণ্য ক্রয় করতে হলে প্রচুর অর্থ প্রয়োজন হয়। যদি কেউ লার্জ ভলিউমে পণ্য ক্রয় করে এবং অত:পর তার নিজের বাসায় পণ্য মজুদ করে রাখে তবেই সেটাকে তালিকাভুক্ত পণ্য মজুদকরণ বলা হয়।

যখন এভাবে অসংখ্য মানুষ পণ্য মজুদকরণের মাধ্যমে কোন একটি নির্দিষ্ট কোম্পানীর সদস্যপদ লাভ করে তখনই সবচেয়ে বড় সমস্যা তৈরী হয়। সেক্ষেত্রে অধিকাংশ সদস্যই বেপরোয়া হয়ে তাদের মজুদকৃত পণ্য বিক্রয় করার চেষ্টা করতে থাকে। যখন সেটা সম্ভব হয়না তখন সদস্যরা তাদের মজুদকৃত পণ্য কোম্পানী কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কম মূল্যে বাহিরে বিক্রয় করতে উদ্বুদ্ধ হয়। এক্ষেত্রে কোম্পানীর ব্যবসা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং তার চেয়েও বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় কোম্পানীর সদস্যরা। বিভিন্ন সদস্য বিভিন্ন দামে পণ্য বিক্রয় করার কারণে সেই পণ্যের বাজার ধসে পড়ে। পরবর্তীতে সেই পণ্য বাজারে বিক্রয় করা সম্ভব হয়ে ওঠেনা।

মজার বিষয় হচ্ছে যদি এই ধরনের পণ্য মজুদকরণ এবং পরবর্তীতে কম মূল্যে পণ্য বিক্রয়ের ঘটনা কোন একটি কোম্পানীর ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত সম্পূর্ণ বিপণন ব্যবস্থায় ঘটতে থাকে তবে পিরামিডের ওপরের স্তরের সদস্যরা কল্পনাতীতভাবে লাভবান হয় যদিও এক্ষেত্রে কোন পণ্য বাজারে বা প্রকৃত ভোক্তার নিকট পৌঁছায় না।

এই অশুভ চক্র পিরামিডের যে কোন স্তরেই শুরু হোক না কেন, সাধারণত পিরামিডের একেবারে নিচের স্তরের সদস্যরাই প্রতারণার শিকার হয় কারণ তাদেরকে লার্জ ভলিউমে পণ্য ক্রয়ে অধিকাংশ সময়ই প্ররোচিত করা হয়। যখন তারা এই অন্যায় আচরণের শিকার হয় তখন তারাও নতুন মানুষকে সদস্য হিসেবে যোগদান করানোর সময় লার্জ ভলিউমে পণ্য ক্রয় এবং সেই পণ্য মজুদকরণে চাপ সৃষ্টি করে। এবং সেক্ষেত্রে কোন নতুন মানুষ যদি পণ্য মজুদকরণের ফাঁদে পা দেয় তখন পুনরায় তাদেরকে ওপরের স্তর থেকে উদ্বুদ্ধ করা হয় একই কাজ করার জন্য।

এবার সেই নতুন সদস্য দুটো কাজ করতে পারে:
* তার নিচের স্তরে নতুন সদস্যকে যোগদান করানোর সময় লার্জ ভলিউমে পণ্য ক্রয় এবং পণ্য মজুদকরণের জন্য উদ্বুদ্ধ করতে পারে।
* নিজের মজুদকৃত পণ্য একটি একটি করে সাধারণ ভোক্তার কাছে বা নতুন সদস্যকে যোগদান করানোর সময় তার কাছে বিক্রয় করতে পারে।

