somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টিকফা চুক্তি ফার্মা সেক্টরের জন্য অশনি সঙ্কেতঃ তাই এই চুক্তি স্বাক্ষরের বিরুদ্ধে ফার্মা পরিবারের প্রতিবাদ পেশাগত কারনেই অনিবার্য

০৭ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ১:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

টিকফা চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য সরকারকে চাপ দিতে ২৫ জুন আসছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন কেরি! এই চুক্তির ফলে বাংলাদেশের যে কয়টি সেক্টর ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে তার একটি হচ্ছে ফার্মা সেক্টর। তাই এই চুক্তি স্বাক্ষরের বিরুদ্ধে ফার্মা পরিবারের পেশাগত একটা দায় আছে, জনস্বার্থ ছাড়াও নিছক পেশাগত স্বার্থেও ফার্মাসিস্টদের উচিত এই চুক্তি স্বাক্ষর না করার জন্য পেশাগত আন্দোলন করা। ফার্মাসিস্টদের নানান সংগঠন বাংলাদেশ ফার্মাসিউটিক্যাল সোসাইটি, ফার্মেসি গ্র্যাজুয়েটস এসোসিয়েশন এ ব্যাপারে সভা সেমিনার মানববন্ধন করে এই চুক্তির ভয়াবহ দিক তুলে ধরে জনমত তৈরি করতে পারে এবং সিভিল সোসাইটিকে সাথে নিয়ে দেশের জনসাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ এ চুক্তি স্বাক্ষর থেকে বিরত থাকার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানাতে পারে।


ফার্মাসিস্টদের সংগঠন ফার্মেসি গ্র্যাজুয়েটস এসোসিয়েশন অনেক দিন ধরেই TRIPS এর বিরুদ্ধে নানান সভা সেমিনার করেছে তা আমরা দেখেছি। কিন্তু টিকফা চুক্তির একটা বড় প্রস্তাবনা হচ্ছে মেধাসত্ত্ব আইনের (TRIPS ) কঠোর বাস্তবায়ন। তাই এই চুক্তির বিরুদ্ধেও প্রতিবাদী ভূমিকায় অবতীর্ণ না হলে ফার্মা সেক্টরকে প্রস্তুতি নিতে হবে ভয়াবহ বিপর্যয়ের জন্য!


দোহা ঘোষণা ২০০০ অনুযায়ী বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার আওতায় বাণিজ্যবিষয়ক মেধাসম্পদস্বত্ব চুক্তি অনুসারে স্বল্পোন্নত সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ ২০১৬ পর্যন্ত ওষুধের ক্ষেত্রে মেধাসত্ত্ববিষয়ক বিধিনিষেধ থেকে ছাড় পেয়েছে এবং এই সুবিধা গ্রহণ করে বাংলাদেশের ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো বিভিন্ন পেটেন্ট করা ওষুধ উৎপাদন এবং রপ্তানি করতে পারছে। এমনকি প্রয়োজন হলে এ সময়সীমা আরও বাড়ানো হতে পারে। কিন্তু টিকফায় সে ধরনের কোন সুযোগ রাখা হয়নি। টিকফা চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই মেধাসত্ত্ব আইন মানতে বাধ্য করছে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ফলে টিকফা চুক্তি স্বাক্ষর করলে বাংলাদেশকে ২০১৬ সালের আগেই মেধাসত্ত্ব আইন মেনে চলতে হবে, কেননা চুক্তির ১৫ নম্বর প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে বাণিজ্য সম্পর্কিত মেধাসত্ত্ব অধিকার এবং অন্যান্য প্রচলিত মেধাসত্ত্ব আইনের যথাযথ এবং কার্যকরী রক্ষণাবেক্ষণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

The Government of the United States of America and the Government of The People’s Republic of Bangladesh (individually a “Party” and collectively the “Parties”)
15. Recognizing the importance of providing adequate and effective protection and enforcement of intellectual property rights [obligations contained in the Agreement on Trade-Related Aspects of Intellectual Property Rights (TRIPS) and other intellectual Property rights conventions.] adherence [ http://www.bilaterals.org/spip.php?article1361 ]


টিকফা চুক্তির ফলে বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প ও পাবলিক হেলথ এর উপর বিরূপ প্রভাবসমূহ সংক্ষেপে ঃ

১। মেধাসত্ত্ব আইন কার্যকর হলে বাংলাদেশের ওষুধ কোম্পানিগুলো অনেক ওষুধ তৈরি করতে পারবে নাঃ

পেটেন্ট আইনের ফলে পেটেন্টেড ওষুধ বানাতে পারবে না বাংলাদেশ, ফলে বাংলাদেশের অনেক ওষুধ কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে, ওষুধ শিল্প হুমকির মুখে পড়তে পারে।বাংলাদেশ ওষুধ শিল্পে রপ্তানি সম্ভাবনা হারাবে। আমাদের কয়েকগুণ বেশি দামে বিদেশি কোম্পানির পেটেন্ট করা ওষুধ খেতে হবে। তাছাড়া ওষুধের পেটেন্ট আগে দেয়া হতো সাত বছরের জন্য, এখন বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার ট্রিপস আইনে তা আরও বাড়িয়ে ২০ বছর করা হয়েছে। অর্থাৎ আবিষ্কারক কোম্পানি সুদীর্ঘ ২০ বছর ধরে নিজের ইচ্ছামতো দামে ওষুধটির একচেটিয়া ব্যবসা করে অবাধে মুনাফা লুট করবে।

২। বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প জায়ান্ট ফার্মা কোম্পানিগুলোর পেটেন্ট, কপিরাইট, ট্রেডমার্ক ইত্যাদির লাইসেন্স খরচ বহন করতে গিয়ে অভূতপূর্ব লোকসানের কবলে পড়বেঃ

পেটেন্ট অধিকারী জায়ান্ট ফার্মা কোম্পানিকে পেটেন্ট/ কপিরাইট/ ট্রেডমার্ক লাইসেন্স দিয়ে ওষুধ উৎপাদনের অনুমতি নিতে হবে বাংলাদেশের ওষুধ কোম্পানিগুলোকে , ফলে উৎপাদন খরচ কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে কেননা দেশীয় ওষুধ কোম্পানিগুলো নিজ দেশেই তাদের ওষুধ বিক্রি করতে গিয়ে বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতার মুখে পড়বে। ফলে অনেক মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে।

৩। হুমকির মুখে পড়বে জনস্বাস্থ্যঃ

ট্রিপস চুক্তির ফলে ওষুধের দাম জামিতিকহারে বাড়বে এটা নিশ্চিত, ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত নিম্ন আয়ের মানুষ কেননা দরিদ্ররা ওষুধ কিনতে গিয়ে হিমশিম খাবে। অনেক জীবন রক্ষাকারী ওষুধের মাত্রাতিরিক্ত চড়া দামের কারনে ওষুধের অভাবে মরবিডিটি এবং মর্টালিটি বেড়ে যাবে ফলে আমাদের জনস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে।


দেশের সকল ফার্মাসিস্টদের গুরু দায়িত্ব হচ্ছে টিকফা চুক্তির করাল গ্রাস থেকে ওষুধ শিল্পের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতিসহ মালিক শ্রেণীর উচিত এই চুক্তি স্বাক্ষর না করার জন্য প্রেস কনফারেন্স, সভা সেমিনার করে সরকারকে তাদের অবস্থান জানিয়ে দেয়া।



২টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×