somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নাম তার কবে কার--------- “এ কে খন্দকার”

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৩:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত সন্ধ্যায় একটা বই কিনেছি
নাম
১৯৭১
ভেতরে বাইরে
দাম চারশত টাকা নিয়েছে
ঈদ বোনাছের টাকা পেয়ে কিনলাম

লিখেছেন,
আমার দেখা একজন নিজের গুনে বহুগুনী মানুষ
নাম তার কবে কার---------

“এ কে খন্দকার”

বইটি নিয়ে আমি তেমন কিছু বলব না। কারন মহান মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা বই সম্পর্কে আমার সমালোচনা করা অনুচিত। কারন ১৯৭১ সালে আমার বাবা বিয়েই করেন নাই।যতদূর শুনেছি মুক্তিযুদ্ধেরও দুযেক বছর পরে সুন্নাতে খাৎনা করানো হয়েছে আমার বাবা ও আমার একজন চাচাকে একসাথে। আরও শুনেছি খাৎনা কার্যটি সম্পাদন করার সময় নাকি আমার একজন দাদা তাদের চোখ ধরে রেখেছিল আর গোটকা (আমাদের গ্রামের ভাষায়-যে সুন্নাতে খাৎনা দেয় স্থানীয় পদ্ধতিতে ধারালো ক্ষুর দিয়ে, ক্ষুরের ধার এমন ভাবে দেয় ক্ষুর ধার দিতে দিতে গোটকা নিয়মিত বিরতিতে প্রায় দশ থেকে বারটি ছামাদ বিড়ি টেনে শেষ করে) বলেছিলঃ

“বাচ্চা খনকার বাড়ী যাইব,
তেলের পিঠা খাইব।
খনকার বাড়ীর তেলের পিঠা,
খেতে লাগে ভাড়ী মিঠা।
খনকারের নাই বুক পিঠ,
বাচ্চারে দেইখা মারবো একটা ইট।
ইট কইব আমার নম্বর চার
খনকার কইব আমার বাড়ী ছাড়।
চার নম্বর ইটে,
লাগব ব্যাথা পিঠে?
এক নম্বর ক্ষুরে-
ব্যাথা যাইবো দুরে।
ঘ্যাচ্চত--------
বাচ্চার মাথা ঝোলে
পিঠা খাইব হোলে।।।

(আমাদের গ্রামের প্রচলিত ভাষায় খন্দকারদের খনকার বলা হয়- তবে কোন খন্দকার মহোদয় যদি রাগ করে থাকেন তবে মাফ করে দিয়েন। আমাদের গ্রামে কোন খন্দকার বংশের লোক নাই তাই হয়তোবা গ্রামের কোন বংশের লোক যাতে রাগ না করে তাই খনকার শব্দটি ব্যবহার করা হতো।আমার বেলায় অবশ্য খনকারের জায়গায় শ্বশুড় বাড়ী শব্দটি উচ্চারিত হয়েছিল আমি যতদূর মনে রাখতে পেরেছি, বাকীটা প্রায় সেম টু সেম, আমার অবশ্য শ্বশুড় বাড়ী শব্দটি শুনে বেশ মজা লেগেছিল, হয়তোবা মজার চোটে ব্যাথার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। কারন আমি খাৎনার আগেই আমাদের পাশের বাড়ীর দুসম্পর্কের এক চাচাতো বোনকে বেশ পচছন্দ করতাম আর চাচাকে মনে মনে শ্বশুড় ভাবতাম, ঘটনাক্রমে সে চাচাতো বোনটিও সেই মহারণ স্থলে উপস্থিত ছিল। তাই মজা বা ভাল লাগার মাত্রা চরম শিখরে উঠে যাওয়ায় সব ভুলে গিয়েছিলাম)

যাক সে কথা, লেখকে আমি নিজ চোখে দেখেছি, তাই তার সম্পর্কে আমি কিছু না বললেই নয়ঃ
১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় আমি তখন পাবনা জি সি ইন্সিটিউট এ ক্লাশ নাইনে পড়ি। নির্বাচনী প্রচারণায় জনাব এ কে খন্দকার সাহেব আমাদের স্কুলে আগমন করেছেন, যাথারীতি স্যারদের সাথে হ্যান্ডসেক, কোলাকুলি (তবে শুধু মাত্র হেড স্যারের সাথে) হলো ভোটও চাইলো তবে তিনি নয় অন্য একজন তার বাড়ী আমাদের স্কুলের পাশেই নাম যতদূর মনে আছে জনাব লাল তখন সম্ভবত উনি পাবনা সদর থানা আওয়ামীগ এর সাধারণ সম্পাদক বেশ সজ্জন পরে সরকার গঠন করে জনাব নাসিম সাহেব ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং আরও পরে স্বরাষ্ট মন্ত্রী হয়ে পাবনা আগমণ করলে তার সাথে সাথে থাকত। তাদের দুজনের বেশ মিল ছিল কারন দুজনের মাথাই ছিল টাক, শহরে থাকার সুবাদে অনেক অনুষ্ঠানেই লাল সাহেব ও নাসিম সাহেব কে একসাথে দেখতে পেয়েছি এবং মজাও পেয়েছি; দেখতাম মঞ্চে দু’টি টাক মাথা চক চক করছে যেন দুটি আয়না পাশাপাশি রাখা।