কিন্তু এক্ষেত্রে এই নতুন সদস্য দ্বিতীয় কাজটি তথা মজুদকৃত পণ্য সাধারণ ভোক্তার নিকট বিক্রয়ে বাধাগ্রস্ত হয় কেননা পিরামিডের ওপরের স্তরের সদস্যরা তাদের নিজেদের মজুদকৃত পণ্য ইতিপূর্বেই কম মূল্যে বিক্রয় করে পণ্যের বাজারদর ধ্বংস করে রেখেছে। যখন সেই নতুন সদস্য পুরো বিষয়টা বুঝতে পারে তখন সে নতুন মানুষকে সদস্য হিসেবে যোগদান করার সময় বলতে বাধ্য হয় যে বাহির থেকে কম মূল্যে পণ্য ক্রয় করলে শুধু পণ্যই পাওয়া যাবে কিন্তু পরবর্তীতে কোম্পানী থেকে কমিশন আয়ের সুযোগ থাকবেনা যেহেতু বাহির থেকে কম মূল্যের পণ্য কিনলে কোম্পানীতে কোন সদস্যপদ তৈরী হয়না। শুধু তাই নয়, সেই নতুন সদস্য উপায়ান্তর না দেখে তার নিজের মজুদকৃত পণ্যও কম মূল্যে বিক্রয়ে বাধ্য হয় এবং এ প্রক্রিয়ায় নিজের আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নেবার লক্ষ্যে সেও পুরো অন্যায়টির পুনরাবৃত্তি করতে থাকে অর্থাৎ উপরে উল্লেখিত প্রথম কাজটি করে। এভাবে পিরামিডের প্রতিটি স্তরে এই অশুভ কার্যক্রম চলতে থাকে। ফলশ্রুতিতে কোম্পানীর ব্যবসায়িক কার্যক্রম অবধারিতভাবেই ভেঙে পড়ে এবং সকল সদস্য মোটা অংকের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

১২. যে কোম্পানীতে কোন পণ্য বা সেবা বিক্রয় করা হয়না, শুধুমাত্র সাইনআপ/রেজিষ্ট্রেশন ফি এর বিনিময়ে ডিষ্ট্রিবিউটরশিপ বিক্রয় করা হয় এবং যেখানে আয়ের একমাত্র পদ্ধতিই থাকে কেবলমাত্র অন্যকে রিক্রুট করে তার সাইনআপ/রেজিষ্ট্রেশন ফি এর থেকে কিছু অংশ নিজের পকেটে ভরা এবং বাকি অংশ আপলাইনদের পকেটে পাচার করা, সেটা পিরামিড স্কিম। এই পয়েন্টটাই বোধহয় বোঝা সবচেয়ে বেশি সহজ কারণ এখানে কোন কমপ্লেক্সিটি নেই।

কিন্তু এবার আসার যাক কমপ্লেক্স বিষয়ে। আপনাকে পণ্য দেয়া হল কিন্তু সেই পণ্যের কোন বাস্তব অস্তিত্ব নেই-এরকমটা হলেও সেটা পিরামিড স্কিম। এক্ষেত্রে জোরালো উদাহরণ হচ্ছে ডেস্টিনি-২০০০ লিমিটেডের বৃক্ষ বিক্রয়ের ব্যবসা। ৫০০০ টাকার বিনিময়ে তারা তাদের নিজস্ব/লীজ নেয়া জমিতে গাছ লাগাবে। সেই গাছ ১২ বছর পরে বিক্রয় করে ৩০,০০০ টাকা ডিস্ট্রিবিউটরকে বুঝিয়ে দেয়া হবে। পাশাপাশি অন্যকে রিক্রুট করে বৃক্ষ নেটওয়ার্ক তৈরীর সুযোগ তো থাকছেই। এ ধরনের বায়বীয় পণ্য নিয়ে ব্যবসা করলে সেটা অবশ্যম্ভাবী পিরামিড স্কিম। আপনার টাকার বিনিময়ে আপনাকে পণ্য পেতে হবে যেটা আপনি ব্যবহার করতে পারেন নিজের জন্য অথবা অন্য কারও কাছে বিক্রয় করে দিতে পারেন। কিন্তু এক্ষেত্রে সেটা হচ্ছেনা। গাছের বিষয়টিকে সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করে কোম্পানী কেবলমাত্র নতুন সদস্য যোগাড়ের জন্য ডিষ্ট্রিবিউটরদেরকে রিক্রুটিং লাইসেন্স দিচ্ছে, এর বেশি কিছু নয়। পুরো বিষয়টিই পিরামিড স্কীম। এরপর ইউনিপে এর বিষয়টি উল্লেখ করা যায়। কোথাকার কোন ভল্টে নাকি স্বর্ণ থাকে এবং সে স্বর্ণের কেনা-বেচার লভ্যাংশ থেকে ডিস্ট্রিবিউটরদেরকে কমিশন দেয়া হয়। পাশাপাশি স্বর্ণের নেটওয়ার্ক তৈরীর সুযোগ তো থাকছেই। হাহ, সেলুকাস।