স্যারদের সাথে হ্যান্ডসেক ও ভোট প্রার্থনা শেষে খন্দকার সাহেব আমদের উদ্দেশে একটি নরম তবে কষ্টের হাসি উপহার দিয়ে বিদায় নিবে এমন সময় গেটের কাছে কয়েকজন দালান শ্রমিক কাজ করছে দেখে সাথে থাকা একজনের অনুপ্রেরণায় এগিয়ে গিয়ে হ্যান্ডসেক করল। এখানেই বিধি বাম, হ্যান্ডসেক করেই পকেটে থাকা ধবধবে সাদা রুমাল বের করে হাত মুছে রুমালটিও ফেলে দিল নবাবী কায়দায়। দূরে থাকা আমাদের গণিতের স্যার এটি ফলো করেছিলেন, স্যার ছিল আওয়ামীলীগের চরম ভক্ত যাকে বলে শেখ হাসিনা চেয়েও বেশি তাই বিকেলে প্রাইভেটে গেলে স্যার কথার এক ফাকে বলেই ফেলল শেখের বেটি এইডা কারে নমিনেশেন দিছে, যেই নাকি মুক্তিযুদ্ধের উপ-অধিনায়ক ছিল, হেই আবার ভোট চাইবার আইসা হাত মোছে, হেই কি মুক্তিযুদ্ধের সময়ও শুধু হাতই মছুছে নাহি আল্লাই জানে; শেখ মুজিব দেশে থাকলে এইডারে উপ-অধিনায়কতো দূরের কথা রাইফেল টানার পারমিশনও দিত না।এইডা আবার খারাইছে বকুল নেতার এন্ট্রিতে। যা এইবার ভোট আর নৌকায় দিমু না ধানের হীষেই দিমু বকুলের সাথে একসাথে যুদ্ধ তো করছি। আর এই ভদ্রননোক জিতবই না, ২৯৯ আসন আওয়ামীলীগ পাইলেও পাবনা-৫ পাইবো না।

নির্বাচন শেষে স্যারের কথাই সত্য ভোটে জিতলো ধানের শীষ প্রতীকে বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল, যিনি প্রয়াত হয়েছেন একটি মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় যে বাসে আমিও ছিলাম ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-এর ক ইউনিট ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে পাবনা ফেরার পথে আমি ছোট বলে আগে থেকেই বুক দিয়ে রাখলেও সেই বি-৪ ছিটটি জনাব বকুল সাহেব কে ছেড়ে দিতে হয়েছিল আর তিনি আমাকে মহান রাব্বুল আলামিনের কাছ থেকে তার জীবনের বিনিময়ে আমার জীবনটি আরও কয়েক বছরের জন্য এনে উপহার দিয়েছিলেন।কারন আমি পিছনের সারিতে ছিলাম বলে শুধু জ্ঞানই হারিয়েছিলাম, জ্ঞান ফিরে মোটামুটি সুস্থ্য হয়ে পাবনা ফিরে এসে শুনি বকুল সাহেব নাই, চলে গেছেন পরপারে। আল্লাহ তাকে জান্নাতবাসী করুক।

নৌকা প্রতীক নিয়ে খন্দকার সাহেব বকুল সাহেবের কাছে ধরাশায়ী হলেও পাবনা-২ আসন থেকে ১৯৯৮ সালে উপ-নির্বাচনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বদ্যানতায় বৃদ্ধ মানুষ শেষ বয়স তাই নমিনেশেন পেয়ে এমপি হন। তার আমলে সুজনগর ছিল সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য জনাব নাসিম সাহেবের মত স্বরাষ্ট মন্ত্রীকে নিজে পাবনা উপিস্থিত থেকে নির্দেশনা দিয়ে সুজানগরের বিভিন্ন পয়েন্টে নকশাল-সর্বহারাদের সাথে পুলিশের বন্দুক চালাতে হতো জানিনা এতে খন্দকার সাহেবের কতখানি ভূমিকা থাকত। কারন তখনকার রাজনীতি-সন্ত্রাস নিয়ে আমার কথা বলার অধিকার নাই। তখন আমি সবে মাত্র কলেজ ছাত্র।

এই সেই খন্দকার যার বই আমি কিনলাম বোনাছের টাকায়। এই চারশত টাকার যে কয় টাকা তিনি পাবেন, তা দিয়ে হয়তো বা একটা রুমাল কিনতে পারবেন। কারণ ভদ্রলোক ১৯৯৬ সালে যে রুমাল ব্যবহার করেছে এখন তার দাম কমপক্ষে ১০০ টাকা।
তবুও যদি মহোদয়ের হাত পরিষ্কার থাকে তবেই আমার বোনাছের টাকা দিয়ে বইটি কেনা সার্থক। তবে এমন মানুষ রাজনীতি না করলেই দেশের জনগণ সার্থক হবে।


এম আলম তারেক
১৮-০৯-২০১৪
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ৯:২২
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×