খুব ভালভাবে মনে রাখুন, নেটওয়ার্ক মার্কেটিং এর মাধ্যমে এমন পণ্য বিক্রয় করা হয় যা মানুষ প্রতিদিনের জীবনে খুব সাধারণভাবেই ব্যবহার করে। মূলত গৃহের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য যেমন সাবান, শ্যাম্পু, ডিটারজেন্ট, কসমেটিকস, খাদ্যদ্রব্য, ড্রিংকস প্রভৃতি। অর্থাৎ যেকোন দোকান বা সুপারশপে পাওয়া যায় এবং পণ্যগুলোর মার্কেট ইতিমধ্যে তৈরীই আছে এমন পণ্য বিক্রয় করা হয়ে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোম্পানির নিজস্ব ফ্যাক্টরিতে পণ্য উৎপাদন করা হয়ে থাকে। অ্যামওয়ে, অ্যাভন, ম্যারি কে, ফরএভার লিভিং এসব বিখ্যাত ডিরেক্ট সেলিং কোম্পানীর পণ্য তালিকার দিকে তাকালে দেখা যায় যে এদের প্রায় সব পণ্যই ডায়েটারি সাপ্লিমেন্ট এবং কসমেটিকস সেকশনের আওতায় পড়ে। এর মূল দুটো কারণ হচ্ছে, কসমেটিকস এবং সাপ্লিমেন্ট একই মানুষের কাছে বারবার বিক্রয় করা যায় তথা রিপিটেড বিজনেস এসব পণ্য দিয়ে সম্ভব। দুই নম্বর হচ্ছে, একটি দেশের ইকোনোমি যতই ডাউন থাকুক না কেন, মানুষ সাধারণত খাদ্যদ্রব্য এবং প্রসাধনী সামগ্রীর পেছনে পয়সা খরচ করা থামিয়ে দেয়না। অর্থাৎ এসব পণ্য দিয়ে মোটামোটি মন্দামুক্ত ব্যবসা সম্ভব। উপরন্তু, পণ্যের দাম এমনভাবে নির্ধারিত করা হয় যা দোকান বা অন্য কোন ক্রয়-বিক্রয়ের স্থানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

যদি এর অন্যথা দেখেন তবে সেটা অবশ্যম্ভাবী পিরামিড স্কিম। আপনি যদি এমন কোন পণ্য ভোক্তাদের নিকট পৌঁছে দিতে না পারেন যেটা ভোক্তারা নিয়মিত ভাবে ব্যবহার করবে এবং ফুরিয়ে গেলে পুনরায় আপনার নিকট ফিরে আসবে তবে আপনার পণ্যটি নিয়ে ব্যবসায় সফল হওয়া খুবই কঠিন। দয়া করে ডেস্টিনির ফুট ম্যাসেঞ্জার বা নাইজেলা তেলের কথা বলবেননা। ইলিংকস এর বায়ো ম্যাগনেটিক ব্রেসলেটের কথা বলবেননা। পূর্বের পয়েন্টগুলো পড়েই আপনার বোঝার কথা যে ডেস্টিনি এবং ইলিংকস হল মূলত পণ্যভিত্তিক পিরামিড স্কিম। পণ্যকে কেবলমাত্র শো-আপের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। ভেতরে সবটাই রিক্রুটিং এবং পিরামিডিং।

অর্থাৎ কোম্পানীর নিজস্ব ফ্যাক্টরীতে উৎপন্ন বা কোন সাপ্লাইয়ারের নিকট হতে সরবরাহকৃত নিত্য ব্যবহার্য পণ্য বা খাদ্যদ্রব্য সাশ্রয়ী মূল্যে কোনরকম মিডিয়া বিজ্ঞাপন ব্যতীত কোম্পানী কর্তৃক নির্ধারিত ডিষ্ট্রিবিউটরদের দ্বারা কেবলমাত্র এবং কেবলমাত্র প্রকৃত ভোক্তা তথা ডিস্ট্রিবিউটর নেটওয়ার্কের বাইরে সাধারণ মানুষের নিকট পৌঁছে দেবার ব্যবসায়িক সিস্টেমের নাম ডিরেক্ট সেলস।

১৩. যদি ডিস্ট্রিবিউটরদেরকে সর্বশেষ স্তরের প্রকৃত ভোক্তার নিকট খুচরা বিক্রয় ব্যতীত/খুচরা বিক্রয়ের সাথে সম্পৃক্ত নয় এমন কোন লটারীর ভিত্তিতে কমিশন প্রদান করা হয় তবে সেটা পিরামিড স্কিম। এরকম অনেক কোম্পানী আছে যারা ডিস্ট্রিবিউটরদেরকে নগদ অর্থ প্রদান করেনা। তারা ইলেকট্রনিক ওয়ালেট, ভার্চুয়াল ব্যাংকিং এসব মেথড ব্যবহার করে ডিস্ট্রিবিউটরদেরকে অর্থের বিকল্প বস্তু প্রদান করে থাকে। এটা হতে পারে কোন গিফট বক্স, হতে পারে কোন জাহাজ ভ্রমণের টিকেট ইত্যাদি ইত্যাদি। এসব থেকে ১০০ হাত দূরে থাকুন। এগুলো সবই পিরামিড স্কিম।

১৪. যদি কোম্পানীতে ডিস্ট্রিবিউটরদের কার্যক্রম সংক্রান্ত কোন নির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকে তবে সেটা পিরামিড স্কীম না হলেও খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। প্রতিটি ডিরেক্ট সেলারই মূলত তাদের নিজ নিজ কোম্পানীর ইন্ডিপেন্ডেন্ট এজেন্ট তথা স্বাধীন প্রতিনিধি। সেক্ষেত্রে প্রতিটি ডিস্ট্রিবিউটরেরই নিজস্ব সিস্টেমে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করার পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠিত ডিরেক্ট সেলিং কোম্পানীগুলোর কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করলে বুঝা যায় যে ডিরেক্ট সেলারদের কার্যক্রমের একটি সাধারণ নির্দেশিকা থাকা জরুরী। নতুবা ডিরেক্ট সেলাররা তাদের ব্যবসাতে ব্যর্থ হবার সম্ভাবনা বেশি। একজন ডিরেক্ট সেলারের কাজ হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট মাসিক সেলস টার্গেট সেট করা এবং সে অনুযায়ী কোম্পানীর সেলস টুলস (ব্রুশিয়ার, লিফলেট, অন্য যে কোন ধরনের প্রমোশনাল ম্যাটেরিয়ালস) ব্যবহার করে প্রকৃত ভোক্তা/ব্যবহারকারীর নিকট খুচরা মূল্যে পণ্য বিক্রয় করা। এখানে কাস্টোমার সিলেক্ট করা, সেই কাস্টোমারের রুচি এবং বায়িং হ্যাবিট সম্পর্কে অনুসন্ধান করা, কাস্টোমারের চাহিদা/পছন্দ অনুযায়ী পণ্য সাজেষ্ট করা সহ আরও অনেক বিষয় জড়িত থাকে। এই কাজগুলো কোন একজন সদ্য জয়েন করা ডিষ্ট্রিবিউটরের জন্য নিজে থেকে বুঝে ওঠা/গুছিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা অত্যন্ত দুঃসাধ্য। সেক্ষেত্রে কোম্পানীর যদি নির্দিষ্ট সেলস মেথড বা সিস্টেম থাকে এবং সে অনুযায়ী একজন ডিষ্ট্রিবিউটর তার কার্যক্রম পরিচালনা করে তবে সে কোম্পানীতে লসের হার কম হয়। সুতরাং এমন কোন কোম্পানীতে কাজ করা উচিৎ নয় যে কোম্পানীতে ডিষ্ট্রিবিউটরদের জন্য সুনির্দিষ্ট কোন কার্য নির্দেশিকা নেই কিংবা থাকলেও ডিষ্ট্রিবিউটরদেরকে সেটা মেনে চলার জন্য সুপারিশ করা হয়না। ডিষ্ট্রিবিউটরদের জন্য পরীক্ষিত এবং প্রমাণিত বিক্রয় পদ্ধতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ সেটা ব্যবহার করেই একজন সদ্য যোগদানকৃত ডিষ্ট্রিবিউটর তার বিক্রয়ের কাজ সহজে শুরু করে দিতে পারে।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুন, ২০১১ ভোর ৪:০০
১০টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×